জামাতে নামায পড়িবার সোওয়াব একাকী নামায পড়িবার সোওয়াবের ২৫ গুণ বেশী।
সুন্নাত নামায জামাতে পড়া যায় কি না?
নামাযে এসতেসকা অর্থাৎ অনাবৃষ্টিতে বৃষ্টি হইবার জন্য যে নামায পড়া হয় এবং উভয় ঈদের নামায ব্যতীত অন্য কোনও সুন্নত নামায জামাতে পড়া জায়েজ নহে।
জামাতের নামাযে কতজন হওয়া প্রয়োজন?
দৈনন্দিন পাঞ্জেগানা নামাযের জন্য পেশে নামাযসহ দুইজন হইলেই জামাতে নামায পড়া যায়। একজন পেশে নামায ও একজন মামুম (অনুসরণকারী) কিন্তু জুমার নামাযে পেশে নামাযসহ কমপক্ষে ৫ পাঁচ জন সাবালক লোক হওয়া চাই।
পেশে নামাযের (নামাযে ইমামের) শর্তাবলী
পূর্বে বিস্তারিতভাবে জুমার নামাযে বর্ণনা করা হইয়াছে। পেশে নামায (নামাযের ইমাম) এরূপ ব্যক্তি হওয়া প্রয়োজন যিনি মামুমদের চেয়ে নামায সম্বন্ধে বেশী জ্ঞানী, ভালরূপে কেরাতসহ মাখরাজ (স্পষ্ট শুদ্ধ উচ্চারণ) আদায় করিয়া সূরা পড়িতে পারেন। মামুমিন দাঁড়াইয়া নামায পড়িলে পেশে নামাযকেও দাঁড়াইয়া নামায পড়িতে হইবে, নামায সম্বন্ধে ফেকাহর মাসায়েল সম্বন্ধে অভিজ্ঞ হইতে হইবে। পেশে নামাযের যে সমস্ত গুণ থাকা দরকার তাহার মধ্যে সেই সমস্ত গুণ থাকিতে হইবে এবং পেশে নামাযকে যে সমস্ত দোষ মুক্ত হওয়া দরকার তাহাকেও সেইরূপ দোষমুক্ত হইতে হইবে।
জামাতের শর্তাদি
(১) ইমাম ও মামুমদের মধ্যখানে এমন কোনও প্রতিবন্ধক না থাকে যাহাতে ইমাম বা তাহার পরবর্তী শ্রেণীর মুসল্লি দিগকে দেখিতে বাধা সৃষ্টি হয় অর্থাৎ মামুমিন ইমামকে দেখিতে না পান, কিন্তু মেয়েদের জন্য উহাতে বাধ্যবাধকতা নাই।
(২) মামুমিনকে ইমাম বা তাহাদের পিছনের শ্রেণী হইতে বেশী দূরে না থাকা। ইমাম ও মামুমিনদের সেজদার স্থানের মধ্যকার দূরুত্ব এক পা হওয়া দরকার।
(৩) জামাতে একজন মাত্র পেশে নামায হওয়া এবং ইমাম বা পেশে নামাযের পিছনে এরূপ জ্ঞানী ব্যক্তি থাকা উচিত যিনি ইমাম কোনও বিষয় ভুলিয়া থাকিলে বা সূরায় ভুল করিলে বলিয়া দিয়া ইমামকে সাহায্য করিতে পারেন।
(৪) মামুমদের ইমামের অনুসরণের (এত্তেবার) নিয়ত করা।
(৫) মামুমিনকে ইমামের পিছনে এবং একজন হইলে ডাইন পাশে দাঁড়াইতে হইবে।
(৬) ইমাম ও মামুমদের নামায একই প্রকারের হওয়া অর্থাৎ ইমাম যদি পাঞ্জেগানা নামায পড়িতেছেন মামুমিনদেরকেও তাহার এত্তবায় সেই নামাযই আদায় করিতে হইবে, যেমন ইমামের এশার নামাযে যদি কেহ শরীক হয় সে মাগরিবের নিয়ত করিয়া উহা তাড়াতাড়ি পড়িয়া ইমামের এশার নামাযের শরীক হইতে পারে।
