আল্লাহর প্রশধ্বংসা, দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ীত্ব ও আল্লাহর আশীর্বাদ হ্রাসের কারণ সম্পর্কে (উসমান নিহত হবার পর আমিরুল মোমেনিনের খেলাফতের প্রারম্ভে প্রদত্ত ভাষণ)
এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় প্রবেশ করতে আল্লাহকে কোন কিছুই প্রতিহত করতে পারে না। সময় তার কোন পরিবর্তন আনতে পারে না। স্থান তাকে চিহ্নিত করতে পারে না এবং ভাষা দ্বারা তার বর্ণনা করা যায় না। পানির বিন্দুর সসংখ্যা, আকাশে তারকার সসংখ্যা বা শূন্যে বায়ু-স্রোতের সসংখ্যা— কোন কিছুই তাঁর অজানা নয়। পাথরের ওপর দিয়ে পিপীলিকার চলাচল অথবা অন্ধকার রাতে কীট-পতঙ্গের আশ্রয়স্থল— এসবও তাঁর অজানা নয়। তিনি জানেন কোথায় গাছের পাতা ঝরে পড়ে এবং চোখের মণির গোপন নড়াচড়াও তার অজানা নয়।
কোন সংশয় নেই, তাঁর দ্বিনে অস্বীকার করার কিছু নেই এবং তাঁর সৃষ্টি-ক্ষমতায় প্রশ্ন তোলার কোন কিছু নেই। আমার সাক্ষ্য সেব্যক্তির সাক্ষ্য যার নিয়্যত অবাধ ও মুক্ত, যার বিবেক স্বচ্ছ, যার ইমান পুত-পবিত্র এবং যার (আমলে সালেহার) পাল্লা ভারী। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল, যাকে তিনি সৃষ্টির মধ্যে পছন্দ করে তাঁর বাস্তবতাকে নিয়ে কর্মসাধনের জন্য নির্বাচিত করেছেন এবং সম্মানিত ও মহান বাণীবাহক হিসাবে মনোনীত করেছেন। তার মাধ্যমে হেদায়েতের নিদর্শনাবলী ঘোষিত হয়েছে এবং গোমরাহি বিদূরিত হয়েছে। হে জনমন্ডলী, যে ব্যক্তি দুনিয়ার লালসা করে এর প্রতি আকৃষ্ট হয় দুনিয়া তাকে প্রবঞ্চনা করে। যে দুনিয়ার প্রত্যাশা করে দুনিয়া তার সাথে অকৃপণ আচরণ করে এবং যে দুনিয়াতে অভিভূত হয় দুনিয়া তাকে পরাভূত করে। আল্লাহর কসম, কোন লোক জীবনের আস্বাদন গ্রহণের পর তা থেকে বঞ্চিত হয় না যে পর্যন্ত সে তা দ্বারা পাপে লিপ্ত না হয়। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি কখনো অবিচার করেন না। তাসত্ত্বেও মানুষের ওপর যখন বিপদাপদ নেমে আসে এবং তাদের আনন্দ-আয়েশ চলে যায়। তখন তারা খালেস নিয়্যত ও হৃদয়ের অনুভূতি দিয়ে আল্লাহর দিকে মুখ ফেরায় এই উদ্দেশ্যে যে, তিনি যেন তাদেরকে সব কিছু ফিরিয়ে দেন যা তাদের কাছ থেকে চলে গেছে এবং যেন তাদের সকল অসুস্থতা নিরাময় করেন। আমার ভয় হয় পাছে তোমরা (রাসুলের আগমনের পূর্বেকার) জাহিলিয়াতে নিপতিত হও। অতীতে কিছু বিষয় ছিল যাতে তোমরা বিভ্ৰষ্ট ছিলে এবং আমার মতে তোমরা প্ৰশধ্বংসার যোগ্য নও। যদি তোমাদেরকে পূর্বেকার অবস্থা হতে ফিরিয়ে আনা যেত। তবেই তোমরা ধাৰ্মিক হতে। আমি শুধুমাত্র সংগ্রাম করে যেতে পারি; আমাকে কথা বলতে হলে আমি শুধু বলবো আল্লাহ তোমাদের অতীত
আমলসমূহ ক্ষমা করুন।