তাওহীদ : আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য এক ও একক সর্বাধিপতি প্রতিপালক। তিনি রাজত্ব, সৃষ্টি, ধন-সম্পদ ও কর্তৃত্বের অধিপতি। এতে কোন অংশীদার নেই। এককভাবে তিনিই প্রভু। এবাদত, আনুগত্য, আশা-ভরসা, সাহায্য ও ফরিয়াদের

ক্ষেত্রে অন্য কাউকে তার সাথে অংশীদার করা জায়েজ নেই। তিনি সুন্দর নামসমূহ ও মহান গুণাবলির অধিকারী, তার সদৃশ কোন জিনিস নেই। তিনি সর্ব-শ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।

তাওহীদের মর্যাদা ও আলামত

১. তাওহীদ আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ ও তার আনুগত্যের সর্বোত্তম ও সর্ব শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। এ তাওহীদের বার্তা দিয়েই তিনি রাসূলদের প্রেরণ করেছেন এবং এর ব্যাখ্যার জন্য কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। এরশাদ হচ্ছে-

كِتَابٌأَنْزَلْنَاهُإِلَيْكَلِتُخْرِجَالنَّاسَمِنَالظُّلُمَاتِإِلَىالنُّورِ. (سورةإبراهيم:১)

‘এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাজিল করেছি-যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন।‘

অর্থাৎ শিরকের অন্ধকার হতে তাওহীদের আলোতে।

২. তিনি তাওহীদের পরীক্ষা নেয়ার লক্ষ্যে জিন জাতি, মানবজাতি, ইহকাল-পরকাল, জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। যে এ তাওহীদ গ্রহণ করবে সে সৌভাগ্যবান, চিরসুখী। আর যে তাওহীদ প্রত্যাখ্যান করবে সে হতভাগা, চির দুঃখী।

৩. তাওহীদ বিহীন আমল যত বড় কিংবা যত ভালই হোক-অগ্রাহ্য, পরিত্যক্ত ও মূল্যহীন। এরশাদ হচ্ছে-

وَلَوْأَشْرَكُوالَحَبِطَعَنْهُمْمَاكَانُوايَعْمَلُونَ. (سورةالأنعام:৮৮)

‘যদি তারা শিরক করত, তবে তাদের কাজকর্ম তাদের জন্যে ব্যর্থ হয়ে যেত’।

৪. নবী-রাসূলগণ তাওহীদের অনুশীলন, বাস্তবায়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে কষ্ট সহ্য করেছেন, তাদের অনুসারীগণ পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। কেউ নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। কেউ ত্যাগ করেছেন নিজের ধন-সম্পদ ও ইজ্জত ও মান-সম্ভ্রম। কেউ তার প্রয়োজনীয় আহার হতে বঞ্চিত হয়েছেন। কেউ বিসর্জন দিয়েছেন আল্লাহ তাআলার রাস্তায় নিজের আত্মমর্যাদা পর্যন্ত। কেউ স্বীয় দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন… ইত্যাদি।

তাওহীদের নিদর্শন বা আলামত

যেহেতু অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত তাওহীদ-কল্যাণকর, হিতকর ও সুউচ্চ স্থানের অধিকারী সেহেতু তার আল্লাহ প্রদত্ত বিস্তৃত কল্যাণ, প্রচুর সুফল ও অনেক উপকার দুনিয়া-আখেরাত তথা উভয় জগতে মোহনীয়, আকর্ষণীয় ও লোভনীয়। নিম্নে প্রধান প্রধান কতিপয় সুফলের নমুনা তুলে ধরা হল :-

প্রথমত : দুনিয়াবী সুফল : তাওহীদের বদৌলতে আমরা বিস্তর-বেহিসাব, সুফল-কল্যাণ অর্জন করে থাকি। তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ নিম্নরূপ :

১. তাওহীদ মানে সত্য ও সততাকে আঁকড়ে ধরে ন্যায় ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা। সঠিক ও সরল পথে পরিচালিত হওয়া। মূর্খতা, কুসংস্কার, ধারণাব্রতীতা ও ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে থাকা। এরশাদ হচ্ছে-

