————– গীবত ———
গীবত শব্দটির আভিধানিক অর্থ —
দোষারোপ করা , কুৎসা রটনা , পেছনে সমালোচনা করা , পরচর্চা করা , পরনিন্দা করা , কারও অনুপস্থিতিতে তার দোষগুলো অন্যের সামনে তুলে ধরা ।
পারিভাষিক অর্থে জালিম বা প্রকাশ্য পাপী ছাড়া কারও পেছনে তার বিরুদ্ধে কথা বলা বা তার মনে কষ্ট লাগে এমন কথা বলা হচ্ছ গীবত ।
প্রত্যেক স্বাধীনচেতা মানুষ পরচর্চা বা পরনিন্দাকে ঘৃণা করেন । এ ধরনের অযৌক্তিক কাজ করার বিরুদ্ধে স্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়েছে পবিত্র ধর্ম ইসলাম ।
পবিত্র কোরআন গীবত করাকে মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার মত নিন্দনীয় কাজের সঙ্গে তুলনা করেছে ।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন –
“— আর তোমরা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না — ” ।
সূরা – আল-হুজুরাত ,আয়াত -১২ ।
গীবতের সবচেয়ে উত্তম সংজ্ঞা দিয়েছেন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) —
একদিন হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন , তোমরা কি জান গীবত কাকে বলে ?
সাহাবিরা বললেন , আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) ভাল জানেন ।
মহানবী (সাঃ) বলেন , তোমার কোন দ্বীনি ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা , যা সে অপছন্দ করে , তাই গীবত ।
সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন , হে আল্লাহর রাসুল , আমি যে দোষের কথা বলি সেটা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে ?
উত্তরে রাসুল (সাঃ) বলেন , তুমি যে দোষের কথা বল , তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তবে তুমি অবশ্যই গীবত করলে আর তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছ ।
অনেকে ভাবতে পারেন যে , আমি গীবত করি না । অন্যে বলে আমি শুধু শুনি ।
না , তাদেরও রক্ষা নেই । কারণ তারা গীবতকারীকে সাহায্য করছে এই পাপ কাজ করতে । গীবতকারী গীবত করার জন্য যদি কাউকে না পায় তাহলে সে আর গীবত করতে পারবে না । আর তাই গীবত শ্রবণকারীদের জন্যও রয়েছে আল্লাহর হুকুম ।
ইসলামের দৃষ্টিতে গীবত করা যেমন নিষেধ , তেমনি গীবত শোনাও নিষেধ ।
যে গীবত শোনে সেও গীবতের পাপের অংশীদার হয়ে যায় ।
হাদিস শরিফে আছে , যখন কেউ আপনার সঙ্গে বসে অন্যের গীবত করে তখন তাকে থামতে বলুন , আল্লাহর হুকুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবধান করুন । আর তাতেও যদি কাজ না হয় তবে সেখান থেকে সরে আসুন । কোনোভাবেই গীবত শোনা যাবে না ।
গীবতকারীদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন , পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না ।
বিশ্বনবী (সাঃ) পবিত্র মেরাজের রাতে গীবতকারীদের দুরবস্থা বা শাস্তি দেখেছিলেন ।
তিনি (সাঃ) এ প্রসঙ্গে বলেছেন , মেরাজের রাতে একদল মানুষকে দেখলাম যারা নিজ আঙ্গুলের নখ দিয়ে মুখে আঁচড় দিচ্ছিল ।
আমি প্রশ্ন করলাম , হে জিব্রাইল ! এরা কারা ?
জিব্রাইল (আঃ) বললেন , এরা হচ্ছে গীবতকারী এবং গীবতের মাধ্যমে মানুষের মান-সম্মান ক্ষুন্ন করত ।
হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ)ও তার সামনে গীবত বা পরনিন্দায় লিপ্ত এক ব্যক্তিতে বলেছিলেন , গীবত কর না । কারণ , গীবত দোযখের কুকুরদের খাদ্য ।
ইমাম সাদিক্ব (আঃ) বলেছেন , এক ব্যক্তি ইমাম জয়নুল আবেদিনের কাছে জানান , অমুক ব্যক্তি আপনাকে গোমরাহ ও কুপ্রথা বা বেদাআত চালুকারী বলে অপবাদ দিয়েছে ।
ইমাম জয়নুল আবেদিন বা আলী ইবনে হুসাইন (আঃ) বললেন , ওই ব্যক্তির সঙ্গী হওয়ার অধিকার রক্ষা করতে পারলে না । কারণ , তার কথা আমার কাছে লাগিয়েছ । আর আমার অধিকারও রক্ষা করনি । কারণ , আমার ভাইয়ের এমন কোন কথা আমার কাছে ফাঁস করেছ , যা এতদিন আমার কাছে গোপন ছিল । … গীবত কর না , গীবত দোযখের কুকুরদের খাবার । জেনে রাখ , যারা বেশি বেশি গীবত করে বা অন্যদের দোষ খুঁজে বেড়ায় বা সেগুল প্রচার করে বেড়ায় , এই স্বভাব এটাই প্রমাণ করে যে , অন্যদের যেসব দোষের কথা তারা বলে সেসব দোষ একই মাত্রায় তাদের মধ্যেই রয়েছে ।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন , দুনিয়াতে যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করবে অর্থাৎ গীবত করবে , কিয়ামতের দিন গীবতকারীর সামনে গীবতকৃত ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় উপস্থিত করা হবে এবং বলা হবে তুমি মৃত অবস্থায় তার গোশত ভক্ষণ কর যেমনভাবে জীবিত অবস্থায় তার মাংস ভক্ষণ করতে ।
অতঃপর সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চীৎকার করতে করতে তা ভক্ষণ করবে ।
সুতরাং অন্যের সমালোচনায় মত্ত না থেকে নিজের দোষগুলো খুঁজে বের করি আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই যাতে করে নিজের দোষগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি ।
রাসুল (সাঃ) কে তাঁর সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেছিলেন , হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) , গীবত কি জেনার চেয়েও মারাত্মক ?
জবাবে মহানবী (সাঃ) বললেন , হ্যাঁ , কারণ কোন ব্যক্তি জেনার পর (বিশুদ্ধ) তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন । কিন্ত গীবতকারীকে যার গীবত করা হয়েছে , তিনি মাফ না করলে আল্লাহ মাফ করবেন না ।
গীবতের কাফফারা হল , যার সম্পর্কে গীবত করা হয়েছে তার জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে দোয়া করা ।
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে , গীবতের কাফফারা হল , তুমি যার গীবত করেছ , তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে ।
তুমি এভাবে করবে , হে আল্লাহ , তুমি আমার ও তার গুনাহ মাফ করে দাও ।
সুপ্রিয় পাঠক ,
আমরা কেউ কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব কি , আমরা এই গীবত করা থেকে কমবেশী মুক্ত আছি ?
অতীতে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে । তওবা ও কাফফারা করে আসুন এখন থেকেই পরিশুদ্ব হওয়ার চেষ্টা করি —
ঈলাহী আমিন ।
SKL