প্রতিষ্ঠিত প্রশধ্বংসা আল্লাহর যিনি সম্মান ও মর্যাদার ভূষণে ভূষিত এবং এটা তিনি তাঁর বান্দার পরিবর্তে নিজের জন্যই নির্ধারিত করেছেন। এই সম্মান ও মর্যাদাকে তিনি অন্যের জন্য অপ্ৰবেশ্য ও অবৈধ করেছেন। তিনি তার মহিমান্বিত জাতের জন্য এটা নির্ধারণ করেছেন এবং যে কেউ এ বিষয়ে তার সাথে প্রতিযোগিতা করবে তার প্রতি লানত দিয়েছেন। ইবলিসের আত্মম্ভরিতা সম্পর্কে তিনি তার ফেরেশতাগণকে এসব গুণাবলী সম্বন্ধে পরীক্ষায় ফেললেন যাতে তাদের মধ্যে কারা বিনয়ী আর কারা দুর্বিণীত তা পরখ করা যায়। হৃদয়ে যা লুক্কায়িত ও অদৃশ্যে যা বিরাজমান সে বিষয়ে জ্ঞাত আল্লাহ বলেন ঃ …নিশ্চয়ই আমি কর্দম থেকে মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। যখন আমি তাকে সুষম করবো এবং তাতে আমার রুহ সঞ্চার করবো, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো / তখন ফেরেশতাগণ সকলেই সিজদাবনত হলো, কেবল ইবলিস ব্যতীত, সে অহংকার করলো, ফলে কাফিরদের অন্তভূক্ত হলো (?:1ԾՈrl-ob 8 Գ»- Գ8) ইবলিসের অসার দম্ভ তার পথে বাধা হয়ে দাড়ালো। সুতরাং সে নিজের সৃষ্টি ও মূল উৎস বিষয়ে গর্ব অনুভব করে আদমের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করলো। এভাবেই আল্লাহর এ শত্রু দাম্ভিক ও উদ্ধতগণের নেতা হলো। এ ইবলিসই বিরোধিতার গোড়া পত্তন করেছিলো, মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহর সাথে কলহে লিপ্ত হয়েছিলো, ঔদ্ধত্যের পোষাক পরিধান করেছিলো এবং বিনম্রতার আবরণ অপসারিত করেছিলো। তোমরা কি দেখ না অসাড় দম্ভ ও কল্পিত মর্যাদার গর্ব করার ফলে আল্লাহ তাকে কিভাবে হতমান ও মর্যাদাহীন করেছেন? আল্লাহ তাকে ইহকালে পরিত্যাগ করেছেন এবং পরকালে তার জন্য জ্বলন্ত অনল প্রস্তুত রেখেছেন। যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তবে আদমকে এমন নূর থেকে সৃষ্টি করতে পারতেন যার তাজাল্লি চোখ ধাঁধিয়ে দিতাে, যার সৌন্দর্য সকলকে বিহ্বল করে দিতাে এবং যার সুগন্ধ শ্বাস-প্রশ্বাসে অনুভূত হতো; যদি তিনি এমনটি করতেন তবে ফেরেশতাগণের পরীক্ষা সহজতর হতো। কিন্তু মহিমান্বিত আল্লাহ তার বান্দাগণকে এমন জিনিস দ্বারা পরীক্ষা করলেন যার আসল প্রকৃতি তারা জানে না যাতে তারা পরখ করে ভালো মন্দ ব্যবধান করতে পারে এবং যাতে তারা তাদের দম্ভ দূরীভূত করে আত্মম্ভরিতা ও আত্ম-প্ৰশধ্বংসা থেকে দূরে থাকতে পারে। শয়তানের সাথে আল্লাহ যে ব্যবহার করেছেন তা থেকে তোমাদের শিক্ষা গ্ৰহণ করা উচিত। এক মুহুর্তের আত্মম্ভরিতার কারণে তার সকল মহৎ আমল ও ইবাদত তিনি বাতিল করে দিয়েছেন—যদিও সে ছয় হাজার বছর আল্লাহর ইবাদত করেছিলো— এটা ইহকাল অথবা পরকাল গণনা করে। কিনা জানা নেই। শয়তানের পরে একই রকম অবাধ্যতা দেখিয়ে তোমাদের কেউ কি আল্লাহ থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে? মোটেই কেউ না । মহিমান্বিত আল্লাহ যে কারণে বেহেশত থেকে একজন ফেরেশতাকে বহিস্কার করেছেন সে কাজ করলে তিনি কোন মানুষকে বেহেশতে প্রবেশ করতে দেবেন না। আকাশ ও ভূমন্ডলের সকলের প্রতি তাঁর আদেশ সমভাবে প্রযোজ্য। আল্লাহর সঙ্গে কারো এমন কোন বন্ধুত্ব নেই যেজন্য তিনি কাউকে কোন অবাঞ্চিত বিষয়ে লাইসেন্স দিয়েছেন এবং অন্য কারো জন্য তা অবৈধ করেছেন।
শয়তানের বিরুদ্ধে সতর্কতা সম্পর্কে সুতরাং তোমরা ভয়ে থেকে পাছে শয়তান তার রোগ তোমাদের মাঝে সংক্রমণ করে দেয় অথবা তার আহবানের মাধ্যমে তোমাদেরকে বিপথগামী করে দেয় অথবা তার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তোমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কারণ আমার জীবনের শপথ, সে তোমাদের বিরুদ্ধে তার ধনুকে শর যোজনা করেছে, শক্তভাবে ধনুকে টঙ্কার তুলেছে এবং নিকটবর্তী অবস্থান থেকে তোমাদের প্রতি লক্ষ্য স্থির করেছে। সে বলেছিল ? হে আমার প্রভু, যার কারণে আপনি আমাকে পরিত্যাগ করে ধ্বংসে নিপতিত করেছেন, নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে ভ্ৰাক্তির পথে পরিচালিত করবো এবং নিশ্চয়ই আমি তাদের সকলকে বিপথে নিয়ে স্বাবা (কুরআন-১৫ ° ৩৯) যদিও অজানা ভবিষ্যৎ বিষয়ে অনুমান করে শয়তান এ উক্তি করেছিলো। তবুও অসাড় দম্ভের পুত্ৰগণ, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের ভ্রাতাগণ এবং অহমিকা ও অধৈৰ্য্যের অশ্বারোহীগণ তার কথা সত্য বলে প্রমাণিত করেছে; অন্ততঃপক্ষে তোমাদের মধ্য হতে অবাধ্যরা যখন তার সামনে মাথা নত করে, তোমাদের সম্বন্ধে তার লোভ শক্তিলাভ করে এবং যা ছিল গুপ্ত তা স্পষ্ট হয়ে পড়ে, তোমাদের ওপর তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এসে যায় ও তার বাহিনী নিয়ে কুচকাওয়াজ করে তোমাদের দিকে এগিয়ে আসে। নিক্ষেপ করেছিল, তোমাদেরকে পদদলিত করেছিল, বর্শা দ্বারা চোখে আঘাত করে তামাদেরকে আহত করেছিল, তোমাদের গলা কেটে দিয়েছিল, তোমাদের নাক ছিড়ে ফেলেছিল, তোমাদের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ভেঙ্গে ফেলেছিল এবং তার নিয়ন্ত্রণ-রশিতে তোমাদেরকে বেঁধে জ্বলন্ত আগুনের দিকে নিয়ে গেল। এভাবে সে তোমাদের দ্বিনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হলো এবং তোমাদের দুনিয়াদারিতে ফেতনা-শিখা প্রজলনকারী হিসাবে পরিগণিত হলো। যে সকল শত্রুর বিরুদ্ধে তোমরা সৈন্য চালনা কর, শয়তান তাদের চেয়ে অধিক ঘোরতর শক্ৰ । সুতরাং শয়তানের বিরুদ্ধে তোমাদের সমুদয় শক্তি ও সামর্থ্য নিয়োগ করা উচিত। কারণ আল্লাহর কসম, সে তোমাদের মূল উৎসের প্রতি দম্ভোক্তি করেছিল, তোমাদের মর্যাদা সম্পর্কে প্রশ্নের অবতারণা করেছিল এবং তোমাদের বংশধারার ওপর বাজে মন্তব্য করেছিল। সে তার সৈন্যবাহিনীসহ তোমাদের দিকে অগ্রসর হয়েছিল এবং তোমাদের পথের দিকে তার পদাতিক বাহিনী নিয়ে এসেছিল। তারা প্রতিটি স্থান থেকে তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করছে এবং তারা তোমাদের আঙ্গুলের প্রতিটি জোড়ায় আঘাত করছে। তোমরা কোন উপায়েই আত্মরক্ষা করতে সমর্থ নও এবং কোন সংকল্প দ্বারাই তাদের প্রতিহত করতে পারছে না। তোমরা অসম্মানের কুয়াশায় ঘেরা, দুর্দশার জালে আবদ্ধ, মৃত্যুর