— কট্টরপন্থী মুসলিম ও একজন নয়া মুসলিম —-
দুজন প্রতিবেশী । একজন মুসলমান ও অপরজন খ্রীষ্টান । মুসলমান লোকটি দ্বীনদার । তার নিকট ইসলাম ধর্মের অনেক সুনাম শুনে এক পর্যায় খ্রীষ্টান বন্ধুটি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে নতুন মুসলমান হয়ে গেলেন ।
রমজান মাস , সেহেরী শেষ করে ঐ মুসলমান বন্ধুর আমন্ত্রনে নতুন মুসলিম লোকটি তার সাথে মসজিদে গেলেন । জীবনের প্রথম অযু করে বললেন , ” ফজর নামাজের অনেক দেরী আছে , এত আগে মসজিদে গিয়ে কি করব ” ?
মুসলমান বন্ধুটি বলল , ” তা ঠিক , তবে এখন আমরা এই সময়টুকু নফল নামাজ পড়ি “।
দুই বন্ধু বেশ কতক্ষন নফল নামাজ পড়ল । এক সময় ফজরের সময় হয়ে গেল । যথারীতি ফজর নামাজ শেষ করে দোয়া দরুদ পাঠ করল । এভাবে পূর্ন সকাল হয়ে গেল ।
নতুন মুসলিম বন্ধুটি বাড়ী যাবার জন্য তৈরী হল ।
মুসলমান বন্ধু জিজ্ঞেস করল , ” কোথায় যাচ্ছ ” ?
” বাড়ী যাচ্ছি , কাজে বের হতে হবে ” , নতুন মুসলিমটি বলল ।
মুসলমান বন্ধুটি বলল , ” আরেকটু দেরী কর , ভাই । নামাজের পরের এই দোয়াগুলো পড়ে নাও ” ।
নতুন মুসলিম বন্ধু বলল , ” ঠিক আছে , পড়ছি ” ।
সে দোয়া দরুদ পড়াতে ব্যস্ত হয় পড়ল । এরই মধ্যে সুর্য অনেকখানি উঠে গেল । অনেক বেলা হয়ে গেল । নতুন মুসলমান বন্ধু আবার বাড়ী যাবার জন্য উঠে পড়ল ।
এমন সময় মুসলমান বন্ধুটি কোরআন মজীদ তার হাতে দিয়ে বলল ,” এখন কোরআন তেলাওয়াত কর । কারন কোরআন তেলাওয়াতে প্রতিটি হরফে উচ্চারনে অনেক সওয়াব হয় ” ।
নতুন মুসলমান বন্ধুটি তার অনুরোধ রাখল ।
এর মধ্যে জোহর নামাজের সময় হয় গেল । যথারীতি দুই জন জোহর নামাজ আদায় করলেন ।
মুসলমান বন্ধুটি বলল , ” আর অল্প কিছুক্ষন দেরী কর । কারন আছরের নামাজের ফযিলতের সময় খুবই নিকটবর্তী । সুতরাং এ নামাজটিও ফযিলতের সময় আদায় করে নেই ” ।
এভাবে আছর নামাজ শেষ হলে মুসলমান বন্ধুটি বলল ,” সূর্যাস্ত খুব নিকটে । একটু পরেই মাগরিব শুরু হবে ” ।
নতুন মুসলমান লোকটি মাগরিব নামাজের পর বাড়ী যেতে চাইল ।
সারাদিন রোযার পরে এখন পরিবার পরিজনের সাথে ইফতার করবে । মুসলমান বন্ধুটির অনুরোধে মসজিদেই ইফতার সারল । তারপর আবার নতুন মুসলমান বন্ধুটি বাড়ী যেতে চাইল ।
মুসলমান বন্ধুটি বলল , ” এখন একমাত্র এশা বাকি আছে , ঘন্টা খানেকের মধ্যে এশার ফযিলত শুরু হবে । একটু পরেই এশা ও তারাবী নামাজ শুরু হবে । এখন বাড়ী গেলে অলসতা পেয়ে বসবে । তার চেয়ে বরং এখানেই এশা , তারাবী , বেতর শেষ করেই বাড়ী যাব একসাথে ” ।
এভাবেই নতুন মুসলমান বন্ধুটি এশা , তারাবী , বেতর শেষ করে বেশ রাতেই বাড়ী ফিরে গেল ।
দ্বিতীয় রমজানের রাতে আবারো ঐ মুসলমান বন্ধুটি নতুন মুসলমান বন্ধুর বাড়ীর দরজায় টোকা দিল ।
নতুন মুসলমান বন্ধুটি জিজ্ঞেস করল , ” কে ” ?
