আমিরুল মোমেনিনের অবাধ্য লোকদের নিন্দা সম্পর্কে
আমি আল্লাহর প্রশধ্বংসা করি, সেসব ব্যাপারে যা তিনি নির্ধারিত করে দিয়েছেন এবং যা তিনি অদৃষ্ট লিপিবদ্ধ করেছেন। হে জনতার দল, তোমরা যারা আমার আদেশ পালন কর না এবং আমার আহবানে সাড়া দাও না তোমাদের সাথে আমার বিচারের জন্য আমি আল্লাহর প্রশধ্বংসা করি। যখন তোমরা একটু সুখে থাক তখন তোমরা আত্মগর্বে বাগাড়ম্বর কর, কিন্তু যুদ্ধের কথা শুনলেই দুর্বল হয়ে পড়। যখন মানুষ ইমামের সাথে ঐকমত্য পোষণ করে তখন তোমরা একে অপরকে উপহাস কর । যদি তোমরা কষ্টসাধ্য কোন বিষয়ের সম্মুখীন হও তবে তোমরা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও। তোমরা পিতৃহীন হও (তোমাদের ওপর ল্যানত), তোমাদের অধিকার আদায়ের জন্য যুদ্ধ করতে তোমরা কার সাহায্যের আশায় অপেক্ষা করে আছো? তোমাদের জন্য রয়েছে হয় মৃত্যু না হয় অসম্মানজনক জীবন। আল্লাহর কসম, তোমাদের সাথি হয়ে আমি পীড়িত এবং তোমাদের সঙ্গে থেকেও আমি নিজকে একাকী মনে করি। আমার দিন ঘনিয়ে এসে তোমাদের সাথে বিচ্ছেদ ঘটলে উত্তম হতো। আল্লাহ তোমাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। তোমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে এমন কোন দ্বিনি বা তোমাদেরকে তেজস্বী করতে পারে এমন কোন লজাবোধ কি নেই? এটা কি আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, মুয়াবিয়া কতিপয় রূঢ় নিচ লোককে ডাক দিয়েছে, তারা তাকে কোন প্রকার দ্বিধা ব্যতিরেকে অনুসরণ করছে; আর আমি যখন তোমাদেরকে আহবান করছি, তোমরা ইসলামের উত্তরাধিকারী ও যোগ্য লোক হওয়া সত্ত্বেও আমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে এবং আমার বিরোধিতা করছো? সত্য কথা হলো— আমার ও তোমাদের মধ্যে এমন কিছু নেই যা আমি পছন্দ করি এবং তোমরাও পছন্দ কর; অথবা যে বিষয়ে আমি রাগান্বিত হই তার বিরুদ্ধে তোমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পার। আমি এখন যেটা সবচাইতে বেশি ভালোবাসি তা হলো মৃত্যু। আমি তোমাদেরকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছি, যুক্তিসমূহ তোমাদের কাছে ব্যাখ্যা করে বলেছি, যে বিষয়ে তোমরা অজ্ঞ ছিলে তা তোমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছি এবং যা তোমরা থুথুর মতো ফেলে দিচ্ছিলে তা তোমাদেরকে গিলিয়ে দিয়েছি। সব কিছু এমনভাবে বলে দিয়েছি। যাতে একজন অন্ধলোকও দেখতে পায় এবং একজন ঘুমন্ত লোকও জেগে ওঠে। অপরপক্ষে, তাদের নেতা মুয়াবিয়া ও তাদের প্রশিক্ষক ইবনে আন-নাবিগাহ’ আল্লাহ সম্পর্কে কতই না অজ্ঞ।
১ । লায়লা বিনতে হারমালাহ আল-আনাজিয়াহ-এর ডাক নাম হলো আন-নাবিগাহ। সে আমর ইবনে আসএর মাতা। আমরকে তার মায়ের নামানুসারে ইবনে নাবিগাহ’ বলে উল্লেখ করার কারণ হলো একটা বিশেষ চরিত্রের জন্য তাকে (আমরের মাকে) সবাই চিনতো। একদিন আরওয়া বিনতে আল-হারিছ ইবনে আবদাল মুত্তালিব মুয়াবিয়ার কাছে গিয়ে কথা বলতেছিলেন। তাদের কথোপকথনের মধ্যে আমর ইবনে আ’স হস্তক্ষেপ করলে আরওয়া বললেন, “ওহে নাবিগোহর পুত্র, তুই কোন সাহসে আমার কথার মধ্যে হস্তক্ষেপ করিস। তোর মা ছিল জনগণের জন্য খোলা ও মক্কার গায়িকা। সেজন্য পাঁচজন লোকে তোকে পুত্র বলে দাবি করেছিল। তোর মাকে জিজ্ঞেস করা হলে সেও স্বীকার করেছিল যে, পাঁচজন লোক তার কাছে গিয়েছিলো। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো যার সাথে তোর চেহারার বেশি মিল হবে তার পুত্র বলেই তুই পরিচিত হবি। তোর চেহারা আ’স ইবনে ওয়াইলের সাথে বেশি মিল আছে বলেই তুই তার পুত্র বলে পরিচিত।”
উক্ত পাঁচজন লোকের নাম হলো-(১) আস ইবনে ওয়াইল, (২) আবু লাহাব, (৩) উমাইয়া ইবনে খোলাফ, (৪) হিশাম ইবনে মুগিরাহ ও (৫) আবু সুফিয়ান ইবনে হারবা (রাব্বিহ”, ২য় খন্ড, পৃঃ ১২০; বাগদাদী’, পৃঃ ২৭; হামাবি***, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩২; সাফওয়াত’, ২য় খন্ড, পৃঃ ৩৬৩; হাদীদ’, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ২৮৩-২৮৫, ২৯১; শ্যাফেয়ী’, ১ম খন্ড, পৃঃ ৪৬)।