মাঠে রয়েছে এবং মহাবিপদের পথে রয়েছে । – সুতরাং তোমাদের হৃদয়ের গুপ্ত ঔদ্ধত্যের আগুন ও অসহিষ্ণুতার শিখা নিভিয়ে ফেল। একজন মুসলিমের হৃদয়ে এহেন আত্মম্ভরিতা শুধুমাত্ৰ শয়তানের প্ররোচনায় ও কুমন্ত্রণায় হতে পারে। বিনয়ী হবার জন্য মনস্থির কর, আত্মশ্লাঘাকে পদদলিত কর এবং তোমাদের স্কন্ধ হতে আত্মম্ভরিতা দূরে ছুড়ে ফেল। বিনয়কে তোমরা তোমাদের শত্রু অর্থাৎ শয়তান ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসাবে গ্রহণ করা। নিশ্চয়ই, সকল জনগোষ্ঠীতেই তার যোদ্ধা, সহায়তাকারী, পদাতিক ও অশ্বারোহী রয়েছে। তোমরা সেই লোকের মতো হয়াে না, যে আল্লাহ্ কর্তৃক প্রদত্ত কোন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী না হয়েও নিজ মায়ের পুত্রের (অর্থাৎ ভাই) ওপর শ্রেষ্ঠত্ব উদ্ভাবন করে। এসব লোকের হৃদয়ে সর্বদা ঈর্ষা ও ক্রোধের আগুন প্রজ্জ্বলিত থাকে যা তাকে আত্মম্ভরিতা ও শ্রেষ্ঠত্বের দাবির দিকে ঠেলে দেয়। শয়তান তার আত্মম্ভরিতা নিজের নাকে ছুড়ে মেরেছিল এবং তাতে আল্লাহ তাকে গভীর আক্ষেপে ফেললেন এবং শেষ বিচার দিন পর্যন্ত সকল হত্যাকারীর পাপের জন্য তাকে দায়ী করলেন। অজ্ঞতা সম্পর্কে আত্মগৰ্ব সাবধান, এ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রকাশ্য বিরোধিতা করে যেসব বিদ্রোহ ও ফেতনা সংঘটিত হচ্ছে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কারণে মোমিনগণকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে, তোমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রামে লিপ্ত হও । আত্মশ্লাঘা ও আসার দম্ভ অনুভব না করে আল্লাহকে ভয় করা!! আল্লাহকে! কারণ, এটাই শক্রতার মূল এবং শয়তানের নকশা যা দিয়ে শয়তান অতীতেও মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। ফলে তারা অজ্ঞতার অন্ধকারে পতিত হয়েছিল এবং তার দ্বারা পরিচালিত হয়েও তার নেতৃত্ব মেনে নিয়ে গোমরাহির অতল গহবরে ডুবে গিয়েছিল। যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী চলে গেছে, কিন্তু আত্মশ্লাঘা বিষয়ে মানুষের হৃদয় একই রকম রয়ে গেছে—মানুষের হৃদয় আত্মম্ভরিতায় ভরপুর হয়ে আছে।
সাবধান, তোমরা সেসব নেতা ও প্রবীণদের মান্য করতে সতর্কতা অবলম্বন করো যারা নিজেদের কৃতিত্বে আত্মম্ভরিতা অনুভব করে এবং নিজেদের বংশ মর্যাদা নিয়ে গৌরব করে। তারা সকল বিষয়ের দায়-দায়িত্ব আল্লাহর প্রতি নিক্ষেপ করে, আল্লাহ তাদের জন্য যা করেছেন সেজন্য তাঁর সাথে কলহে লিপ্ত হয়, তার রায়ের প্রতিবাদ করে এবং তার নেয়ামত সম্বন্ধে তর্কের অবতারণা করে। নিশ্চয়ই, তারা একম্বুয়েমির ভিত্তিমূল, ফেতনার প্রধান স্তম্ভ এবং প্রাক-ইসলামি যুগের বংশ-গৌরবকারীদের তরবারি। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর; তোমাদের ওপর তাঁর আনুকূল্যের বিরোধিতা করো না এবং তোমাদের ওপর তাঁর নেয়ামতের জন্য ঈর্ষান্বিত হয়ে না। ইসলামের দাবিদারদের মধ্যে যাদের ময়লাযুক্ত পানি তোমরা তোমাদের পরিষ্কার পানির সাথে পান কর, যাদের পীড়া তোমরা তোমাদের সুস্থতার সাথে মিশ্রন কর এবং যাদের ভ্রান্তি তোমরা তোমাদের সঠিক ও ন্যায় বিষয়ের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে ফেল, তাদের মান্য द(द्धी की ।
তারা পাপের ভিত্তিমূল এবং অবাধ্যতার শক্তিবর্ধক। শয়তান তাদেরকে গোমরাহির বাহক ও সৈন্যে পরিণত করেছে যাদের সাহায্যে সে মানুষকে আক্রমণ করে। তারা ব্যাখ্যাকারক যাদের মাধ্যমে সে কথা বলে যাতে তোমাদের বুদ্ধিমত্তা চুরি করা যায় এবং তোমাদের চোখ ও কানে প্রবেশ করা যায়। এভাবে সে তোমাদেরকে তার তীরের শিকার করে নেয় এবং তার পদচারণার ভূমি ও শক্তির উৎস করে নেয়। অতীতে যেসব লোক ব্যর্থ হয়ে গেছে তাদের ওপর কিভাবে সে আল্লাহর রোষ ও শাস্তি এনেছিল তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর। তাদের কােত হয়ে গালের ওপর শুয়ে থাকা (মৃত্যু) থেকে উপদেশ গ্রহণ কর এবং আত্মশ্লাঘার বিপদ থেকে রক্ষা পাবার জন্য আল্লাহর করুণা ভিক্ষা করা যেভাবে দুর্যোগের সময় তাঁর নিরাপত্তা যাচনা কর ।
পয়গম্বরগণের বিনয় সম্পর্কে পয়গম্বরগণ ও তাদের স্থলাভিষিক্তগণকেই তা দিতেন। কিন্তু মহিমান্বিত আল্লাহ তাদের জন্য আত্মম্ভরিতাকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন এবং তাদের বিনয়কে পছন্দ করেছেন। সুতরাং তাঁরা মাটিতে মাথা নত করেছে, তাদের মুখমন্ডলকে ধূলা-ধুসারিত করেছে, মোমিনদের জন্য নিজদেরকে বক্র করেছে (অর্থাৎ সেজদায় পড়েছে) এবং নিজেরা সর্বদা বিনয়ী হয়ে থেকেছে। আল্লাহ তাদেরকে দারিদ্র ও ক্ষুধা দ্বারা, যন্ত্রণাদায়ক বিপদাপদ ও ভীতি দ্বারা, দুঃখ ও দুর্দশা দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন। সুতরাং সম্পদ ও সন্তানসন্ততি দেখে তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি কী অসন্তুষ্টি নির্ণয় করো না। কারণ সম্পদশালী ও ক্ষমতাবান থাকাকালে তোমাদের পাপ সমূহের কথা তোমরা বেমালুম ভুলে থাক। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন ঃ কী1 তারা কি মনে করে যে, আমরা তাদেরকে ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি দান করি বলে তাদের জন্য সকল প্রকার মঙ্গল তুরান্বিত করছি? না, তারা বুঝে না | (ठूद्भऊाना–२७ ? ^6-6७) নিশ্চয়ই, মহিমান্বিত আল্লাহ আত্মম্ভরি বান্দাগণকে তাঁর প্রিয়জনের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন যারা তাদের চোখে হীন। যখন ইমরানের পুত্র মুসা তাঁর ভ্রাতা হারুনকে সঙ্গে নিয়ে মোটা পশমি কাপড় পরে লাঠি হাতে ফেরাউনের কাছে গিয়েছিল এবং বলেছিল যে, যদি সে আত্মসমর্পণ করে তবে তার রাজ্য রক্ষা পাবে এবং তার সম্মান অব্যাহত থাকবে। কিন্তু ফেরাউন তার লোকদের দিকে তাকিয়ে বললো, “তোমাদের কি অবাক লাগছে না যে, এ দুব্যক্তি আমার রাজত্ব রক্ষা পাবার ও সম্মান অব্যাহত থাকার নিশ্চয়তা দিচ্ছে? অথচ দেখ, এ দুজন কত দরিদ্র ও হীনাবস্থা সম্পন্ন। এ রকম নিশ্চয়তা প্রদানকারী হলে তারা তাদের হাতে স্বর্ণের বালা পরে আসে নি কেন?” ফেরাউন তার বিপুল ঐশ্বর্য ও সম্পদের