হযরত আদম (আঃ) কি সত্যিই গুনাহগার বা অপরাধী ?
পৃথিবীর বেশীরভাগ মুসলমানগন মনে প্রানে বিশ্বাস করেন যে , হযরত আদম (আঃ) যেহেতু মহান আল্লাহর নির্দেশ মানেন নি সেহেতু তিনি অপরাধ করেছেন ।
আল্লাহ ওনাকে শাস্তি দিয়েছেন । এক্ষেত্রে বহু বৎসর তিনি কান্নাকাটি করেছেন ও এক পর্যায় তওবা করে আল্লাহর ক্ষমা পেয়েছেন ।
মোটামোটি এটাই হল সারসংক্ষেপ ঘটনা ।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তাহলে বলা যায় যে , নবী রাসুলদের দ্বারা গুনাহ (নাউযুবিল্লাহ ) হতে পারে !
এ ক্ষেত্রে সংশয় সৃষ্টি হয় যে , হযরত আদম (আঃ) একজন নবী ও মাসুম (নিষ্পাপ) ছিলেন , তাহলে এমন গুনাহ তাঁর দ্বারা কিভাবে হতে পারে ?
নাকি বিষয়টি সম্বন্ধে আমাদের কি কোথাও বুঝতে ভুল হচ্ছে কি ?
আমরা কি গুনাহ ও জুলুম এই দুটি শব্দের মানে কি একই রকম মনে করে ফেলছি !
তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে , হযরত আদম (আঃ) গুণাহ বা অপরাধ করেছেন (নাউযুবিল্লাহ ) তাহলেও নিম্নলিখিত যুক্তিগুলোর দিকে একটু বাড়তি মনোযোগ দেয়া যাক —
ক) –
আল্লাহ গাছের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন । কিন্ত খাওয়ার ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা ছিল না । আদম (আঃ) এর খাওয়ায় দোষ হবে কেন ?
খ) –
যদি ধরে নেওয়া যায় যে , খাওয়া নিষিদ্ব ছিল , এক্ষেত্রে স্মরনীয় যে , আল্লাহ শুধুমাত্র একটি বিশেষ গাছের দিকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন । আর তিনি বিশেষ ঐ গাছের কোন কিছু কখনই খান নি । বরং সে জাতীয় অন্য গাছ থেকে খেয়েছিলেন । তবে যেহেতু সে কাজটাও তাঁর মর্যাদা বিরুদ্ব ছিল সেজন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে তিরষ্কৃত হয়েছেন ।
গ) –
নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এটি হারাম ছিল না । যার সংগঠনে গুনাহর অভিযোগে অভিযুক্ত করা যায় । বরং তা উপদেশমূলক বানী ছিল যা পালন না করা তাঁর মর্যাদার খেলাফ ছিল ।
যেমন কাউকে বলা হল যে , রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি কর না , অন্যথায় তুমি নিজেই নিজের ক্ষতি করবে ।
তদ্রুপ আদম (আঃ) কেও এই রকম উপদেশ মূলক নির্দেশ দেয়া হয়েছিল ।
” যুলুম ” এই শব্দটির অর্থ নিজের ক্ষতি করা ।
ধরুন , হযরত আদম (আঃ) যদি এই জাতীয় ” যুলুম ” না করতেন , তাহলে ওনার ঐ জান্নাতে বসবাস করার সময় বা মেয়াদ আরও বৃদ্বি পেত ।
যেহেতু উনি নিজের নফসের উপর এই যুলুমটা করেছিলেন বিধায় ঐ জান্নাতে বসবাস করার মেয়াদ বা সময়সীমা বৃদ্বি করা হয় নি ।
যাইহোক এটা স্পষ্ট যে , তিনি খাওয়ার মাধ্যমে বা ঐ গাছের নিকটবর্তী হওয়ার মাধ্যমে এ ক্ষতি করলেন যে , ওই নির্দেশের প্রতি অটল থাকলে সেটি তাঁর জন্য যে আরও মর্যাদা বয়ে আনত তা হাতছাড়া হয়ে গেল ।
অতএব এটা পরিস্কার যে , সে খাদ্য কখনই হারাম ছিল না , বরং কেবল তা এক উপদেশমূলক নিষেধাজ্ঞা ছিল ।
মর্যাদার খেলাফ কাজ সজ্ঞানে করা যদিও নবুয়তের মর্যাদা বিরুদ্ব , আর সে কারনে তিনি তিরস্কৃত হলেন এবং তিনি অনুতপ্ত হয়ে তওবা করতে লাগলেন ।
ঘ) –
আল্লাহর বিধানের উপর যে পুরস্কার ও সাজা অথবা পূন্য ও গুনাহ হয়ে থাকে তা কেবল কর্মস্থল অর্থাৎ দুনিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ।
আর তখন হযরত আদম (আঃ) দুনিয়াতে ছিলেন না । ফলে শরীয়তের হারাম – হালালের বিধান তাঁর জন্য প্রযোজ্য ছিল না । তাই এই অবস্থায় তাঁর উপর পাপ , গুনাহ বা অপরাধের অভিযোগ কিভাবে আসতে পারে ?
তাঁর জান্নাতে অবস্থান করা যেন মায়ের গর্ভে থাকা এবং দুনিয়াতে আসা যেন জন্মগ্রহন করা ।
আর সবচে বড়কথা হল যে , ইসমাতের বা নিষ্পাপত্বের মর্মাথ হল জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিন্দুমাত্র গুনাহ না করা ।
গর্ভের অবস্থায় কোন দায় বর্তায় না এবং কোন সচেতন বিবেকবান ব্যক্তি সে সময়ের কোন কাজকে গুনাহ বা অপরাধ বলতে পারেন না ।
সুতরাং আমাদের সর্বদা মনে রাখা উচিৎ যে , ঘটনাটি যদিও মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) এর ঘটনা তাই তাঁর দ্বারা কখনই কোন প্রকার গুনাহ সংঘটিত হয় নি ।
আমরা যেন গুনাহ ও যুলুমকে একই অর্থে বিচার না করি ।
কারন নবী রাসুলগন সরাসরি মহান আল্লাহ কতৃক নির্বাচিত তাই তাঁরা সর্বদাই মাসুম ও নিষ্পাপ থাকেন ।
এটাই হচ্ছে আল্লাহর মূলনীতি । আর আল্লাহর নীতিতে কখনই কোন পরিবর্তন হয় না ।
আশা করি হযরত আদম (আঃ) এর ব্যাপারে প্রচলিত এই ভ্রান্ত ধারনাটি বুঝতে সক্ষম হয়েছেন ।
skl