আমিরুল মোমেনিন তার অনুচর আ’লা ইবনে জিয়াদ আল-হারিছিকে দেখতে গিয়ে তার বিশাল বাড়ি দেখে বললেনঃ
এ পৃথিবীতে এ রকম বিশাল বাড়ি দিয়ে তুমি কী করবে? পরকালে তোমার এমন একটা বাড়ির প্রয়োজন রয়েছে। যদি তুমি এ বাড়িটি পরকালে নিয়ে যেতে চাও তবে এতে অতিথিদের আপ্যায়ন করে; আত্মীয়-স্বজনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ো এবং তাদের প্রতি তোমার যতটুকু দায়িত্ব রয়েছে তা পালন করো। এসব কাজ করলে এ বাড়ি তুমি পরকালে নিয়ে যেতে পারবে।
আ’লা বললোঃ হে আমিরুল মোমেনিন, আমি আমার ভ্রাতা আসিম ইবনে জিয়াদের বিরুদ্ধে আপনার কাছে অভিযোগ করতে চাই ।
আমিরুল মোমেনিন বললেন,ঃ সে কী করেছে?
আ’লা বললোঃ সে একটা পশমি কোট পরে থাকে এবং পৃথিবীর সব কিছুর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে।
আমিরুল মোমেনিন বললেনঃ তাকে আমার সামনে নিয়ে আসি ।
যখন সে সামনে এলো আমিরুল মোমেনিন তাকে বললেনঃ ওহে, তুমি তো তোমার নিজের শত্রু। নিশ্চয়ই, শয়তান তোমাকে বিভ্রান্ত করেছে। তোমার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য কি তোমার কোন মায়া হয় না? আল্লাহ তোমার জন্য যা হালাল করেছেন তা পরিধান করলে তিনি তোমাকে অপছন্দ করবেন বলে কি তুমি মনে করা? আল্লাহর জন্য তুমি অতি গুরুত্বহীন যে তিনি এমনটি করবেন।
আসিম বললোঃ হে আমিরুল মোমেনিন, আপনিও তো মোটা কাপড় পরিধান করেন এবং সাধারণ খাদ্য গ্রহণ করেন।
আমিরুল মোমেনিন বললেনঃ তোমার ওপর ল্যানত, আমি তোমার মতো নই। নিশ্চয়ই, মহিমান্বিত আল্লাহ প্রকৃত নেতার জন্য এটা বাধ্যতামূলক করেছেন যে, তারা সমাজের নিচু স্তরের লোকদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জীবনযাপন করবেন যাতে গরীব-দুঃখীগণ তাদের দারিদ্রের’ জন্য দুঃখ প্ৰকাশ না করে।
১ । প্রাচীনকাল থেকেই সধ্বংসারের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে তাপস জীবন যাপনকে আত্মার পবিত্রতা অর্জন করার ও চরিত্র গঠনের উপায় হিসাবে মনে করা হয়। ফলে যারা ভোগ-বিলাস ও পানাহারে সংযমী জীবন যাপন করা ও ধ্যানমগ্ন হয়ে থাকার ইচ্ছা করতো তারা শহর ও জনজীবনের বাইরে চলে যেতো এবং বনে-জঙ্গলে বা পাহাড়ের গুহায় তাদের মতাদর্শ অনুযায়ী আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হয়ে থাকতো। কোন পথচারী বা পার্শ্ববতীর্ণ বাসিন্দাদের কেউ কিছু খেতে দিলে তারা তা খেতো। অন্যথায় বন্য ফলমূল ও ঝরনার পানি খেয়ে তারা জীবন কাটাতো। শাসকদের অত্যাচার ও নিপীড়িনের ফলশ্রুতিতে এহেন ইবাদতের সূত্রপাত হয়। শাসকের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোন কোন লোক বনে-জঙ্গলে ও পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করে আল্লাহর ইবাদত ও ধ্যান করতে বাধ্য হয়েছিল। এভাবে সূত্রপাত হলেও পরবতীতে এ ধরনের ইবাদত মানুষ স্বেচ্ছায় বরণ করে নিতে থাকে। ফলে এটা স্বীকৃত হয়ে গেল যে, আত্মিক উন্নতির জন্য জাগতিক বন্ধন ছিন্ন করে এহেন জীবন যাপন করতে হবে। শতাব্দীর পর শতাব্দী এ পদ্ধতির ইবাদত চলে আসছে। বর্তমানেও বৌদ্ধ এবং খৃষ্টানদের মধ্যে এ পদ্ধতি দেখা যায়।
