দুনিয়ার প্রতি বিমুখতা ও সময়ের উত্থান-পতন সম্পর্কে যা কিছু ঘটেছে তার জন্য আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি এবং আমাদের কাজকর্মে ভবিষ্যতে যা কিছু ঘটবে তার জন্য আমরা তার সাহায্য প্রার্থনা করি। আমাদের ইমানের নিরাপত্তার জন্য আমরা তার কাছে প্রার্থনা করি যেভাবে আমরা শরীরের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করে থাকি । হে আল্লাহর বান্দাগণ, এ দুনিয়া থেকে দূরে থাকার জন্য আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি। যদিও তোমরা দুনিয়ার প্রস্থান পছন্দ কর না। তবুও অচিরেই দুনিয়া তোমাদেরকে পরিত্যাগ করবে এবং তোমাদের শরীরকে তরতাজা রাখার জন্য যতই চেষ্টা কর না কেন বার্ধক্য তাকে গ্রাস করবেই । তোমাদের ও দুনিয়ার অবস্থা হলো সহযাত্রীর মতো— কিছু দূর একসাথে চলার পর যে যার পথে দ্রুত চলে যায়। কত অল্প সময়ের এ সহযাত্রা! এ দুনিয়ার রঙ্গমঞ্চ অতি অল্প সময়ের যা একটা মুহুর্তের জন্য বর্ধিত করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। অপরপক্ষে একজন দ্রুতগামী চালক (অর্থাৎ সময়) দুনিয়া থেকে প্রস্থান করার জন্য তোমাদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং পার্থিব সম্মান ও প্রতিপত্তির জন্য লালায়িত হয়ে না। দুনিয়ার চাকচিক্য ও ঐশ্বর্যে আনন্দউদ্বেল হয়ো না এবং এর ক্ষতি ও দুর্ভাগ্যের জন্য রোদন করো না। কারণ দুনিয়ার সম্মান ও প্রতিপত্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে, এর সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্য ধ্বংস হয়ে যাবে এবং এর ক্ষতি ও দুর্ভাগ্যের অবসান হবে। এ পৃথিবীতে প্রতিটি কালের শেষ আছে এবং প্রত্যেক জীবিত বস্তুই মৃত্যুবরণ করবে। তোমাদের পূর্ববতীগণের স্মৃতিচিহ্ন কি তোমাদের জন্য সতর্কাদেশ নয়? তারা কি তোমাদের চোখ খুলে দেয় নি? তোমাদের পূর্ব পুরুষদের অবস্থা কি তোমাদেরকে শিক্ষা দেয় না? তাদের অবস্থা কি তোমাদের বোধশক্তি জাগ্রত করে না? তোমরা কি দেখতে পাও না পূর্ববতীগণ ফিরে আসে না এবং জীবিত অনুসারীগণ চিরকাল থাকে না? তোমরা কি লক্ষ্য কর না, দুনিয়ার মানুষ সকাল ও সন্ধ্যা এক অবস্থায় কাটায় না? কেউ মৃতের জন্য ত্যাগ করছে, কেউ দুনিয়ার পিছনে ছুটে চলেছে অথচ মৃত্যু তাকে খুঁজছে; কেউ সব ভুলে গাফেল হয়ে বসে আছে অথচ মৃত্যু তাকে কখনো ভুলে না এবং পূর্ববতীগণের পদাঙ্কের দিকে পরবতীগণকে নিয়ে যায় । সাবধান, পাপ কাজ করার আগে ভোগ-বিলাস ধ্বংসকারী, আনন্দ নস্যাৎকারী ও কামনা-বাসনার হত্যাকারীকে (মৃত্যু) স্মরণ করো। আল্লাহর প্রতি কর্তব্য পালনের জন্য এবং তাঁর অগণিত নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার জন্য তার সাহায্য প্রার্থনা কর।