কারণে গর্বিত হয়ে পশমি পোষাককে তুচ্ছ মনে করেছিল। মহিমান্বিত আল্লাহ ইচ্ছা করলে সমস্ত জাগতিক সম্পদ, স্বর্ণের খনি, সুসজ্জিত বাগান ও সমস্ত পশুপাখী তার মনোনীত পয়গম্বরগণের চারপাশে জড়ো করতে পারতেন। যদি তিনি তা করতেন তবে পরীক্ষা করার কোন সুযোগ থাকতো না, বিনিময় প্রদানের সুযোগ থাকতো না এবং পরকালের সুসংবাদের প্রয়োজন হতো না। তদুপরি যারা তার বাণী গ্রহণ করেছে, তাদেরকে বিচারের পর প্রতিদান দেয়া যেতো না, মোমিনগণ তাদের সৎ আমলের জন্য পুরষ্কার পাওয়ার যোগ্য হতেন না এবং এসব শব্দাবলীর কোন অর্থই থাকতো না। কিন্তু মহিমান্বিত আল্লাহ্ তাঁর পয়গম্বরগণকে বাহ্যিকভাবে দুর্বল করেছেন। কিন্তু সংকল্পে সুদৃঢ় করেছেন এবং অভাব-অনটনের যন্ত্রণা দিয়েছেন। অথচ হৃদয়-ভরা পরিতৃপ্তি দিয়েছেন। যদি পয়গম্বরগণ অনাক্রমণ্য ক্ষমতার অধিকারী হতেন, অপ্রতিরোধ্য সম্মানের অধিকারী হতেন এবং অপরাজেয় রাজত্বের অধিকারী হতেন তাহলে শিক্ষা গ্ৰহণ করা মানুষের জন্য সহজতর হতো এবং আত্মশ্লাঘা অনুভব করা মানুষের পক্ষে কষ্টসাধ্য হতো। তখন মানুষ ভয়ে অথবা লোভে ইমান আনতো এবং তাদের আমল ভিন্ন ভিন্ন হলেও তাদের নিয়্যত (উদ্দেশ্য) একই রকম হতো। সুতরাং মহিমান্বিত আল্লাহ চাইলেন যে, মানুষ একবিন্দু লোভ-লালসা ব্যতিরেকে আন্তরিকভাবে তাঁর পয়গম্বরকে অনুসরণ করুক, তার কিতাবকে স্বীকার করুক, তার কাছে আনত হোক, তার আদেশ মান্য করুক এবং তার অনুগত হয়ে থাকুক যাতে একবিন্দুও খাদ থাকবে না। পরীক্ষা ও দুঃখ-দুৰ্দশা যতই কঠোর হবে পুরস্কার ও বিনিময় ততই বিশাল হবে।
পবিত্ৰ ক’বা সম্পর্কে তোমরা কি দেখ না, মহিমান্বিত আল্লাহ আদম হতে শুরু করে সকলকে পাথর দ্বারা পরিক্ষ করেছেন; যে পাথর কোন উপকার বা ক্ষতি সাধন করতে পারে না এবং এটা দেখেও না, শোনেও না। সেসব পাথর তিনি তাঁর পবিত্র গৃহে লাগিয়ে তাকে নিরাপদ আশ্রয় করলেন। পৃথিবীর সবচাইতে এবড়োথৌবড়ো প্রস্তরময় এলাকার উচ্চভূমিতে তা স্থাপন করলেন; যেখানে মাটির পরিমাণ খুবই কম, পাথুরে পাহাড়ের মাঝে অত্যন্ত সংকীর্ণ উপত্যকা, সমতলভূমি বালিময়, কোন পানির ঝরনা ছিল না এবং লোকবসতি ছিল বিরল। সে এলাকায় উট, ঘোড়া, গরু, ভেড়া পালন করা যেত না। তারপর তিনি আদম ও তার পুত্ৰগণকে তার দিকে তাদের দৃষ্টি ফেরাতে আদেশ দিলেন। এভাবে চারণভূমির অনুসন্ধানে তা তাদের ভ্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হলো এবং তাদের বাহন-পশু পাবার জন্য মিলনস্থলে পরিণত হলো যাতে দূরের পানিবিহীন মরুভূমি, নিচু উপত্যকা ও সমুদ্রের বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চল থেকে মানুষ এখানে চলে আসে। বিনয় স্বরূপ তাদের স্কন্ধ নাড়ায়, তাদের উপস্থিতির শ্লোগান দেয়, এলোমেলো চুল ও ধুলি-ধুসারিত মুখমন্ডল নিয়ে তওয়াফ করে, তাদের কাপড় পিঠে নিক্ষেপ করে (এহরাম বাঁধা) এবং চুল কেটে মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলে। এটা ছিল মহাপরীক্ষা, চরম দুঃখ-দুৰ্দশা, প্রকাশ্য বিচার ও পরম পরিশুদ্ধি। আল্লাহ এটাকে তার রহমতের পথ এবং বেহেশতের সোপান করেছেন ।
মহিমান্বিত আল্লাহ যদি তাঁর পবিত্র ঘর ও মহান নিদর্শনাবলী বৃক্ষরাজী সুশোভিত এলাকায়, স্রোতস্বিনী এলাকায়, নরম সমতল ভূমি এলাকায়, ফলে-ফুলে পরিপূর্ণ এলাকায়, ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায়, সোনালী গমের এলাকায়, হৃদয়গ্রাহী উদ্যান ও বাগান এলাকায়, শস্য-শ্যামল এলাকায়, জল-প্রাচুর্য সমতল এলাকায়, ফলের বাগান ও জনকোলাহলপূর্ণ রাস্তা এলাকায় স্থাপন করতেন তবে হালকা পরীক্ষার জন্য বিনিময়ও কমে যেতো। যদি এ পবিত্র ঘরের ভিত ও পাথর যেভাবে আছে সেভাবে না হয়ে সবুজ মৰ্মর বা লালচুনি পাথরের হতো এবং তা থেকে আলো বিছুরিত হয়ে পড়তো তবে তা মানুষের অন্তরের সংশয় কমিয়ে দিতো, অন্তর থেকে শয়তানের কর্মকান্ড দূরীভূত হতো এবং মানুষের মধ্যে সন্দেহ স্বকীত করে তুলতো না। কিন্তু আল্লাহ্ তাঁর বান্দাগণকে বিবিধ বিপদাপদের মধ্য দিয়ে পরীক্ষা করেন। তিনি চান অভাব-অনটনের মাঝেও বান্দাগণ তার ইবাদত করুক এবং তাদেরকে তিনি দুঃখ-দুৰ্দশায় নিপতিত করেন। এসব কিছুই তাদের হৃদয় থেকে আত্মশ্লাঘা বিদূরিত করার জন্য, তাদেরকে বিনয়ী করে তোলার জন্য এবং তার দয়া ও ক্ষমা সহজতর করার উপায় হিসেবে বিবেচিত ।
বিদ্রোহ ও জুলুম সম্পর্কে সতর্কাদেশ
আল্লাহকে ভয় করা!! আল্লাহকে! বিদ্রোহের ইহকালীন পরিণাম আর জুলুমের পরকালীন পরিণাম ও আত্মশ্লাঘার কুফল সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করা। কারণ এগুলো হলো শয়তানের মারাত্মক ফাঁদ ও তার মস্ত।বড় প্রবঞ্চনা যা প্রাণঘাতী বিষের মতো মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করে। তার এ ফাঁদ কখনো ব্যর্থ হয় না-না সুশিক্ষিত ব্যক্তির কাছে তার জ্ঞানের জন্য আর না। দরিদ্র ব্যক্তির কাছে তার ছিন্ন বস্ত্রের জন্য। এটা এমন এক বিষয় যা থেকে আল্লাহ তাঁর সেসব বান্দাকে নিরাপদ রাখে যারা সালাত, সিয়াম, ও সাদকা দ্বারা মোমিন। কোমল মুখ ধুলা-ধূসরিত করলে, বিনয়াবনত হয়ে মাটিতে সেজদায় পড়ে থাকলে, উপোসের কারণে পেট পিঠের সঙ্গে লেগে গেলে, আল্লাহর ভয়ে চোখ কোটরাগত হয়ে গেলেই এসব অর্জিত হয়।
দেখ, এসব আমল গর্বের চেহারা কুঁকড়ে দেবে এবং আত্মশ্লাঘাকে দাবিয়ে রাখবে। আমি লক্ষ্য করে দেখেছি, কোন কারণ ছাড়াই তোমরা আত্মশ্লাঘা অনুভব কর যা অজ্ঞতা ছাড়া কিছু নয় অথবা তোমরা এমন কিছু নিয়ে আত্মম্ভরিতা কর যার কোন মূল্য নেই।
শয়তান নিজের মূলোৎস নিয়ে আদমের ওপর গর্ব করে বলেছিল “আমি আগুনের তৈরি। আর আদম মাটির তৈরি।” একইভাবে সমাজের ধনীশ্রেণি তাদের ঐশ্বর্যের জন্য আত্মশ্লাঘা অনুভব করে। আল্লাহ বলেনঃ
তারা আরো বলতো, আমরা ধনে-জনে সমৃদ্ধশালী; সুতরাং আমাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে না (কুরআন-৩৪ ? ৩৫)
