মুহাম্মদ ইবনে আবি বকরকে মিশরের শাসনকর্তা নিয়োগ করার পর এ নির্দেশ দিয়েছিলেন জনগণের সাথে বিনম ব্যবহার করো, তাদের প্রতি নিজকে কোমল করে রেখো এবং উদার মনে তাদের সাথে সাক্ষাত করো। সকল মানুষের প্রতি সমান ব্যবহার করো। তাতে বড়লোকেরা তোমার কাছ থেকে অবিচার গাওয়ার কথা বলবে না এবং হীনারা তোমার ন্যায় বিচারে হতাশ হবে না। মহিমান্বিত আল্লাহ নিশ্চয়ই তার বান্দাদের প্রতি তোমার ছোট-বড় ও প্রকাশ্য-গোপন সকল কর্মের জন্য তোমাকে প্রশ্ন করবেন। যদি তিনি তোমাকে শাস্তি দেন। তবে তা তোমার অত্যাচারী আচরণের জন্য; আর যদি তিনি তোমাকে ক্ষমা করেন তবে তা তার মহান ক্ষমাশীলতার জন্য। হে আল্লাহর বান্দাগণ, তোমরা জেনে রাখো, খোদাভীরুগণ এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার অংশ উপভোগ করে, আবার পরকালের হিস্যাও পায়। কারণ তারা মানুষের সাথে জাগতিক বিষয়ে অংশ গ্রহণ করে, পক্ষান্তরে মানুষ তাদের সাথে আখিরাতের কাজে অংশগ্রহণ করে না। মানুষ দুনিয়াতে বসবাসকালে আরাম-আয়েশ ও সুস্বাদু খাদ্য খেয়ে কাটিয়ে ঔদ্ধত্য ও ব্যর্থতা সংগ্রহ করে। অপরপক্ষে খোদাভীরুগণ প্রস্থান করবে তাদের ভ্রমণের জন্য পর্যাপ্ত রসদ সংগ্রহ করে এবং লাভজনক লেনদেন সম্পন্ন করে। তারা এ পৃথিবীতে থাকা কালেই দুনিয়া পরিত্যাগের স্বাদ উপভোগ করেছে এবং তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল আসন্ন পরকালে তারা আল্লাহর নিকটবর্তী হবে, যেখানে তাদের আহবান প্রতিহত করা হবে না এবং তাদের আনন্দের হিস্যাও ক্ষুদ্র করা হবে না। সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগণ, মৃত্যুকে ভয় কর এবং মৃত্যুর জন্য যা প্রয়োজন তার সবকিছু প্রস্তুত রেখো। এটা একটা বিরাট কান্ড ও ঘটনা হয়ে আসবে। এটা মঙ্গলজনক হয়ে আসবে যাতে কোন মন্দের লেশ থাকবে না অথবা মন্দ হয়ে আসবে যাতে কোন মঙ্গলের লেশ থাকবে না। যে বেহেশতে যাবার মতো কাজ করে তার চেয়ে বেহেশতের নিকটবর্তী আর কে আছে? আর যে দোযখে যাবার জন্য কাজ করে তার চেয়ে দোযখের নিকটবর্তী আর কে আছে? তোমারা মৃত্যু দ্বারা তাড়িত হবে। যদি তোমরা থাম, মৃত্যু তোমাদেরকে ধরে ফেলবে এবং যদি তোমরা দৌড়ে পালাতে চাও তবে মৃত্যু তোমাদেরকে আটক করে ফেলবে। তোমাদের ছায়ার চেয়েও মৃত্যু অধিক সংলগ্ন। মৃত্যুকে তোমাদের কপালের চুলের সাথে বেঁধে দেয়া হয়েছে। অপরপক্ষে দুনিয়া তোমাদেরকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। সুতরাং গভীর গহবরের অগ্নিকে ভয় কর, যে আগুনের শিখা অতীব মারাত্মক এবং যে শাস্তি অতীব পীড়াদায়ক। এটা এমন এক স্থান যেখানে কোন রেহাই দেয়া হয় না। এখানে কোন ডাক বা সহায়তার আবেদন কেউ শুনে না এবং ব্যথার কোন উপশম হয় না। যদি আল্লাহকে ভীষণ ভয় করা ও তাঁর প্রতি আশা রাখা তোমার পক্ষে সম্ভব হয় তবে উভয়ই অভ্যাসে পরিণত করো। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তিই তার প্রভুর প্রতি ততটুকু আশা পোষণ করে যতটুকু সে তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয়ই, সে ব্যক্তি আল্লাহর নেয়ামতেব বেশি আশা করতে পারে যে আল্লাহকে বেশি ভয় করে। হে মুহাম্মদ ইবনে আবি বকর, জেনে রাখো, আমি তোমাকে মিশরের দায়িত্ব অর্পণ করেছি। যা আমার সবচাইতে বড় শক্তি। সুতরাং তুমি তোমার কামনা-বাসনার বিরুদ্ধে কর্তব্যপরায়ণ থেকে এবং এ পৃথিবীতে এক ঘন্টা সময় পেলেও তা তোমার দ্বিনের বর্ম হিসাবে খেদমত করে ব্যয় করো। কখনো অন্যকে খুশি করার জন্য আল্লাহকে ক্ষুব্ধ করো না। মনে রেখো, আল্লাহ এমন যিনি অন্যের রাজত্ব কেড়ে নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু অন্য কেউ তাঁর রাজত্ব কেড়ে নিতে পারে না। নির্ধারিত সময়ে সালাতে প্ৰবৃত্ত হয়ো। অবসর যাপনের জন্য কখনো নির্ধারিত সময়ের আগে সালাতে প্রবৃত্ত হয়ো না। অথবা ব্যস্ততার কারণে কখনো বিলম্বে সালাত করো না। স্মরণ রেখো, তোমার প্রতিটি আমল তোমার সালাতের ওপর নির্ভর করে । জনগণকে বুঝাতে চেষ্টা করো যে, হেদায়েতের নেতা আর ধ্বংস প্রাপ্ত নেতা সমান হতে পারে না। এবং রাসুলে
র বন্ধু আর রাসুলের শত্রু সমান নয়। আল্লাহর রাসুল আমার কাছে বলেছিলেন, “আমার লোকদের বিষয়ে আমি মুমিন আর কাফের সম্বন্ধে শঙ্কিত নই। মুমিনগণকে আল্লাহ নিজেই রক্ষা করবেন। এবং কাফেরগণকে তিনি নিজেই অপদস্থ করবেন। কিন্তু তোমাদের মাঝে যারা অন্তরে মোনাফিক এবং বক্তব্যে বিজ্ঞ ও ধোপদুরন্ত তাদের নিয়ে আমি শঙ্কিত। তোমারা যা কল্যাণকর হিসাবে ধরে নাও মোনাফিকগণও সে কথা বলে, কিন্তু তোমরা যা পছন্দ কর না তারা (মোনাফিক) তাই করে।”