ইসলাম এহেন সন্ন্যাস জীবন অনুমোদন করে না। কারণ আত্মিক উন্নতি অর্জনের জন্য জাগতিক কর্মকান্ড পরিত্যাগের স্বীকৃতি ইসলামে নেই। কোন মুসলিম তার ঘর-সধ্বংসার ও পরিবার-পরিজনদের ত্যাগ করে গোপন স্থানে আনুষ্ঠানিক ইবাদতে নিজেকে মশগুল করে রাখবে—এরূপ ইবাদতের অনুমোদন ইসলামে নেই। ইসলামে ইবাদতের ধারণা শুধুমাত্র কতিপয় নির্ধারিত অনুষ্ঠান নয়। এটা এত ব্যাপক যে, হালাল উপায়ে জীবিকা অর্জন, একে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীলতা, অন্যের সাথে সদাচরণ এবং সৎ ও কল্যাণকর কাজে সহযোগিতা— এসবও ইসলামে ইবাদতের পর্যায়ভুক্ত। যদি কোন ব্যক্তি জাগতিক দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা করে, তার সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব পালন না করে এবং জীবিকা অর্জনের চেষ্টা না করে সারাক্ষণ ধ্যানে মগ্ন থাকে। সে নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় এবং সে বাচার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করে না। সব কিছু ত্যাগ করে ইবাদত ও ধ্যানে মগ্ন থাকাই যদি আল্লাহর উদ্দেশ্য হতো। তবে মানুষ সৃষ্টির কোন প্রয়োজন ছিল না। কারণ এহেন ইবাদতের জন্য তার ফেরেশতাই যথেষ্টা ছিল।
আল্লাহ মানুষকে চৌরাস্তায় দাঁড় করিয়েছেন যেখানে মধ্য-পথই হেদায়েতের কেন্দ্ৰবিন্দু। এ মধ্যপথ হতে একটুখানিক এদিক সেদিক হলেই তা নিৰ্ঘাত পথভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছু নয়। এ মধ্যপথ হলো কেউ জাগতিক বিষয়ে এমনভাবে বুকে পড়তে পারবে না যাতে সে পরকালকে ভুলে সম্পূর্ণরূপে দুনিয়াদারিতে ডুবে থাকবে; আবার সে জাগতিক সবকিছু পরিত্যাগ করে নির্জনে নিজকে অবরুদ্ধ রেখে ইবাদতও করে কাটাতে পারবে না। যেহেতু আল্লাহ এ পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন সেহেতু বেঁচে থাকার জন্য তাকে জীবনের কোড অনুসরণ করতে হবে এবং আল্লাহ্ কর্তৃক প্রদত্ত নেয়ামত ও আরাম-আয়েশ পরিমিতভাবে ভোগ করতে হবে। হালাল জিনিস খেতে ও ব্যবহার করতে আল্লাহ নিষেধ করেন নি। কাজেই এটা আল্লাহর ইবাদতের বিরোধী নয়। বরং আল্লাহ এসব জিনিস সৃষ্টি করেছেন যেন মানুষ এসবের সুযোগ গ্রহণ করে শুকরিয়া আদায় করে। এ জন্যই আল্লাহর নবিগণ পৃথিবীতে অনাদের সাথে বসবাস করতেন এবং অন্যদের মতোই পানাহার করতেন। তাঁরা বনেজঙ্গলে বা পাহাড়ের গুহায় নির্জন স্থানে বাস করার বা দুনিয়ার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার প্রয়োজনীয়তা কখনো অনুভব করেন নি। অপরপক্ষে তারা আল্লাহর জেকের করেছেন, জাগতিক কর্মকান্ডেও নিজেদেরকে সম্পূর্ণ জড়িয়ে রাখেন নি এবং আনন্দ ও উপভোগের মাঝেও মৃত্যুকে ভুলে থাকেন নি।
