একটি মহান আধ্যাত্মিক সফর —
মদীনা থেকে কারবালা ।
পর্ব – ০৪ ।
লেখাটি শুরুর পূর্বে দুটি কথা পাঠকদের উদ্দেশ্য বিনীত নিবেদন এই যে ,
আমি সহ আমরা অনেকেই কারবালা ঘটনার পূর্নাঙ্গ সঠিক ইতিহাস জানি না ।
তবে কথা দিলাম যে ,
পর্বগুলি ধৈর্য সহকারে পড়ুন , অনেক অজানা ঘটনা জানতে পারবেন , ইনশা আল্লাহ ।
বিশেষ করে ইমাম হোসেন (আঃ) কবে কোন তারিখে সংগী সাথী এবং পরিবার পরিজন নিয়ে ইরাকের কুফা নগরীর উদ্দেশ্যে প্রিয় জন্মভূমি মদীনা ছেড়ে রওয়ানা হলেন ।
দীর্ঘ এই সফরে পথিমধ্যে ওনাদেরকে কারা কিভাবে কারবালা নামক স্থানে এনে চর্তুদিক থেকে ঘেরাও করে ফেলেছিল । ওনারা তখন না পারছিলেন সামনে অগ্রসর হতে , না পারছিলেন অন্য কোথাও চলে যেতে ।
শর্ত দেওয়া হয়েছিল – হয় ঈয়াযীদের প্রতি আনুগত্য বা বাইয়াত গ্রহন কর নতুবা মৃত্যুকে বেছে নাও !
যাইহোক ,
এই লেখার উদ্দেশ্য হল যে , কুফা নগরীতে যাওয়ার জন্য ইমাম হোসেন (আঃ) তার সংগী সাথী এবং পরিবার পরিজন নিয়ে ২৮শে রজব ৬০ হিজরীতে মদীনা ত্যাগ করেন । ওনাদের যখন কারাবাল নামক স্থানে এনে চর্তুদিক থেকে ঘেরাও করে ফেলা হল সেদিনটি ছিল ০৩রা মহরম ৬১ হিজরী ।
দীর্ঘ এই সফরে ইমাম হোসেন (আঃ) এর কাফেলা কোন কোন এলাকা অতিক্রম করেছিলেন এবং ঐ সকল এলাকাতে সংঘটত বিশেষ বিশেষ ঘটনা সমূহ এই লেখাতে সংক্ষিপ্ত ভাবে বর্ননা কর হল ।
লেখাটি অত্যন্ত দীর্ঘ হওয়াতে বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক পর্বে দেয়া হল ।
আজ থাকছে চতুর্থ পর্ব ।
বায়াযে –
রবিবার , ২৭ জিলহজ্ব, ৬০ হিজরীতে ইমাম হুসাইন (আঃ) বায়াযে নামক স্থানে পৌছান । ইমাম হুসাইন (আঃ) এবং হুরের সৈন্যরা উভয়ে একত্রে অবস্থান করে । ইমাম (আঃ) এখান হুরের সৈন্যদেরকে উদ্দেশ্যে করে বলেন , বণী উমাইয়ারা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছে এবং খোদার নির্দেশাবলিকে তুচ্ছজ্ঞান করেছে , ফেসাদ সৃষ্টি করেছে , খোদার নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করেছে , বাইতুল মালকে নিজস্ব মালিকানা মনে করেছে , হারাম কে হালাল এবং হালাল কে হারাম করেছে । তোমরা আমার কাছে চিঠি লিখেছিলে এবং বলেছিলে তোমরা আমার বাইয়াত করেছ । এখন যদি তোমরা তোমাদের কৃত ওয়াদার উপরে অটল থাক তাহলে বুদ্ধিমানে কাজ করেছ ।
কেননা আমি হচ্ছি তোমাদের রাসুল (সাঃ) এর নাতি ও হজরত ফাতেমা (সাঃআঃ) এর সন্তান । আর যদি বাইয়াত ভঙ্গ কর , যদিও তোমাদের কাছে এটা অসম্ভব কিছুই না । কেননা তোমরা আমার বাবার আলী (আঃ) , আমার ভাই হাসান (আঃ) এবং আমার দূত মুসলিম ইবনে আক্বিলের সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করেছ ।
তিনি আরও বলেন , হে লোকেরা ! রাসুল (সাঃ) বলেছেন , যদি কোন অত্যাচারী বা শাষক যে ওয়াদা ভঙ্গ করে , হারাম কে হালাল ঘোষণা করে , রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাতের উপরে আমল না করে তাহলে তার চীরস্থায়ী ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম ।
