বর্তমানে ইমামের গায়বাতে বা অনুপস্থিতিতে (লোক চক্ষুর অন্তরালে অদৃশ্য থাকায়) জুমার নামায “ওয়াজেবে তখয়িরী” অর্থাৎ জুমা বা জোহর যে কোনও একটি ওয়াজেব নিয়তে পড়া যায় তবে জুমার নামায জামাতে পড়তে হয়। অনেক আলেমের মতে জুমার নামায যাহা জামাতে পড়িতে হয় ওয়াজেবের নিয়ত না করিয়া কেবল “কোরবাতান ইলাল্লাহর নিয়তে পড়া যায় এবং পরে এহতেয়াতের জন্য জোহরের নামাযও ওয়াজেবের নিয়তে না পড়িয়া কেবল কোরবাতের নিয়তেই পড়া। উচিত কিন্তু যাহারা জুমার নামায ওয়াজেবের নিয়তে পড়েন তাহারা জোহরের নামায পড়েন না, আবার যাহারা জোহরের নামায ওয়াজেবের নিয়তে আদায় করেন তাহারাও আবার জুমার নামায পড়েন না কারণ একই সময়ে দুইটি নামায ওয়াজেব। হয় না।
জুম্মা নামাযের শর্তাদি
এইরূপ পেশে নামাযের একতেদা (অনুসরণ) করিতে হইবে যাহার মধ্যে নিম্নোক্ত ছয়টি সেফাত বা গুণ পাওয়া যায় এবং যিনি ৭ সাতটি দোষ হইতে মুক্ত হন।
(১) সেফাত-পুরুষ, সাবালক, মোমেন, শরীয়ত সম্বন্ধে জ্ঞানী, হালাল জন্মের। সন্তান (জারজ নয়), ন্যায়ী, সৎ চরিত্র, মূলকথা তাহাকে সালেহ, আমেল ও আদেল হইতে হইবে।
(২) দোষ-বিকৃত মস্তিষ্ক, অন্ধ, মুসাফির, গোলাম, মাবরুছ (কুষ্ঠরোগী) বা অন্য । কোনও ঘৃণিত রোগ বিশিষ্ট, মাহজুব (অর্ধ পাগল) বা তাকাইয়াকারী।
জামাতের জন্য কি কি প্রয়োজনীয়
জুম্মা নামায জামাতে পড়িতে হয়, পৃথক পৃথক ভাবে জুমার নামায পড়া চলে। জামাতে কমপক্ষে ইমামসহ ৫ জন সাবালক ইসনাআশারী শীয়া হওয়া অতি আবশ্যক।
জুমার নামায কাহাদের জন্য ফরজ
পুরুষ, সাবালক, ধর্ম বিষয়ক জ্ঞানী, আজাদ ব্যক্তি যে কাহারও অধিনে বা বাধ্যকতায় নাই।
জুম্মা নামাযের সময়
জুম্মা নামাযের সময় ও জোহরের ফজিলতের সময় একই বটে। সূর্যের জাওয়ালের সময় হইতে প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তাহার সমান থাকাকালীন পর্যন্ত।
জুম্মা নামাযের নিয়ম
জুম্মার নামায মোট দুই রাকাত। নামাযের আরম্ভে দুই খোতবা পড়িতে হয় এবং প্রথম খোতবা শেষে ইমামকে বসিতে হয়, এই উভয় খোতবা শুনিতে হয়, খোতবা সময় বাক্যালাপ নিষিদ্ধ (হারাম) তবে নামায সংক্রান্ত বিষয়ে। অর্থাৎ লাইন সোজা করা, নামাযের মত আসন পাতিয়া বসা ইত্যাদি ইঙ্গিতে বলা যায় যদিও অনেকের মতে ইহাও মাকরুহ বলিয়া গণ্য। যাহারা খোতবার সময় ইচ্ছাকৃত অনুপস্থিত থাকেন ও পরে জামাতে মিলিত হন তাহাদের নামায শুদ্ধ হয় না এবং তাহাকে পরে জোহরের নামায ওয়াজেব নিয়তে পড়িতে হইবে।
নামাযের সূচনা
খোতবা শেষে আকামতের পর মোক্তাদিদের (মুসল্লিদের) ইমামের এত্তেবায় নিয়ত করিতে হইবে। ইমামকে প্রথম রাকাতে সূরায়ে হাদ পড়িয়া সূরায়ে জুমা বা অন্য কোনও সূরা পড়িবার পরে তাকবির বলিয়া কুনুত পড়িয়া রুকু সুজুদ আদায় করিয়া দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াইয়া সুরায়ে হামদের পর সূরায়ে মোনাফেকুন বা সূরায়ে তাওহিদ পড়িতে হয় এবং তাকবির বলিয়া রুকু করিয়া দাঁড়াইয়া কুনুত পড়িয়া সেজদা করিতে হয় এবং তাশহোদ ও সালাম পড়িয়া নামায শেষ করিয়া তসবিহ হযরত ফাতেমা (আঃ) পড়িয়া মোনাজাত করিতে হয়।
বিঃ লক্ষণীয়: (১) ইমামের সূরা পড়াকালীন মুসলি-গন নীরবে থাকিৰে। কিন্তু জিকরে কুনুত, রুকু, সুজুদ ও সালাম মুসলি-দেরকেনিজেও পড়িতে হইবে। (২) জামাতের নামাযে মুসলি-দেরকেশারীরিক কর্তব্যে ও পড়ায় ইমামের এত্তেবা (অনুসরণ) করিতে হইবে এবং কোনও বিষয় যেন ইমামের কর্তব্যের পূর্বে প্রকাশ পায় তবে নামায বাতিল হইবার সম্ভাবনা, কারণ উহাতে এত্তেবা বা অনুসরণ প্রকাশ পায় না এবং নিয়ত এত্তেবার করা হয়।