তাপস জীবন অনেক সময় এমন মন্দ অবস্থার সৃষ্টি করে যাতে ইহকাল ও পরকাল উভয়ই ধ্বংস হয়ে যায়। মানুষের প্রাকৃতিক প্রণোদনাসমূহ হালাল উপায়ে মিটানো না হলে মনে কুধারণার সৃষ্টি হয় এবং তাতে শান্তি ও মনোনিবেশ সহকারে ইবাদতের বিয় ঘটে। কখনো কখনো মানুষের অতৃপ্ত আবেগ ও অনুরাগ তাপসভাবকে পরাভূত করে সকল নৈতিক বেড়ি ছিন্ন করে দেয় এবং এমনভাবে অন্যায়ে লিপ্ত করে দেয় যে, নফসের খাহেশ মিটাতে গিয়ে সে ধ্বংসের অতল তলে তলিয়ে যায়। এ কারণেই ধমীয় বিধানে একজন পরিবারবদ্ধ লোকের ইবাদতকে অপরিবারবদ্ধ লোকের ইবাদতের উর্ধে স্থান দিয়েছে।
যে সব লোক সুফিবাদের আলখিল্লা পরে তাদের আত্মিক বড়ত্বের বাগাড়াম্বর করে তারা প্রকৃতপক্ষে ইসলামের পথ হতে সরে গেছে এবং ইসলামের প্রশস্ত শিক্ষা সম্পর্কে তারা অজ্ঞ। শয়তান তাদেরকে বিপথগামী করেছে এবং তারা তাদের স্বরচিত ধারণার বশবতীর্ণ হয়ে ভ্রান্ত পথে পদাচারণা করে। তাদের গোমরাহি এতদূর পর্যন্ত গেছে যে, তারা নেতার কথাকে। আল্লাহর কথা এবং নেতার কাজকে আল্লাহর কাজ বলে মনে করে। কখনো কখনো এরা নিজেদেরকে ধমীয় সকল বিধি-বিধান ও সীমার উর্ধের্ব মনে করে এবং সকল পাপ কাজকে তাদের জন্য বৈধ মনে করে। ইমান থেকে এমন স্থািলন ও ধর্মহীনতাকে ‘সুফিবাদী’ (আল্লার প্রতি সম্পূর্ণ আসক্তি) নাম দেয়া হয়েছে। এর অবৈধ নিয়মনীতিকে বলা হয় ‘তরিকা’ এবং এর অনুসারীকে বলা হয় ‘সুফি’ । সর্বপ্রথম আবু হাশীম আল-কুফী ও শ্যামী এ নাম ধারণ করেছিল। সে ছিল উমাইয়া বংশোদ্ভূত ও অদৃষ্টবাদী (সে বিশ্বাস করতো মানুষ যা কিছু করে তা আল্লাহ্ কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত)। তাকে সুফি বলার কারণ হলো, সে দরবেশি ও আল্লাহর ভয় জাহির করার জন্য পশমি আলখিল্লা পরিধান করতো। পরবতীতে এ নাম সর্বত্র ব্যবহৃত হতে লাগলো এবং সুফি নামের মূল হিসাবে বহু কারণ বের করা হলো। উদাহরণ স্বরূপ, সুফি শব্দে আরবি তিনটি বর্ণ রয়েছে- “ছােয়াদ’, “ওয়াও” এবং ফে’। সুফিরা মনে করে “ছোয়াদ’ দ্বারা সবুর (ধৈৰ্য্য), সিদক (সত্যবাদীতা) ও সাফা (পবিত্ৰতা); “ওয়াও’ দ্বারা উদ (প্রেম), উরদ (আল্লাহর নাম জপ) ও ওয়াফা (আল্লাহর প্রতি প্রগাঢ় বিশ্বাস) এবং ‘ফে’ দ্বারা ফরদ (ঐক্য), ফকর (দীনহীনভাবে) ও ফানা (ঐশীপ্রেমে আত্ম বিলয়) বুঝায়। সুফি শব্দ সম্পর্কে দ্বিতীয় মত হলো— এটা সুফফা শব্দ হতে আগত। সুফফা হলো মসজিদে নববীর একটা বারান্দা। সেখানে যারা থাকতো তাদের বলা হতো অসাহাবুস সুফফা (বারান্দার অধিবাসী)। সুফি শব্দ সম্পর্কে তৃতীয় মত হলো—আরবের একটা গোত্রের আদিপুরুষের নাম ছিল সুফাহ। এগোত্রের লোকেরা কাবা ও হাজিদের সেবা করার কাজে নিয়োজিত ছিল। সে কারণে পরবতীতে এ কাজে নিয়োজিতদেরকে সুফি বলা হতো। সুফিগণ বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত। তন্মধ্যে ৭টি উপদল প্রধান—এরা হলো ঃ–