যদি তোমরা কোনক্রমেই আত্মশ্লাঘাকে এড়াতে না পার তবে সৎগুণের জন্য, প্রশধ্বংসনীয় আমলের জন্য, আকর্ষণীয় আচরণের জন্য, উচুস্তরের চিন্তার জন্য, সম্মানজনক অবস্থানের জন্য এবং কল্যাণ সাধনের জন্য গর্ববোধ করো। প্রতিবেশীর সংরক্ষণ, চুক্তি পরিপূরণ, ধাৰ্মিকদের আনুগত্য, উদ্ধতের বিরোধিতা, অন্যের প্রতি সদয় হওয়া, বিদ্রোহ থেকে বিরত থাকা, রক্তপাত থেকে সরে থাকা, ন্যায় বিচার করা, ক্ৰোধ সংবরণ করা, পৃথিবীতে ফেতনা সৃষ্টি না করা–এসব প্রশধ্বংসনীয় অভ্যাসের জন্য তোমরা আত্মগৰ্ব অনুভব করতে পারে। তোমাদের পূর্ববতীগণের ওপর তাদের কুকর্মের জন্য যেসব বিপদ ও দুৰ্যোগ আপতিত হয়েছিল তা স্মরণ করে ভয় কর । মনে রেখো, ভাল অথবা খারাপ অবস্থায় তাদের যা ঘটেছিল, তোমাদের বেলায় যেন তা না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থেকো। সেসব লোকের উভয় অবস্থা সম্পর্কে তোমরা চিন্তা কর। যে কাজ তাদের অবস্থানকে সম্মানজনক করেছিল তার সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত কর। যে সব কাজের জন্য শত্রু তাদের কাছ থেকে দূরে সরেছিল, নিরাপত্তা তাদের ওপর ছড়িয়েছিল, ধনৈশ্বর্য তাদের কাছে মাথা নত করেছিল এবং এর ফলশ্রুতিতে তারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়েছিল। এসব বিষয় ছিল বিচ্ছিন্নতা থেকে সরে থাকা, ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা এবং একে অপরকে এর প্রতি আহবান করা ও উপদেশ দেয়া। যেসব বিষয় পূর্ববর্তীগণের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছিল এবং তাদের শক্তি খর্ব করে দিয়েছিল, তোমরা তা থেকে সাবধান থেকো। এসব বিষয় হলো ঘূণা-বিদ্বেষ ও পাপ, একে অপরের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নেয়া এবং অন্যের সাহায্য ও সহায়তায় হাত গুটিয়ে রাখা । তোমাদের পূর্বে যেসব মোমিন গত হয়ে গেছে তাদের অবস্থা একবার চিন্তা কর। তারা কতই না দুঃখ-কষ্ট ও পরীক্ষার মধ্যে দিন কাটিয়েছে। তারা কি মানুষের মধ্যে গুরুদায়িত্ব বহনকারী ও দারিদ্র পীড়িত ছিল না? ফেরাউন তাদেরকে দাসে পরিণত করেছিল। তাদের ওপর কঠোর শাস্তি ও নিদারুণ ভোগান্তি আরোপ করেছিল। তারা ক্ৰমাগত ধ্বংসাত্মক অবমাননা ও বন্দিদশায় জীবন কাটিয়েছিল। তারা পলায়নের কোন পথ খুঁজে পায় নি এবং আত্মরক্ষারও কোন উপায় বের করতে পারে নি। যখন মহিমান্বিত আল্লাহ দেখলেন যে, তারা তার মহব্বতে বিপদাপদ সহ্য করছে এবং তাঁর ভয়ে দুঃখ-কষ্ট বরণ করে যাচ্ছে, তখন তিনি তাদেরকে এই পরীক্ষামূলক দুর্দশা হতে মুক্তির সুযোগ করে দিলেন। সুতরাং তিনি তাদের অবমাননাকে সম্মানে এবং ভয়কে নিরাপত্তায় রূপান্তরিত করলেন। ফলত তারা শাসনকারী বাদশা ও বিশিষ্ট মোতায় পরিণত হলো। আল্লাহর আনুকূল্য তাদের ওপর এত পরিমাণ বর্ষিত হলো যা তারা আশাও করতে পারে নি। লক্ষ্য কর, তারা কিরূপ ছিল যখন তাদের মধ্যে একতা ছিল, তাদের ঐকমত্য ছিল, তাদের একের হৃদয় অন্যের প্রতি কোমল ছিল, তাদের হাত একে অপরকে সাহায্য করতো, তাদের একের তরবারি অন্যের সহায়তার জন্য উন্মুক্ত ছিল, তাদের দৃষ্টি শ্যেন ছিল এবং তাদের লক্ষ্যস্থল এক ছিল। তারা কি এ পৃথিবীতে প্ৰভুত্ব করে নি এবং সারা পৃথিবী শাসন করে নি? তারপর দেখ, তাদের কী অবস্থা হয়েছিল যখন তারা শেষের দিকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো, তাদের ঐক্যে ফাটল ধরলো, তাদের কথায় ও হৃদয়ে মতানৈক্য দেখা দিলো, তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়লো এবং বিক্ষিপ্তভাবে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়লো। তখন আল্লাহ তাদের কাছ থেকে তাঁর সম্মানের পরিচ্ছদ তুলে নিয়ে গেলেন এবং তার নেয়ামত দ্বারা সৃষ্ট ঐশ্বর্য থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করলেন। তাদের কাহিনী শুধুমাত্র যারা হেদায়েত গ্ৰহণ করে তাদের শিক্ষার জন্য রয়ে গেল । ইসমাঈলের বংশধর, ইসহাকের পুত্ৰগণ ও ইসরাঈলের পুত্রদের কাহিনী থেকেও তোমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। তাদের কর্মকান্ড ও তাদের উদাহরণে কতই না মিল রয়েছে। তাদের বিভেদ ও অনৈক্য সম্পর্কে চিন্তা করে দেখ, কিভাবে পারস্যের কিসরাস ও রোমের সিজার তাদের প্রভু’ হয়ে গিয়েছিল। তারা তাদেরকে চারণভূমি থেকে, ইরাকের নদীবাহিত এলাকা থেকে এবং উর্বর এলাকা থেকে কন্টকময় বনাঞ্চলে, উত্তপ্ত বায়ু এলাকায় ও জীবিকা নির্বাহের কষ্টসাধ্য এলাকায় তাড়িয়ে দিয়েছিল। এভাবে তারা উটের রাখলে পরিণত হলো। তাদের ঘর ছিল নিকৃষ্টতম এবং খরা-পীড়িত অঞ্চলে ছিল তাদের বসতি। তাদেরকে রক্ষা করার জন্য একটা বাক্যও উচ্চারণ করার মতো কেউ ছিল না । তাদেরকে স্নেহচ্ছায়া দেয়ার মতো কেউ ছিল না যাকে তারা বিশ্বাস করতে পারতো।
তাদের অবস্থা ছিল দুৰ্দশাপূর্ণ। তারা বিভক্ত হয়ে পড়েছিল এবং তাতে তাদের হাতগুলোও ছড়িয়ে পড়েছিল। তারা মহাযন্ত্রণা ও অজ্ঞতার অন্ধকারে নিপতিত হয়েছিল। তারা কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিতো, মূর্তি পূজা করতো, জ্ঞাতিত্বের কোন মূল্য দিত না এবং ডাকাতি ও লুণ্ঠন করতো।
এখন তাদের ওপর আল্লাহর রহমতের প্রতি লক্ষ্য করে দেখ। তিনি তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে একজন নবি প্রেরণ করলেন যিনি তাদেরকে আনুগত্যের অঙ্গীকারে আবদ্ধ করলেন এবং তার আহবানে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করলেন। দেখ, কিভাবে আল্লাহর নেয়ামত তাদের ওপর বিস্তৃত হলো এবং তাঁর রহমতের স্রোতধারা কিভাবে প্রবাহিত হলো যাতে তারা ঐশ্বর্যশালী হয়ে গেলো। ফলে তারা সুখী ও সমৃদ্ধ জীবন যাপন করেছে। তাদের কর্মকান্ড একজন ক্ষমতাশালী শাসকের হেফাজতে সংরক্ষিত হলো এবং তারা একটা শক্তিশালী দেশের অধিবাসীর মর্যাদা লাভ করলো। তারা দুনিয়ার শাসক হয়ে গেলো। আগে যারা তাদেরকে শাসনা করতো তারা তাদের শাসক হলো এবং আগে যারা তাদেরকে আদেশ দিত তাদেরকে তারা আদেশ দিলো। তারা এত শক্তিশালী হলো যে—কখনো বর্শা পরীক্ষা করতে হয় নি এবং তরবারি কোষমুক্ত করার প্রয়োজন পড়ে নি।
