হিজরতের পর রাসুলের সাথে সাক্ষাৎ হবার পূর্ব পর্যন্ত নিজের অবস্থা এ খোৎবায় বর্ণনা করেছেন রাসুল (সঃ) যে পথে গেছেন সে পথ অনুসরণ করে আমি চলতে লাগলাম এবং আল-আরজ পৌছার পূর্ব পর্যন্ত যে পথের কথা তিনি বলে গিয়েছিলেন সে পথ স্মরণ করেই অগ্রসর হয়েছিলাম।
১। নবুয়ত প্রকাশের পর থেকে ১৩ বছর রাসুল (সঃ) মক্কায় ছিলেন। মব্ধি জীবনের এ ১৩ টি বছর তিনি নিদারুণ অত্যাচার ও নিপীড়িন ভোগ করেছিলেন। কুরাইশ কাফেরগণ তাঁর জীবিকার সকল দ্বার পর্যন্ত রুদ্ধ করে দিয়েছিল। তাকে দুঃখ-কষ্ট দেয়ার কোন পথ থেকে তারা বিরত থাকে নি। এমন কি তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রেও তারা লিপ্ত হয়েছিল। তাদের নেতৃস্থানীয় ৪০ জন লোক দর-আন-নাদওয়াহ’ নামক স্থানে বৈঠক করে তাকে হত্যা করার শলা-পরামর্শ পূর্বক সাব্যস্ত করলো যে, প্রত্যেক গোত্রের একজন করে একত্রিত হয়ে যৌথভাবে তাকে আক্রমণ করে হত্যা করবে। এতে বনি হাশিম সকল গোত্রের সাথে মোকাবেলা করার সাহস পাবে না এবং তাতে রক্তের মূল্য দিয়ে দিলেই বনি হাশিম শান্ত হয়ে যাবে। তাদের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাঁরা ১ রবিউল আউয়াল রাতে রাসুলের ঘরের আশে-পাশে ওৎপেতে বসেছিল যাতে রাসুল (সঃ) ঘুমিয়ে পড়লে তাকে আক্রমণ করা যায়। এদিকে আল্লাহ তাদের সকল পরিকল্পনা রাসুলকে জানিয়ে দিয়ে আলীকে তার বিছানায় শুইয়ে রেখে মদিনায় হিজরত করার আদেশ দিলেন। রাসুল (সঃ) আলীকে ডেকে পাঠালেন এবং তার কাছে সবকিছু ব্যক্তি করে বললেন, “আলী, আমার বিছানায় শুয়ে থাক।” আলী বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল, এতে কি আপনার জীবন রক্ষা পাবে?” রাসুল (সঃ) বললেন, “হাঁ।” আলী সেজদায় পড়ে শুকরিয়া আদায় করে রাসুলের বিছানায় শুয়ে পড়লেন। রাসুল (সঃ) পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। গভীর রাতে কুরাইশ কাফেরগণ উকি-বুকি দিয়ে আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছিল। এ সময় আবু লাহাব বললো, “ঘরের মধ্যে নারী ও শিশু আছে। ফলে এত রাতে আক্রমণ করা ঠিক হবে না। ভোরবেলা আক্রমণ করো। কিন্তু ভোর হবার পূর্ব পর্যন্ত ভালোভাবে পাহারা দাও যাতে অন্যত্র সরে যেতে না পারে।” ফলে সারারাত তারা পাহারায় ছিল। ভোরের আলো দেখা দিতে না দিতেই তারা ঘরের চারদিকে ঘেরাও করলো। তাদের পায়ের শব্দ শুনে আমিরুল মোমেনিন মুখের কাপড় সরিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। কুরাইশগণ স্তম্ভিত হয়ে ভাবতে লাগলো এটা কী যাদু নাকি বাস্তব ঘটনা। তারা জিজ্ঞেস করলো, “মুহাম্মদ কোথায়?” আলী উত্তব দিলেন, “তোমরা কি তাকে আমার কাছে রেখে গিয়েছিলে যে এখন আমাকে জিজ্ঞেস করছে।” এতে তারা নিরুত্তর হয়ে তাঁর পিছু ধাওয়া করতে লাগলো। কিন্তু ছাওয়ার গুহার পরে আর কোন পদচিহ্ন দেখতে না পেয়ে হতবুদ্ধি হয়ে ফিরে এলো। রাসুল (সঃ) তিন দিন ঐ গুহায় অবস্থান করে মদিনাভিমুখে যাত্রা করলেন। এ তিন দিন আমিরুল মোমেনিন মক্কায় থেকে রাসুলের কাছে আমানত দেয়া সবকিছু মানুষকে ফেরত দিয়ে মদিনা অভিমুখে যাত্রা করলেন। মক্কা ও মদিনার মধ্যবতী আল-আরুজ নামক স্থানে পৌছার পূর্ব পর্যন্ত তিনি রাসুলের সংবাদ পেতে থাকলেন এবং ১২ রবিউল আউয়াল তিনি কুবায় রাসুলের সাথে মিলিত হয়ে মদিনায় প্রবেশ করলেন (তাবারী’, ৯ম খন্ড, পৃঃ ১৪৮-১৫১; আছীর, ১ম খন্ড, পৃঃ ১২৩২-১২৩৪; সাদ’, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৫৩-১৫৪; হিশাম’, ২য় খন্ড, পৃঃ ১২৪-১২৮; আইট্র’, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ২৫; আম্বর, ২য় খন্ড, পৃঃ ১০১-১০৪; কাহীর’, ২য় খন্ড, পৃঃ ৩০২-৩০৩; তাবারী’, ৩য় খন্ড, পৃঃ ১৮০-১৮১; হাদীদ ***, ১৩শ খন্ড, পৃঃ ৩০৩-৩০৬; শাকী’, ৩য় খন্ড, পৃঃ ১৭৯-১৮০; মজলিসী***, ১৯শ খন্ড, পৃঃ ২৮-১০৩)।