মোবাহেলা ও সম্মান এবং অসম্মান প্রসংগ —–
মহানবী (সাঃ) এর আমলে মোবাহেলার ঘটনা কমবেশী সকলেই জানেন ।
এরপরেও খুবই সংক্ষেপে বলছি –
নাজরান থেকে আগত খুব বিখ্যাত খ্রীষ্টান আলেমগন মহানবী (সাঃ) এর সাথে খ্রীষ্টান ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে আলোচনা করতে এসেছিলেন ।
ওনাদের মূল বক্তব্য ছিল যে , খ্রীষ্টান ধর্মটাই সত্যধর্ম এবং ইসলাম ধর্মের কোন ভিত্তি নেই ।
প্রায় তিন দিন প্রচুর আলাপ আলোচনা হল । মহানবী (সাঃ) নিজে সরাসরি কথা বলার পরেও খ্রীষ্টান আলেমগন তাদের বক্তব্যেই অনড় থাকলেন ।
এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার হল যে , পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক মুহাম্মাদ (সাঃ) ও পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব পবিত্র কোরআন বাহ্যিক দৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়ে গেল ।
খ্রীষ্টান আলেমগন তাদের যুক্তিতেই অটল থাকলেন ।
যাহোক , তিনদিন পর মহান আল্লাহর সরাসরি নির্দেশে মহানবী (সাঃ) ও খ্রীষ্টান আলেমগনের সাথে খোলা ময়দানে সম্মুখ মোকাবলা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল । অর্থাৎ দুপক্ষই মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাবেন । যাদের বক্তব্য সত্য নয় তারা খোদায়ী আযাবে তৎক্ষনাত ধ্বংস হয়ে যাবেন ।
মহান আল্লাহর সরাসরি নির্দেশে মহানবী (সাঃ) , হযরত ফাতেমা (সাঃআঃ) , ইমাম আলী (আঃ) , ইমাম হাসান (আঃ) এবং ইমাম হোসেন (আঃ) সহ সর্বমোট পাঁচজন বা পাঁক পাজ্ঞাতন ঐ ময়দানে উপস্থিত হলেন ।
তখন অনেক বড় মাপের সাহাবীগন ওঁনাদের সাথে শরীক হতে চেয়েছিলেন । কিন্ত নবীজী (সাঃ) কতৃক দেয়া শর্তের আওতাধীন না হওয়াতে সাহাবীগন শরীক হতে পারেন নি ।
শর্তটা ছিল – জন্ম থেকে বিন্দু পরিমান কোন গুনাহ না করার গ্যারান্টি দিতে হবে ।
এবং ঐ ময়দানে নবীজী (সাঃ) এর একাধিক স্ত্রী বিদ্যমান থাকার পরেও কোন স্ত্রীকেই নিয়ে যান নি ।
তাহলে এখানে প্রমানিত হল যে , এঁনারাই আহলে বাইত (আঃ) এর মধ্যে শামিল । সুরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াত অনুযায়ী একমাত্র এঁনারাই পুতঃপবিত্রত ও সত্যবাদীতা , সিদ্দিকীন বা সিদ্দিকার গ্যারান্টিযুক্ত ।
এই পুতঃপবিত্রতা ও সিদ্দিকিন ও সিদ্দিকার মধ্যে এঁনারা ব্যতীত অন্য কারোর এই জাতীয় খেতাব সম্পূর্ন ভিত্তিহীন ।
আরও একটা বিষয় প্রমানিত হল যে , নবীজী (সাঃ) এর পত্নীগন আহলে বাইতের অন্তভুক্ত নন ।
সেই সাথে আরও একটা বিষয় প্রমানিত হল যে , নবীজী (সাঃ) এর কন্যা সর্বসাকুল্যে ঐ ফাতেমা (সাঃআঃ) একজনই ছিলেন । কেননা অন্য আরও কন্যা থাকলে নবীজী (সাঃ) ওঁনাদেরকেও এই মহান মিশনে নিয়ে যেতেন ।
আরও একটা বিষয় প্রমানিত হল যে , ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ চুড়ান্ত কথা হল পবিত্র আহলে বাইত ।
স্বয়ং নবী যেখানে ব্যর্থ , পবিত্র কোরআন যেখানে ব্যর্থ —
সেখানে সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হলেন পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গন ।