সাবধান, তোমরা আনুগত্যের রশি থেকে তোমাদের হাত সরিয়ে নিয়েছে এবং প্রাক-ইসলামি নিয়ম-কানুন দ্বারা তোমাদের চারপাশের ঐশীদুর্গ ভেঙ্গে ফেলেছাে। নিশ্চয়ই, এটা মহিমান্বিত আল্লাহর পরম দয়া যে, তিনি মায়া-মমতার রশি দ্বারা তাদের মধ্যে একতা সৃষ্টি করেছেন যার ছায়ায় তারা চলাফেরা করে ও আশ্রয় গ্রহণ করে। এ আশীর্বাদের মূল্য পৃথিবীতে কেউ অনুধাবন করে না। কারণ এটা যেকোন ঐশ্বর্য হতে মূল্যবান এবং যে কোন সম্পদ হতে উচুমানের। তোমরা ইসলাম গ্রহণ করার পরও এখন আবার আরব-বেদুইনদের অবস্থার দিকে ফিরে যাচ্ছে এবং একবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে এখন আবার বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। এখন তোমরা শুধুমাত্র ইসলামের নাম ছাড়া আর কিছুই ধরে রাখো নি এবং লোক দেখানো ছাড়া ইমানের আর কিছুই তোমাদের নেই। তোমরা বল, “আগুন,— হাঁ, তা কোন লজ্জাকর অবস্থা নয়,” মনে হয়, ইসলামের সম্মান ক্ষুন্ন করার জন্য এবং এর ভ্রাতৃত্বের অঙ্গীকার ভঙ্গ করার জন্য তোমরা ইসলামকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছো। অথচ এই ভ্রাতৃত্ববোধকে আল্লাহ তোমাদের কাছে পবিত্র আমানত হিসাবে এবং তাঁর পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে শান্তির উৎস হিসাবে দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে নিশ্চিত থাক যে, তোমরা ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুর প্রতি বুকে পড়লে অবিশ্বাসীগণ তোমাদের সাথে যুদ্ধ করবে। তখন কিন্তু জিব্রাইল, মিকাইল, মুহাজির বা আনসার কেউ তোমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না। তখন শুধু অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা যাবে এবং যে পর্যন্ত আল্লাহ্ দয়াপরবশ হয়ে একটা ফয়সালা করে না দেন। সে পর্যন্ত এ অবস্থা চলবে। নিদর্শন রয়েছে। সুতরাং তার প্রতিশ্রুতির প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করো না, তাঁর শাস্তির প্রতি উদাসীন হয়াে না, তার ক্রোধকে হালকা করে দেখো না এবং তার রোষকে ত্বরান্বিত করো না। কারণ মহিমান্বিত আল্লাহ অতীতে কাউকে ধ্বংস করেন নি যে পর্যন্ত তারা অন্যকে সৎ আমল করতে বারণ করেছে এবং অসৎ আমল করতে উৎসাহিত করেছে। বস্তৃত আল্লাহ অজ্ঞগণকে তাদের পাপের জন্য এবং জ্ঞানীগণকে পাপে বাধা না দেওয়ার জন্য ধ্বংস করেছিলেন। সাবধান, তোমরা ইসলামের শিকল ভঙ্গ করছে, এর সীমালজয়ন করছে এবং এর আদেশ বিনষ্ট করছে । সাবধান, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে আদেশ দিয়েছেন তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যারা বিদ্রোহ করে, যারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করে ও যারা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে। অঙ্গীকার ভঙ্গকারীদের সাথে আমি জিহাদ করেছি, সত্যত্যাগীদের বিরুদ্ধে আমি জিহাদ ঘোষণা করেছি এবং যারা ইমানের বন্ধন থেকে বেরিয়ে গেছে তাদেরকে আমি দারুণ অসম্মানে রেখেছি। নরকের শয়তানের বিরুদ্ধেও আমি হায়দরি হাঁকের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি এবং এতে তার হৃদয়ের আর্তনাদ ও বুকের কম্পন শ্রুত হচ্ছিলো। শুধুমাত্র বিদ্রোহীদের একটা ক্ষুদ্র অংশ বাকি রয়েছে। যদি আল্লাহ আমাকে একটা মাত্র সুযোগ প্ৰদান করেন তবে আমি তাদেরকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ছাড়বো। তখন শুধু শহরতলীগুলোতে ছড়ানো ছিটানো সামান্য সংখ্যক অন্যায়কারী থেকে যেতে পারে। আমার বাল্যকালেও আমি আরবের প্রসিদ্ধ লোকদের বুক মাটিতে লাগিয়েছিলাম এবং রাবিয়াহ ও মুদার গোত্রের সূচালো শিং ভেঙ্গে দিয়েছিলাম (অর্থাৎ গোত্রপ্রধানকে পরাজিত করেছিলাম)। আল্লাহর রাসুলের (সঃ) সাথে আমার নিকট জ্ঞাতিত্ব ও বিশেষ আত্মীয়তার কারণে আমার মর্যাদা সম্পর্কে নিশ্চয়ই তোমরা জ্ঞাত আছো । যখন আমি শিশু ছিলাম তখনই তিনি আমার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আমাকে তাঁর পবিত্র বুকে চেপে ধরতেন, তার বিছানায় তার পাশে শোয়াতেন, আমাকে তার কাছে টেনে নিতেন এবং তাতে তাঁর পবিত্র শরীরের ঘাণ আমি নিয়েছি। অনেক সময় তিনি কিছু চিবিয়ে আমার মুখে পুরে দিতেন। তিনি আমার কথায় কখনো কোন মিথ্যা পান নি এবং আমার কোন কাজে দুর্বলতা পান নি। তাঁর শিশুকাল থেকেই আল্লাহ একজন শক্তিধর ফেরেশতাকে নিয়োজিত করে রেখেছিলেন যাতে তাকে উচ্চমানের স্বভাব ও উন্নত আচরণের পথে নিয়ে যায়। সে সময় থেকেই আমি তাকে অনুসরণ করে চলতাম যেভাবে একটা উষ্ট্র-শাবক। তার মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। প্রতিদিন তিনি ব্যানার আকারে তাঁর কিছু বৈশিষ্ট্য আমাকে দেখাতেন এবং তা অনুসরণ করতে আমাকে আদেশ দিতেন। প্রতি বছর তিনি হেরা পাহাড়ে নির্জনবাসে যেতেন। সেখানে আমি ব্যতীত আর কেউ তাকে দেখে নি। সে সময় আল্লাহর রাসুল (সঃ) ও খাদিজার ঘর ছাড়া অন্য কোথাও ইসলামের অস্তিত্ব ছিল না এবং সে সময় এ দুজনের পর আমিই ছিলাম। তৃতীয়। আল্লাহর প্রত্যাদেশ ও বাণীর তাজাল্লি আমি দেখতাম এবং নবুয়তের ঘাণ প্রাণভরে গ্রহণ করতাম। যখন আল্লাহর রাসুলের ওপর অহি নাজিল হয়েছিল তখন আমি শয়তানের বিলাপ শুনেছিলাম। আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসুল, এ বিলাপ কিসের?” উত্তরে তিনি বললেন, “শয়তান যে পূজিত হবার সকল আশা-ভরসা হারিয়ে ফেলেছে এটা তারই বিলাপ। হে আলী, আমি যা কিছু দেখি, তুমিও তা-ই দেখ, এবং আমি যা কিছু শুনি, তুমিও তা-ই শোন; ব্যবধান শুধু এটুকু যে, তুমি নবি নও, তুমি স্থলাভিষিক্ত (Vicegerent) এবং নিশ্চয়ই তুমি দ্বিনের পথে রয়েছাে।”
