ময়ুর ও পাখীর বিস্ময়কর সৃষ্টি সম্পর্কে জীবিত, জীবনবিহীন, স্থির ও চলমান অনেক বিস্ময়কর প্রাণী ও বস্তু আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তিনি
তাঁর সূক্ষ্ম সৃষ্টি ক্ষমতা ও কুদরতের এমন সুস্পষ্ট প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করেছেন যাতে মানুষের মন তার স্বীকৃতি স্বরূপ আল্লাহর প্রতি ঝুকে পড়ে ও আনুগত্য করে এবং তাঁর ঐকল্যের সুর যেন আমাদের কানে বাজে। তিনি বিভিন্ন আকৃতির পাখী সৃষ্টি করেছেন। এদের কোনটি মাটি খুড়ে গর্ত করে বাস করে, কোনটি খোলা জায়গায় বাস করে এবং কোনটি পর্বতের চূড়ায় বাস করে।
এদের বিভিন্ন প্রকারের পাখা ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আল্লাহর কর্তৃত্বের রশি দ্বারা এরা নিয়ন্ত্রিত। এরা পাখা ঝাপটিয়ে খোলা আকাশে দ্রুত উড়ে বেড়ায়। এক অদ্ভুত আকৃতিতে তিনি এদের অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এনেছেন এবং অস্থি ও গ্রন্থি মাংশাবৃত করে তৈরি করেছেন। এদের কতেককে ভারী দেহের কারণে সহজে উড়ে বেড়ানো থেকে বিরত করেছেন এবং পাখা ব্যবহার করে মাটি থেকে অল্প উপরে চলার অনুমতি দিয়েছেন। তিনি তাঁর কুদরত ও সৌন্দর্যপূর্ণ সৃষ্টি ক্ষমতা দ্বারা এদের বিভিন্ন রঙের সৃষ্টি করেছেন । এদের মধ্যে কোন একটির বর্ণের ওপর অন্য বর্ণের আভা থাকলে তা অন্য কোনটির সাথে মিলবে না। কোন কোনটির আবার এক রঙের আভা থাকে এবং তাদের গলায় বিভিন্ন রঙের রিং করা থাকে যা দেহের রঙ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
ময়ুর সম্পর্কে
পাখীর মধ্যে ময়ুর হচ্ছে বিস্ময়কর সৃষ্টি যা আল্লাহ অতি প্রতিসম মাত্রায় সৃষ্টি করেছেন এবং এর রঙ সুন্দরভাবে পাখায় ও লম্বা লেজে সমাবেশিত করেছেন। ময়ুর যখন ময়ুরীর কাছে যায় তখন ময়ূরী লেজ উত্তোলন করে এমনভাবে ছড়িয়ে দেয় মনে হয় যেন সে ময়ুরের মাথায় ছায়া দিচ্ছে। এ সময় লেজ দেখলে মনে হয় নৌকায় তোলা পাল । এরা নিজের রঙের জন্য গর্ববোধ করে এবং সদম্ভে চলাফেরা করে। এরা মোরগের মতো যৌনসঙ্গমে মিলিত হয়। কামুক সুঠামদেহী মানুষের মতো ময়ুর ময়ুরীকে বােপটে ধরে । আমি যা বলছি তা আমার পর্যবেক্ষণ থেকে বলছি। অন্যের বর্ণনা করা বিষয় বলি না। যেমন অনেকে বলে থাকে ময়ূরের চোখের পানি ময়ূরী খেয়ে ফেলে এবং তাতে ময়ূরী ডিম পাড়ে। প্রকৃতপক্ষে ময়ুর মোরগের মতোই প্রজনন ক্রিয়া করে। এদের পালকগুলো যেন রৌপ্য নির্মিত ছবি এবং তাতে রয়েছে বিস্ময়কর বৃত্ত ও সূর্যকৃতি পালক যা বিশুদ্ধ স্বর্ণ ও সবুজ পান্নার মতো দেখায়। এটাকে যদি মাটিতে জন্মানো কোন কিছুর সাথে তুলনা করতে হয় তবে বলতে হবে বসন্তের একগুচ্ছ ফুল; যদি কাপড়ের সঙ্গে তুলনা করতে হয় তবে বলতে হবে ইয়েমেনে তৈরি চিত্র বিচিত্র ছাপযুক্ত রেশমি কাপড় এবং যদি অলঙ্কারের সাথে তুলনা করতে হয় তবে বলতে হবে বিভিন্ন রঙের রত্ন খচিত অলঙ্কার যাতে রৌপ্যের বোতাম খচিত । ময়ুর সদৰ্পে চলাফেরা করে, এর লেজ ও পাখা ছড়িয়ে দেয় এবং এর