কুফার কাজি শুরাইয়াহ ইবনে হারিছের (আল-কিন্দি) জন্য লেখেছিলেন বর্ণিত আছে যে, আমিরুল মোমেনিন কর্তৃক নিয়োজিত কুফার কাজ শুরাইয়াহ ইবনে হারিছ (আল-কিন্দি) আশি দিনার মূল্য দিয়ে একটা বাড়ি ক্রয় করেছিল । আমিরুল মোমেনিন এ সংবাদ অবগত হয়ে কাজিকে ডেকে এনে বললেন, ”আমি জানতে পেরেছি তুমি নাকি আশি দিনার মূল্যে একটা বাড়ি ক্রয় করেছে এবং সেজন্য একটা দলিল করে তাতেও স্বাক্ষাবি করেছো ৷ ” শুরাইয়াহু বললেন, “হ্যাঁ; আমিরুল মোমেনিন, আপনি যা শুনেছেন তা সত্য । * আমিরুল মোমেনিন রাগত চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললেন ? হে শুরাইয়াহ, সাবধান হও, সহসাই আজরাইল তোমার কাছে আসবে। সে তোমার দলিলের দিকে ফিরেও তাকাবে না বা তোমার স্বাক্ষর প্রদান বিষয়ে তোমাকে কোন কিছু জিজ্ঞেসও করবে না। কিন্তু সে তোমাকে তোমার ক্রয়কৃত বাড়ি থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে এবং তোমাকে নির্জন করবে: একাকী অবস্থায় রেখে দেবে। দেখ, হে শুরাইয়াহ, যদি তুমি তোমার হালাল উপার্জন ব্যতীত কোন অবৈধ উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ দ্বারা বাড়ির মূল্য দিয়ে থাক তবে তোমার ইহকাল ও পরকাল বিনষ্ট করে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যদি তুমি বাড়ি ক্রয় করার আগে আমার কাছে আসতে তা হলে আমি তোমার জন্য একখানা দলিল লেখে দিতাম যা দেখলে তুমি ওই বাড়িটি এক দিনার মূল্যেও ক্রয় করতে না। এ কথা বলে আমিরুল মোমেনিনা একখানা দলিল শুরাইয়াকে দিলেন যাতে লেখা ছিল ? এটা একটা ক্রয় দলিল যাতে আল্লাহর একজন দীনহীন বান্দা ক্রেতা এবং পরীকালে প্ৰস্থানোদ্যত অন্য বান্দা বিক্রেতা / ক্রেতা ধ্বংসশীল স্থানের মরণশীল গণের এলাকার প্ৰবঞ্চনার বাড়িগুলোর মধ্য থেকে একটা বাড়ি খরিদ করেছে । এ বাড়িটির চারদিকের ঘোর-চৌহুদি নিম্নরূপ ? প্রথম দিকের সীমানা—দুর্যোগের উৎসস্থলের অতি নিকটবতীর্চ দ্বিতীয় দিকের সীমানা—দুঃখ-দুৰ্দশার উৎসের সাথে যুক্ত; তৃতীয় দিকের সীমানা— ধ্বংসাত্মক কামনা-বাসনার সাথে যুক্ত; চতুর্থ দিকের সীমানা—প্রবঞ্চক শয়তানের সাথে যুক্ত এবং এদিকেই বাড়িটির দরজা খোলার পথ । এ বাড়িটি এমন এক ব্যক্তি ক্রয় করেছে যাকে কামনা-বাসনা আক্রমণ করে সর্বত্ব অপহরণ করে নিয়েছে এবং এমন এক ব্যক্তি বিক্রয় করেছে যাকে মৃত্যু তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে । বাড়িটির মূল্য হলো— পরিতৃপ্তির মর্যাদা পরিত্যাগ পূর্বক হতমান ও দুঃখদুৰ্দশায় প্রবেশ । যদি ক্রেতা এ লেনদেনের কুফলের সম্মুখীন হয় তবে তা হবে। সেব্যক্তির জন্য যে ( আজরাইল) রাজা-বাদশাদের সযত্নে লালিত দেহ গলিয়ে বিনষ্ট করে দিয়েছে, স্বৈরশাসকদের জীবন কেড়ে