আল্লাহকে ভয় করার উপদেশ
নিশ্চয়ই, আল্লাহর ভয় হেদায়েতের চাবিকাঠি, পরকালের পাথেয়, সকল গোলামির মুক্তি এবং যে কোন ধ্বংস থেকে নিস্কৃতি পাবার উপায়। এতে মানুষের কৃতকার্যতা আসে, নিরাপত্তা লাভ করা যায় এবং জীবনের লক্ষ্য অর্জিত ক্ৰয় । সৎ আমল কর। এতে তোমাদের মূল্যবােধ বেড়ে যাবে, তওবা উপকারে আসবে, প্রার্থনা কবুল হবে, অবস্থা শান্তিপূর্ণ হবে, কেরামন কাতেবিনের (সম্মানিত লেখকদ্বয়) কলম সর্বদা চলতে থাকবে। বয়স পরিবর্তনের (বৃদ্ধ হবার) আগেই আমলে সালেহার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাও। তা না হলে দীর্ঘ জুরা-ব্যধি ও মৃত্যু তোমাদের সে ক্ষমতা কেড়ে নিতে পারে। নিশ্চয়ই, মৃত্যু তোমাদের ভোগ-বিলাস নিঃশেষ করে দেবে, আনন্দ-উল্লাস বিনাশ করে দেবে এবং তোমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত করে দেবে। মৃত্যু হলো অবাঞ্চিত দর্শনাথী, অপ্রতিরোধ্য শত্রু ও বেহিসাবি হত্যাকারী। মৃত্যুর রশি তোমাদেরকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে, এর কুফল তোমাদের চারদিকে ঘিরে রেখেছে, এর শার তোমাদের প্রতি তাক করা আছে এবং লক্ষ্যভ্রষ্ট হবার কোন সম্ভাবনা নেই। তোমাদের ওপর মৃত্যুর নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ এবং এর অত্যাচার লাগাতার । সহসাই গাঢ় কালোছায়া, কঠিন পীড়া, দুঃখের অন্ধকার, বেদনার কাতরানি, ধ্বংসের শোক, অন্ধকারের বেষ্টনী ও মৃত্যুর বিস্বাদ তোমাদেরকে অসহায় করে ফেলবে। মনে হবে এটা আচামৃকা অতি সন্তৰ্পণে তোমার কাছে এসেছে এবং তোমাকে দলচু্যত করে দিয়েছে। তোমার সকল ক্রিয়াকলাপ বিনষ্ট করে দিয়েছে, তোমার ঘর চুরমার করে দিয়েছে এবং তোমার কষ্টার্জিত সম্পদ ওয়ারিশগণের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে দিয়েছে। অথচ এ ওয়ারিশগণ তোমার কোন উপকার করতে পারে নি এবং সাময়িক শোক প্ৰকাশ করলেও তোমাকে রক্ষা করতে পারে নি এবং কদিনের মধ্যেই তারা তোমাকে ভুলে আনন্দে মেতে ওঠবে। সুতরাং এ পৃথিবী থেকে রসদ সংগ্রহ করে পরপারের প্রস্তুতি গ্রহণ করা ও পরপারের জন্য নিজেকে তৈরি করা তোমাদের নিজেদের ওপর নির্ভর করে। এ দুনিয়া যেন তোমাদেরকে প্রতারণা করতে না পারে সেদিকে সতর্ক থেকে। দুনিয়া তোমাদের পূর্ববতীগণকেও ধোকা দিয়েছে। তারা দুনিয়া থেকে দুগ্ধ দোহন করেছিল, গাফলতি দ্বারা দুনিয়া থেকে উপকৃত হয়েছিল এবং দীর্ঘদিন পৃথিবীতে থেকে বাৰ্ধক্যপ্রাপ্ত হয়েছিল। তাদের বাসস্থানও কবরে হয়েছে এবং তাদের সম্পদের মালিকানা অন্যরা পেয়েছে। কে তাদের কবরের কাছে এসেছে তারা তা জানে না, যারা তাদের জন্য কাদে তাদের কান্না তারা শুনতে পায় না। এবং কারো ডাকে তারা সাড়া দেয় না। ফলে এ দুনিয়া সম্বন্ধে সাবধান হও । কারণ দুনিয়া প্ৰতারক, প্রবঞ্চক ও ধোকাবাজ ; দুনিয়া যা দেয় তা আবার কেড়ে নিয়ে যায়। দুনিয়ার আনন্দ চিরস্থায়ী নয়। এতে দুঃখ কষ্টের শেষ নেই এবং এতে দুর্যোগে কখনো থেমে থাকে না। আত্মনিরোধীরা দুনিয়াবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা দুনিয়াবাসী নয়। কারণ তারা এমনভাবে থাকে যেন তারা দুনিয়ার মধ্যে নেই। তারা এখানে যা কিছু পর্যবেক্ষণ করে তদনুযায়ী কাজ করে এবং যা তারা ভয় করে তা দ্রুত এড়িয়ে যায়। এ পৃথিবীতে তারা এমনভাবে থাকে যেন তাদের
শরীর পরকালবাসীদের মধ্যে চলাফেরা করে। দুনিয়াবাসীরা দেহের মৃত্যুকে গুরুত্ব দেয়, কিন্তু আত্মনিরোধীরা জীবিতদের আত্মার মৃত্যুকে গুরুত্ব দেয়।