খেলাফতেরা যোগ্যতা সম্পর্কে
রাসুল (সঃ) ছিলেন আল্লাহর প্রত্যাদেশের আমানতদার, খাতিমুল আম্বিয়া, আল্লাহুর রহমতের সুসংবাদ প্রদানকারী এবং তাঁর কঠোর শাস্তি সম্বন্ধে সতর্ককারী।
হে জনমন্ডলী, খেলাফতের ব্যাপারে সে ব্যক্তি সব চাইতে উপযুক্ত যে তা সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে সক্ষম এবং যে এ বিষয়ে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ উত্তমরূপে জ্ঞাত আছে। যদি কোন ফেতনা সৃষ্টিকারী ফেতনা সৃষ্টি করে তাকে তওবা করতে বলতে হবে। যদি সে তওবা করতে অস্বীকার করে তবে প্রয়োজনে তার সাথে যুদ্ধ করতে হবে। আমার জীবনের শপথ” যদি ইমামতের (নেতৃত্বের) প্রশ্নে সকল লোক উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা না হয়ে থাকে। তবে এমন ঘটনা (ইমাম নিয়োগ) ঘটে নি। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, যারা সেই সিদ্ধান্তে একমত হয়েছিল তারা অনুপস্থিতগণের ওপর তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছিল। এমন অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছিল যে, যারা উপস্থিত ছিল তাদের ভিন্নমত পোষণ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং যারা অনুপস্থিত ছিল তাদের অন্য কাউকে মনোনীত করাও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। জেনে রাখো, আমি দুব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো—তাদের একজন হলো সেব্যক্তি যে এমন কিছু দাবি করে যা তার নয় এবং অপর ব্যক্তি হলো সে যে তার নিজের দায়িত্বকে উপেক্ষা করে । হে আল্লাহর বান্দাগণ, আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি। আল্লাহকে ভয় করার জন্য, কারণ পরস্পরের প্রতি এটাই সর্বোৎকৃষ্ট উপদেশ এবং আল্লাহর দরবারে সবকিছু থেকে এটাই উত্তম। তোমাদের ও অন্যান্য মুসলিমদের মধ্যে যুদ্ধ বাধানোর জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়েছে এবং এ ঝান্ডা এমন এক ব্যক্তি বহন করবে। যিনি দৃষ্টিমান, ধৈর্যশীল ও ন্যায়পরায়ণতার অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞানবান। সুতরাং তোমাদেরকে যা বলা হয়েছে সেদিকে এগিয়ে যাওয়া এবং যা কিছু থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে তা প্রতিহত করা তোমাদের উচিত। কোন ব্যাপারে তাড়াহুড়া করো না যে পর্যন্ত না তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানতে পার। কারণ তোমরা যা অপছন্দ কর তা পরিবর্তন করার অধিকার আমাদের রয়েছে।
দুনিয়াদারের প্রতি দুনিয়ার আচরণ
জেনে রাখো, এ দুনিয়াকে তোমরা প্রবলভাবে কামনা কর এবং একে পেতে তোমরা দারুণভাবে লালায়িত যা তোমাদেরকে কখনো ক্রদ্ধ করে, কখনো আনন্দ দান করে। অথচ এটা তোমাদের স্থায়ী আবাসস্থল নয় এবং যে স্থানে থাকার জন্য তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এটা সে স্থলও নয় এবং এর প্রতি তোমাদেরকে আমন্ত্রণও জানানো হয় নি। মনে রেখো, দুনিয়া তোমাদের চিরস্থায়ী সঙ্গী হবে না এবং তোমরাও একে নিয়ে চিরদিন বেঁচে থাকবে না। এ দুনিয়ার কোন কিছুর আকর্ষণ যদি তোমাদেরকে প্রভাবিত করে তবে তার কুফলও তোমাদেরকে সতর্ক করে। তোমাদের সকলের উচিত। এর আকর্ষণ পরিহার করে সতর্কাদেশ গ্রহণ করা এবং এর প্রভাব পরিহার করে আতঙ্ক গ্ৰহণ করা। যতক্ষণ এখানে থাকো দুনিয়া হতে হৃদয়কে ফিরিয়ে রেখো এবং সেই ঘরের দিকে এগিয়ে যাও যার প্রতি তোমাদেরকে আহবান করা হয়েছে। ক্রীতদাসী কোন কিছু হতে বঞ্চিত হলে যেভাবে ক্ৰন্দন করে সেভাবে (দুনিয়ার জন্য) ক্ৰন্দন করা তোমাদের উচিত নয়। ধৈর্যসহকারে আল্লাহর অনুগত হয়ে এবং তাঁর কিতাবের হেফাজত করে (যা তিনি বলেছেন) তাঁর পরিপূর্ণ নেয়ামত যাচনা কর।
জেনে রাখো, এ দুনিয়ার কোন কিছু হারিয়ে গেলে তোমাদের কোন ক্ষতি হবে না। যদি তোমরা দ্বিনের নীতিমালার হেফাজত কর। আরো জেনে রাখো, তোমাদের দ্বিনি হারিয়ে গেলে দুনিয়ার কোন কিছুই তোমাদের উপকারে আসবে না। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের হৃদয়কে ন্যায়মুখী করুন এবং আমাদেরকে ও তোমাদেরকে ধৈর্যধারণ করার তৌফিক দিন ।
১। বনি সাঈদার সকিফাহতে খলিফা নির্বাচনের জন্য যখন জনগণ জড়ো হয়েছিল তখন একটা নীতি নির্ধারণ করা হয়েছিল যে, যারা সেখানে উপস্থিত ছিল বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা বা বায়াত ভঙ্গ করার কোন অধিকার তাদের থাকবে না এবং অনুপস্থিতগণের বিনা প্রতিবাদে সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। কিন্তু মদিনার লোকেরা যখন আমিরুল মোমেনিনের হাতে বায়াত গ্রহণ করেছিলো তখন সিরিয়ার গভর্নর মুয়াবিয়া বায়াত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিলেন যে, বায়াত গ্রহণের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন না বলে এটা তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এর জবাবে আমিরুল মোমেনিন এ খোৎবা প্ৰদান করে বলেছিলেন যে, তাদের তৈরি ও স্বীকৃত নীতি অনুযায়ী “যখন মদিনার সকল লোক এবং আনসার ও মুহাজিরগণ মিলিতভাবে সর্বসম্মতিক্রমে আমার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছে তখন অনুপস্থিতির কারণ দেখিয়ে বায়াত থেকে দূরে সরে থাকার কোন অধিকার মুয়াবিয়ার নেই এবং তালহা ও জুবায়ের বায়াত ভঙ্গ করার কোন অধিকার রাখে না।”