ذَلِكَبِأَنَّاللَّهَهُوَالْحَقُّوَأَنَّمَايَدْعُونَمِنْدُونِهِالْبَاطِلُ. (سورةلقمان:৩০)

‘এ দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, আল্লাহ তাআলাই সত্য এবং আল্লাহ তাআলা ব্যতীত তারা যাদের পূজা করে সব মিথ্যা’।

২. তাওহীদ মানে জান-মালের পূর্ণ নিরাপত্তা অর্জন করা। অবৈধভাবে কারো উপর অত্যাচার বা সীমা-লঙ্ঘন করা হতে সম্পূর্ণ রূপে বিরত থাকা। রাসূল সা. বলেন-

أمرتأنأقاتلالناس،حتىيقولوالاإلهإلاالله،فإذاقالوهاعصموامنيدماءهموأموالهمإلابحقها.

‘আমি মানুষের সাথে জেহাদ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি-যতক্ষণ পর্যন্ত তারা لاإله إلا الله না বলবে। যখন তারা لاإله إلا الله বলবে, আমার থেকে তাদের জান-মাল নিরাপদ করে নিবে। তবে শরিয়তের বিধি মোতাবেক-শাস্তির উপযুক্ত-হলে ভিন্ন কথা’।

৩. তাওহীদ মানে উৎকৃষ্ট জীবন ও প্রভূত কল্যাণ অর্জন করা। এরশাদ হচ্ছে-

مَنْعَمِلَصَالِحًامِنْذَكَرٍأَوْأُنْثَىوَهُوَمُؤْمِنٌفَلَنُحْيِيَنَّهُحَيَاةًطَيِّبَةً. (سورةالنحل:৯৭)

‘যে সৎকর্ম সম্পাদন করে সে ঈমানদার পুরুষ হোক বা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব’।

পক্ষান্তরে তাওহীদ প্রত্যাখ্যান করে যে নিমজ্জিত থাকে শিরকের অন্ধকারের অতল গহ্বরে-সে খুবই ভাগ্যহত, আল্লাহ তাআলার রহমত হতে বিতাড়িত এবং সংকীর্ণতার দুর্বিষহ জীবন যাপনে বাধ্য। এরশাদ হচ্ছে-

وَمَنْأَعْرَضَعَنْذِكْرِيفَإِنَّلَهُمَعِيشَةًضَنْكًاوَنَحْشُرُهُيَوْمَالْقِيَامَةِأَعْمَى.(سورةطه:১২৪)

‘এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব’।

৪. তাওহীদ মানে সাম্য-মৈত্রী ও ন্যায়-ইনসাফের বাস্তব অনুশীলন। কারণ তাওহীদ অনুসারীদের সামনে থাকে এক পরম ও অভীষ্ট লক্ষ, মহৎ উদ্দেশ্য-যার জন্য সে দুর্গম পথ অতিক্রম করছে। অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ও তায়ালার অপার সান্নিধ্য। তদুপরি তার থাকে সঠিক ও নির্ভুল দিক নির্দেশনা যার উপর দিয়ে সে নির্বিঘ্নে পথ চলে ; অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার কিতাব, রাসূল সা. এর সুন্নত। সে উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করে পারংগমতার সাথে স্বীয় ব্রত পালন করে। এরশাদ হচ্ছে-

إِنَّأَكْرَمَكُمْعِنْدَاللَّهِأَتْقَاكُمْ. (الحجرات:১৩)

‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার নিকট সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেজগার’। রাসূল সা. বলেন-

إناللهلاينظرإلىصوركموأجسامكم،ولكنs ينظرإلىقلوبكموأعمالكم.

আল্লাহ তাআলা তোমাদের চেহারা ও শরীর পর্যবেক্ষণ করেন না। তিনি পর্যবেক্ষণ করেন তোমাদের অন্তর ও আমল সমূহ