জবাব এল , ” বন্ধু আমি তোমার সেই বন্ধু , তাড়াতাড়ি অযু করে বেরিয়ে এস , একসাথে মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করব ” ।
নতুন মুসলিম বন্ধুটি বলল , ” আমি গতকাল মসজিদ থেকে ফিরে এসে তখনই ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছি । তুমি এখনি চলে যাও । আমার পরিবর্তে কোন কর্মহীন বেকার লোক খুজে নাও , যার কাছে নামাজ , রোযা ও আল্লাহর ইবাদত ব্যতীত দুনিয়ার আর কোন কাজ নেই । সে তার সমস্ত সময় তোমার সাথে মসজিদে কাটিয়ে দিতে পারবে । আমি ভাই দরিদ্র লোক । তাছাড়া একমাত্র আমার আয়ের উপর আমার পরিবার পরিজন নির্ভরশীল । সুতরাং নামাজ , রোজা ছাড়াও আমার আর অনেক কাজকর্ম আছে । আমাকে আমার পরিবারের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে । সুতরাং মাফ চাই , দোয়াও চাই ভাই , তুমি চলে যাও ” ।
ষষ্ঠ ইমাম হযরত জাফর সাদেক (আঃ) ওনার সাহাবীদের কাছে ঘটনাটি বর্ননা করে বললেন যে , ” এভাবে এই কঠোর ও চরম ইবাদতকারী পরহেযগার লোকটি একজন অমুসলিমকে প্রথমে তো মুসলিম বানাল । কিন্ত নিজের চরম অন্ধত্ব ও কট্টর মনোভাবের কারনে সে তার নিজের হাতে করা নতুন মুসলমান বন্ধুটিকে ইসলামের গন্ডি থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করল ।
অতএব তোমদের সর্বদা মনে রাখতে হবে যে , লোকেরা তোমাদের কঠোর ও অযৌক্তিক উদ্ভট চরম পন্থা অবলম্বনের কারনে যেন বিরক্ত না হয় যায় ।
তাদের সামর্থ ও সক্ষমতার প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে তারা দ্বীন ইসলাম ও এর সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নিজে নিজেই ইসলামের প্রতি অনুপ্রানিত হয় ।
ইসলাম থেকে যেন সরে না পড়ে । তোমরা কি এ কথা ভুলে গেলে যে , কঠোরতা ও বলপ্রয়োগ উমাইয়া শাসকদের নীতি ছিল ? কিন্ত আমরা , আহলে বায়েতের নীতি হচ্ছে মধুর চরিত্র , কোমল ব্যবহার , ভালবাসা , যৌক্তিক বাস্তবতা ও পারস্পরিক আন্তরিকতা । নির্ভেজাল ইসলামী চরিত্র ও উত্তম আচরনের দ্বারা লোকদের অন্তর জয় করে নেওয়াই আমাদের পন্থা ” ।
সুপ্রিয় পাঠক ,
এখানেই মূল পার্থক্য , নবীজীর (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বায়েতের (আঃ) ইসলাম এবং অন্য লোকের প্রচারকৃত ইসলামের মধ্যে ।
— সত্যবাদীদের কাহিনী সম্ভার —
লেখক – ডঃ মুর্তাজা মোতাহহারী ,
বাংলা অনুবাদ – অধ্যক্ষ আলী আক্কাস এবং আব্দুল কুদ্দুস বাদশা ,
পৃষ্ঠা – ৮৯ ছায়া অবলম্বনে ।
SKL