নবীকন্যা মা জননী ফাতেমা যাহরা (সাঃআঃ) যেভাবে শহীদ হন —-
মহানবী (সাঃ) এর ইন্তেকালের অল্প কয়েক দিন পরেই এই জঘন্য নারকীয় ঘটনা প্রথম খলীফা হযরত আবু বকরের অনুমতিক্রমে হযরত ওমরের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিল ।
মদীনায় খেলাফতের রচিত প্রাথমিক গোলযোগ থেমে গেলে এবং পরিস্থিতি খেলাফতের অনুকূলে আসার পর দেখা গেল বনু হাশেম গোত্র বিশেষ করে রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গন এবং কতিপয় মুমিন সাহাবা ও আনসার প্রথম খলীফা হযরত আবু বকরের অবৈধ খেলাফতের নিকট বায়াত গ্রহণ করে নি ।
গাদীর এ খুমে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর ঘোষনা অনুযায়ী তারা ইমাম আলী (আঃ) কে তাদের নেতা বা ইমাম রুপে গ্রহণ করেই আছে ।
এমন অবস্থায় হযরত ওমরের নেতৃত্বে একটি ‘মশাল মিছিল’ আলী (আঃ) এর বাড়ির দিকে রওয়ানা হয় । একে খেলাফতের যুবকদল বলা যেতে পারে ।
হযরত ওমরের নেতৃত্বে খালিদ বিন ওয়ালিদ , আবদুর রহমান বিন আউফ , সাবিত বিন কাইস , জিয়াদ বিন লাবিদ , মোঃ বিন মুসলিম , জায়িদ বিন সাবিত , সালমাহ বিন আসলাম ও আছিদ বিন হাজির সহ এই দশজন মা জননী ফাতেমা (সাঃআঃ) এর পবিত্র গৃহ অভিমুখে আক্রমন করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন ।
বিচক্ষন রাজনীতিবিদ হযরত ওমর বিলক্ষন জানতেন যে , হযরত আলী (আঃ) কে বায়াত গ্রহণ করতে বাধ্য করা যাবেনা ।
অবৈধ ভাবে দখলকৃত খেলাফতকে সম্পূর্ন কন্টকহীন রাখার জন্য ও হযরত আলী (আঃ) এর সামাজিক ও রাজনৈতিক মর্যাদা লোক চোখে হেয় প্রতিপন্ন করে জনসম্মুখে অবৈধ খেলাফতের জয় এবং ইমামত ও বেলায়েতের পরাজয় দেখিয়ে দেয়াই ছিল মূল উদ্দেশ্য ।
যাইহোক , হযরত ওমরের নেতৃত্বে ঐ দশজন ফাতেমা (সাঃআঃ) এর পবিত্র গৃহ ঘরাও করে হযরত আলী (আঃ) কে নিঃশর্তভাবে হযরত আবু বকরের বায়াত গ্রহন করার জন্য আদশ দেয়া হল ।
ওদের এই আদেশ হযরত আলী (আঃ) কতৃক প্রত্যাখ্যাত হলে হযরত ওমর তখন হযরত আলী (আঃ) কে ধরে নিয়ে প্রথম খলীফার কাছে নিয়ে যেতে চাইলে , ফাতেমা (সাঃআঃ) বললেন ,
“ তোমরা বাড়ি হতে চলে যাও , তোমাদের কত বড় স্প্রর্ধা যে , তোমরা আলী (আঃ) কে ধরে নিয়ে যেতে এসেছ ” ?
এই বলে তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন ।
হযরত ওমার তখন কিছু কাঠ জোগাড় করে নবীকন্যা ফাতেমা (সাঃআঃ) এর গৃহের দরজাতে আগুন ধরিয়ে দিলেন । এবং হযরত ওমর কিছুক্ষন পর জ্বলন্ত দরজাতে সজোরে লাথি মেরে দরজা ভেঙ্গে ফেললেন ।
জ্বলন্ত দরজার আঘাতে ফাতেমা (সাঃআঃ) দরজার নীচে চাপা পড়ে মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারান । ঐ সময় তিনি গর্ভবতী ছিলেন ।
ঘরে ঢুকে আলী (আঃ) ও তাঁর এক খাদেম কে জোর করে বেঁধে প্রথম খলীফা বাহাদুরের দরবারে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয় ।
জ্বলন্ত দরজার আঘাতে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার অল্প কয়েকদিন মা জননী ফাতেমা যাহরা (সাঃআঃ) চিরদিনের মত এই দুনিয়া ত্যাগ করে আল্লাহর কাছে চলে গেলেন ।
হযরত ওমর কতৃক জ্বলন্ত দরজাতে সজোরে লাথি মারার জেরে তৎক্ষনাত মা জননী ফাতেমা যাহরা (সাঃআঃ) এর গর্ভস্থ সন্তান শহীদ হন ও তাঁর বাম পাঁজরের হাঁড় ভেঙ্গে যায় ।
পাঠক ,
কারবালা মর্মান্তিক ঘটনার সূত্রপাত কিন্ত নবীকন্যার গৃহ আক্রমন থেকেই শুরু হল !
 
তথ্য সূত্র সমূহ –
মাওলার অভিষেক ও ইসলাম ধর্মে মতভেদের কারন ,
লেখক – সদর উদ্দিন আহমেদ চিশতী ,
পৃষ্ঠা – ১২৮,১২৯ ছায়া অবলম্বনে লিখিত ।
নবীকন্যার গৃহে আক্রমন বিষয় বিস্তারিত আরও জানতে পড়ুন –
— বেলায়েতের দ্যুতি ,
মূল – আয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী ,
বাংলা অনুবাদ – আব্দুল কুদ্দুস বাদশা ও মোঃ মাঈনউদ্দিন ,
পৃষ্ঠা – ৫৮ থেকে ১৮১ ।
১) –  লিসানুল মিজান , খন্ড – ১ . পৃ- ১০২ এবং ২৬৮ ।
২) – তারিখে বাগদাদ খন্ড – ৬ , পৃ – ৯৭ ।
৩) – আলওয়াফি বিল ওফাইয়াত খন্ড – ৬, পৃ – ১২।
৪) – আততাহজীব খন্ড – ১ , পৃ – ১০৪।
৫) – কেতাবে মাগাযি বাব ৪৩ , হাদীস নং: ৩৮০৪২।
৬) – কেতাবে মাসনাফ খন্ড –  ৭, পৃ: ৪৪২।
৭) – জামেউল কাবীর ,  খন্ড-  ১৩।
৮) – কানযুল উম্মাল খন্ড –  ৫।
৯) – মিজানুল এতটোদোল , খন্ড – ১, পৃ: ২৪৩।
১০) – ভারতের জামাতে ইসলামের , সাপ্তাহিক মিজান দেখুন ১২ই মে ২০১২ ।
১১) – ড. ওসমান গণি, বই “মিশরে ফাতেমিয়া খিলাফত” ভূমিকা, পৃষ্ঠা ১-৩০ পর্যন্ত ।
SKL