জীবন্ত মানুষকে পুরিয়ে হত্যা ও খলীফা বাহাদুর —
জীবন্ত মানুষকে আগুনে পুরিয়ে হত্যা করার সুন্নতটি কার এবং কে কাকে এভাবে হত্যা করেছিল ?
মুসলমানদের প্রথম খলীফা হযরত আবু বকরের খেলাফত কালে তার একটি গুরুতর অন্যায় কাজ ছিল যে , ফুজা’আ সালামি নামক এক ব্যক্তিকে জীবন্ত আগুনে পুরিয়ে হত্যা করা ।
যদিও মহানবী (সাঃ) বহুবার এভাবে শাস্তি দিতে বারণ করেছিলেন ।
সূত্র – শা’রানি , শরহে তাজরিদ , পৃষ্ঠা – ৫৩১ ।
কে এই ফুজা’আ সালামি ?
এবং এমন কি অপরাধ সে করেছিল যার কারণে খলিফা বাহাদুর এভাবে জীবন্ত পুরিয়ে দিয়ে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করলেন ।
তাবারি ও ইবনে কাছির এর বর্ণনামতে ঘটনাটি ছিল এরূপ –
বনী সালিম গোত্র হতে ফুজা’আ সালামি নামক এক লোক খলিফা আবু বকরের শরণাপন্ন হয়ে বলল যে ,
আমি হচ্ছি একজন মুসলমান এবং কাফের ধর্মদ্বেষী ও মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাই কিন্ত আমার কাছে কোনো তরবারি বা বাহন (ঘোড়া) নেই । আমাকে একটি বাহন ও তরবারি দিয়ে সাহায্য করুন ।
হযরত আবু বকরও তার চাওয়া পূরণ করেন ।
কিন্ত সে কাফের ও ধর্মদ্বেষীদের সাথে যুদ্ধ না করে ডাকাতি ও দস্যুতার পথ অবলম্বন করে মুসলমান ও অমুসলিম সবার জান মাল লুন্ঠন করা শুরু করল ।
এর মধ্যে যদি কেউ বাধাদান করত সে তাকে হত্যা করত । দস্যুতার এ কাজে তাকে নাজবা বিন আবিল মিসা নামের বনী শোরাইদ গোত্রের একজন লোক সহযোগিতা করত ।
দস্যুতার এ খবরটি যখন আবু বকর জানতে পারল তুরাইফা বিন হাজারকে এই মর্মে একটি পত্র দিল যে ,
আল্লাহ’র শত্রু ফুজা’আ , নিজেকে মুসলমান জাহির করে আমার কাছে এল এবং যারা ধর্মবিদ্বেষী তাদের সাথে যুদ্ধ করার অজুহাতে আমার কাছে তরবারি ও ঘোড়া চাইল আমিও তাকে সেসব সমরাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করলাম ।
কিন্ত নিশ্চিত খবর যা আমি পেয়েছি তা হল এই যে , খোদার এ শত্রু মুসলমান ও কাফেরদের পথ রোধ করে তাদেরকে লুন্ঠন করছে এবং যারা তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে তাকে হত্যা করছে । তুমি নিজের সৈন্য বাহিনী নিয়ে তাকে আক্রমণ করে হত্যা কর অথবা তাকে গ্রেফতার করে আমার কাছে প্রেরণ কর ।
তুরাইফা , ফুজা’আ’র দিকে তাড়াতাড়ি গেল এবং তার কাছে পৌঁছার সাথেই দুপক্ষ থেকে তীর ছুঁড়া হল আর এ তীর বর্ষণে নাজবা বিন আবিল মিসা তীরের আঘাতে মৃত্যুবরণ করে ।
ফুজা’আ যখন জানতে পারল যে , মুসলমানরা তাকে হত্যা কিম্বা গ্রেফতার করতে বদ্ধ পরিকর । তখন তুরাইফকে বলল , আমার উপর তোমার কোনো রকম শ্রেষ্ঠত্ব ও অগ্রাধিকার নেই । তুমি আবু বকরের পক্ষ হতে দায়িত্ব প্রাপ্ত আর আমিও তার কাছ থেকে নির্দেশ প্রাপ্ত ।
তুরাইফা বলল যে , যদি তোমার কথা ঠিক হয় তাহলে অস্ত্র ফেলে দিয়ে আমার সাথে আবু বকরের কাছে চল ।
এভাবে ফুজা’আ , তুরাইফার সাথে আবু বকরের কাছে এলো ।
ফুজা’আকে দেখে আবু বকর তুরাইফাকে বলল , তাকে বাক্বির কবরস্থানে নিয়ে যাও এবং জীবিত অবস্থায় আগুনে জ্বালিয়ে দাও !
