” —– তুমি কি এ আয়াত পড় নি —– আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত ” ——–
তাদের সাথে পথ চলছিল এমন কিছু লোক আমাকে বলেছে যে , আমরা শহীদ ইমাম হোসেন (আঃ) এর জন্য জ্বীনদের কান্না ও শোক পালনের শব্দ শুনেছি রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ।
আমরা যখন দামেস্কে পৌছালাম , নারী ও বন্দীদেরকে দিনের আলোতে শহরে প্রবেশ করালাম ।
অত্যাচারী সিরিয়ার নাগরিকরা বলল , ” আমরা এতো সুন্দর বন্দী এর আগে দেখিনি , তোমরা কারা “?
ইমাম হোসেন (আঃ) এর কন্যা সাইয়েদা সাকিনাহ (আঃ) উত্তর দিলেন , ” আমরা মুহাম্মাাদ (সাঃ) এর বন্দী পরিবার “।
তাদেরকে এবং ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) কে আটকে রাখা হল মসজিদের সিড়িঘরে ।
ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) তখন অল্পবয়সী যুবক এবং প্রচন্ড অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন ।
সিরিয়াবাসীদের মধ্য থেকে এক বৃদ্ব লোক এগিয়ে এসে ইমাম (আঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
” সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি তোমাদেরকে হত্যা ও ধ্বংস করেছেন এবং বিদ্রোহের আগুন নিভিয়ে দিয়েছেন ” ।
এরপর ঐ বৃদ্ব যা ইচ্ছে বলতে লাগল এবং এক পর্যায় ক্লান্ত হয়ে চুপ হয়ে গেল ।
এবারে ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) বললেন ,
” তুমি কি আল্লাহর কোরআন পড়েছ ” ?
বৃদ্ব বলল , ” অবশ্যই পড়েছি ” ।
ইমাম (আঃ) বললেন , ” তুমি কি এ আয়াত পড়েছ ,
“— বলুন ( হে আমার রাসুল ) , আমি তোমাদের কাছে কিছু দাবী করি না ( নবুয়তের পরিশ্রমের জন্য ) , শুধু আমার রক্তের আত্মীয়দের প্রতি ভালবাসা ছাড়া — ”
সুরা শুরা / ২৩ ।
বৃদ্ব বলল , ” হ্যা , অবশ্যই পড়েছি ” ।
ইমাম (আঃ) আবারও বললেন , ” আমরাই সেই পরিবার থেকে । এছাড়া এই আয়াত তুমি কি পড় নি ,
“— এবং দিয়ে দাও তোমার রক্তের আত্মীয়দের অধিকার —- ”
সুরা – বনি ঈসরাইল / ২৬ ।
বৃদ্ব বলল সে তাও পড়েছে ।
ইমাম (আঃ) পুনরায় বললেন , ” আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত ” ।
এরপর তিনি (আঃ) বললেন , ” তুমি কি এ আয়াত পড় নি ” ?
“ – নিশ্চয়ই আল্লাহ চান তোমাদের কাছ থেকে সমস্ত অপবিত্রতা দূরে রাখতে , হে আহলে বাইত , এবং তোমাদেরকে পবিত্র করতে পূর্ন পবিত্রকরনের মাধ্যমে – “ ।
সুরা – আহযাব / ৩৩ “।
বৃদ্ব বলল , ” কেন নয় , আমি অবশ্যই এই আয়াতগুলো বহুবার পড়েছি ” ।
ইমাম ( আঃ ) তখন বললেন , ” আমরাই তারা যাদের কথা এখানে বলা হয়েছে ” ।
একথা শুনে সিরিয়ার ঐ বৃদ্ব লোকটি নিজের ভুল বুঝতে পেরে দুহাত আকাশের দিকে তুলে বলল ,
” হে আল্লাহ , ক্ষমা করুন আমাকে , আমি এক্ষনে আপনার সামনে নিজেকে মুহাম্মাাদ (সাঃ) এর সন্তানদের শত্রু ও হত্যাকারীদের সাথে চিরতরে সম্পর্ক ছিন্ন করছি , আমি সব সময় কোরআন পড়েছি কিন্ত আজকে পর্যন্ত এর উপরে আমি এইভাবে গভীরভাবে ভাবি নি ” ।
সুপ্রিয় পাঠক ,
প্রায় ১২০০ বছর আগেকার ঘটনা ।
বুকে হাত দিয়ে আমি বা আমরা কি বলতে পারি , আমাদের বর্তমান অবস্থা ঐ বৃদ্বের থেকে ভাল !
মাশা আল্লাহ , কোরআন তো একেবারে মুখস্ত , কিন্ত ” আহলে বাইত ” এই শব্দটার মান মর্যাদা সম্পর্কে কতটুকু অবগত আছি !
এই যে শোকের মাস মহররম চলছে , আমরা কতটুকু আলাপ আলোচনা করি এ মাসে সংঘটিত পৃথিবীর সবচেয়ে মর্মান্তিক ” কারবালা ” নিয়ে !
” আহলে বাইত ” বা ” কারবালা ” তো শুধু শীয়াদের একক কোন বিষয় নয় ।
আহলে বাইত তো সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে হুজ্জাত ।
আমরা এ ব্যাপারে কতটুকু সচেতন !
— শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস ( ২য় খন্ড ) –
মূল লেখক – শেইখ আব্বাস কুম্মি ,
বাংলা অনুবাদ – মোঃ ইরফানুল হক ,
পৃ-৫৬, ৫৭ ছায়া অবলম্বনে ।
SKL