দুনিয়ার অবমূল্যায়ন ও মানুষের প্রকারভেদ সম্বন্ধে হে লোকসকল, আমরা এমন একটা বিভ্রান্তিকর ও অপ্রশংসনীয় সময়ে দিন কাটিয়ে যাচ্ছি। যখন ধার্মিকগণকে দুশ্চরিত্র মনে করা হয় এবং অত্যাচারী সীমালঙ্ঘন করে চলে। আমরা যা জানি তার দ্বারা যথাযথভাবে উপকৃত হই না, আর যা জানি না সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে চাই না। বালা মুসিবত আপতিত হবার পূর্বে আমরা দুর্যোগকে ভয় করি না। মানুষ চার শ্রেণির। প্রথম শ্রেণি হচ্ছে তারা— যারা সম্পদের অভাবে, উপায়-উপকরণের অভাবে ও সমাজে নিম্ন অবস্থানের (ক্ষমতার অভাবে) কারণে ফ্যাসাদ-বিবাদ সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকে। দ্বিতীয় শ্রেণি হচ্ছে তারা— যারা তরবারি উন্মুক্ত করে প্রকাশ্যে অন্যায় অবিচার করে এবং পদাতিক ও অশ্বারোহী সৈন্য সংগ্রহ করে এবং সম্পদ আহরণ, ক্ষমতা দখল ও মিম্বারে আরোহণের জন্য নিজের
দ্বিনকে বরবাদ করে। আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তার পরিবর্তে দুনিয়া ক্রয় করা কতই না নিকৃষ্ট লেনদেন ।
তৃতীয় শ্রেণি হচ্ছে তারা- যারা পরকালের জন্য আমলের মাধ্যমে দুনিয়া অন্বেষণ করে (অর্থাৎ পার্থিব সুযোগ লাভের জন্য ধর্ম-কর্ম করে)। এরা ইহকালের ক্রিয়াকর্মের মাধ্যমে পরকালের মঙ্গল অন্বেষণ করে না। এরা নিজেদের দেহকে শান্ত-শিষ্ট রাখে, ধীর পদক্ষেপে চলাফেরা করে, বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য পোশাক-পরিচ্ছদে দেহকে সাজিয়ে রাখে এবং পাপ করার উপায় হিসেবে এমন অবস্থা দেখায় যেন সে আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত (অর্থাৎ প্রকাশ্যে সাধু সেজে সৎ ব্যক্তির ছদ্মবেশে পাপে লিপ্ত থাকে)। চতুর্থ শ্রেণি হচ্ছে তারা— যারা দুর্বলতা ও উপায়-উপকরণের অভাবে রাজত্ব চাওয়া থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এতে তাদের অবস্থান হীন হয়ে রয়েছে, আর তারা এ অবস্থাকে তৃপ্তি নাম দিয়েছে। তারা পরহেজগার ব্যক্তিদের আলখেল্লা পরিধান করে যদিও পরহেজাগারের গুণাবলীর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। এরপরও কিছু লোক থেকে যায় যারা ফেরত যাওয়াকে স্মরণ করে দৃষ্টি আনত রাখে এবং কেয়ামতের ভীতি তাদের চোখকে অশ্রুসিক্ত রাখে। তাদের কতেক লোক সমাজ থেকে ভয়ে সরে পড়েছে ও অদৃশ্য হয়ে রয়েছে, কতেক ভয়ে বিহ্বল ও দমিত, কতেক নিচুপ যেন জন্তুর মুখবন্ধ মুখে আটা, কতেক এখলাছের সাথে মানুষকে সত্যের দিকে আহবান করে এবং কতেক শোকাভিভূত ও দুঃখদুদর্শাগ্রস্ত। আত্মগোপনতা এদেরকে নামবিহীন করে দিয়েছে এবং সমাজে এদের কোন কদর নেই। সুতরাং তারা তিক্ত পানিতে বাস করে। তাদের মুখ বন্ধ এবং হৃদয় ভগ্ন ও ক্ষত বিক্ষত। তারা ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত মানুষকে নছিহত করেছে। তারা অপমানিত না হওয়া পর্যন্ত অত্যাচারিত হয়েছে এবং সংখ্যায় নগণ্য না হওয়া পর্যন্ত নিহত হয়েছে। দুনিয়া তোমাদের চোখে বাবলা গাছের বাকল অথবা পশমের কর্তিত টুকরা অপেক্ষা মূল্যহীন হওয়া উচিত। তোমাদের পরবর্তীগণ তোমাদের কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করার আগে তোমরা তোমাদের পূর্ববতীগণ থেকে উপদেশ গ্রহণ কর এবং দুনিয়াকে নিকৃষ্ট মনে করে তা থেকে দূরে থাকো। মনে রেখো, দুনিয়ার সাথে যারা তোমাদের চেয়েও অধিক বন্ধুত্ব করেছে, দুনিয়া তাদের সাথেও সম্পর্ক ছেদ করেছে।