সেজদার কর্তব্যগুলি নিজেরাও করিবে। যাহারা ইমাম হইতে অনেক দূরে থাকেন ও ইমামের পড়া পরিস্কার শুনিতে না পান, কেবল গুন গুন স্বর শুনেন তাদেরকে প্রথমে দুই রাকাত সূরা না পড়িয়া “সোবহান আল্লাহ“ সোবহান আল্লাহ" পড়িতে হয় এবং যাহারা জাহরি নামাযের প্রথম দুই রাকাতে নীরব থাকেন তাহারা ও একফাতি নামায হইলে প্রথম দুই রাকাতে আস্তে আস্তে সোবহান আল্লাহ সোবহান আল্লাহ পড়িতে পারেন কিংবা নীরবেও থাকিতে পারেন এবং শেষের রাকাতগুলিতে নিজে নিজে সূরা পড়িতে হইবে। মোকতাদি বা মামুমকে রুকু, সুজুদ ও কুনুতের সমস্ত আহকাম নিজেদের আদায় করিতে হইবে, উহাতে নীরব থাকিলে চলিবে না অর্থাৎ ইমামের হামদ ও সূরা শেষ হইলে তাহার এত্তবায় রুকু, সুজুদ ও তাশহোদ এবং কুনুতে যাহা পড়িতে হয় সমস্তই নিজেদেরকে পড়িতে হইবে। ইমামের সেজদায় থাকাকালীন যদি কেহ জামাতে উপস্থিত হয় তবে তাহাকে ইমামের উঠা ও অন্য রাকাত আরম্ভ করিবার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করিতে হইবে এবং ইমামের রুকুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যত্ত নিয়ত করিয়া তাকবির বলিয়া ইমামের সহিত মিলিত হইতে হইবে। ইমামের যে কোনও রাকাতে শরীক হইলে তাহার প্রথম রাকাত গণ্য করিয়া ইমামকে অনুসরণ করিতে হইবে এবং ইমামের শেষ তাশহোদ পড়াকালীন উভয় হস্ত মাটিতে রাখিয়া হাটুদ্বয় উঠাইয়া থাকিতে হয় এবং ইমামের সালাম আরম্ভ করিবার সঙ্গে সঙ্গে তাহাকে দাঁড়াইয়া নিজের বাকী রাকাতগুলি আদায় করিতে হইবে। এবং এই জন্য তাহার সমস্ত নামাযই জামাতে পড়া হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে। যদি কেহ ইমামের প্রথম বা দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর পূর্বে বা রুকু করাকালীন শরীক হয় তবে তাহাকে তাড়াতাড়ি নিয়ত করিয়া তাকবিরাতোল এহরাম বলিয়া আবার দ্বিতীয় বার তাকবির বলিয়া ইমামের সঙ্গে রুকুতে শরীক হইতে হইবে। কিন্তু যদি মনে করে যে দ্বিতীয় তাকবির বলার সময় পর্যন্ত ইমাম রুকু হইতে মাথা তুলিয়া লইবেন তাহা হইলে দ্বিতীয় তাকবির বাদ দিয়া নিয়তের পর তাকবিরাতোল এহরাম বলিয়াই রুকুতে শরীক হইতে হইবে ৰা নিয়তের পূর্বে তিনবার জোরে “আল্লাহু আকবার বা ইয়া আল্লাহ” বলিলে ইমাম তাহার আগমনের সংকেত বুঝিয়া রুকু দীর্ঘ করিয়া তাহাকে শরীক হইবার সুযোগ দিবেন।
ইমামের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতের রুকুর পূর্বে ইমামের কেয়ামে থাকাকালী শরীক হইলে নিয়ত করিয়া তাকবিরাতোল এহরাম বলিয়া আসে আস্তে সুরা হামদ পড়িয়া ইমামের সঙ্গে রুকু ও সুজুদ ইত্যাদি আদায় করিতে হইবে এবং যদি মনে করে যে তাহার সূরায়ে হামদ পড়া শেষ হইবার পূর্বেই ইমাম রুকু করিয়া সেজদায় চলিয়া যাইবেন এবং তাহার এত্তবা করা হইবে না বা হামদ পড়িবার ও সময় যদি না থাকে তাহা হইলে হামদু পড়া ও ত্যাগ করিয়া ইমামের অনুসরণ করিতে হইবে কিন্তু উহার পরে তাহাকে ঐ নামাযের এয়াদা (পুনরাবৃত্তি) করিতে হইবে এবং একা পড়িবার নিয়ত করিয়া রীতিমত নামায পড়িতে হইবে।