জিহাদের সময় যারা মিথ্যা ওজর দেখিয়েছিল তাদের সম্বন্ধে
হে লোকসকল, তোমরা শারীরিকভাবে ঐক্য দেখালেও তোমাদের মন-মানস ও কামনা বিবিধমুখি । তোমাদের কথায় কঠিন পাথর গলে যায় এবং তোমাদের কার্যকলাপ দেখে শত্রুপক্ষ প্রলুব্ধ হয়। তোমরা বসে বসে বাগাড়ম্বর কর, এটা করবে, ওটা করবে; অথচ যুদ্ধ আরম্ভ হলেই নিরাপদ দূরত্বে শটকে পড়। কেউ সাহায্যের জন্য আহবান করলে তোমরা কর্ণপাত কর না । তোমাদের সাথে কঠোর আচরণ করেও কোন লাভ হয় না। তোমরা এমন সব ভ্রান্ত ওজর দাঁড় করাও যেন খাতক তার ঋণ পরিশোধ করতে চায় না। অপদস্ত লোক কখনো নির্যাতন প্রতিহত করতে পারে না। কঠোর প্রচেষ্টা ছাড়া সত্য ও ন্যায়
প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। এ ঘর ছাড়া আর কোনটি তোমরা রক্ষা করবে? আমার পরে কোন ইমামের নেতৃত্বে তোমরা যুদ্ধ করবে?
আল্লাহর কসম, তোমরা আমাকে প্রতারণা করতে গিয়ে নিজেরাই প্রতারিত হচ্ছে এবং সেও তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হবে যে যুদ্ধক্ষেত্রে অকেজো তীর কুড়িয়ে জড়ো করে। তোমরা হলে শত্রুর উপর নিক্ষিপ্ত ভাঙ্গা তীরের মতো। আল্লাহর কসম, বর্তমানে আমার অবস্থা এমন হয়েছে যে, আমি না। পারি তোমাদের অভিমত গ্রহণ করতে, না পারি তোমাদের সাহায্য বা সমর্থনের আশা করতে, আর না পারি তোমাদেরকে নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে। তোমাদের হয়েছেটা কী, শুনি? তোমরা কি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে? তোমাদের রোগ নিরাময়ের উপায় কী? বিরুদ্ধপক্ষও তোমাদের মতোই মানুষ কিন্তু বৈশিষ্ট্যে তারা তোমাদের চেয়ে ভিন্ন প্রকৃতির। তোমরা কি কাজের চেয়ে কথাই বেশি বলতে থাকবে? পরহেজগারি ছেড়ে গাফেল হয়ে থাকবে? তোমরা কি (ন্যায়ের পথে) কাজ না করার প্রতি আসক্ত হয়েই থাকবে?”
১। নাহরাওয়ানের যুদ্ধের পর মুয়াবিয়া দাহহাক ইবনে কায়েস ফিহরীকে চার হাজার সৈন্যসহ কুফা এলাকায় প্রেরণ করে নির্দেশ দেয় যে, তারা যেন ওই এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সর্বদা গোলযোগ লাগিয়ে রাখে, যাকে পায় হত্যা করে, রক্তপাত ও ধ্বংসযজ্ঞ এমনভাবে অব্যাহত রাখে যাতে আমিরুল মোমেনিন শান্তি ও মানসিক স্বস্তি না পান। দাহহাক এ উদ্দেশ্য সাধনে তৎপর হয়ে নিরীহ জনগণের রক্তপাত ঘটিয়ে একের পর এক এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে আছ-ছালাবিয়া নামক স্থানে উপনীত হলো। এখানে সে একটা হজযাত্রী কাফেলার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের সর্বস্ব লুণ্ঠন করে নিয়ে গেছে। তারপর সে কুতুকুতানাহ এলাকায় প্রবেশ করে রাসুলের (সঃ) সাহাবা আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসুদের ভ্রাতুষ্পপুত্র আমর ইবনে উয়ায়েজ ও তার সঙ্গীদের হত্যা করেছিল। এভাবে সে চতুর্দিকে রক্তপাত ও ব্যাপক ধ্বংস সাধন করে চলেছিল। আমিরুল মোমেনিন সংবাদ পেয়ে নিজের লোকদের ডেকে এহেন বর্বরতা প্রতিহত করার জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বললেন। কিন্তু তারা এমন ভাব দেখালো যেন তারা যুদ্ধ এড়িয়ে চলতে চায়। তাদের আচরণে আমিরুল মোমেনিন বিরক্ত হয়ে এ ভাষণ দেন। ভ্রান্ত ও খোড়া ওজর না দেখিয়ে মাতৃভূমি রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন। অবশেষে হাজার ইবনে আল-কিন্দি চার হাজার সৈন্য নিয়ে তাদমুর নামক স্থানে শক্রকে রুখে দাঁড়ালো। অল্পক্ষণ মোকাবেলার পর শত্রুপক্ষ পালিয়ে গেল। এ যুদ্ধে শত্রুপক্ষের উনিশ জন নিহত হয়েছে এবং আমিরুল মামোমেনিনের পক্ষের দুজন শহিদ হয়েছে।