মোবাহেলা এবং কারবালা হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরন ।
হার কারবালাকা বাদ ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় ।
যাইহোক , মূল প্রসংগে আসি –
মোবাহেলার ময়দানে এই পাঁচজনকে দেখে খ্রীষ্টান আলেমগন কোন প্রকার চ্যালেজ্ঞে গেলেন না । কারন আহলে বাইতের (আঃ) মান মর্যাদা , শান শওকতের ব্যাপারে খ্রীষ্টান আলেমগন সম্পূর্নরুপে অবগত ছিলেন ।
খ্রীষ্টানগন নবীজীর (সাঃ) আহলে বাইত (আঃ) এর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রর্দশনপূর্বক আইন মেনে খাজনা দেয়ার অঙ্গিকার করলেন ।
মোটামোটি এই হল মোবাহেলার সার সংক্ষেপ ।
সুপ্রিয় পাঠক , আমার আলাপের মূল প্রসংগটা একটু ভিন্ন ।
দেখুন , ননমুসলিম খ্রীষ্ট্রানগন নবীজীর (সাঃ) আহলে বাইতের (আঃ) সাথে বিন্দু পরিমান বেয়াদবী তো দূরের কথা , উল্টা যথাযথ সম্মান সহকারে তাঁদের সাথে প্রচলিত আইন মেনে একত্রে বসবাস করেছেন ।
অর্থাৎ আহলে বাইতকে (আঃ) তারা পৃথিবীতে প্রকাশ্যে সম্মান করেছেন ।
বিনিময় খ্রীষ্টানগন এখনও মুসলমানদের থেকে পৃথিবীতে যথেষ্ট সম্মান নিয়েই বেঁচে আছে ।
অনেকটা যেমন কর্ম তেমন ফল ।
সম্মানের বদলে সম্মান ।
পক্ষান্তরে , আমরা নবীজীর উম্মত হয়ে আহলে বাইতের (আঃ) সাথে কি করলাম !
দেখুন , আমাদের মহা সম্মানীয় পূর্বপুরুষদের কর্মের খতিয়ান !
নবীজীকে যুদ্বক্ষেত্রে বিপদের মুখে একা ফেলে পলায়ন ,
নবীজীকে পাহাড়ের উপর থেকে পাথরখন্ড ছুড়ে ফেলে হত্যার চেষ্টা্‌ ,
নবীজীর ওফাতের সময় ওনারই আদেশ মোতাবেক খাতা কলম না দেয়া ,
আল্লাহ কতৃক নির্বাচিত ১১ জন পবিত্র ইমামগনের মধ্যে দুজনকে তলোয়ার দিয়ে হত্যা করেছি ও বাকি নয়জনকে খাবার , ফল ও পানির সাথে বিষ মিশিয়ে হত্যা করেছি ।
আল্লাহ কতৃক নির্বাচিত এই ১১ জন পবিত্র ইমামগনকে ২৬০ বছরের মধ্যে আমরা হত্যা করলাম । এবং প্রতিজন ইমাম মাত্র ২২ বছর করে গড় আয়ু পেয়েছিলেন ।
এঁনারা কিন্ত কোন সাধারন পর্যায়ের মুসলমান জনগন ছিলেন না । মহান আল্লাহ কতৃক নির্বাচিত পুতঃপবিত্রতার গ্যারান্টিযুক্ত ইমাম ও মহানবীর (সাঃ) আহলে বাইত ।
এই ১১ জন পবিত্র ইমামগনের হত্যার বিচার আজ পর্যন্ত কোন খলীফা বা কেউই করে নি ।
উল্টা কুখ্যাত কুলাঙ্গার হত্যাকারীকে ইদানীং রাঃআনহু বলা হচ্ছে ।
তাহলে আমরা এঁনাদেরকে সম্মান প্রর্দশনের পরিবর্তে জঘন্য মহা অপরাধ করেছি ।
বিনিময় পৃথিবীতে শতকরা ৮০ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠী সবচেয়ে নিকৃষ্টতম অবস্থায় কোনমতে বেঁচেবর্তে আছি ।
আমাদেরকে যখন তখন শিয়াল কুকুরের মত হত্যা করা হয় ,
আমাদের মা বোনকে যখন তখন হত্যা ধষন করা হয় ।
যারা কিঞ্চিত ভাল আছি তারা অন্য জাতির গোলাম হয়ে বেঁচে আছে ।
পক্ষান্তরে মাত্র বিশ ভাগ মুসলিম আহলে বাইতকে (আঃ) সম্মান করে বলে ওরা পৃথিবীতে এখন মাথা উঁচু করে বেঁচে আছে ।
ওদের গায়ে কেউ সামান্য ঢিলও ছুড়তে সাহস পায় না ।
শিক্ষা , বিজ্ঞান , চিকিৎসা সহ সকল দিক দিয়ে ওরা পৃথিবীর আর পাচটা উন্নত জাতির সাথে টেক্কা দিয়ে চলে ।
পাঠক –
হিসাব খুবই সিম্পল —
সম্মাানের বদলে সম্মাান ,
অসম্মাানের বদলে অসম্মাান !
SKL