তুরাইফও খলিফার নির্দেশ মত বাক্বির কবরস্থানে আগুন জ্বালিয়ে সেই আগুনে ফুজা’আকে নিক্ষেপ করে পুরিয়ে মারল ।
অপর এক হাদিসে তাবারি বর্ণনা করে –
তুরাইফা মদিনার মসজিদে বেশ কিছু জ্বালানি কাঠ নিয়ে এলো অতঃপর তাতে আগুন জ্বালিয়ে ফুজা’আকে রশি দিয়ে বেঁধে আগুনে ফেলে পুরিয়ে মারল !
কিন্ত এ সম্পর্কে ইবনে কাসিরের বর্ণনা হল এরূপ –
তুরাইফা , ফুজা’আর হাত পেছন দিক দিয়ে ঘাড়ের উপরে বাঁধলো অতঃপর রশি দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় আগুনে ফেলে দিয়ে পুরিয়ে মারল ।
সূত্র – তারিখে ইবনে কাসির , ৯ম খন্ড , পৃষ্ঠা – ৩১৯ / তারিখে তাবারি , প্রথম প্রকাশনা , ৩য় খন্ড , পৃষ্ঠা – ২৩৪ ও ২৩৫ / তারিখে ইবনে আসির , ২য় খন্ড , পৃষ্ঠা – ১৪৬ ১১তম হিজরি সনের ঘটনাসমূহ ।
পরবর্তীতে আবু বকর অবশ্য ফুজা’আ সম্পর্কে দেয়া নির্দেশের ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করল এবং মৃত্যুর পূর্বে অসুস্থ অবস্থাতে বলছিল —
আমি জীবনে এমন তিনটি কাজ করেছি ,
হায় ! যদি সে কাজগুলোকে আঞ্জাম না দিতাম ।
খলিফা বাহাদুরের সে কাজ তিনটি হচ্ছে –
১। হায় ! যদি আমি হযরত ফাতেমা যাহরার (সাঃআঃ) দরজাতে আক্রমণ না করতাম । যদিও দরজাটি এসব কারণে আমার জন্য বন্ধ করা হয়েছিল ।
২। হায় ! ফুজা’আকে যদি আগুনে পুরিয়ে হত্যা না করতাম বরং তাকে স্বাভাবিক ভাবে হত্যা করার নির্দেশ দিতাম । অথবা তাকে কারাদন্ড দিয়ে দিতাম ।
৩। আর বনু সকীফাতে খেলাফতের বিষয়টি দু’জনের মধ্য হতে একজনের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতাম , অর্থাৎ ওমর কিম্বা আবু উবাইদা ।
সূত্র – তারিখে তাবারি , ৪র্থ খন্ড , পৃষ্ঠা – ৫২ / ১৩তম হিজরির ঘটনা – আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা , ১ম খন্ড , পৃষ্ঠা – ১০৬ , হযরত যাহরার (সাঃআঃ) ঘরে অবস্থান অধ্যায় ।
সুপ্রিয় পাঠক , এই হচ্ছে বনু সকীফার ইসলাম !
SKL