আমি তখনো তার সাথে ছিলাম যখন একদল কুরাইশ তাঁর কাছে এসে বললো, “হে মুহাম্মদ, তুমি এমন এক বিরাট দাবি উত্থাপন করেছে যা তোমার পূর্ব-পুরুষদের কেউ বা তোমার বংশের কেউ কোন দিন করে নি। আমরা এখন তোমাকে একটা বিষয় জিজ্ঞেস করি; যদি এর সঠিক উত্তর দিতে পার এবং আমাদেরকে তা দেখাতে পার তবে আমরা বিশ্বাস করবো তুমি একজন নবি ও রাসুল, অন্যথায় আমরা মনে করবো তুমি একজন জাদুকর ও মিথ্যাবাদী।” আল্লাহর রাসুল বললেন, “কী তোমরা জিজ্ঞেস করতে চাও?” তারা বললো, “এ গাছটিকে মূলসহ উঠে এসে তোমার সামনে থামতে বলো।” রাসুল (সঃ) বললেন, “নিশ্চয়ই, আল্লাহ্ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। যদি আল্লাহ্ তোমাদের ইচ্ছা পূরণ করেন তবে কি তোমরা ইমান আনবে ও সত্যের সাক্ষ্য দেবে?” তারা বললো, “হ্যা”। রাসুল (সঃ) বললেন “তোমরা যা চেয়েছে। আমি তোমাদেরকে তা দেখাবো, কিন্তু আমি জানি, তোমরা সত্যের প্রতি বুকবে না এবং তোমাদের মধ্যে অনেক রয়েছে যারা দোযখে নিক্ষিপ্ত হবে, আর অনেকে আমার বিরুদ্ধে দলগঠন করবে” । তারপর রাসুল (সঃ) বললেন, “ওহে গাছ, যদি তুমি আল্লাহ ও বিচার দিনে বিশ্বাস কর, এবং যদি তুমি জান যে, আমি আল্লাহর রাসুল তাহলে আল্লাহর হুকুমে তোমার মূলসহ উঠে এসে আমার সম্মুখে দাড়াও।” সেই আল্লাহর কসম যিনি রাসুলকে (সঃ) সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, গাছটি বিরাট গুঞ্জন করে এবং পাখীর পাখার মতো ঝাপটা মেরে মূলসহ আল্লাহর রাসুলের সম্মুখে এসে থমকে দাঁড়িয়েছিল। এ সময় গাছটির ক’টি ডাল আমার কাঁধ স্পর্শ করেছিল এবং আমি তখন রাসুলের (সঃ) ডান পার্শ্বে ছিলাম।
যখন মানুষ এ অবস্থা দেখলো তখন তারা বললো, “এখন গাছের অর্ধাংশকে তোমার কাছে থাকতে বল এবং অপর অর্ধাংশকে স্বস্থানে চলে যেতে বলো।” আল্লাহর রাসুল বলা মাত্রই গাছ তা-ই করলো। গাছটির অর্ধাংশ হৰ্ষোৎফুল্ল অবস্থায় গুঞ্জন করতে করতে স্বস্থানে চলে গেল এবং অপর অর্ধাংশ রাসুলকে (সঃ) প্রায় স্পর্শ করেছিল। তখন লোকেরা চিৎকার করে বললো, “গাছের এই অর্ধাংশ অপর অর্ধেকের কাছে যেতে বল এবং পূর্ববৎ হয়ে যেতে বল।” আল্লাহর রাসুল আদেশ দেয়া মাত্রই গাছটি তা করলো। তারপর আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসুল, আমিই প্রথম যে আপনাকে বিশ্বাস করে এবং আমি স্বীকার করি যে, মহিমান্বিত আল্লাহর হুকুমে এইমাত্র গাছটি যা করলে তা শুধু আপনার নবুয়তের স্বীকৃতি ও আপনার বাণীর উচ্চমর্যাদা দানের নিদর্শন স্বরূপ। একথা বলার পর লোকেরা অবিশ্বাস ও বিদ্রোহ করে বললো, “জাদু; মিথ্যা; এটা এক বিস্ময়কর জাদু; সে এতে অতি সুদক্ষ। একমাত্র এ লোকটি (আমাকে দেখায়ে) তোমাকে ও তোমার কর্মকান্ডকে স্বীকৃতি দিতে পারে।”
নিশ্চয়ই, আমি সেসব লোকের দলভুক্ত যারা আল্লাহর ব্যাপারে কারো কোন নিন্দা বা তিরস্কারের তোয়াক্কা করে না। তাদের চেহারা সত্যবাদীর চেহারা এবং তাদের বক্তব্য দ্বিনদারের বক্তব্য। তারা আল্লাহর ধ্যানে রাত্রিকালে জাগরণ করে এবং দিবাভাগ হেদায়েতের আলোক-বর্তিকা হিসাবে কাটায়। তারা কুরআনের রজু, শক্ত করে ধরে এবং আল্লাহ ও রাসুলের (সঃ) আদেশ-নিষেধ পুনরুজ্জীবিত করে। তারা আত্মম্ভরিতা করে না, আত্মবঞ্চনায় প্রবৃত্ত হয় না, পরস্বহরণ করে না এবং ফেতনা সৃষ্টি করে না। তাদের হৃদয় থাকে বেহেশতে এবং দেহ থাকে কল্যাণকর আমলে ব্যস্ত ।
১। অতীত লোকদের উত্থান-পতনের ঘটনা প্রবাহের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে একটা বিষয় দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে ওঠবে যে, তাদের উত্থান-পতন ভাগ্যের পরিণাম বা কোন দৈবদুর্বিপাক নয়। এটা ছিল তাদের কৃতকর্ম ও আমলের ফল। তাদের ওপর আপতিত ঘটনাবলী তাদের প্রকাশ্য জুলুম ও পাপ কাজের বিনিময়, যা তাদের জন্য ধ্বংস ডেকে এনেছে। অপরপক্ষে দ্বীনের আমল ও শান্তিপূর্ণ বসবাস সর্বদা সৌভাগ্য ও কৃতকার্যতা বয়ে আনে। যদি বারংবার এবই আমল ও অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটে। তবে তার পরিণতিও একই রকম হবে। কারণ ভালো কাজের ফল ভালো আর মন্দ কাজের ফল মন্দ। এ রকম না হলে অতীত ঘটনাবলী বৰ্ণনা করে মজলুম দুৰ্দশাগ্রস্তের হৃদয়ে আশার সঞ্চার সম্ভব হতো না এবং জালেম ও স্বৈরাচারের কর্মকান্ডের কুফল সম্পর্কে সতর্ক করা সম্ভব হতো না। তাই এটা স্বতঃসিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, অতীতের ঘটনাবলী পরবতীগণের জন্য একটা উত্তম শিক্ষা গ্রহণের বিষয়। সেই কারণেই আমিরুল মোমেনিন পারস্য ও রোম সম্রাটদের হাতে বনি ইসমাঈল, বনি ইসহাক ও বনি ইসরাঈলগণের দুঃখ-দুৰ্দশার বর্ণনা দিয়েছিলেন। হজরত ইব্রাহীমের (আঃ) জ্যেষ্ঠপুত্র হজরত ইসমাঈলের বংশধরগণকে বনি ইসমাঈল এবং কনিষ্ঠপুত্র হজরত ইসহাকের বংশধরগণকে বনি ইসহাক বলা হয়। এ দুটি বংশধারা পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন নামে পরিচিতি লাভ করে। তাদের আদিবাস ছিল প্যালেষ্টাইনের কেনান অঞ্চলে । ইউফেটিস ও টাইগ্ৰীস নদীর সমতল এলাকা থেকে হিজরত কষ্ট্রে হজরত ইব্রাহীম কেনান অঞ্চলে বসতিস্থাপন করেন। হজরত ইব্রাহীম তার পুত্র ইসমাঈল ও তার মাতা হাজেরাকে হিজাজ অঞ্চলে নির্বাসন দিলে তথায় হজরত ইসমাঈল বসতি স্থাপন করেন। হিজাজ অঞ্চলে বসবাসরত জুরহাম গোত্রের সাইয়্যেদাহ বিনতে মুদাদ নামী এক মহিলাকে হজরত ইসমাঈল বিয়ে করেছিলেন এবং সাইয়্যেদাহ থেকেই ইসমাঈলের বংশ বিস্তার লাভ করে। হজরত ইব্রাহীমের কণিষ্ঠ পুত্র ইসহাক কেনান অঞ্চলে বসবাস করতেন। তার পুত্রের নাম ছিল। ইয়াকুব (ইসরাঈল)। ইয়াকুব তার মামাতো বােন লিয়াকে বিয়ে করেছিলেন এবং লিয়ার মৃত্যুর পর তার বােনকে বিয়ে করেন। এ দুবােন থেকেই ইয়াকুবের বংশ বিস্তার লাভ করে যারা বনি ইসরাঈল নামে পরিচিত। ইয়াকুবের এক পুত্রের নাম ছিল ইউসুফ (যোসেফ) যিনি একটা দুৰ্ঘটনার কারণে প্রতিবেশী দেশ মিশরে পেঁৗছে দাসত্ব ও বন্দিদশা থেকে ঘটনাক্রমে শাসক হয়ে সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। এরপর তিনি তার জ্ঞাতি-গোষ্ঠি ও আত্মীয়-স্বজনদেরকে মিশরে নিয়ে যান এবং এভাবে মিশরে বনি ইসরাঈলের বসতি গড়ে উঠেছিল। কিছুকাল তারা সেখানে সুনাম ও সম্মানের সাথে ছিল। কিন্তু কালক্রমে স্থানীয় লোকদের ঘৃণা ও অবজ্ঞা তাদের প্রতি নিক্ষপ্ত হতে লাগলো এবং তারা সকল প্রকার জুলুমের শিকার হতে লাগলো। তাদের প্রতি অত্যাচার এতটা পৌছেছিলো যে, পুত্ৰ সন্তানকে হত্যা করা হতো এবং কন্যাগণকে ক্রীতদাসীরূপে রেখে দেয়া হতো। চারশত বছর এভাবে জুলুম আর দুঃখ-দুৰ্দশা পোহানোর পর তাদের অবস্থার পরিবর্তন হলো, লাঞ্ছনার অবসান হলো এবং গোলামির শিকল ভেঙ্গেছিল যখন আল্লাহ মুসাকে (আঃ) প্রেরণ করলেন। মুসা তাদেরকে নিয়ে মিশর ত্যাগ করে চলে যাচ্ছিলেন, কিন্তু ফেরাউনকে ধ্বংস করার জন্য আল্লাহ তাদেরকে নীল নদের দিকে নিয়ে গেলেন। তাদের সম্মুখে ছিল নীল নদের অথৈ পানি আর পিছনে ছিল ফেরাউনের বিশাল বাহিনী। এতে