আল্লাহর ভয়ের গুরুত্ব, কবরের নির্জনতা এবং আহলুল বাইতের অনুরাগীর মৃত্যু শহিদের মতো হওয়া সম্পর্কে আল্লাহর পুরস্কারের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আমি তাঁর প্রশধ্বংসা করি এবং তাঁর অধিকার পরিপূরণের জন্য
আমি তার সাহায্য প্রার্থনা করি। তাঁর একটা শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী আছে। তার মহত্ত্ব চির অম্লান। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর বান্দা ও রাসুল। তিনি আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করার জন্য মানুষকে আহবান করেছিলেন এবং আল্লাহর দ্বিনের খাতিরে তাঁর শক্ৰদের সাথে লড়াই করে তাদেরকে পরাভূত করেছিলেন। জনগণ তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য একজোট হয়েছিল এবং তাঁর আলো নিভিয়ে দেয়ার জন্য তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা তাকে প্রতিহত করতে পারে নি। সুতরাং তোমরা আল্লাহর ভয় অনুশীলন কর। কারণ এর একটা রশি আছে যার পাক খুবই শক্ত এবং এর চূড়া সুউচ্চ ও অভেদ্য। আমলে সালেহা দ্বারা অনুশোচনার মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে দ্রুত এগিয়ে যাও এবং মৃত্যু উপস্থিত হবার আগেই তার জন্য প্রস্তুত থাক। কারণ বিচার দিন হলো চূড়ান্ত অবস্থা। শিক্ষাদানের জন্য এটাই যথেষ্ট যে বুঝে এবং শিক্ষা গ্রহণের জন্য এটাই যথেষ্ট যে জানে না। কবরে পৌছার আগে কবরের সংকীর্ণতা, একাকীত্বের দুঃখ, পরকালের পথের ভয়, ভীতির তীক্ষ্ম বেদনা, হাড়গোড়ের বিচ্ছিন্নতা, কানের বিধিরতা, কবরের অন্ধকার, প্রতিশ্রুত শাস্তির ভয় — এসব বিষয়ে কি তোমাদের কোন ধারণা আছে? কাজেই, হে আল্লাহর বান্দাগণ, আল্লাহকে ভয় করা— ভয় কর, কারণ এ দুনিয়া তোমাদের সাথে গতানুগতিক আচরণই করছে। কিন্তু তুমি আর বিচার-দিন এক রশিতে বাধা। যদিও দুনিয়া নানা ওজার দেখিয়ে এর পাপরাশি নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছে এবং তোমাদেরকে এর পথে নিয়ে এসেছে, যদিও এটা সকল প্রকার লোভ-লালসা নিয়ে তোমাদের দিকে এগিয়ে এসেছে এবং তোমাদেরকে সাদরে বুকে টেনে নিয়েছে, তবুও মৃত্যুর সাথে সাথেই এটা তোমাদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাবে এবং এর কোল থেকে তোমাদেরকে ছুড়ে ফেলে দেবে। এটা এমনভাবে তোমাদেরকে ত্যাগ করবে, মনে হবে যেন একটা দিন গত হয়ে গেছে অথবা একটা মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। এর নতুন জিনিসগুলো যেন পুরাতন হয়ে গেছে এবং মোটাগুলো যেন চিকন হয়ে গেছে। তারা (মৃত ব্যক্তিগণ) তখন সংকীর্ণ জায়গায়, বড় জটিল অবস্থায় তীব্ৰ বেদনাদায়ক আগুনে থাকবে যেখানে ক্ৰন্দন হবে বিলাপাময়, শিখা দাউ দাউ করে ওঠবে, শব্দ হবে প্ৰকম্পিত, দহন হবে অতি তীব্র যা কখনো প্রশমিত হবে না। এর জ্বালানি প্ৰজ্বলিত, এর ভয় শঙ্কাকুল, এর গর্তগুলো গুপ্ত, এর চতুর্দিক অন্ধকার, এর পাত্রগুলো জলন্ত এবং এর প্রতিটি জিনিস ঘূণ্য ও পুঁতি গন্ধময়। এবং যারা তাদের প্রভুর ক্ৰোধকে ভয় করে তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হবে উদ্যানের সঙ্গীদের কথা (কুরআন-৩৯ ? ৭৩) তারা (যারা প্রভুর ক্রোধকে ভয় করে) লাঞ্চনা থেকে নিরাপদ, শাস্তি থেকে দূরে এবং আগুন থেকে
তাদেরকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের বাসস্থান শান্তিপূর্ণ এবং তারা তাদের আশা-আকাঙ্খা ও থাকার স্থান নিয়ে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হবে। এরা হলো সেসব লোক যারা পৃথিবীতে সৎ আমল করেছে, তাদের চোখ ছিল অশ্রুপূর্ণ। আল্লাহর ভয়ে ও তাঁর ক্ষমা প্রার্থনায় তাদের রাত দিনের মতোই কেটেছে এবং দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকীত্বের কারণে তাদের দিন রাতের মতোই ছিল। পরিণামে তাদের পুরস্কার ও বিনিময়ের জন্য আল্লাহ বেহেশত তৈরি করেছিলেন যা তাদের চিরস্থায়ী রাজ্য ও চির-আনুকূল্য। ” তারাই সে স্থানের জন্য সবচাইতে যোগ্য ও উপযুক্ত (কুরআন-৪৮ ও ২৬) হে আল্লাহর বান্দাগণ, যেদিকে মনোযোগী হলে কেউ কৃতকার্য হতে পারে সেদিকে মনোযোগী হও এবং যাতে কেউ লোকসানের সম্মুখীন হয় তা পরিহার কর। সৎ আমল নিয়ে মৃত্যুর দিকে দ্রুত এগিয়ে যাও, কারণ অতীতে যা করেছে। তজ্জন্য তোমাদেরকে হিসাব দিতে হবে এবং যা কিছু সৎ আমল পূর্বাহ্নে প্রেরণ করবে তা শুধু তোমাদের নিজ নিজ হিসাবেই জমা হয়ে থাকবে। পৃথিবীতে এমনভাবে আচরণ করা যেন সেই ভীতিপ্ৰদ মুহুর্ত (মৃত্যু) এসে গেছে যাতে তোমরা কৃত পাপ মােচন করার জন্য সৎ আমলের আর সুযোগ পাবে না। আল্লাহ তার ও তার রাসুলের আনুগত্য করার জন্য আমাদেরকে ও তোমাদেরকে তৌফিক দান করুন এবং তার রহমতের দ্বারা আমাদেরকে ও তোমাদেরকে ক্ষমা করুন ।
মাটির সাথে লেগে থাক (অর্থাৎ সহিষ্ণু হও), পরীক্ষায় ধৈর্য ধারণ কর, জিহবার সাথে সাথে (অর্থাৎ কথায় কথায়) হাত ও তরবারি নেড়ো না এবং যে বিষয়ে আল্লাহ্ ত্রা করতে বলেন নি সে বিষয়ে তাড়াহুড়া করো না। কারণ তোমাদের মধ্যে কেউ যদি শয্যায় মৃত্যুবরণ করে তখন যদি তার আল্লাহ, রাসুল ও রাসুলের আহলুল বাইতের অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে জ্ঞান থাকে। তবে সে শহিদ হিসাবে মৃত্যুবরণ করবে। তার পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহর হাতে। যেসব সৎ আমল করার জন্য তার ইচ্ছা ছিল (কিন্তু করতে পারে নি) সেসব আমলেরও পুরস্কার ও বিনিময় তাকে দেয়া হবে। নিশ্চয়ই, প্রত্যেক জিনিসের সময় ও সীমা নির্ধারিত রয়েছে।