খারিজিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য যাত্রাকালে কেউ একজন আমিরুল ভয় হয়, আপনি লক্ষ্য অর্জনে কৃতকার্য হতে পারবেন না।” তখন আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ তুমি কি মনে কর, তুমি বলে দিতে পার মানুষ কোন সময় বের হলে অশুভ তাকে স্পর্শ করতে পারবে না অথবা কোন সময় বের হলে সে ক্ষতিগ্রস্থ হবে, সে বিষয়ে তুমি সতর্ক করে দিতে পার? যে কেউ জ্যোতিষশাস্ত্র বিশ্বাস করে সে কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং নিজের অভিষ্ট অর্জনে ও অবাঞ্চিত বিষয় প্রতিহতকরণে আল্লাহর প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়ে। তোমার এসব কথার মাধ্যমে তুমি আশা পোষণ করা যে, যারা তোমার কথামতো কাজ করে তারা যেন আল্লাহর পরিবর্তে তোমার প্রশংসা করে, কারণ তোমার ভুল ধারণা অনুযায়ী তুমি তাদেরকে লাভবান হওয়া অথবা ক্ষতি এড়ানোর মুহুর্তা বলে দিয়ে পরিচালিত করেছো । তারপর আমিরুল মোমেনিন জনগণের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলেনঃ হে জনমন্ডলী! শুধু স্থলভাগে ও সমুদ্রে দিক নির্ণয় ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে তারকাবিদ্যা শিক্ষা করা সম্পর্কে তোমরা হুশিয়ার থেকো। কারণ এটা মানুষকে অনুমানের দিকে ঠেলে দেয় এবং জ্যোতিষী একজন অনুমানকারী ছাড়া কিছুই নয়। এহেন অনুমানকারী যাদুকরের মতো, যাদুকর কাফেরের মতো এবং কাফের দোযখবাসী। কাজেই আল্লাহর নামে এগিয়ে যাও।
১। খারিজিদের উত্থান দমনের জন্য নাহরাওয়ান যাত্রাকালে আফিফ ইবনে কায়েস আল-কিন্দি আমিরুল মোমেনিনকে বললো, “এ ক্ষণটা ভালো নয়। এ সময়ে আপনি যাত্রা করলে পরাজিত হবেন।” কিন্তু আমিরুল মোমেনিন তার কথায় কর্ণপাত না করে তখনই বেরিয়ে পড়লেন। সে যুদ্ধে খারিজিদের শোচনীয় পরাজয় হয়েছিল। তাদের নয়। হাজার সৈন্যের মধ্যে নয় জন পলাতক ব্যতীত সকলেই নিহত হয়েছিল।
এ খোৎবায় আমিরুল মোমেনিন জ্যোতিষশাস্ত্র মিথ্যা প্রমাণ করে তিনটি যুক্তি দেখিয়েছেনঃ প্রথমত জ্যোতিষীদের অভিমত সঠিক বলে গ্রহণ করলে কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়। কারণ কুরআন বলে—
বল, আল্লাহ ব্যতীত আকাশ ও পৃথিবীতে অদৃশ্য বিষয়ে কেউ কিছু জ্ঞাত নহে। (২৭ ? ৬৫)।
দ্বিতীয়ত জ্যোতিষী তার ভুল ধারণার প্রভাবে বিশ্বাস করে যে, ভবিষ্যৎ জানার মাধ্যমে সে তার লাভ বা
ক্ষতির বিষয় জানতে পারে। সে ক্ষেত্রে সে আল্লাহ ও তার সাহায্য প্রার্থনার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে। এরূপ ঔদাসীন্যতা ইমানের পথ পরিত্যাগ করা ও নাস্তিকতার সামিল যা আল্লাহর প্রতি আশা পোষণের মানসিকতা বিনষ্ট করে দেয়। তৃতীয়ত কোনক্রমে যদি তার কথা সঠিক হয়ে যায়। তবে সে মনে করে এটা জ্যোতিষশাস্ত্র জানার ফলে হয়েছে। ফলত সে আল্লাহর প্রশংসা করার পরিবর্তে আত্মপ্রসাদ লাভ করে এবং এহেন অনুমান ভিত্তিক কাজে দৈবক্রমে কেউ লাভবান হলে সে আল্লাহরপরিবর্তে জ্যোতিষীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।