৫. তাওহীদ মানে মানুষকে মানুষের দাসত্ব হতে মুক্ত ও স্বাধীন করা। কারণ তাওহীদ বা একত্ববাদ-এর অর্থ একমাত্র আল্লাহ তাআলার বশ্যতা, অধীনতা ও দীনতা স্বীকার করা। তার সৃষ্টি জীবের আনুগত্য ও পূজ্যতা পরিহার করা। তদুপরি তাওহীদ মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ও বোধশক্তিকে বিশ্বজগৎ ও এর ভিতর সৃষ্ট যাবতীয় বস্তু-জীব-উদ্ভিদ সম্পর্কে মুশরিক বা পৌত্তলিকদের আবিষ্কৃত-অনুসৃত কুসংস্কার ও বানোয়াট কল্প-কাহিনী হতে মুক্ত ও পরিশুদ্ধ করে। মানুষের চিত্ত ও চেতনাকে পরাক্রমশালী আল্লাহ ব্যতীত সকলের সামনে হীনতা নীচতা ও আত্মসমর্পণ হতে বিরত রাখে। সর্বোপরি মানুষের জীবন চক্রকে সীমা-লঙ্ঘনে অভ্যস্ত, প্রভুত্বের দাবিদার ও নববী আহ্বানের সাথে যুদ্ধ ঘোষণাকারীদের আধিপত্য হতে মুক্ত করে।

৬. তাওহীদ মানে ভারসাম্যপূর্ণ পরিশীলিত, পরিমার্জিত ব্যক্তিত্ব গঠন করা। কারণ তাওহীদ সৃষ্টি কুলের সামনে এমন এক লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও গন্তব্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছে-যা আল্লাহমুখী ও তার সন্তুষ্টির জিম্মাদার। তাওহিদে বিশ্বাসী ব্যক্তি মন-মস্তিষ্ক ও সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে-যা তার অন্তরে প্রশান্তি, হৃদয়ে অবিচলতা ও আত্মায় অনাবিল সুখ সযত্নে নিয়ে আসে। পক্ষান্তরে মূর্তিপূজকদের উপাস্য-হাজারো প্রভু তাদের অন্তরসমূহকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন বহুধা বিভক্ত করে রাখে। তারা সর্বদাই নানান পদ্ধতিতে তাদের উপাস্য-প্রভুদের সন্তুষ্ট করার নিমিত্তে কিংকর্তব্যবিমূঢ় থাকে। আল্লাহ তাআলা ইউসুফ আ.-এর উপদেশ উল্লেখ করেন-

يَاصَاحِبَيِالسِّجْنِأَأَرْبَابٌمُتَفَرِّقُونَخَيْرٌأَمِاللَّهُالْوَاحِدُالْقَهَّارُ. (سورةيوسف:৩৯)

হে কারাগারের সঙ্গীরা! পৃথক পৃথক অনেক উপাস্য ভাল, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? অন্যত্র বলেন-

ضَرَبَاللَّهُمَثَلًارَجُلًافِيهِشُرَكَاءُمُتَشَاكِسُونَوَرَجُلًاسَلَمًالِرَجُلٍهَلْيَسْتَوِيَانِمَثَلًاالْحَمْدُلِلَّهِبَلْأَكْثَرُهُمْلَايَعْلَمُونَ. (سورةالزمر:২৯)

আল্লাহ তাআলা এক দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন : এক লোকের উপর বিরোধী কজন মালিক রয়েছে, আরেক ব্যক্তির প্রভু মাত্র একজন-তাদের উভয়ের অবস্থা কি সমান ? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না

৭. তাওহীদ আস্থাশীল দৃঢ় অন্তকরণ তৈরি করে। কারণ, তাওহীদ কানায় কানায় পূর্ণ করে দেয় মানুষের অন্তকরণকে আল্লাহ তাআলার আস্থা ও তার উপর নির্ভরতা দ্বারা। সে তার নিঃসঙ্গতা ও গোপনীয়তায় একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। যেহেতু সে জানে আল্লাহ তাআলা ছাড়া এ বিশ্ব পরিমণ্ডলে কেউ হস্তক্ষেপের অধিকার রাখে না। কিংবা উপকার বা অপকার কিছুই করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা ছাড়া মানবজাতি যাদের এবাদত-উপাসনা করে তারা স্বয়ং নিজেদের লাভ ক্ষতির যোগ্যতা রাখে না। অন্যদের কল্যাণ-অকল্যাণ করার কোন প্রশ্নই আসে না। আল্লাহ তাআলার ওলীগণ নির্বিঘ্নে অন্তর ও আস্থাশীলতার অধিকারী হয়ে থাকেন, যার বাস্তব নমুনা আল্লাহ তাআলার নবী নূহ আ.। তিনি তার সম্প্রদায়কে বলেছেন-

