দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ীত্ব ও কবরের অসহায়ত্ব সম্বন্ধে এ দুনিয়া একটা বিপদ-ঘেরা আবাসস্থল এবং এটা প্রতারণার জন্য সুপরিচিত। দুনিয়ার অবস্থার কোন স্থায়ীত্ব নেই এবং এর অধিবাসীগণ নিরাপদ থাকে না। এর অবস্থা স্থির থাকে না এবং এর পথসমূহ সর্বদা পরিবর্তনশীল। জীবন এতে নিন্দনীয় হয় এবং এতে নিরাপত্তার কোন অস্তিত্ব নেই। তবুও মানুষ দুনিয়ার লক্ষ্যবস্তু। দুনিয়া মানুষকে এর তীর দ্বারা আঘাত করে এবং মৃত্যুর মাধ্যমে তাদেরকে ধ্বংস করে । হে আল্লাহর বান্দাগণ, জেনে রাখো, তোমরা এবং এ দুনিয়াতে তোমাদের যা কিছু আছে— সব কিছুই সে দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে যে দিকে তোমাদের পূর্ববতীগণ চলে গেছে। তারা দীর্ঘায়ু পেয়েছিল, তাদের ঘর জনাকীর্ণ ছিল এবং তাদের চিহ্ন বেশি স্থায়ী ছিল। তাদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হয়ে গেছে, তাদের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের দেহ পঁচে গেছে, তাদের ঘর শূন্য হয়ে গেছে এবং তাদের চিহ্নও মুছে গেছে। তাদের জীকজমকপূর্ণ স্থান ও বিস্তৃত গালিচা পাথরে পরিণত হয়ে গেছে। তারা এখন সংকীর্ণ গর্ত আকারের কবরে শুয়ে আছে যার ভিত্তি ধ্বংসের ওপর এবং নির্মাণ মাটি দ্বারা করা হয়েছে। এ নির্মাণ এত ংকীর্ণ যে এর ছাদ তাদেরকে প্রায় ছুয়ে ফেলে এবং যারা এতে স্থায়ী বাসা বেঁধেছে তারা যেন দূরে সরিয়ে দেয়া অপরিচিত ব্যক্তি। তারা নিজেদের এলাকার জনগণের একজন কিন্তু কবরে নিতান্ত একাকী। তারা সকল কাজ থেকে মুক্ত কিন্তু এখনো কর্মে জড়িত। জন্মভূমির সাথে তাদের কোন সংশ্ৰব নেই এবং প্রতিবেশীর মতো তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে না। যদিও তারা বসবাসের দিক থেকে একে অপরের খুব নিকটবতীর্ণ। কী করেই বা তারা একে অপরের সাথে সাক্ষাত করবে, যেখানে ধ্বংস তার বুক দিয়ে চেপে ধরে তাদেরকে ধরাশায়ী করে রেখেছে এবং পাথর ও মাটি তাদেরকে খেয়ে ফেলেছে। তারা যেখানে গেছে তোমাদেরকেও সেখানে যেতে হবে। যে নিদ্রা তাদেরকে আচ্ছন্ন করেছে সে নিদ্রায় তোমাদেরকেও ধরবে। যতটুকু স্থান তাদের জন্য নির্ধারিত হয়েছে ততটুকু তোমাদের জন্যও নির্ধারিত। তখন তোমাদের অবস্থা কী হবে যখন তোমাদের আমলসমূহ তাদের কাছ পর্যন্ত পৌছবে এবং কবরসমূহ ওলট-পালট হয়ে যাবে? সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি পূৰ্ব্ব-কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত হবে এবং তাদেরকে তাদের প্রকৃত প্ৰভু আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে আনা হবে এবং তাদের উদ্ভাবিত মিথ্যাসমূহ তাদের কাছ থেকে আক্তাহিত হবে (কুরআন- ১০ :৩০)