তারা হতবুদ্ধি হয়ে পড়লো, কিন্তু নিৰ্ভয়ে পানিতে নেমে পড়তে আল্লাহ মুসাকে আদেশ দিলেন। যখন মুসা এগিয়ে গিয়ে পানিতে পা রাখলেন অমনি নদীতে অনেক পথ হয়ে গেল। সে পথ দিয়ে মুসা বনি ইসরাঈলগণকে নিয়ে নদী অতিক্রম করে চলে গেলেন। ফেরাউন সে পথ ধরে মুসার পিছু এগিয়ে গেল, কিন্তু নদীর মাঝখানে পৌছা মাত্রই পানি ফেরাউন ও তার সৈন্যবাহিনীকে গিলে ফেললো এবং তারা সকলেই পানিতে তলিয়ে মারা গেল। তাদের সম্পর্কে কুরআন বলেঃ এবং স্মরণ করা সে সময়ের কথা যখন আমরা ফেরাউনের হাত থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করেছিলাম, যারা তোমাদেরকে নিদারুণ নিপীড়ন করতো, তোমাদের পুত্ৰগণকে কতল করতো এবং তোমাদের নারীগণকে জীবিত রাখতো এবং তা ছিল তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে একটা মহা পরীক্ষা (২ ° ৪৯) । যা হোক, মিশরের সীমানা অতিক্রম করে তারা তাদের মাতৃভূমি প্যালেস্টাইনে প্রবেশ করেছিল এবং সেখানে নিজেদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে লাগলো। আল্লাহ তাদের হীন ও অমর্যাদাকর অবস্থা পরিবর্তন করে তাদেরকে প্ৰতাপ ও শাসন ক্ষমতা প্ৰদান করলেন। আল্লাহ বলেন ঃ যে সম্প্রদায়কে দুর্বল গণ্য করা হতো তাদেরকে আমি আমার কল্যাণপ্ৰাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের অধিকারী করেছিলাম এবং বনি ইসরাঈল সম্বন্ধে তোমার প্রভুর শুভ বাণী সত্যে পরিণত হলো, যেহেতু তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল এবং ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের শিল্প ও প্রাসাদ আমরা ধ্বংস করেছিলাম (কুরআন-৭ ? ১৩৭) / শাসনের সিংহাসনের অধিকারী হয়ে ঐশ্বর্য ও সুখ-শান্তি পাওয়ার পর বনি ইসরাঈলগণ তাদের অসম্মান ও অমর্যাদাপূর্ণ দাসত্বের কথা ভুলে গিয়েছিল। তাদের দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পরিবর্তে তারা খোদাদ্রোহী হয়ে গিয়েছিল। তারা নির্লজের মতো পাপ ও অসদাচরণে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল এবং সর্বদা ফেতনা ও মন্দ কাজে লিপ্ত থাকতো। তারা মিথ্যা যুক্তি দেখিয়ে হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল করেছিল। আল্লাহর আদেশে যেসব নবি তাদেরকে সত্যপথে এনে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল তারা তাদেরকে অমান্য করেছিল, এমন কি তাদের কাউকে হত্যাও করেছিল। তাদের পাপ কর্মের স্বাভাবিক পরিণামে শাস্তি তাদেরকে পাকড়াও করেছিল। ফলত বেবিলনের (ইরাক) শাসনকর্তা নেবুচাদনেজার খৃষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন আক্রমণ করে সত্তর হাজার বনি-ইসরাঈলকে হত্যা করেছিল এবং তাদের সকল নগরী ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে জীবিতদেরকে তার সাথে ধরে নিয়ে ক্রীতদাসে পরিণত করে গ্রানিকর জীবনযাপনে বাধ্য করেছিল। এ ধ্বংসযজ্ঞের পর যদিও মনে হয়েছিল যে, তারা আর কোনদিন তাদের হৃত মর্যাদা ও ক্ষমতা ফিরে পাবে না, তবুও আল্লাহ তাদেরকে পুনরায় একটা সুযোগ দিয়েছিলেন। নেবুচাদনেজারের মৃত্যুর পর শাসন ক্ষমতা বেলশাজারের হাতে গিয়েছিল। সে জনগণের ওপর সর্বপ্রকার জুলুম শুরু করেছিল। তার অত্যাচার-অবিচারে অতিষ্ঠ হয়ে জনগণ পারস্যের শাসনকর্তার সাথে গোপনে যোগাযোগ করে বেলশাজারের অত্যাচার থেকে তাদেরকে রক্ষা করার জন্য তাকে অনুরোধ করেছিল। সে সময়ে পারস্যের শাসনকর্তা মহামতি সাইরাস ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন। তিনি জনগণের অনুরোধে বেলশাজারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। ফলে বনি ইসরাঈলের কাঁধ থেকে দাসত্বের জোয়াল সরে গিয়েছিল এবং তাদেরকে ফিলিস্তিনে ফিরে যাবার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এভাবে সত্তর বছর পরাধীনতার পর তারা মাতৃভূমিতে পদার্পণ করে সরকার গঠন করতে সমর্থ হয়েছিল। যদি তারা তাদের অতীত দুঃখ-কষ্ট ও ঘটনাবলী থেকে শিক্ষা গ্ৰহণ করতো। তবে তারা পূর্ববৎ পাপে লিপ্ত হতো না যা তাদেরকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছিল। কিন্তু এ জনগোষ্ঠীর মানসিক ও চারিত্রিক অবস্থা এমন ছিল যে, এরা যখনই স্বাধীনতা ও উন্নতি লাভ করতো আমনি ভোগ-বিলাস ও ঐশ্বর্যের নেশায় দ্বিনের নিয়মকানুন বিসর্জন দিতো; নবিদের উপহাস করতো; এমনকি নবিকে হত্যা করা পর্যন্ত তাদের কাছে তেমন কিছু মনে হতো না। তাদের রাজা হেরোড তার প্রেয়সীকে খুশি করার জন্য হজরত ইয়াহিয়ার (জোেন) মাথা দ্বিখন্ডিত করে তাকে উপহার দিয়েছিল। এ নিষ্ঠুর ও পাপ কাজের জন্য একটা লোক উচ্চবাচ্য করে নি। তাদের এহেন নৈতিক অধঃপতন ও হিধ্বংস্রতা চলাকালেই ঈসা (আঃ) আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে পাপ কাজ পরিত্যাগ করে সদাচরণের দিকে আহবান করলেন। কিন্তু তারা তাকে নানাভাবে অত্যাচার করেছিল এবং অনেক দুঃখ দিয়েছিল। এমনকি তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা পর্যন্ত করেছিল। কিন্তু আল্লাহ তাদের সকল কৌশল নস্যাৎ করে ঈসাকে (আঃ) রক্ষা করলেন। যখন তাদের অবাধ্যতা ও পাপকার্য এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, হেদায়েত গ্রহণের সকল ক্ষমতা তারা হারিয়ে ফেলেছিল তখন আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। রোমা (বাইজান্টিয়া) রাজ্যের শাসনকর্তা ভেসপাসিয়ানাস তার পুত্ৰ তিতাসকে সিরিয়া আক্রমণের জন্য প্রেরণ করেছিল। সে জেরুজালেম অবরোধ করে বাড়ি-ঘর সব ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং উপাসনালয়ের দেয়াল ভেঙ্গে দিয়েছিল। ফলে হাজার হাজার বনি ইসরাঈল বাড়ি-ঘর ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিল এবং হাজার হাজার লোক অন্নাভাবে মৃত্যুবরণ করেছিল। অবশিষ্টরা তরবারির নিচে প্ৰাণ বিসর্জন দিয়েছিল। পলাতক বনি ইসরাঈলগণের অধিকাংশ হিজাজ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল। কিন্তু মুহাম্মদকে (সঃ) নিবি হিসাবে গ্রহণ না করায় তাদের একতা চিরতরে বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল এবং তারা সম্মানজনক জীবন ও