يَاقَوْمِإِنْكَانَكَبُرَعَلَيْكُمْمَقَامِيوَتَذْكِيرِيبِآَيَاتِاللَّهِفَعَلَىاللَّهِتَوَكَّلْتُفَأَجْمِعُواأَمْرَكُمْوَشُرَكَاءَكُمْثُمَّلَايَكُنْأَمْرُكُمْعَلَيْكُمْغُمَّةًثُمَّاقْضُواإِلَيَّوَلَاتُنْظِرُونِ. (سورةيونس:৭১)

হে আমার সম্প্রদায়, যদি তোমাদের মাঝে আমার অবস্থান এবং আল্লাহ তাআলার আয়াতসমূহের মাধ্যমে নসিহত করা ভারী বলে মনে হয়ে থাকে, তবে আমি আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করছি। এখন তোমরা সবাই মিলে নিজেদের কর্ম সাব্যস্ত কর এবং এতে তোমাদের শরিকদেরকে সমবেত করে নাও। যাতে তোমাদের মাঝে নিজেদের কাজের ব্যাপারে কোন সন্দেহ-সংশয় না থাকে। অতঃপর আমার সম্পর্কে যা কিছু করার করে ফেল এবং আমাকে অবকাশ দিয়ো না

এর উত্তম নমুনা আল্লাহ তাআলার নবী ইব্রাহীম আ.। যখন তার সম্প্রদায় মূর্তি নিয়ে সংঘটিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে শাসাচ্ছিল ও ভীতি প্রদর্শন করছিল। তখন তিনি বলেছেন-

وَلَاأَخَافُمَاتُشْرِكُونَبِهِإِلَّاأَنْيَشَاءَرَبِّيشَيْئًاوَسِعَرَبِّيكُلَّشَيْءٍعِلْمًاأَفَلَاتَتَذَكَّرُونَ﴿৮০وَكَيْفَأَخَافُمَاأَشْرَكْتُمْوَلَاتَخَافُونَأَنَّكُمْأَشْرَكْتُمْبِاللَّهِمَالَمْيُنَزِّلْبِهِعَلَيْكُمْسُلْطَانًافَأَيُّالْفَرِيقَيْنِأَحَقُّبِالْأَمْنِإِنْكُنْتُمْتَعْلَمُونَ﴿৮১الَّذِينَآَمَنُواوَلَمْيَلْبِسُواإِيمَانَهُمْبِظُلْمٍأُولَئِكَلَهُمُالْأَمْنُوَهُمْمُهْتَدُونَ. (سورةالأنعام:৮০-৮২)

তোমরা যাদেরকে শরিক কর, আমি তাদেরকে ভয় করি না-তবে আমার পালনকর্তাই যদি ভিন্ন কিছু ইচ্ছা করেন (তবে ভিন্ন কথা)। আমার পালনকর্তাই প্রত্যেক বস্তুকে স্বীয় জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে আছেন। তোমরা কি চিন্তা কর না ? যাদেরকে তোমরা আল্লার তাআলার সাথে শরিক করে রেখেছ, তাদেরকে কীরূপে ভয় করব, অথচ তোমরা ভয় করোনা যে তোমরা আল্লাহ তাআলার সাথে এমন বস্তুকে শরিক করছ, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। অতএব, উভয় সম্প্রদায়ের মাঝে শাস্তি লাভের অধিক যোগ্য কে, যদি তোমরা জ্ঞানী হয়ে থাক ?যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শেরেকীর সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যই শান্তি এবং তারাই সুপথগামী। আরো নমুনা নবী হুদ আ.। যখন তাকে বলা হয়েছিল-

إِنْنَقُولُإِلَّااعْتَرَاكَبَعْضُآَلِهَتِنَابِسُوءٍ. (سورةهود:৫৪)

বরং আমরা তো বলি যে আমাদের কোন দেবতা তোমার উপরে শোচনীয় ভূত চাপিয়ে দিয়েছে। তিনি এর উত্তরে বলেনে-

