বনি আসাদ গোত্রের একজন অনুচর। আমিরুল মোমেনিনকে জিজ্ঞেস করেছিলো, “এটা কেমন কথা যে, আপনার গোত্ৰ (কুরাইশ) আপনাকে পদমর্যাদা (খেলাফত) থেকে বঞ্চিত করেছিল? অথচ খেলাফতের জন্য আপনি সর্বাপেক্ষা বাঞ্চিত ব্যক্তি।” প্ৰত্যুত্তরে আমিরুল মোমেনিন বললেনঃ হে বনি আসাদের ভ্রাতা, তোমার জিন আটকানাের বেল্ট ঢ়িলা এবং তুমি তা উল্টোভাবে লাগিয়েছে। তাসত্ত্বেও তুমি বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয় এবং তোমার জিজ্ঞেস করার অধিকার আছে। যেহেতু তুমি জিজ্ঞেস করেছে, তাই শোনাঃ যদিও আমরা আল্লাহর রাসুলের সর্বোচ্চ উত্তরাধিকারী এবং সবচাইতে নিকটতম আত্মীয় তবুও খেলাফত বিষয়ে আমরা বেশি অত্যাচারিত। এটা কতিপয় স্বার্থন্বেষী লোকের কাজ যাতে তাদের হৃদয় লোভাতুর হয়ে পড়েছিল; যদিও কিছু লোক এর পরোয়া করে নি। আল্লাহ ন্যায় বিচারক এবং বিচার দিনে সকলেই তার কাছে প্ৰত্যাবর্তন করবে।
এখন সেই ধ্বংসযজ্ঞের কেচ্ছা ছাড় যা নিয়ে চতুর্দিকে হৈ চৈ হচ্ছে’ । এখন আবু সুফিয়ানের পুত্রের (মুয়াবিয়া) দিকে তাকাও। কান্নার পর সময় এখন আমাকে হাসাচ্ছে।
আশ্চর্য হবার কিছু নেই, আল্লাহর কসম, তার কর্মকান্ড সকল বিস্ময়কে ছাড়িয়ে গেছে এবং সব রকম অবৈধতাকে বৃদ্ধি করেছে। এসব লোক আল্লাহর প্রদীপের আলো-শিখা নিভিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং তার ঝরনাকে তার উৎসস্থলে বন্ধ করে দিতে চেয়েছে। তারা মহামারী উৎপাদক পানি আমার ও তাদের মধ্যে মিশ্রিত করতে চেয়েছিল। যদি পরীক্ষামূলক দুঃখ-দুদর্শ আমাদের কাছ থেকে সরিয়ে নেয়া হতো তাহলে তাদেরকে আমি সত্যবাদিতার পথে নিয়ে যেতে পারতাম। অন্যথায়ঃ
সুতরাং তাদের জন্য আক্ষেপ করে তোমার প্রাণ যেন বিনষ্ট হয়ে না যায় | নিশ্চয়
আল্লাহ তা সম্যক জানেন যা ওরা করছে (কুরআন – ৩৫৮) /
১ । এ উক্তিটি আরবের কবি ইমরুল কায়েস আল-কিন্দির একটি কবিতার পংক্তি। ইহার পরবতী পংক্তিটি
হলোঃ এবং বাহন উটগুলোর কী হলো সে কেচ্ছ। আমাকে জানতে দাও ।
এ কবিতার ঘটনা হলো কায়েসের পিতা হুজির যখন নিহত হলো তখন সে পিতার রক্তের বদলা নেয়ার জন্য বিভিন্ন গোত্রের কাছে গিয়েছিল। সে জাদিলা গোত্রের খালিদ ইবনে সাদুসের কাছে। এ ব্যাপারে যখন গিয়েছিল তখন সেই গোত্রের বাইছ ইবনে হুওয়াস নামক এক ব্যক্তি তার উটগুলো তাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল। সে তার মেজবানের নিকট নালিশ করেছিল। মেজবান খালিদ বললো যে, উটগুলো ফিরিয়ে আনার জন্য তার উগ্ৰীগুলো সঙ্গে দিয়ে তাকে পাঠাতে হবে। কায়েস তাই করলো। খালিদ তার গোত্রের লোকদের বললো তারা যেন তার মেহমানের উটগুলো ফেরত দেয়। কায়েস যে খালিদের মেহমান একথা তারা বিশ্বাস করতে চাইলো না। তখন খালিদ কায়েসের উত্নীগুলো দেখিয়ে শপথ করে বলতে তারা লুষ্ঠিত উটগুলো ফেরত দিতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা উটগুলো ফেরত না দিয়ে উষ্ট্রগুলোকেও তাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল। কায়েস এ সংবাদ পেয়ে কবিতাটি রচনা করেছিল।
আমিরুল মোমেনিন উপমা হিসাবে এ কবিতা উদ্ধৃতি করার উদ্দেশ্য হলো, “এখন মুয়াবিয়া আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। এখন সেই বিষয়ে কথা বলা যায়। এখন তাদের বিষয় আলোচনা করার সময় নয় যারা আমার অধিকার জবরদখল করে ধ্বংস সাধন করেছে। সে সময় চলে গেছে। এখন শুধু ফেতনার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়োগ করে জাপটা-জাপটি করার সময়। সুতরাং এখন বিদ্যমান ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা কর, অসময়ের সঙ্গীত এখন বাদ দাও।” আমিরুল মোমমিন এরূপ বলার কারণ হলো লোকটি সিফফিনের যুদ্ধ চলাকালে এ প্রশ্ন করেছিলো।