মর্যাদা আর কখনো লাভ করতে পারে নি। একইভাবে পারস্যের শাসক আরব এলাকা আক্রমণ করেছিল এবং সেসব স্থানের অধিবাসীদেরকে পদানত করেছিল। শাপুর ইবনে হুরমুজ ষোল বছর বয়সে চার হাজার যোদ্ধা নিয়ে পারস্য সীমানায় বসবাসরত আরবদের আক্রমণ করেছিল। তারপর বাহরাইন, কাতিফ ও হাজার এলাকার দিকে অগ্রসর হয়ে বনি তামিম, বনি বকর ইবনে ওয়াইল ও বনি আবদাল কায়েস ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং সত্তর হাজার আরবের স্কন্ধ কেটে ফেলেছিল। সেজন্য পরবর্তীতে সে “যুল-আকতাফ” নামে পরিচিত হয়েছিল। সে আরবদেরকে তাঁবুতে বাস করতে বাধ্য করেছিল, মাথায় লম্বা চুল রাখতে বাধ্য করেছিল, সাদা কাপড় পরা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল এবং জিনবিহীন ঘোড়ায় চড়ার বিধান করে দিয়েছিল। এরপর সে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যবতী স্থানে এবং ইস্পাহান ও পারস্যের অন্যান্য স্থানে তার হাজার হাজার লোকের বসতি স্থাপন করে দিয়েছিল এবং সেইসব এলাকার অধিবাসীকে বনাঞ্চল, অনুর্বর ও পানি-বিহীন অঞ্চলের দিকে তাড়িয়ে দিয়েছিল যেখানে তারা অতিকষ্টে জীবিকা নির্বাহ করতো। এভাবে আরবের জনগণ তাদের অনৈক্য ও বিভেদের জন্য দীর্ঘকাল অন্যের অত্যাচারের শিকার ছিল। অবশেষে মহিমান্বিত আল্লাহ রাসুলকে (সঃ) প্রেরণ করলেন এবং গ্রানিকর অবস্থা থেকে তাদেরকে সম্মানজনক ও উন্নত অবস্থায় ফিরিয়ে আনলেন। ২। আলী ইবনে আবি তালিব, আবু আইউব আল-আনসারী, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আল-আনসারী, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আম্মার ইবনে ইয়াসির, আবু সাঈদ আল-খুদরী ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে বৰ্ণিত আছে যে, রাসুল (সঃ) আলী ইবনে আবি তালিবকে আদেশ দিয়েছিলেন যেন তিনি বায়াত ভঙ্গকারী (নাকিছিন্ন), সত্যত্যাগী (কাসিতিন) ও ইমান পরিত্যাগকারীদের (মারিকিন) সাথে জিহাদ করেন (নায়সাবুরী**, ৩য় খন্ড, পৃঃ ১৩৯; বার”, ৩য় খন্ড, পৃঃ ১১১৭; আইট্র’, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৩২-৩৩; শাকী’, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ১৮; সুয়ুতী***, ২য় খন্ড, পৃঃ ১৩৮; শাফী***, ৫ খন্ড, পৃঃ ১৮৬; ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ২৩৫; ৭ম খন্ড, পৃঃ ২৩৮; হিন্দি’, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ৭২, ৮২, ৮৮, ১৫৫, ২১৫, ৩১৯, ৩৯১, ৩৯২; বাগদাদী”, ৮ম খন্ড, পৃঃ ৩৪০; ১৩ শ খন্ড, পৃঃ ১৮৬–১৮৭; আসাকীরণ, ৫ম খন্ড, পূঃ ৪১; কাহীর’, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৩০৪-৩০৬; শাফী***, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৪০; জুরকানী’, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৩১৬-৩১৭; বাগদাদী”, ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৮৬)। ইবনে আবিল হাদীদ”** লেখেছেন, “সহি রাবিদের রেওয়াৎ হতে যথাযথভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসুল (সঃ) বলেছেন, তার অবর্তমানে আলী সেসব লোকের সাথে জিহাদ করবে যারা বায়াত ভঙ্গকারী, সত্যত্যাগী ও লোক সিফফিনে তার বিরুদ্ধে অস্ত্ৰধারণ করেছিল তারা সত্যত্যাগী, নাহরাওয়ানের যুদ্ধে তার বিরুদ্ধে অস্ত্ৰধারণকারী খারিজিগণ ছিল ইমান পরিত্যাগকারী বা ইমানের সীমালঙ্ঘনকারী” (১৩খন্ড পৃঃ ১৮৩)। এই তিনটি দলের প্রথম দল সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ঃ যারা তোমার বায়াত গ্ৰহণ করে তারা তো আল্লাহর বায়াত গ্ৰহণ করে । আল্লাহর হাত তাদের হাতের ওপর । সুতরাং যে তা ভঙ্গ করে সে পরিণামে নিজেরই ক্ষতি করে। দ্বিতীয় দল সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ এবং সত্যত্যাগীগণ দোষাখের ইন্ধন হবে (কুরআন-৭২ ? ১৫) তৃতীয় দল সম্পর্কে ইবনে আবিল হাদীদ ৬টি প্রধান সহি হাদিস গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, বিশিষ্ট সাহাবাগণের রেওয়াৎ থেকে দেখা যায়। যুল-খুওয়াই সিরাহ (খারিজিদের নেতা যুছ-ছুদাইয়াহ হুরকাস ইবনে জুহায়র আত-তামিমীর ডাক নাম) সম্বন্ধে রাসুল (সঃ) বলেছিলেনঃ এ লোকটির অধঃস্তন বংশধরগণ কুরআন তেলায়াত করবে, কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবে না (অর্থাৎ অ্যামল করবে না); তারা ইসলামের অনুসারীদেরকে হত্যা করবে এবং মূর্তিপূজকদেরকে জীবিত রাখবে। তারা ইসলামের শিক্ষার প্রতি এত দ্রুত অবলোকন করবে: যেভাবে তীর তাঁর শিকারের দিকে ছুটে যায় (অর্থাৎ ইসলামি শিক্ষাকে হালকাভাবে দেখবে।
এবং তাতে কোন মনোযোগ থাকবে না ) । যদি আমি তাদেরকে দেখতাম। তবে আদি জাতির মতো তাদেরকে হত্যা করতাম (হাদীদ’, ১৩শ খন্ড, পৃঃ ১৮৩: বুখারী’,মাজাহ’, ১ম খন্ড, পৃঃ ৫৯-৬২: নাসাঈ’, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৬৫-৬৬ আনাস, ২য় খন্ড, পৃঃ ২০৪-২০৫: কুক্তি”, ৩য় খন্ড, পৃঃ ১৩১-১৩২; আশাছ’, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ২৪১-২৪৬ নায় সাবুরী’, ২য় খন্ড, পৃঃ ১৪৫-১৫৪, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৫৩১, হাম্বল***, ১ম খন্ড, পৃঃ ৮৮ ১৪০, ১৪৭; ৩য় খন্ড, পৃঃ ৫৬-৬৫. শাকী’, ৮ম খণ্ড, পৃঃ ১৭০-১৭১) { ৩। দোযখের শয়তান বলতে যুছ-ছুদাইয়াকে বুঝানো হয়েছে (যার পূর্ণ নাম ২নং টীকায় বর্ণিত হয়েছে)। সে নাহরাহওয়ানের যুদ্ধে বজপাতে নিহত হয়েছিল। রাসুল (সঃ) তার মৃত্যু সম্বন্ধে পূর্বেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। নাহরাওয়ানের যুদ্ধে খারিজিগণকে ধ্বংস করার পর আমিরুল মোমেনিন অনুসন্ধান করতে বের হয়েছিলেন, কিন্তু কোথায়ও তার লাশ দেখা গেল না। ইতোমধ্যে রায়ান ইবনে সাবিরাহ একটা খালের পাড়ে পায়তালিশটি লাশ গর্তের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখলো। সেই লাশগুলো তুলে আনার পর যুছ-ছুদাইয়ার মৃত দেহ দেখা গেল। তার কাঁধের মাংশপিন্ডের জন্য তাকে যুছ-ছুদাইয়া বলা হতো। তার লাশ দেখে আমিরুল মোমেনিন বলে ওঠলেন, “আল্লাহ মহান, আমি মিথ্যা বলি নি বা ভুল বলি নি” (হাদীদ”**, ১৩শ খণ্ড, পৃঃ ১৮৩-১৮৪;)