শিয়া এবং আহলে সুন্নতের হাদীসসমূহে নওরোজের আনুষ্ঠানাদির বিরুদ্ধে তেমন কোন বিশ্বস্ত রেওয়ায়েত নেই। বরং এই পছন্দনীয় রেওয়াজকে ইসলামও গুরুত্ব দিয়েছে।

হযরত আদম (আ.) হতে শেষ নবী পর্যন্ত দ্বীন হচ্ছে একটাই এবং শুধুমাত্র বিভিন্ন সময়ে মানুষের শিক্ষা ও বিবেক বুদ্ধির উন্নতির সাথে এই দ্বীন পরিপূর্ণতা ও প্রসার লাভ করেছে। পরিপূর্ণতার এই পথে গোত্রগত, গোষ্ঠীগত ও জাতিগত সুন্নতসমূহ ও রেওয়াজকে উপড়ে

ফেলাকে লক্ষ্য করা হয়নি, শুধুমাত্র মানুষের প্রকৃতিগত মূল নীতির বিরুদ্ধে কোন কিছুর বিরোধিতা করেছে।

তাই সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ দ্বীনের আবির্ভাবও পছন্দনীয় সুন্নতসমূহ ও রেওয়াজের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার সাথেই ছিল। আর পবিত্র ইসলামও আরবদের অনেক সঠিক সুন্নতসমূহ যেমন: (যে চারটি মাসে যুদ্ধ করা নিষেধ) হারাম মাসগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং (পূর্বের) দীয়াত বা রক্তমূল্যর পরিমাণ ও পরিমাপ -কে স্বীকৃতি দান করার সাথে তার অনুমোদনও দিয়েছে।

অতীতের সঠিক সুন্নতসমূহকে মেনে নেওয়া সব সময় ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল এবং আছে। হযরত আলী (আ.) যেমন মালেকে আশতারকে লিখিত নিজের পত্রে উল্লেখ করেন: পছন্দনীয় আইন ও রেওয়াজকে পরিবর্তন করো না যাকে উম্মতের মহান ব্যক্তিবর্গ সেভাবেই আচরণ করেছেন এবং তার মাধ্যমে জনগণকে এক সাথে জড় করেছেন

ইমাম আলীর (আ.) এই মূল্যবান কথার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্বপুরুষদের পছন্দনীয় সুন্নতসমূহের প্রতি মনোযোগ দেওয়া একটি প্রয়োজনীয় বিষয় বলে মনে হয়। আর যেখানে কোন সুন্নত বিশৃঙ্খলা, ফিতনা, ফেসাদ ও ধ্বংসাত্মক না হয় অথবা কোন বিদাত বলে গণনা করা না হয়, তাকে প্রত্যাখ্যান করা যায় না।

নওরোজও ইরানিদের কাছে একটি প্রাচীনতম রেওয়াজ যার মধ্যে ইসলামি দৃষ্টিতে একটি পছন্দনীয় সুন্নতও রয়েছে, আর সেটা হচ্ছে « صله رحم » বা আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা যা এই দিনগুলোতে বার বার করা হয়ে থাকে। এই কারণে প্রাথমিক দৃষ্টিতেই বলা যেতে পারে যে এর সাথে কুসংস্কারের প্রচার – প্রসার বা ধর্মের মৌলিক কোন বিধানের বিরোধিতা নেই।

অন্য দিক দিয়ে, শিয়া ও আহলে সুন্নতের ইসলামি গ্রন্থসমূহে হাদীসগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, নওরোজ সম্পর্কে দুটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। কিছু রেওয়ায়েত বা হাদীস নওরোজের রীতি নীতিকে সঠিক বলে প্রমাণিত করে আর কিছু হাদীস তার নিন্দা করে।

শিয়াদের হাদীস গ্রন্থে বিশেষ করে মশহুর &
laquo;
كتب اربعه » কুতুবে আরবাআ বা চারটি গ্রন্থের দুটিতে অর্থাৎ শেখ কুলাইনির লেখা কাফি ও শেখ সাদুকের লেখা মান লা ইয়াহ যুরুহুল ফাক্বিহ -তে নওরোজের পক্ষে হাদীস রয়েছে যেখানে নওরোজকে « نيروز » বা ভালোত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

শেখ তুসির লেখা বই « مصباحالمتهجّد » (মেসবাহুল মোতাহাজ্জেদ) ও আল্লামা মজলিসির (রাঃ) « بحارالانوار » (বিহারুল আনওয়ার) বইতেও এর সুনাম করা হয়েছে। আর এ দৃষ্টিভঙ্গি নওরোজের রেওয়াজের বিষয়ে ইসলামের অনুমোদনকে দৃঢ়তর করে।

আহলে সুন্নতের মশহুর « صحاح ستّه » সেহাহ সিত্তাহ বা ছয়টি গ্রন্থের মধ্যে সবচেয়ে বিশ্বস্ত « صحيح بخاري »  (সহীহ বুখারি)-তেও আমিরুল মুমেনিন হযরত আলী (আ.) হতে এটি হাদীস নওরোজের মহিমা কির্তনে বর্ণনা করা হয়েছে। অবশ্য জনাব বুখারি তার « تاريخ الكبير » (তারিখুল কাবির) গ্রন্থেও একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যেখানে হযরত আলী (আ.) এইসব দিনে কিছু কিছু উপহার গ্রহণ করতে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছেন।

আর দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গি যেখানে নওরোজকে নিন্দা করা হয়েছে, এ সম্পর্কেও শিয়া গ্রন্থে কিছু হাদীস রয়েছে যার মধ্যে « لبّ اللباب » (লুব্বুল লুবাব) বইয়ের লেখক জনাব কুতুবুদ্দিন রাওয়ান্দি একটি হাদীসের কথা বলা যেতে পারে। এই হাদীসে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল কোরবানকে নওরোজ ও « مهرگان » (মেহরেগান) ঈদের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছে।

কিন্তু সব মিলিয়ে নওরোজ সম্পর্কে সব রেওয়ায়েত ও হাদীসের পর্যলোচনা করলে বুঝা যায় যে, ইরানিদের এই রেওয়াজ শরিয়াতের দৃষ্টিতে হারাম নয়। তাছাড়া ইতিহাসের পাতাতেও নওরোজের রেওয়াজ ও তার রীতি নীতি বিষয়টিতে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দদের বিরোধিতা সম্পর্কে কোন কিছু উল্লেখ করা হয়নি। অতঃএব আমরা বলতে পারি যে, নওরোজের বিরোধিতা সম্পর্কে ধর্মের সাধারণ দলিল প্রমাণের প্রয়োজন নেই বরং নওরোজকে তার ভাল দিকগুলোর « صله رحم » বা আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা -এর কারণে ধর্মীয় আচার – অনুষ্ঠানে হিসেব করা যেতে পারে।

Source: http://www.hussainidalan.com