মহান আল্লাহর সম্মাানিত ফেরেশতা হযরত জীবরাইল আমিন (আঃ) কি ভুল করেছিলেন ?
কিছু অজ্ঞ মুসলমান ভাইগন হরহামেশা একটি অভিযোগ করে থাকেন বার ইমামিয়া শীয়াদের বিরুদ্বে –
অভিযোগটি এরকম যে –
“ শীয়াদের বিশ্বাস মতে হযরত আলী (আঃ) এর কাছে ওহী নাজিল করার পরিবর্তে হযরত মুহাম্মাাদ (সাঃ) এর কাছে ওহী নাজিল করে জীবরাইল (অাঃ) না কি খেয়ানত করেছেন ?! ”
প্রিয় পাঠক ,
পৃথিবীর সকল মানুষের যে কোন কথা বা মতামত ব্যক্ত করার সম্পূর্ন স্বাধীনতা রয়েছে ।
হোক সে কথাটা সত্য বা ডাঁহা মিথ্যা !
প্রিয় পাঠক ,
আসুন বহুল প্রচারিত এই অভিযোগটি সম্পর্কে খোলামেলা কিছু আলোচনা করা যাক ।
প্রথমে দেখে নেয়া যাক যে , এই অভিযোগটির সূত্রপাত সর্বপ্রথমে ঠিক কোথা থেকে হয়েছে ।
পবিত্র কোরআনের আয়াত এবং তদসংশ্লিষ্ট হাদিসের বর্ননা থেকে প্রতীয়মান হয় যে , সর্বপ্রথম সে সময়কার হিহুদীরা হযরত জীবরাইল আমিন (আঃ) কে রিসালাতের বানী পৌছানোর কাজে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে বিশ্বাস করত ।
কারন হিহুদীরা মনেপ্রানে বিশ্বাস করত যে , আল্লাহ স্বয়ং হযরত জীবরাইল (আঃ) কে নির্দেশ দেন যে , নবুওতকে হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর বংশে দান করতে ।
অথচ হযরত জীবরাইল (আঃ) আল্লাহর নির্দেশ উপেক্ষা করে নবুওত দান করেন হযরত ইসমাইল (আঃ) এর বংশধরকে ।
একারনে হিহুদীরা হযরত জীবরাইল আমিন (আঃ) কে বিশ্বাসঘাতক , আমানত খেয়ানতকারী ও শত্রু ভাবত ।
সুত্র – তাফসীরে ফাখরে রাযী,খন্ড১,পাতা-৩৪৬ ।
আর তখন থেকেই হিহুদীরা ‘খানাল আমিন’ অর্থাৎ জীবরাইল খেয়ানত করেছে — কথাটি তাঁদের শ্লোগান হিসাবে ব্যবহার করতে থাকে ।
পবিত্র কোরআন তাঁদের এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন প্রতিপন্ন করে সমালোচনার ভাষায় তাদের জবাবে নিম্নোক্ত আয়াতে হযরত জীবরাইল (আঃ) কে ‘আমিন’ বা বিশ্বাসী ও সৎ হিসাবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে –
“ — বিশ্বাস্ত এক ফেরেশতা একে নিয়ে অবতরন করেছে আপনার অন্তরে , যাতে আপনি ভীতি প্রদর্শনকারীদের অন্ত্রর্ভুক্ত হন —।“
সুরা – শুআরা / ১৯৪-১৯৫ ।
অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে –
“ — বল , যে জীবরাইলের শত্রু [ সে আল্লাহরও শত্রু কারন ] সে (জীবরাইল) আল্লাহর আদেশে তোমার অন্তরে তা (কোরআন) অবতীর্ন করেছে যা পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহের সমর্থনকারী —- ” ।
সুরা – বাকারা / ৯৭ ।
উপরোক্ত আয়াত সমুহ এবং সেগুলোর তাফসীর থেকে সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে , হিহুদীগন হযরত জীবরাইল (আঃ) কে তাদের মনগড়া কারনে শত্রু জ্ঞান করত এবং তাঁকে আযাবের ফেরেশতা আখ্যা দিয়ে রেসালাত পৌছানোর কাজে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে অভিযুক্ত করত ।
