সাইয়্যেদুনিছা খাতুনে জানাতের দাফনের সময় আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল, আমার সালাম ও আপনার কন্যার সালাম গ্রহণ করুন। আপনার কন্যা আপনার কাছে আসছেন এবং তিনি আপনার সাক্ষাত লাভের জন্য তাড়াহুড়া করেছিলেন। হে আল্লাহর রাসুল, আপনার প্রাণপ্রিয় কন্যার মৃত্যু আমাকে ধৈর্যহারা করে দিয়েছে এবং আমার সহ্যশক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমার সান্তুনার ক্ষেত্র এটুকু যে, আপনার দুঃখজনক ও হৃদয় বিদারক বিচ্ছেদ-বেদনা আমি ধৈর্য সহকারে সহ্য করেছি। আপনাকে আমি নিজ হাতে কবরে শায়িত করেছি। আমার গ্ৰীবা ও বুকের মাঝখানে আপনার পবিত্র মস্তক থাকাবস্থায় আপনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী (কুরআনSá)のり এবার, আপনার আমানত ফেরত নেয়া হয়েছে এবং যা দেয়া হয়েছিল তা আবার ফিরিয়ে নেয়া হলো। আমার শোকের আর কোন সীমা রইলো না এবং আমার রাত্রি নিদ্রাবিহীন হয়ে গেল যে পর্যন্ত না আপনি এখন যে ঘরে আছেন আল্লাহ আমার জন্য সে ঘর মঞ্জর করেন। নিশ্চয়ই, আপনার কন্যা আপনার সাক্ষাত লাভ করেই আপনাকে বিস্তারিত বলেছেন যে, আপনার উম্মাহ১ তার প্রতি কতই না অত্যাচার করেছে। আপনি দয়া করে তাকে জিজ্ঞেস করে বিস্তারিত খবর জেনে নেবেন। এসব ঘটনা এত অল্পকালের মধ্যে ঘটেছে যে, লোকেরা এখনো আপনাকে স্মরণ করে এবং আপনার কথা বলাবলি করে । আপনাদের উভয়ের প্রতি আমার সালাম । এ সালাম। একজন শোকাহতের— কোন বিরক্ত বা সদৃণ ব্যক্তির নয়। আমার এখান থেকে চলে যাওয়ার কারণ এ নয় যে, আমি শ্রান্ত হয়ে পড়েছি এবং যদি আমি এখানে থাকি তার কারণ এ নয় যে, আল্লাহ্ সবুরকারীদের জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমি তাতে বিশ্বাস হারিয়েছি।
১। রাসুলের (সঃ) ইনতিকালের পর তার প্রাণপ্ৰিয় কন্যার প্রতি যে পরিমাণ জুলুম ও দুর্ব্যবহার করা হয়েছিল তা অত্যন্ত দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক ও হৃদয় -বিদারক। যদিও রাসুলের ইনতিকালের পর সাইয়্যেদুন্নিছা ফাতিমা মাত্র কয়েক মাস বেঁচে ছিলেন তবুও এ অল্প সময়ের শোক ও দুঃখ-দুৰ্দশা বর্ণনাতীত। এ বিষয়ে প্রথমে যে দৃশ্য চোখে পড়ে তা হলো রাসুলের কাফন-দাফনের কথা চিন্তা না করে তাঁর পবিত্র মরদেহ ফেলে রেখে ক্ষমতা গ্রহণের জন্য তারা সকলেই সকিফা-ই-সাইদায় চলে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই তাদের এহেন আচরণ খাতুনে জান্নাতকে আহত করেছিল। যখন তিনি দেখলেন যে, রাসুলের জীবদ্দশায় যারা তার প্রতি আনুগত্য ও ভালোবাসার কথা বলতো তারা ক্ষমতা দখলের জন্য এমনভাবে পাগলপারা হয়ে পড়েছিলো যে, রাসুলের একমাত্র শোকাহত কন্যাকে একটু সান্তুনা দিতেও এলো না, তখন তার হৃদয় ব্যথাতুর হওয়া স্বাভাবিক। এমন কি কখন রাসুলকে শেষ গোসল দেয়া হয়েছিল এবং কখন তাকে দাফন করা হয়েছিল— এসবের কিছুই তারা জানলো না। যেভাবে তারা রাসুল-কন্যার কাছে এসেছিল তা হলো—তারা আগুন জ্বালাবার উপকরণসহ দল বেঁধে তাঁর ঘরের সামনে জড়ো হয়ে জোরপূর্বক বায়াত গ্রহণের জন্য অত্যাচার ও বিশৃঙ্খলা প্রদর্শন করেছিল। এসব বাড়াবাড়ির মূল উদ্দেশ্য ছিল খাতুনে জান্নাতের ঘরের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান তারা এমনভাবে মুছে ফেলতে চেয়েছিল যেন ভবিষ্যতে আর সেই মর্যাদা ফিরে না পায়। এসব উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তাকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করে দেয়ার মানসে “ফদক’-এর দাবি মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল যার ফলশ্রুতিতে খাতুনে জান্নাত মৃত্যুকালে আছিয়াত করেছিলেন যে, তারা কেউ যেন তাঁর দাফনে উপস্থিত না থাকে।