নিয়েছে এবং ফেরাউন, কিসরাস’, সিজার, তুব্বা” ও হিমায়ারদের* বিশাল সাম্রাজ্য ধ্বংস করে দিয়েছে । তারা সকলেই সম্পদের পর সম্পদ স্তুপীকৃত করেছিল এবং সম্পদ বাড়িয়েই যাচ্ছিলো । তারা সুউচ্চ ইমারত নির্মাণ করেছিল এবং চোখ বালসানো সাজে তা সুসজ্জিত করেছিল । তারা ধন-রত্বে সংগ্ৰহ করেছিল এবং তাদের ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী তারা দাবি করেছিল যে, তাদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য ওগুলো সঞ্চিত করেছিল যারা তাদেরকে হিসাবনিকাশ ও বিচারস্থলে পুরস্কার ও শাস্তির সময় সহায়তা করবে । তখন নির্দেশ হবে। “যারা মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল তারা আজ ক্ষতিগ্ৰস্তু (কুরআন-৪ ? ৭৮) । এ দলিল প্রজ্ঞা দ্বারা স্বাক্ষরিত, এটা কামনা-বাসনার শিকলমুক্ত এবং দুনিয়ার চাকচিক্য থেকে দূরে সরানো |
১। কিসরাসঃ এটা খুসরাও’ শব্দের আরবি রূপান্তর, যার অর্থ হলো—বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী রাজা। ইরানের শাসনকর্তাদের উপাধি ছিল ‘খুসরাও”। ২। সিজার ঃ রোমের শাসকদের উপাধি সিজার’। ল্যাটিন ভাষায় এর অর্থ হলো— যে শিশুর মাতা প্রসবের পূর্বে মারা গেছে এবং মাতার পেট কেটে তাকে বের করে আনা হয়েছে। রোমের শাসকদের মধ্যে অগাস্টাস এভাবে জন্মেছিল বলে তাকে “সিজার’ বলা হতো এবং পরবতীতে রোমের শাসকগণ এটাকে উপাধি হিসাবে গ্রহণ করে । ৩। তুব্বাঃ ইয়েমেনের রাজাদের উপাধি ছিল তুব্বা’ । তারা হিমায়ের ও হাদ্রামাউত দখল করেছিল। তাদের নাম পবিত্র কুরআনের ৪৪ঃ ৩৭ ও ৫০ঃ১৪ আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে। ৪ । হিমায়েরঃ দক্ষিণ-পশ্চিম আরবের প্রাচীন সাবাইন রাজ্যের একটি প্রসিদ্ধ গোত্রের নাম। খৃষ্টপূর্ব ১১৫ সান থেকে ৫২৫ খৃষ্টােব্দ পর্যন্ত তাবা দক্ষিণ আরবের শক্তিশালী শাসক ছিল। হিমায়রগণ আজকের ইয়েমেনের উপকূলীয় অঞ্চল জুরায়দান (পরবতীতে কাতায়বান) নামক এলাকায় ঘনবসতি স্থাপন করেছিল। তারা সম্ভবত তাদের জ্ঞাতি সাবাইনদের ডিঙ্গিয়ে মিশর থেকে ভারত পর্যন্ত সমুদ্র পথে ব্যবসায়-বাণিজ্যের একটা পথ বের করেছিল। হিমায়রদের ভাষা ও কৃষ্টি ছিল সবাইনদের মতোই এবং তাদের রাজধানী ছিল জাফর। তাদের রাজ্য পূর্ব দিকে পারস্য উপসাগর ও উত্তর দিকে আরব মরুভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। চতুর্থ শতাব্দীতে হিমায়রদের রাজধানী উত্তর দিকে সরিয়ে সানায় স্থানান্তরিত করা হয় এবং এ শতাব্দীর শেষভাগে ইহুদি ও খৃষ্টানগণ এ এলাকায় শক্ত সিড়ি গেড়ে বসেছিল। অভ্যন্তরীণ গোলযোগের সুযোগে ৫২৫ খৃষ্টাব্দে আবিসিনিয়ানগণ হিমায়রদেরকে ধ্বংস করে দেয় (নিউ এনসাইক্লেপেডিয়া ব্রিটানিকা, ৫ম খন্ড, পৃঃ ৪৯)।