উযাইবুল হাজানাত –
সোমবার , ২৮শে জিলহজ্ব , ৬০ হিজরীতে ইমাম হুসাইন (আঃ) উযাইবুল হাজানাত নামক স্থানে পৌছান ।
সেখানে কুফার কয়েকজন লোক তাঁর সাথে সাক্ষাত করে এবং কুফার অবস্থা সম্পর্কে ইমাম (আঃ) কে অবগত করে । তারা বলে , কুফার অভিজাত সম্প্রদায়ের লোকেরা ইবনে জিয়াদের নিকট থেকে উৎকোচ গ্রহন করেছে এবং শত্রু পক্ষের হয়ে কাজ করছে এবং অবশিষ্ট লোকদের অন্তর আপনার সাথে । কিন্তু প্রয়োজনে তারা আপনার বিরূদ্ধে তরবারি ধরতে দ্বিধাবোধ করবে না ।
কাসরে বণী মুকাতেল –
বুধবার , ১লা মহরম , ৬১ হিজরীতে ইমাম হুসাইন (আঃ) কাসরে বণী মুকাতেল নামক স্থানে পৌছান ।
এখানে কুফার কিছু লোক তাবুতে অবস্থান করছিল । ইমাম (আঃ) তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন , তোমরা কি আমাকে সাহায্যে করার জন্য অপেক্ষা করছ ?
তাদের মধ্যে কিছু লোক বলে আমাদের অন্তর আপনার সাথে কিন্তু আমরা অপারগ কেননা আমাদের স্ত্রী , সন্তান রয়েছে , আমাদের কাছে বিভিন্ন লোকদের সম্পদ গচ্ছিত রয়েছে এবং আমরা এর পরিণাম সম্পর্কেও অবগত না । সুতরাং আমরা আপনাকে সাহায্যে করতে পারব না ।
ইমাম (আঃ) বণী হাশিমের যুবকদের বলেন , তারা যেন যথেষ্ট পরিমাণে পানি সংগ্রহ করে এবং আজ রাতেই আমরা এখান থেকে চলে যাব ।
তারপর তিনি উবাইদুল্লাহ বিন জোয়ফি নামক ব্যাক্তিকে বলেন , যেহেতু তোমরা আমাকে সাহায্যে করবে না সেহেতু তোমরা খোদাকে ভয় কর এবং এখান থেকে এত দূরে চলে যাও যেন আমার সাহায্যের শব্দ তোমাদের কানে না পৌছায় । কেননা যদি কেউ আমার শব্দ শুনতে পাই এবং আমার সাহায্যের জন্য এগিয়ে না আসে তাহলে তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে ।
নাইনাওয়া –
বৃহঃস্পতিবার , ২রা মহরম , ৬১ হিজরীতে ইমাম হুসাইন (আঃ) নাইনাওয়া নামক স্থানে পৌছান ।
এখানে হুর নির্দেশ প্রাপ্ত হয় যে ইমাম (আঃ) কে মরুপ্রান্তরে সৈন্যবেষ্টিত করে রাখা হয় ।
ইমাম (আঃ) তখন এক উপযুক্ত আর্দ্রতাযুক্ত স্থান খুঁজতে থাকেন এবং এমন এক স্থানে পৌছান এবং সে স্থানের নাম জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন যে –
সে স্থানটির নাম হচ্ছে কারবালা ।
তখন তিনি ক্রন্দন করেন এবং বলেন , সবাই নেমে আস কেননা এটাই হচ্ছে সে স্থান যেখানে আমাদের শহীদ করা হবে এবং এখানে আমাদের কবরস্থান হবে এবং রাসুল (সাঃ) আমাকে এ স্থানই দেখিয়ে ছিলেন ।
উবাইদুল্লাহ ইমাম (আঃ) কে চিঠি লিখে যে হয় আপনি এজিদের বাইয়াত করুন অথবা এখানেই হত্যা করা হবে ।
ইমাম হোসেন (আঃ) তার চিঠি পড়ে বলেন , তোমার জন্য মহান আল্লাহর কঠিন আযাব নির্ধারিত হয়ে গেছে ।
চতুর্থ পর্বের এখানেই সম্পাতি ।
আগামী পঞ্চম পর্বে থাকছে কারবালা নামক স্থানের ঘটনা সমূহ , ইনশা আল্লাহ ।
SKL