পোষাকের সৌন্দর্যের প্রশধ্বংসায় ও রত্নখচিত গলার হারের রঙে হেসে ওঠে, নাচতে থাকে। কিন্তু যখন নিজের পায়ের দিকে তাকায় তখন শোক দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশক শব্দে কেঁদে ওঠে। কারণ এদের পাগুলো কুৎসিত, ইন্দো-পারস্য সংকর জাতের মোরগের মতো। এদের জঙ্ঘার শেষভাগে একটা সরু কাটা আছে এবং মাথার মুকুটে একগুচ্ছ সবুজ রঙের কিমীরিত (variegated) পালক আছে। এদের গলা পান-পাত্রের আকৃতির মতো এবং পেট পর্যন্ত বিস্তৃত ইয়েমেনের চুলের কলাপের মতো। রং। এদের কানের পাশে একটা উজ্জ্বল রেখা আছে যা ডেইজি ফুলের রঙের মতো এবং কলমের অগ্রভাগের মতো সরু। এমন কোন রঙ নেই যার কিছু না কিছু ময়ুরের গায়ে নেই। ময়ূরের এ সুন্দর পালক ঝরে পড়ে যায়। তখন মনে হয় এরা পোষাক খুলে ফেলেছে। পুচ্ছগুলো ঝরে গিয়ে গাছের পাতার মতো পুনরায় গজায়। পালক ঝরে গিয়ে নতুন পালক গজানোর ফলে কোন রঙের পরিবর্তন হয় না বা যে রঙ যেখানে ছিল ঠিক সেখানেই তা থাকে। বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা বা ভাষায় এহেন একটা সৃষ্টির বর্ণনা করা দুঃসাধ্য। চোখের সামনে রাখা সৃষ্টির রূপ বৈচিত্র্য ও গুণাবলী সম্পূর্ণ বর্ণনা করার জন্য মহিমান্বিত আল্লাহ মানুষের ভাষা ও বুদ্ধিমত্তাকে অক্ষম করেছেন। স্রষ্টার ক্ষুদ্র সৃষ্টিতেও চমৎকারিত্ব তিনিই মহিমান্বিত আল্লাহ্ যিনি ক্ষুদ্র পিপীলিকা ও ছারপোকাকে পা দিয়েছেন। আবার সরীসৃপ এবং হস্তীকেও পা দিয়েছেন। আবার তিনি এটা বাধ্যতামূলক করেছেন যে, রূহ সঞ্চার না করলে কোন প্রকার কঙ্কাল নড়াচড়া করতে পারবে না এবং মৃত্যু এর প্রতিশ্রুত স্থান ও ধ্বংস এর চূড়ান্ত পরিণতি। জানাতের বর্ণনা জান্নাতের যে বর্ণনা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে তার প্রতি যদি তোমরা তোমাদের মনের চোখ দিয়ে একবার দৃষ্টিপাত কর তাহলে তোমরা এ দুনিয়ার যা কিছু সৌন্দর্য দেখছো তাকে ঘূণা করতে শুরু করবে। দুনিয়ার কামনা-বাসনা, এর আনন্দ উপভোগ, এর চাকচিক্য ও সৌন্দর্য—এসব কিছুকে তোমরা ঘূণা করবে। জান্নাতের স্রোতস্বিনীর পাড়ে গাছের মরমর শব্দে তোমরা নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলবে। গাছের ডালে সুশোভিত ফুল ও ফল দেখে তোমরা মোহিত হয়ে পড়বে। এসব ফল পাড়তে কোন কষ্ট হয় না; পাওয়ার ইচ্ছা হলেই ফল তোমাদের কাছে চলে আসবে। বিশুদ্ধ মধু ও উত্তেজক মদ তাদের চারপাশে থাকবে যারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে। তারা সেসব লোক সম্মান যাদেরকে চিরস্থায়ী বাসস্থানে যাবার পূর্ব পর্যন্ত অনুসরণ করে এবং ভ্রমণের কষ্টের পর তারা সেখানে বিশ্রাম গ্রহণ করে। হে শ্রোতৃমন্ডলী, এসব বিস্ময়কর দৃশ্য দেখার জন্য যদি তোমরা ব্যস্ত হও তবে নিশ্চয়ই আগ্রহের কারণে তোমাদের হৃদয় মরে যেতো এবং আমার সম্মুখ থেকে উঠে সরাসরি তাদের সঙ্গী হবার প্রস্তুতি নিতে যারা কবরে আছে। আল্লাহ তার অসীম দয়া দ্বারা আমাদের ও তোমাদের হৃদয়ে জান্নাতে বসবাসের লালসা জাগারুক করুন।