إِنِّيأُشْهِدُاللَّهَوَاشْهَدُواأَنِّيبَرِيءٌمِمَّاتُشْرِكُونَ﴿৫৪مِنْدُونِهِفَكِيدُونِيجَمِيعًاثُمَّلَاتُنْظِرُونِ﴿৫৫إِنِّيتَوَكَّلْتُعَلَىاللَّهِرَبِّيوَرَبِّكُمْمَامِنْدَابَّةٍإِلَّاهُوَآَخِذٌبِنَاصِيَتِهَاإِنَّرَبِّيعَلَىصِرَاطٍمُسْتَقِيمٍ﴿سورةهود: ৫৪-৫৬

হুদ বললেন- আমি আল্লাহ তাআলাকে সাক্ষী করেছি আর তোমরাও সাক্ষী থাক যে, আমার কোন সম্পর্ক নাই তাদের সাথে যাদেরকে তোমরা শরিক করছ: তাকে ছাড়া, তোমরা সবাই মিলে আমার অনিষ্ট করার প্রয়াস চালাও, অতঃপর আমাকে কোন অবকাশ দিয়ো না। আমি আল্লাহ তাআলার উপর নিশ্চিত ভরসা করেছি যিনি আমার এবং তোমাদের পরওয়ারদেগার। পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই যা তার পূর্ণ আয়ত্তাধীণ
নয়। আমার পালনকর্তার সরল পথে সন্দেহ নেই

দ্বিতীয়ত : পরকালীন সুফল : যার প্রধান প্রধান কতিপয় শুভ পরিণাম নিম্নে তুলে ধরা হল:

১. তাওহীদ মানে জান্নাতে প্রবেশাধিকার ও জাহান্নাম হতে মুক্তির নিশ্চয়তা :

যে তাওহীদের উপর মৃত্যু বরণ করবে এবং যার নেকির পাল্লা গুনাহের পাল্লা হতে ভারী হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এরশাদ হচ্ছে-

وَالْوَزْنُيَوْمَئِذٍالْحَقُّفَمَنْثَقُلَتْمَوَازِينُهُفَأُولَئِكَهُمُالْمُفْلِحُونَ (سورةالأعراف:৮)

আর সে দিন যথার্থই ওজন করা হবে। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে

তাওহীদের উপর মারা যাওয়ার পরেও যে ব্যক্তির গুনাহের পাল্লা ভারী হবে,সে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাধীন। চাইলে নিরেট মেহেরবাণী দ্বারা তাকে মাফ করে দিতে পারেন। অথবা তারই অনুমতিতে কোন সন্তুষ্ট ভাজনের সুপারিশের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারেন। আর চাইলে তাকে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করতে পারেন, যাতে সে গুনাহ থেকে পাক-সাফ হতে পারে। অতঃপর সে জাহান্নাম হতে বেরিয়ে আসবে। সেখানে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে না। বরং জান্নাতে প্রবেশ করবে। অনুরূপ ভাষ্যই শাফায়াতের হাদিসে পাওয়া যায়। রাসূল সা. বলেন-

فأقول : ياربائذنليفيمنقاللاإلهإلاالله،قال: ليسذلكلك،أوقال: ليسذاكإليكولكنوعزتيوكبريائيوعظمتيلأخرجنمنقاللاإلهإلاالله.

আমি বলব, হে আমার রব, যারা لاإلهإلاالله বলেছে তাদের ব্যাপারে আমাকে সুপারিশ করার অনুমতি দিন। আল্লাহ তাআলা বলবেন, এ কাজ তোমার নয় বা তাদের ব্যাপার নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না। তবে আমার ইজ্জত, অহমিকা ও বড়ত্বের শপথ, যারা لاإلهإلاالله বলেছে তাদেরকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাব।

তাওহীদের বিপরীত হচ্ছে শিরক: শিরক মুশরিক কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করার পথ রুদ্ধ করে দেয়। সে স্থায়ীভাবে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। সে যত আমল সম্পাদন করুক তার কোনো কাজে আসবে না। এরশাদ হচ্ছে-

إِنَّهُمَنْيُشْرِكْبِاللَّهِفَقَدْحَرَّمَاللَّهُعَلَيْهِالْجَنَّةَوَمَأْوَاهُالنَّارُوَمَالِلظَّالِمِينَمِنْأَنْصَارٍ. (سورةالمائدة:৭২)

নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই। আয়েশা রা. এর হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন-

قلتيارسولالله! ابنجدعان،كانفيالجاهليةيصلالرحمويطعمالمسكينفهلذلكنافعه؟قال: (لاينفعه،إنهلميقليوما: رباغقرليخطيئتييومالدين.)

