মারওয়ান ইবনে হাকাম জামালের যুদ্ধে বন্দী হয়ে হাসান ও হোসাইনকে অনুনয় বিনয় করে অনুরোধ করেছিল যেন তারা আমিরুল মোমেনিনের কাছে তার অনুকূলে সুপারিশ করেন। তাদের সুপারিশের কারণেই আমিরুল মোমেনিন মারওয়ানকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। সুপারিশকালে মহান ভ্রাতৃদ্বয় বলেন,
“হে আমিরুল মোমেনিন, সে আপনার বায়াত গ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করে।” তখন আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ উসমানের হত্যার পর সে কি আমার বায়াত গ্রহণ করে নি? এখন আর তার বায়াতের কোন প্রয়োজন আমার নেই, কারণ তার হাত হলো ইহুদির হাত। যদি সে আমার হাত ধরেও বায়াত গ্রহণ করে। তবুও সে কিছুক্ষণ পরে তা ভঙ্গ করবে। সে একদিন ক্ষমতা পাবে। তবে ততক্ষণ টিকে থাকবে যতক্ষণ কুকুর নিজের নাক চাটে (স্বল্পক্ষণের জন্য)। সে চারটি ভেড়ার পিতা হবে (তারাও শাসন করবে)। সে এবং তার পুত্রদের দ্বারা জনগণ লাল দিবস (দুঃখ-কষ্ট) পোহাবে” ।
১। মারওয়ান ইবনে হাকাম উসমানের ভ্রাতুষ্পপুত্র ও জামাতা। তার শরীরের পাতলা গড়ন ও কর্মকান্ডের জন্য তাকে বলা হতো ‘খায়ত বাতিল’ (অন্যায়ের সূতা)। যখন আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান আমর ইবনে সাঈদকে হত্যা করলো তখন তার ভ্রাতা ইয়াহিয়া বলেছিলঃ
হে খায়ত বাতিলের পুত্র, তুমি আমরকে প্রতারণা করেছে এবং তোমাদের মতো লোকেরা প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার ওপর প্রতিষ্ঠিত | মারওয়ানের পিতা হাকাম যদিও মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তবুও তার আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ড রাসুলকে ব্যথাতুর করতো। রাসুল (সঃ) অভিসম্পাত দিয়ে বলেছিলেন, “এ লোকটির বংশধরের হাতে আমার লোকদের অনেক দুঃখ-দূরদর্শা ঘটবে।” অবশেষে তার গুপ্ত চক্রান্ত বেড়ে যাওয়ায় রাসুল (সঃ) তাকে মদিনা থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছিলেন। সে তার পুত্র মারওয়ানকে নিয়ে তায়েফের ওয়াজ উপত্যকায় চলে গিয়েছিল। রাসুলের (সঃ) জীবদ্দশায় তাকে আর মদিনায় প্রবেশ করতে দেয়া হয় নি। আবু বকর ও উমর একইভাবে তাকে মদিনায় আসতে দেয় নি। কিন্তু উসমান খলিফা হয়েই তাদের উভয়কে ডেকে নিয়ে এসেছিল এবং মারওয়ানকে এত উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত করেছিল যে, খেলাফতের লাগাম মারওয়ানের হাতে চলে গিয়েছিল। এরপর অবস্থা তার অনুকূলে এমনভাবে গিয়েছিল যে, মুয়াবিয়া ইবনে ইয়াজিদের পর সে মুসলিম জাহানের খলিফা হয়েছিল। কিন্তু চার মাস দশ দিন (মতান্তরে নয় মাস আঠার দিন) সে খলিফা ছিল। তার স্ত্রী তার মুখে বালিশ চেপে ধরে তাকে হত্যা করেছিল। যে চার পুত্রের কথা আমিরুল মোমেনিন বলেছিলেন, কারো কারো মতে তারা হলো আবদুল মালেক ইবনে মারওয়ান-এর চার পুত্র যথা – ওয়ালিদ, সুলায়মান, ইয়াজিদ ও হিশাম— এরা একের পর এক খলিফা হয়েছিল এবং কলঙ্কিত ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলো। আবার কারো কারো মতে ওই চার ভেড়া হলো মারওয়ানের চার পুত্র যথা – খলিফা আবদুল মালিক, মিশরের গভর্নর আবদুল আজিজ, ইরাকের গভর্নর বিশর ও জাজিরোহর গভর্নর মুহাম্মদ।