মহানবী (সাঃ) ও উচ্চ কন্ঠস্বর —
আমাকে নাফে ইবনে ওমর এবং তার কাছে ইবনে আবি মালিকা বর্ননা করেছেন যে –
হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর তো প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল । কারন রাসুল (সাঃ) এর সম্মুখে ওনারা দুজন খুব উচ্চস্বরে পরস্পরের মধ্যে প্রচন্ড বাকবিতন্ডা শুরু করেছিলেন ।
ঘটনার সূত্রপাত এভাবে হয়েছিল , বনী তামিম গোত্রের একটি দল রাসুল (সাঃ) এর সম্মুখে উপস্থিত হলেন । তখন বনী তামিম গোত্রের আমির নিযুক্ত করার জন্য আকরা ইবনে হাবিসের নাম প্রস্তাব করা হয় । এই ব্যক্তির আমির নিযুক্তিকরনের পক্ষে ও বিপক্ষে আবূ বকর ও ওমর পরস্র প্রচন্ড বাদানুবাদে লিপ্ত হলেন ।
আবু বকর তখন ওমরেকে বললেন , ” তুমি সব সময় আমার বিপক্ষে চিন্তা ভাবনা কর ” ।
ওমর বললেন , ” না আপনার কথা সত্য নয় , আমি আপনার বিরোধিতা করিনি ” ।
মহানবী (সাঃ) এর উপস্থিতিতে এভাবে কথা কাটাকাটির এক পর্যায় উভয়ের কন্ঠস্বর অনেক উঁচু হয়ে যায় ।
অতঃপর মহান আল্লাহ এই আয়াতটি নাজিল করলেন –
” — হে বিশ্বাসীগন ! তোমরা তোমাদের কন্ঠস্বর নবীর কন্ঠস্বরের উপর উঁচু কর না এবং যেরুপে তোমরা একে অপরের সাথে উচ্চঃস্বরে কথা বল সেরুপে তাঁর সম্মুখে উচ্চঃস্বরে কথা বল না । কারন এতে তোমাদের কর্ম বিনষ্ট হয়ে যাবে অথচ তোমরা তা অনুভবও করতে পারবে না — ” ।
সুরা – হুজরাত / ২ ।
উক্ত আয়াতটি নাজিলের পরপরই হযরত ওমর নিশ্চুপ হয়ে যান এবং বিষয়টি নিয়ে হযরত আবু বকরের সাথে কোন আলোচনা করেন নি ।
পাঠক ,
সারসংক্ষেপে উপরের ঘটনাটি নিম্নলিখিত হাদিস গ্রন্থসমূহে লিপিবব্দ আছে ।
সূত্র – সহীহ বুখারী , ৬ষ্ঠ খন্ড , পৃষ্ঠা – ৪৬ / সহীহ বুখারী , ৮ম খন্ড , পৃষ্ঠা – ১৪৫ / সহীহ বুখারী , ৫ম খন্ড , পৃষ্ঠা – ১১৬ , বনী তামিম গোত্র অধ্যায় ।
ঘটনার বিশ্লেষন –
উক্ত রেওয়াত দ্বারা প্রমানিত হয় যে , হযরত আবু বকর ও হযরত ওমরের মাঝে ইসলামী আদব কায়দার বেশ ঘাটতি ছিল ।
ওনারা নিজেদের নাফসানিয়াত বা নিজেদের মতামতকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর উপর প্রাধান্য দিতেন ।
কেননা বনী তামিম গোত্র বিষয়টির ফয়সালার জন্য রাসুল (সাঃ) এর সমীপে উপস্থিত হয়েছিল ।
এবং রাসুল (সাঃ) বিষয়টি ফয়সালার জন্য আবু বকর ও ওমরের উপর কোন দায়িত্ব দেন নি । অথবা বনী তামিম গোত্রের বিষয়টি সম্বন্ধে কোন প্রকার মতামত প্রদানের জন্য আবু বকর ও ওমরের প্রতি কোন নির্দেশ দেন নি ।
এরপরেও ওনারা দুজন বিরত তো হলেন না বরং নবীজী (সাঃ) এর সামনেই ঝগড়া বাঁধিয়ে দেন , নবীজী (সাঃ) এর সম্মুখে নিজেদের ভদ্রতা , আদব ও আখলাকের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে কন্ঠস্বর এতটাই উচ্চস্বরে পৌঁছে গিয়েছিল এবং আদবের সীমানা এতটাই লংঘিত হয়ে পড়েছিল যে , স্বয়ং আল্লাহ তৎক্ষনাত এই আয়াতটি পাঠিয়ে দিলেন ।
উক্ত ঘটনাটি যদি ইসলামের প্রাথমিক যুগে সংঘটিত হত তাহলেও আমরা আবু বকর ও ওমরকে নির্দোষ গন্য করে নিতাম ।
পাঠক ,
বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না , ঘটনাটি ঘটেছিল মহানবী (সাঃ) এর জীবনের শেষ বেলায় অর্থাৎ নবম হিজরীতে । উক্ত ঘটনাটি ঘটেছিল রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকালের কয়েক মাস পূর্বে !
আহলে যিকর – কে জিজ্ঞাসা করুন ,
মূল – ডঃ মুহাম্মাদ তিজানী সামাভী ,
বাংলা অনুবাদে – ইরশাদ আহমেদ ,
পৃষ্ঠা – ১৮২ , ১৮৩ , ১৮৪ ছায়া অবলম্বনে লিখিত ।
SKL