কাজেই জীবরাইল (আঃ) আমানতের খেয়ানত করেছে – এ ধারনাটি ইহুদীদের বিকৃত ধ্যান ধারনা থেকে উদ্ভুত ।
এছড়াও এরকম আরও বহু জঘন্য অপকর্মের জন্য হিহুদী জাতি মহান আল্লাহ কতৃক লানতপ্রাপ্ত জাতি ।
সুপ্রিয় পাঠক ,
এবারে আলােচনার মূল ও শেষ প্রসংগ –
কতিপয় অজ্ঞ মুর্খ লেখক ও আবু জেহেল মার্কা কিছু মুসলমান ভাইগন কতৃক বার ইমামীয়া শীয়াদের বিরুদ্বে উদ্ভাবিত অভিযোগের সাথে সুর মিলিয়ে যদি বলা যায় যে , হযরত জীবরাইল (আঃ) ভুল করে হযরত মুহাম্মাাদ (সাঃ) এর নিকট নবুয়ত পৌঁছে দেন যেই নবুয়ত অর্পন করার কথা ছিল হযরত আলী (আঃ) এর প্রতি !
এই জাতীয় কথা যে কতটা ভয়ংকর অপরাধতুল্য সেটা খেয়াল করুন ।
পবিত্র কোরআন সাক্ষ্য দেয় যে , সকল ফেরেশতাগন সর্বসময় মহান আল্লাহর আদেশ নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালনে সদা তৎপর ।
আল্লাহর এই ঘোষনার পরেও কি করে সম্ভব যে , হযরত জীবরাইল (আঃ) এত বড় একটা ভুল করবে ! এবং সে ভুলটা অন্য কোন ফেরেশতা এমনকি স্বয়ং আল্লাহর দষ্টিতেও ধরা পড়ল না !
আসলে সম্মাানিত বিশ্বস্ত ফেরেশতার প্রতি এই জাতীয় জঘন্য নোংরা ডাঁহা মিথ্যা অভিযোগ প্রকারন্তরে মহান আল্লাহর দিকেই যায় !
সামান্য এই কথাটুকু আমাদের প্রিয় মুসলমান ভাইগন কি বুঝতে পারেন না !
বার ইমামীয়া শীয়াদের বিরুদ্বে অন্ধ হিংসা তাদেরকে এতটাই হিংস্র্রপরায়ন করে তোলে যে , হিতাহিত জ্ঞানটুকু পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেন !
লানতপ্রাপ্ত হিহুদী জাতির মত আমাদের প্রিয় এই মুসলমান ভাইগন শীয়াদের বিরুদ্বে বায়বীয় অভিযোগ আনতে যেয়ে মনের অজান্তেই নিষ্পাপ ফেরেশতাকে আমানত খেয়ানতকারী হিসাবে আখ্যায়িত করে ফেলেন !
যাইহোক ,
পরিশেষে একটি কথা বলেই আপাঃতত বিদায় যে , সর্বশেষ নবী ও রাসুল হলেন আমাদের প্রানপ্রিয় হযরত মুহাম্মাাদ (সাঃ) এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) কতৃক মনোনীত ও নির্বাচিত প্রথম ইমাম হলেন আমাদের প্রানপ্রিয় হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (আঃ) ।
পাঠক ,
বাজারে প্রচলিত বায়বীয় ও হাস্যকর ডাঁহা মিথ্যা একটি অভিযোগ সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা পেয়েছেন ।
দুঃখজনক ভাবে বলতে হয় যে , বার ইমামীয়া শীয়াদের প্রতি যারা দীর্ঘকালের বিদ্বেষ পোষন করে থাকেন একমাত্র তারাই ইহুদী চক্রের মিথ্যা সুরে সুর মিলিয়ে কাপুরুষের ন্যায় বার ইমামীয়া শীয়াদের বিরুদ্বে অনুরুপ বায়বীয় ডাঁহা মিথ্যা অভিযোগ করে থাকেন ।
SKL