ক্রন্দনে আত্মার খুবই কষ্ট —
আমাদের চারপাশে প্রচলিত ইসলামে বহুল প্রচারিত একটি কথা এই যে , মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন করলে মৃত ব্যক্তির আত্মা বড়ই কষ্ট পায় ।
এখন আপনি ওনাকে পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত একজন জীবিত নিখোঁজ পুত্রের জন্য তাঁর পিতার ক্রন্দনের দলীল দিবেন – কোন লাভ নেই ।
ইসলামের প্রথম শহীদ হযরত হামজা (রাঃ) এর জন্য মহানবী (সাঃ) এর ক্রন্দনের দলীল দিবেন – কোন লাভ নেই ।
মহানবী (সাঃ) এর মরহুম দুই শিশুপুত্রের জন্য মহানবী (সাঃ) এর ক্রন্দনের দলীল দিবেন – কোন লাভ নেই ।
মহানবী (সাঃ) এর প্রথম মরহুম পত্নীর জন্য মহানবী (সাঃ) এর ক্রন্দনের দলীল দিবেন – কোন লাভ নেই ।
মহানবী (সাঃ) এর ইন্তেকাল পরবর্তী জান্নাতের নেত্রী মা জননী ফাতেমা যাহরা (সাঃআঃ) ক্রন্দনের দলীল দিবেন – কোন লাভ নেই ।
ভদ্রলোক তার কথাতেই বলবৎ যে , খবরদার খবরদার ! যতই কান্নাকাটি করবেন ততই মৃত ব্যক্তিটির আত্মা দুঃখে কষ্টে পতিত হইতে থাকিবে ।
কি আর করা !
আমি বলছিলাম যে , এই রকম অবস্থায় আপনি ঐ ভদ্রলোককে খুব বিনীত ভাবে দুটি কথা জিজ্ঞেস করতে পারেন ।
১ম কথা –
পবিত্র কোরআন পরিস্কার ভাবে ঘোষনা দিচ্ছে যে , একজনের কর্মের দায়দায়িত্বের ভার অন্যজন কিছুতেই বহন করবে না । অর্থাৎ যার যার কর্মের দায়ভার তার তার ।
এখন আমি যদি কোন মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন করি তাহলে যিনি মারা গেছেন তার আত্মা কেন কষ্ট পাবে ?
কারন ক্রন্দন তো করছি আমি – এই কর্মটা তো সম্পূর্ন আমি করছি । তাহলে আমার কৃতকর্মের জন্য ঐ মৃত ব্যক্তির আত্মা কেন কষ্ট পাবে ?
কেননা ক্রন্দনের দায়ভার আমার । পবিত্র কোরআনের ঘোষনা অনুযায়ী এই ক্রন্দনের জন্য যদি কোন আজাব বা দুঃখ হয় সে কষ্টতো হবে আমার ! বেঁচারা যে মারা গেল সে কেন আমার কৃতকর্মের জন্য কষ্ট ভোগ করবে ?
কারন আল্লাহর বিধানের কোন পরিবর্তন নেই ।
২য় কথা –
তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে , একজনের ক্রন্দনের জন্য যদি আরেক মৃত ব্যক্তির আত্মা কষ্ট পায় , তাহলে এই কান্নাকাটি আরও জোরেশোরে করা উচিৎ ।
কারন সমাজে এমন ঘটনা হরহামেশা ঘটে থাকে যে , প্রচন্ড ক্ষমতাধর শক্তিশালী ব্যক্তি বা বড় ব্যবসায়ী বা কোন নেতা প্রায়শই গরীবের জমিজমা বা ন্যায্য পাওনা টাকা জোর করে কেঁড়ে নেয় । বেচারা গরীব লোকটি নীরবে চোখের জল ফেলে । কেননা মহাশক্তিধর ঐ লোকটির বিরুদ্বে সে কার্যত কিছুই করতে পারে না ।
তো একদিন ঐ মহাশক্তিধর লোকটি মারা গেল । তখন বঞ্চিত ঐ গরীব লোকটি ঐ মৃত মহাশক্তিধর লোকটির জন্য হেভী কান্নাকাটি শুরু করে দিল ।
এখন আপনার ফর্মুলা মতে গরীব লোকটি যত কাঁদে কবরে শায়িত ঐ লোকটির আত্মা ততই কষ্ট পায় ।
যত কাঁদে আত্মা তত কষ্ট পাচ্ছে ।
যত কাঁদে আত্মা তত কষ্ট পাচ্ছে ।
যত কাঁদে আত্মা তত কষ্ট পাচ্ছে ।
যাক এটাও সাত্বনা গরীব ঐ লোকটির জন্য যে , জীবিত থাকাকালীন কোন প্রতিশোধ নিতে পারল না ! এখন মারা যাবার অন্তত কেঁদে কেঁদে ঐ মৃত ব্যক্তির আত্মার উপর প্রতিশোধ তো নিতে পারছে !!
পাঠক ,
অতিদুঃখে এই জাতীয় রসিকতার কথা বলছি বলে দুঃখিত ক্ষমাপ্রার্থী ।
মানব জীবনের শুরুটাই যেখানে ক্রন্দন দিয়ে –
প্রিয়জনের দুঃখে চোখে জল আসবে – এটাই মানব প্রকৃতির স্বাভাবিক গতি ।
সুস্থ স্বাভাবিক প্রাকৃতিক গতিকে আমার মত অর্ধশিক্ষিত গন্ড মূর্খ কাঠমোল্লা অযৌক্তিক কিছু ফতোয়া দিয়ে ঈবলীশকেও হার মানিয়ে দেই ।
কেননা যেদিন আমাদের প্রানপ্রিয় রাসুল (সাঃ) এই ধরনীতে পদার্পন করেছিলেন সেদিন স্বয়ং ঈবলীশও মনের দুঃখে বিলাপ করে ক্রন্দন করেছিল ।
মহামুনাফিক , মহাভন্ড , মহাবদমায়েশ ঈবলীশও ক্রন্দন করেছিল !
পক্ষান্তরে , আমার মত কাঠমোল্লা ক্রন্দনকে বিদআতি বলে ফটাফট ফতোয়া দিয়ে দেই ।
ঈবলীশ বোধহয় আমাকে দেখে লজ্জা পায় অথবা ভাবে যে , ঈবলীশ থেকেও আমার মত বড় ঈবলীশ যখন ইসলামের নাম ফতোয়াবাজি করছি – তখন প্রকৃত ঈবলীশ বোধহয় বহু পূর্বেই রিটায়ারমেন্টে চলে গেছে —– ।
SKL