(s)
(S)
(V)
ওয়াহদাতিয়া (মৌলিক একত্ববাদ)ঃ এ উপদল সকল অস্তিত্বের একত্বে বিশ্বাস করে। এরা মনে করে পৃথিবীর কোন কিছু থেকে আল্লাহ ভিন্ন নন—সবকিছুতেই আল্লাহ। এমন কি দূষিত বস্তুসমূহকেও এরা তাই মনে করে। এরা নদী ও নদীর তরঙ্গমালাকে আল্লাহর সঙ্গে তুলনা করে। এরা যুক্তি দেখায় যে, তরঙ্গ কখনো ফুলে উঠে আবার কখনো পড়ে যায়-তাতে কিন্তু নদীর বাইরে তরঙ্গের কোন অস্তিত্ব নেই। তরঙ্গের অস্তিত্ব নদীর অস্তিত্বের মতোই। কাজেই কোন কিছুকে তার মৌলিক অস্তিত্ব থেকে আলাদা করা যায় না । ইত্তিহাদিয়াহ (ঐক্যবাদী)ঃ এ উপদল বিশ্বাস করে যে, তারা আল্লাহতে একীভূত হয়ে আছে এবং আল্লাহও তাদের সাথে একীভূত হয়ে আছে। এরা আল্লাহকে আগুন হিসাবে ধরে নিয়ে নিজেদেরকে আগুনে পড়ে থাকা লোহা এবং আগুনে পোড়া লোহার গুণার্জিত বলে মনে করে। হুলুলিয়া (স্বরূপবাদী) ঃ এ উপদল বিশ্বাস করে, যারা আল্লাহকে জানার দাবি করে এবং যারা পূর্ণতা (ইনসানুল কামেল) অর্জন করেছে আল্লাহ্ তাদের স্বরূপ পরিগ্রহ করেন। এরা মনে করে পূর্ণতা প্রাপ্ত মানবদেহ আল্লাহর বাসস্থান। এধরনের পূর্ণমানব দৃশ্যত মানুষ কিন্তু বাস্তবে এরা আল্লাহ। ওয়াসিলিয়াহ (মিলনবাদী) ঃ এ উপদল নিজদেরকে আল্লাহর সাথে মিলিত বলে মনে করে। এরা বিশ্বাস করে শরিয়তের বিধি-বিধান মানুষের ব্যক্তিত্ব ও চারিত্রিক উন্নতির একটা উপায় মাত্র। মানব সত্তা যখন আল্লাহর সাথে মিলিত হয়ে যায়। তখন তার আর কোন পূর্ণতা বা উন্নতির প্রয়োজন হয়। না। ফলে “ওয়াসিলিন’- এর জন্য ইবাদত ও অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। কারণ তারা মনে করে, যখন সত্য ও বাস্তব সত্তা অর্জিত হয় তখন শরিয়তের বিধি-বিধান পালন করা অর্থহীন। ফলে তারা যা খুশি করতে পারে এবং সেজন্য জবাবদিহি করতে হবে না। জাররাকিয়াহ (প্ৰমোদবাদী) ঃ এ উপদল মৌখিক ও বাদ্যযন্ত্রের সুরকে ইবাদত মনে করে। এরা দ্বারে দ্বারে গান গেয়ে ভিক্ষা করে এবং দরবেশি দেখিয়ে দুনিয়ার আনন্দ উপভোগ করে। এরা সর্বদা এদের নেতা সম্পর্কে বানোয়াট কাহিনী ও অলৌকিক ঘটনা বর্ণনা করে যাতে সাধারণ মানুষ বিস্ময়াভিভূত
হয় । উশশাকিয়াহ (প্রেমবাদী বা ভাববাদী) ঃ এ উপদলের মতবাদ হলো প্রেমের ব্যাকুলতাই মহাসত্য ও বাস্তব সত্তা অর্জনের একমাত্র উপায়। তারা মনে করে, ইন্দ্রিয়গত প্ৰেম আল্লাহর প্রেম অর্জনের উপায়। আল্লাহর প্রেমের পর্যায়ে পৌছার জন্য কোন মানব সত্তার প্রতি প্রেমাসক্ত হওয়া নিতান্ত প্রয়োজন। কিন্তু যে প্রেমকে তারা ঐশীপ্রেম বলে মনে করে তা মানসিক বৈকল্য ছাড়া আর কিছু নয় এবং এসব কথার মূল উদ্দেশ্য হলো প্রিয়াকে ভোগ করা। এ ধরনের প্রেম মানুষকে পাপ ও অন্যায়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আল্লাহর প্রেমের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