আমি বলেছি হে আল্লাহর রাসূল সা. ইবনে জাদআন ইসলাম পূর্বযুগে- জাহিলিয়াতে- আত্মীয়তার বন্ধন প্রতিষ্ঠিত করতো, অভাবগ্রস্তদের খাদ্য প্রদান করতো, এর দ্বারা কি সে উপকৃত হবে? তিনি উত্তর দিলেন: এ আমলগুলো তাকে কোন উপকৃত করতে পারবে না। যেহেতু সে কোন দিন বলেনি, رباغفرليخطيئتييومالدين (হে আমার রব! কেয়ামতের দিন আমার গুনাহ মাফ কর।)

২. তাওহীদের বদৌলতে নেক কাজের মূল্যায়ন ও গ্রহণযোগ্যতা মিলে :

তাওহীদ দ্বীন বা ধর্মের মূল ভিত্তি এবং ঐ মূল স্তম্ভ যার উপর মিল্লাত বা ধর্মের গোড়াপত্তন হয়েছে। যে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন তাওহীদ নিয়ে আসবে তার অন্যান্য আমলের মূল্যায়ন করা হবে। আর যে তাওহীদসহ আসতে পারবে না, তার সমস্ত আমল বিনষ্ট হবে এবং তা অস্তিত্বহীন গণ্য করা হবে। এরশাদ হচ্ছে-

وَلَوْأَشْرَكُوالَحَبِطَعَنْهُمْمَاكَانُوايَعْمَلُونَ. (سورةالأنعام:৮৮)

যদি তারা শিরক করে, তবে তাদের কাজকর্ম তাদের জন্যে ব্যর্থ হয়ে যাবে

৩. তাওহীদের ফলে গুনাহ মাফ ও অপরাধ মোচন হয় :

যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের নিকট নির্ভেজাল তাওহীদ ও শিরকের দূরতম সম্পর্ক মুক্ত খাটি আমল নিয়ে আসবে- তার সমস্ত পাপ মোচন করা হবে। তার সকল অপরাধ মাফ করা হবে। আল্লাহ তাআলা হাদিসে কুদসীতে বলেন-

ياابنآدملوأتيتنيبقرابالأرضخطايا،ثملقيتنيلاتشركبيشيئالأتيكبقرابهامغفرة.

হে আদম সন্তান তুমি
যদি দুনিয়ার সমতুল্য পাত্রপূর্ণ অপরাধ নিয়ে আমার কাছে আস, অতঃপর আমার সঙ্গে কোন জিনিসকে শরীক করা থেকে মুক্ত হয়ে আমার সাথে সাক্ষাৎ কর, আমি দুনিয়ার সমতুল্য পাত্রপূর্ণ ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত হব

তদ্রুপ সুসংবাদ এসেছে আমলনামা সংক্রান্ত হাদিসে, যে টিকেটে لاإلهإلاالله. অর্থাৎ কালেমায়ে তাওহীদ থাকবে সে টিকেটটি ওজনের পাল্লাতে গুনাহের নিরানব্বইটি নথিপত্রের উপর ভারী হবে। প্রত্যেকটি নথিপত্রের দৈর্ঘ্য হবে দৃষ্টি সীমা পর্যন্ত।

সূত্রসমূহ:

সূরা ইবরাহিম : ১

সূরা আনআম : ৮৮

সূরা লোকমান : ৩০

সূরা আন নাহল : ৯৭

সূরা ত্বাহা : ১২৪

সূরা আল হুযুরাত : ১৩

সূরা ইউসুফ : ৩৯

সূরা আয যুমার : ২৯

সূরা ইউনুস : ৭১

সূরা আল আনআম : ৮০-৮২

সূরা হুদ : ৫৪

সূরা- হুদ : ৫৪-৫৬

সূরা আল আরাফ : ৮

সূরা : আল মায়েদা ৭২

সূরা : আল আন আম : ৮৮

(মূল: রেডিও তেহরান)