প্রায়ই বিভিন্ন ইসলামী পন্ডিৎবর্গ এই কথাটি বেশ জোরেশোরে বলছেন যে , ইসলামে বংশধারার কোন গুরুত্ব নেই ।
আসলেই এ প্রসংগে এই কথাটি না বলে পারছি না যে , মহানবী (সাঃ) এর ওফাতের পর বর্তমান পর্যন্ত পৃথিবীতে সবথেকে নির্যাতিত বংশ হচ্ছে ইমরানের বংশধর ।
অথচ এই ইমরানের বংশকেই স্বয়ং অাল্লাহ কেয়ামত পর্যন্ত সকল সৃষ্টিজগতের উপর খলীফা , ইমাম ও উলিল আমর হিসাবে মনোনীত ও নির্বাচিত করেছেন ।
সকল মানব ও জ্বীনকে আদেশ দেয়া হয়েছে এই বলে যে , এই ইমরানের বংশের পবিত্র ইমাম (আঃ) গন তথা আহলে বায়েতগনকে যেন সর্বদা আনুগত্য করা হয় ঠিক যেমন রাসুল (সাঃ) এর আনুগত্যের অনুরুপ ।
যাইহোক , সম্মানীয় পাঠক ,
ইসলামে বংশধারার কোন গুরুত্ব নেই বলে যারা চরম মিথ্যাচারিতা করে যাচ্ছেন —
তাদের মিথ্যচারের সংক্ষিপ্ত কিছু জবাব —
“ — নিশ্চয়ই আল্লাহ নির্বাচিত করেছেন আদম ও নুহকে এবং ইব্রাহীমের বংশকে এবং ইমরানের বংশকে সকল জাতির উপরে —- ।“
সুরা – আলে ইমরান / ৩৩ ।
ইবনে আব্বাস হতে বর্নিত হয়েছে ,
রাসুল (সাঃ) হযরত ইব্রাহীমের (আঃ) বংশ থেকে ।
তাই মুহাম্মাদ (সাঃ) ও আলে মুহাম্মাদ অর্থাৎ মুহাম্মাদের (সাঃ) বংশধর হযরত ইব্রাহিমের (আঃ) আহলে বাইত ।
সূত্র – তাফসীরে দুররে মানসুর , ২য় খন্ড ,পাতা-১৭ মিশরে মুদ্রিত ।
এও বর্নিত আছে যে , আলে ইব্রাহিম ,আলে ইমরান ও আলে মুহাম্মাদের (সাঃ) নবুওয়াতের কারনে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হয়েছেন । যেহেতু রাসুল (সাঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ সেহেতু তার পবিত্র বংশধারা অন্যদের চাইতে শ্রেষ্ঠ ।
এছাড়াও এ প্রসংগে আরও বলা যায় যে ,
‘ — ইয়াসীন , শপথ জ্ঞানগর্ভ কোরআনের , আপনি অবশ্যই রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত , আপনি সরল পথে প্রতিষ্ঠিত — ।’
সূরা – ইয়াসীন / ১-৪ ।
এখানে ‘ইয়াসীন’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে ?
ইয়াসীন হলেন মুহাম্মাদ (সাঃ) , আর এতে কোনো সন্দেহ নেই ।
অষ্টম ইমাম রেযা (আঃ) এর ভাষায় , আল্লাহ্ এর মাধ্যমে মুহাম্মাদ ও আলে মুহাম্মাদকে এক শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন ।
এটা এজন্য যে , আল্লাহ্ কারও ওপর সালাম প্রেরণ করেন নি , নবীগণ ব্যতীত ।
মহামহিম আল্লাহ্ ইরশাদ করেছেন –
‘ — সমগ্র বিশ্বের মধ্যে নূহের ওপর সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক —।’
সূরা – সাফফাত / ৭৯ ।
ইমাম রেযা (আঃ) আরও বলেন ,
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে –
‘ — সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক মূসা ও হারুনের ওপর — ।’
সূরা – সাফফাত / ১২০ ।
খেয়াল করুন , আল্লাহ্ কিন্ত বলেন নি , ‘ সালাম বর্ষিত হোক আলে নূহের ওপর ।’
কিংবা বলেন নি , ‘ সালাম বর্ষিত হোক আলে ইবরাহীমের ওপর ’,
কিংবা বলেন নি : ‘ সালাম বর্ষিত হোক মূসা ও হারুনের আলের ওপর’ ।
তবে আল্লাহ্ বলেছেন –
” — সালামুন আলা আলে ইয়াসীন — ” ।
‘ — সালাম বর্ষিত হোক আলে ইয়াসীনের ওপর —-’।
সূরা – সাফফাত / ১৩০ ।
অর্থাৎ আলে মুহাম্মদ ।
সুতরাং উপরে উল্লেখিত পবিত্র কোরআনের আয়াত দ্বারা ষ্পষ্ট ও জোরালোভাবে প্রমান হয় যে , আল্লাহ , রাসুল (সাঃ) ও তাঁর আহলে বায়েতকে (আঃ) বিশ্বের সকল সৃষ্টি থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ বানিয়েছেন অর্থাৎ তাঁরা ফেরেস্তামন্ডলী , জ্বীন , মানুষ , এমন কি অন্যান্য নবীদের ওপরও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ।
তাবরানী বুরাইদা হতে বর্ননা করেছেন , ‘ আমি হযরত আলীর (আঃ) সাথে ইয়েমেনে ছিলাম । যেহেতু তিনি খুমসের মাল ( গনিমতের এক-পঞ্চমাংশ) থেকে একজন দাসী নিয়েছিলেন , সেহেতু তাঁর প্রতি আমার বেশ ক্ষোভ ছিল ।
যখন মদীনায় ফিরে আসলাম তখন রাসুল (সাঃ) এর নিকট তাঁর দাসী সম্পর্কে নালিশ করতে চাইলে কিছু সংখ্যক লোক সমর্থন করল যাতে হযরত আলী (আঃ) এর মর্যাদা রাসুল (সাঃ) এর দৃষ্টিতে অবনত হয়ে যায় ।
রাসুল (সাঃ) এসব কথাবার্তা দরজার পিছন হতে শুনতে পেলেন ।
তিনি ক্রোধান্বিত হয়ে বললেন , ‘ তাঁদের পরিনাম কি হবে যারা আলীর প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে ! স্মরন রেখ , যে আলীর প্রতি ঈর্ষা করে সে আমার প্রতি ঈর্ষা করল এবং যে আলী থেকে পৃথক হল সে আমার থেকেও পৃথক হয়ে গেল । নিশ্চয়ই আলী আমার থেকে , আর আমি আলী থেকে । আলী আমার মাটি থেকে সৃষ্ট , আর আমি ইব্রাহিমের মাটি থেকে এবং আমি ইব্রাহিম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ’।
অতঃপর তিনি (সাঃ) আলোচ্য আয়াতটি পাঠ করে বললেন ,
‘ হে বুরাইদা ! সেই দাসীর তুলনায় আলীর হক আরও অনেক বেশী ’ ।
সূত্র – সাওয়ায়েকে মুহরিক ও তাফসীরে দুররে মানসুর , ৬ষ্ট খন্ড ,পাতা -১৮ ।
SKL