একজন পারস্য কবি বলেছেনঃ
(a)
সত্যি বলতে কী ইন্দ্ৰিয়গ্রাহ্য প্ৰেম জিনের মতো আর জিন থেকে কোন হেদায়েত লাভ করা
RI]RT *y] | তালকিনিয়াহ (অভিজ্ঞতাবাদী) ঃ এ উপদলের মতে ধমীয় বিজ্ঞান ও বই-পুস্তক পড়া অবৈধ। বরঞ্চ
সুফিদের কাছে আত্মিক উন্নতির জন্য এক ঘন্টা বসে চেষ্টা করলে যা পাওয়া যাবে তা সত্তর বছর বই পড়েও অর্জন করা যাবে না। শিয়া আলেমদের মতে এ উপদলগুলো ভ্ৰান্ত পথে চলে গেছে। এরা ইসলামের সীমালজযন করেছে। এবিষয়ে ইমামগণের অনেক বাণী রয়েছে। এ খুৎবায় আমিরুল মোমেনিন আসিম ইবনে জিয়াদের দুনিয়ার সাথে সম্পর্কচ্ছেদকে শয়তানের কর্মকান্ড বলে উল্লেখ করেছেন এবং এপথ থেকে দূরে থাকার জন্য জোর দিয়ে তাকে নির্দেশ দিয়েছেন (এ বিষয়ে অধিক জানতে হলে খুই”, ১৩শ খন্ড, পৃঃ ১৩২-৪১৭; ১৪শ খন্ড, পৃঃ ২-২২ পড়া যেতে পারে)।
(উপযুক্ত টীকার সাথে বাংলা অনুবাদক দ্বিমত পোষণ করে। সুফি-দর্শনের মূল বিষয় সম্পর্কে টীকাকারের জ্ঞানের দৈন্যতার কারণে তিনি ধর্মের দর্শনকে ত্যাগ করে অনুষ্ঠানকে প্রাধান্য দিয়েছেন। সে কারণেই তিনি কোন বক ধাৰ্মিকের চাল-চলন ও আচার-আচরণকে সুফি দর্শন বলে আখ্যায়িত করেছেন। শিয়া আলেমগণ ইসলামের দর্শন তথা আমিরুল মোমেনিনের মৌলিক দর্শন থেকে কতটুকু সরে গেছে তা সকলের জানা আছে। কারবালার মূল দর্শনের প্রতি কোনরূপ ভ্ৰক্ষেপ না করে তাজিয়া নিয়ে রাস্তায় মাতামাতি করে ইসলামের মৌলিক বিষয়ে কোন উন্নতি হচ্ছে কিনা তারাই বলতে পারেন। ইমাম আলী কর্তৃক প্রদর্শিত পথই হলো সুফি দর্শন। আসহাবুস সুফফাগণ রাসুলের (সঃ) সময়কার সুফি । ইমাম আলী সুফি দর্শন ও আরবি ভাষার স্ট্যান্ডার্ড। তিনি সুফি দর্শনের আদি পুরুষ। কিন্তু টীকাকার বৈষ্ণববাদ ও সুফি দর্শনের মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। ইমাম আলীর সুফি দর্শন পরবতীতে বহু ইসলামি দার্শনিক বিভিন্নভাবে থিওরিবদ্ধ করেছেন, যেমন—ইবনুল আরাবির সৰ্বেশ্বরবাদ, জালালউদ্দিন রুমীর প্ৰেমবাদ, মনসুর হাল্লাজের বিনাশনবাদ (আনাল হক), খাজা মঈনউদ্দিন চিশতীর প্রত্যক্ষণবাদ, লালন শাহের ভাববাদ ইত্যাদি। দার্শনিক ধারণা ও থিওরি বাদ দিয়ে টীকাকার ইসলামকে অনুষ্ঠান সর্বস্ব করে কুরআনিক দর্শন খর্ব করে দিতে চেয়েছেন। কুরআনের দর্শন ও আনুষ্ঠানিক ইবাদত-এ দুয়ের সামঞ্জস্য বিধানই হলো প্রকৃত ইসলামি জীবন। দর্শন বর্জিত ইবাদত যেমন রূঢ়তা, ইবাদত বর্জিত দর্শনও তেমনি ফাঁপা চিন্তা মাত্ৰ— বাংলা অনুবাদক)।