খলিফা উমর ইবনে খাত্তাব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে রোম (বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য) অভিমুখে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। আমিরুল মোমেনিনের পরামর্শ চাইলে তিনি এ খোৎবা প্রদান করেন। এ দ্বিনের অনুসারীদের দায়িত্ব আল্লাহ নিজে গ্রহণ করেছেন। তিনিই তাদের সহায় ও তিনিই তাদের রক্ষাকর্তা । তারা যখন সসংখ্যায় অল্প ছিল এবং নিজেদেরকে রক্ষা করার ক্ষমতা তাদের ছিল না। তখনো আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করেছেন। তিনি চিরঞ্জীব—তাঁর মৃত্যু নেই। শত্রুর দিকে এগিয়ে যাবার জন্য যদি তুমি ইচ্ছা পোষণ কর ও নিজেই যদি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড় এবং তাতে যদি কোন বিপদ ঘটে যায় তাহলে প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়া মুসলিমদের আর কোন আশ্রয়স্থল থাকবে না এবং তাদের প্রত্যাবর্তনেরও কোন স্থান থাকবে না। সুতরাং তুমি একজন অভিজ্ঞ লোকের অধীনে এমন সৈন্যদের প্রেরণ করা যাদের অতীত প্রতিপাদন সন্তোষজনক এবং যারা শুভাশয় সম্পন্ন। যদি আল্লাহ তোমাকে বিজয়ী করেন তবে তোমার মনোবাঞ্চা পূর্ণ হবে। অন্যথায়, তুমি জনগণের সহায়ক হিসাবে থাকতে পারবে এবং মুসলিমগণ প্রত্যাবর্তনের স্থান পাবে।
১। আমিরুল মোমেনিন সম্পর্কে এক অদ্ভুত প্রচারণা চালানো হয়েছিল। একদিকে বলা হতো। তিনি প্ৰায়োগিক রাজনীতিতে অদক্ষ ছিলেন ও প্রশাসনের বাস্তব পদ্ধতির সাথে পরিচিত ছিলেন না। উমাইয়াদের ক্ষমতা লিন্সাই যে তাদের বিদ্রোহের কারণ তা ধামাচাপা দেয়ার জন্যই বলা হতো আমিরুল মোমেনিনের দুর্বল শাসন ব্যবস্থাই তাদের ক্ষমতা গ্রহণের কারণ। অপরদিকে খলিফাগণ রাষ্ট্ৰীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও মোশরেকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বিষয়ে আমিরুল মোমেনিনের সাথে পরামর্শ করতেন। বস্তৃত এহেন পরামর্শ দ্বারা আমিরুল মোমেনিনের চিন্তা ও বিচারের বিশুদ্ধতা বা তাঁর সুগভীর প্রজ্ঞা জনসমক্ষে তুলে ধরা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। বরং তারা দেখাতে চেয়েছিল যে, আমিরুল মোমেনিনের সাথে তাদের কোন মতদ্বৈধতা নেই। খেলাফত বিষয়ে আলীকে বঞ্চিত করার ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে রাখাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। অপরপক্ষে কেউ কোন উপদেশ বা পরামর্শ চাইলে সে বিষয়ে নীতিগতভাবে সৎপরামর্শ দেয়া থেকে আমিরুল মোমেনিন বিরত থাকতে পারেন না, কারণ তিনি সুন্নাহর ধারক ও বাহক। খেলাফত বিষয়ে তার মতামত ও রোষ তিনি খোৎবাতুল শিকশিকিয়াতে জোর গলায় ব্যক্ত করেছেন। তাঁর এহেন ক্রোধের অর্থ এ নয় যে, ইসলামের সামগ্ৰীক সমস্যায় তিনি যথাযথ পরামর্শ দ্বারা সঠিক পথ প্রদর্শন করবেন না। আমিরুল মোমেনিনের চারিত্রিক মহত্ত্ব এত উচু-মাপের ছিল যে, তার শত্রুও পরামর্শ চাইলে তিনি ক্ষতিকর কোন পরামর্শ দিতে পারতেন না। এ কারণে মতদ্বৈধতা থাকা সত্ত্বেও এবং নীতিগত বিরোধ থাকা সত্ত্বেও খলিফাগণ তার কাছে পরামর্শ চাইতেন। এটা তার চারিত্রিক মহত্ত্ব, চিন্তা ও বিচারের বিশুদ্ধতা এবং গভীর প্রজ্ঞার প্রতি আলোকপাত করে। এটা রাসুলের (সঃ) চরিত্রের একটা মহৎ বৈশিষ্ট্য ছিল। মোশরেকগণ তাঁকে নবি বলে স্বীকার করে নি, তাঁর বাণী গ্ৰহণ করে নি। কিন্তু তাকে আল-আমীন বলে কখনো অস্বীকার করে নি। যখন তাদের সাথে রাসুলের (সঃ) দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ চলছিলো তখনও তারা তাদের ধনসম্পদ তাঁর কাছে গচ্ছিত রাখতো। এতে তারা এতটুকুও ভয় পেত না যে, তাদের সম্পদ আত্মসাৎ হয়ে যেতে পারে। একইভাবে খলিফাদের সাথে যতই মতবিরোধ থাকুক না কেন জাতীয় ও উন্মাহর স্বাৰ্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এবং ইসলামের অভিভাবক হিসাবে ইসলামের কল্যাণ ও সমৃদ্ধির জন্য শত্ৰু-মিত্র নির্বিশেষে অপ্রভাবিত পরামর্শ দান করে আমিরুল মোমেনিন রাসুলের সুন্নাহ পালন করেছেন। প্যালেষ্টাইন যুদ্ধে উমর নিজে যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার বিষয়ে আমিরুল মামোমেনিনের পরামর্শ চাইলে তিনি ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বারণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “যদি তোমাকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পিছু হটতে হয় তবে সৈন্যগণ ছত্রভঙ্গ হয়ে এখানে সেখানে বিশৃঙ্খলভাবে ছড়িয়ে পড়বে। এতে মুসলিমগণ সাহস হারিয়ে ফেলবে। তুমি কেন্দ্রে থাকলে তারা বিশৃঙ্খল না হয়ে তোমার কাছে ফিরে আসবে। অধিকন্তু কোন বিপর্যয় ঘটলে তুমি কেন্দ্রে থেকে আরো সৈন্য সংগ্রহ করে তাদের সাহায্যার্থে প্রেরণ করতে পারবে।”