জীবনে বিশেষ কিছু সময় আসে যখন মানুষ একা একা বসে নিজের প্রিয় জনকে মনের কথা বলতে থাকে। হয়তো সে লোকটা সামনে নেই দূরে অনেক দূরে বসে আছে তবুও আমরা সব কিছু বলা না বলা কথা তাকে বলতে চাই। কিন্তু যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন কখনো কি আমরা চিন্তা করেছি যে তার সাথে একবার কথা বলি? হয়তো অনেকেই চিন্তা করেন এবং কথাও বলেন। কিন্তু সব সময় জবাব পাইনা বলে মনে হয়।

 কিন্তু পবিত্র কোরান এমন এক গ্রন্থ যেখানে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সাথে কথা বলেছেন এবং আমাদেরকেও তাঁর সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। পবিত্র কোরানের প্রথম সুরা হচ্ছে সুরা ফাতিহা যার মাধ্যমে একজন মুমিন প্রতিদিন নামাযে দাঁড়িয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার সাথে কথা বলে এবং নিজের চলার পথ নির্ধারণ করে। এ রকমই একদিন আমার মনটা খুব খারাপ ছিল। ঘরের এক পার্শ্বে নির্জন স্থানে গিয়ে বসে খোদার সাথে কথা বলতে শুরু করলাম। যার জবাবগুলো প্রথম থেকেই আল্লাহ পবিত্র কোরানে দিয়ে রেখেছেন।

বললাম: নিজেকে কতইনা একা একা মনে হচ্ছে।

আল্লাহ বলেন: (فَإِنِّیقَرِیبٌ) নিঃসন্দেহে আমি অতি নিকটে রয়েছি। সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬।

বললাম: তুমিতো সব সময় নিকটেই আছ, কিন্তু আমি যে তোমার থেকে দুরে, হায়! আমি যদি তোমার কাছে হতে পারতাম….

আল্লাহ বলেন: (وَاذْكُرْرَبَّكَفِینَفْسِكَتَضَرُّعًاوَخِیفَةًوَدُونَالْجَهْرِمِنَالْقَوْلِبِالْغُدُوِّوَالْآصَالِ) আর সকাল সন্ধ্যায় সবিনয়ে ও সভয়ে ও অনুচ্চস্বরে তোমার পালনকর্তাকে নিজের অন্তরে স্মরণ কর। সুরা রাফ, আয়াত: ২০৫।

বললাম: এর জন্যও তৌফিক (খোদায়ী করুণা) চাই।

আল্লাহ বলেন: (أَلَاتُحِبُّونَأَنْیغْفِرَاللَّهُلَكُمْ) তোমরা কি চাওনা যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুক? সুরা নূর, আয়াত: ২২।

বললাম: অবশ্যই চাই যে আমাকে ক্ষমা করে দাও।

আল্লাহ বলেন: (وَاسْتَغْفِرُوارَبَّكُمْثُمَّتُوبُواإِلَیهِ) আর তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর তারপর তার দিকেই ফিরে এসো (তওবা কর)। সুরা হুদ, আয়াত: ৯০।

বললাম: এত সব গুনাহ্, কি আর করতে পারি?

আল্লাহ বলেন: (أَلَمْیعْلَمُواأَنَّاللَّهَهُوَیقْبَلُالتَّوْبَةَعَنْعِبَادِهِ) (তারা কি জানেনা) তুমি কি জান না আল্লাহ্ নিজেই তার বান্দাদের <
span style=”font-size: 13pt; font-family: SolaimanLipi;”>তওবা কবুল করেন। সুরা তওবা, আয়াত: ১০৪।

বললাম: কিন্তু যেই মুখ নিয়ে আমি তওবা করব সেটা আর আমার নেই।

আল্লাহ বলেন: (اللَّهِالْعَزِیزِالْعَلِیمِ،غَافِرِالذَّنْبِوَقَابِلِالتَّوْبِ) আল্লাহ্ মহাশক্তিশালী ও সর্বজ্ঞাতা, পাপ ক্ষমাকারী ও তওবা কবুলকারী। সুরা গাফের, আয়াত: ২-৩।

বললাম: এতো সব গুনাহ, কোনটির জন্য তওবা করবো?!

আল্লাহ বলেন: (إِنَّاللَّهَیغْفِرُالذُّنُوبَجَمِیعًا) নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সমস্ত গুনাহ মাফ করেন। সুরা যুমার, আয়াত: ৫৩।

বললাম: তার মানে যতবার আসবো তুমি আমার গুনাহ্ মাফ করে দেবে?

আল্লাহ বলেন: (وَمَنْیغْفِرُالذُّنُوبَإِلَّااللَّهُ) আর আল্লাহ্ ছাড়া আর কে আছে যে, পাপ ক্ষমা করবেন? সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৫।

বললাম: জানিনা সব সময় কেন তোমার এই বাণীর সামনে নতজানু হয়ে যাই, মনে হয় আমার অন্তরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়, আমাকে ভাল করে দেয়, তোমার প্রেমে পরে যাই! শেষে তওবা করে নেই।

আল্লাহ বলেন: (إنَّاللَّهَیحِبُّالتَّوَّابِینَوَیحِبُّالْمُتَطَهِّرِینَ) নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীকে ও যারা পাক পবিত্র থাকে তাদেরকে ভালবাসেন। সুরা বাকারা, আয়াত: ২২২।

অনিচ্ছাকৃতভাবেই বললাম: (إلَهیوَرَبّیمَنلیغَیرکَ) হে আমার প্রভু ও পরওয়ারদেগার তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে?

আল্লাহ বলেন: (أَلَیسَاللَّهُبِكَافٍعَبْدَهُ) আল্লাহ্ কি তাদের বান্দাদের জন্য যথেষ্ট নন? সুরা যুমার, আয়াত: ৩৬।

বললাম: তোমার এতো সব দয়া ও অনুগ্রহের জন্য আমি কি করতে পারি?!

আল্লাহ বলেন:
(
یاأَیهَاالَّذِینَآمَنُوااذْكُرُوااللَّهَذِكْرًاكَثِیرًا،وَسَبِّحُوهُبُكْرَةًوَأَصِیلًا،هُوَالَّذِییصَلِّیعَلَیكُمْوَمَلَائِكَتُهُلِیخْرِجَكُمْمِنَالظُّلُمَاتِإِلَىالنُّورِوَكَانَبِالْمُؤْمِنِینَرَحِیمًا) ওহে যারা ঈমান এনেছ (মুমিনগণ) অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির কর (আল্লাহকে স্মরণ কর) এবং সকাল সন্ধ্যায় তার তসবীহ্ পড় (মহিমা কীর্তন করো), তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদের প্রতি দরূদ ও রহমত এবং ফেরেশতাগণও (তোমাদের জন্য রহমতের প্রার্থনা করেন) যাতে তোমাদেরকে (অজ্ঞতা ও গুনাহর) অন্ধকার থেকে (ঈমান ও জ্ঞানের) আলোকের দিকে বের করে নিয়ে আসেন, আর তিনি মুমিনদের প্রতি সর্বদা দয়ালু ও দয়াবান। সুরা আহযাব, আয়াত: ৪১-৪৩।

সত্যিই আল্লাহ্ মুমিনদের প্রতি মেহেরবান ও দয়াশীল।

হে খোদা! আমাদেরকে সত্যিকার অর্থে তোমার প্রতি ঈমানের জ্যোতি সহকারে মুমিন হওয়ার তৌফিক দান কর। আমিন।

Source: http://www.hussainidalan.com