আল্লাহর প্রশধ্বংসা ও ভয় সম্পর্কে
প্রতিষ্ঠিত প্রশধ্বংসা আল্লাহর; যার প্রশধ্বংসা সুবিস্তৃত, যার সৈন্য-বাহিনী অপরাজেয় এবং যার মর্যাদা চির অম্লান। আমি তাঁর ক্রমাগত নেয়ামত ও মহা-রহমতের জন্য প্রশধ্বংসা করি। তার ক্ষমা সুমহান এবং সেজন্যই তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। যা কিছু বর্তমানে ঘটছে এবং অতীতে যাকিছু ঘটেছে তার সব কিছুই তিনি জানেন। তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা সমগ্র সৃষ্টির শিল্প-কৌশল তৈরি করেছেন এবং কোন প্রকার সীমাবদ্ধতা, শিক্ষা, অনুকরণ, ভুলভ্রান্তি ও সাহায্যকারী ছাড়াই নিজ থেকেই সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর বান্দা ও রাসুল, যাকে তিনি এমন সময় প্রেরণ করেছেন যখন মানুষ রসাতলে চলে গিয়েছিল এবং বিভ্রান্তিতে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। ধ্বংসের লাগাম তাদেরকে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিলো এবং তাদের হৃদয়ে পাপের তালা স্থায়ীভাবে লেগেছিলো।
হে আল্লাহর বান্দাগণ, আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি। আল্লাহকে ভয় করার জন্য, কারণ এটা হলো তোমাদের ওপর আল্লাহর অধিকার এবং এতে আল্লাহর ওপর তোমাদের অধিকারও বার্তায় । তোমরা এর মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে পার এবং এর সাহায্যে আল্লাহর সাক্ষাতের আশা করতে পার। নিশ্চয়ই, ইহকালে আল্লাহর ভয় তোমাদের প্রতিরক্ষা ও ঢাল এবং পরকালে এটা বেহেশতের রাস্তা। এর পথ সুস্পষ্ট এবং যে কেউ এ পথে পদচারণা করে সে লাভবান হয়। যে কেউ এটা ধারণ করে সে একে রক্ষা করে। এটা সেসব লোকের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করে যারা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে এবং যারা পিছন থেকে এগিয়ে আসছে; কারণ আগামীকাল (বিচার দিনে) তাদের এটার প্রয়োজন হবে যখন আল্লাহ তার বান্দাকে পুনরায় গ্রহণ করবে, যা তিনি দিয়েছিলেন তা ফেরত নেবেন এবং যেসব নেয়ামত তিনি দান করেছিলেন তার হিসাব নেবেন । আহা! কত অল্প সসংখ্যক লোক এটা গ্রহণ করে এবং যত লোক এটার অনুশীলন করা দরকার তার তুলনায় কত অল্প সসংখ্যক এটা অনুশীলন করে। তারা সসংখ্যায় অত্যন্ত্র এবং তাদের সম্বন্ধেই মহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ
– এবং আমার বান্দাগণের অল্পই কৃতজ্ঞ (কুরআন-৩৪ ৫১৩)
সুতরাং তোমাদের কান খাড়া রেখে এর দিকে দ্রুত এগিয়ে যাও এবং এর জন্য তোমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা বাড়িয়ে নাও। এটাকে তোমাদের অতীতের সকল ত্রুটি-বিচূতির বিকল্প করে নাও যেমন করে উত্তরাধিকারী পূর্বসূরীর স্থলাভিষিক্ত হয় এবং সকল বিরোধীর বিরুদ্ধে এটাকে সহায়তাকারী করে নাও। এর সাহায্যে নিদ্রাকে জাগরণে পরিণত কর এবং এর সাথে দিন যাপন কর। একে হৃদয়ের হাতিয়ার করে নাও, এর সাহায্যে সকল পাপ ধুয়ে-মুছে ফেল, এর সাহায্যে তোমাদের রোগের চিকিৎসা কর এবং একে সঙ্গে নিয়ে মৃত্যুর দিকে দ্রুত এগিয়ে যাও। যারা একে অবহেলা করে তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা যাতে অন্যরা তোমার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে না পারে। সাবধান, তোমরা এর প্রতি যত্নবান হও এবং এর মাধ্যমে নিজেদের প্রতি যত্নশীল থেকো। এ দুনিয়া থেকে দূরে সরে থেকে এবং মোহাচ্ছন্ন অবস্থায় পরকালের দিকে অগ্রসর হয়ে না। আল্লাহর ভয় যাকে উচ্চমর্যাদা দান করেছে তাকে দীনহীন মনে করো না এবং দুনিয়া যাকে উচ্চ মর্যাদা দিয়েছে তাকে মর্যাদাশালী মনে করো না। দুনিয়ার চাকচিক্যের দিকে নজর দিয়ে না, যারা দুনিয়ার কথা বলে তাদের কথা শুনো না, যারা দুনিয়ার দিকে আহবান করে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে না, দুনিয়ার ঝলমলানি থেকে আলোর অনুসন্ধান করো না এবং এর মূল্যবান বস্তুর মাঝে মৃত্যুবরণ করো না। কারণ এর ঔজ্জ্বল্য প্রতারণাপূর্ণ (মরীচিকা), এর কথা মিথ্যা, এর সম্পদ লুষ্ঠিত হয় এবং এর বস্তু সামগ্ৰী কেড়ে নেয়া হয় । সাবধান, এ দুনিয়া প্রথমে আকর্ষণ করে এবং পরে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এটা এতই অবাধ্য যে, সামনে এগুতে অস্বীকার করে। এটা মিথ্যা কথা বলে এবং তসরুফ করে; সহজে পরিত্যাগ করে এবং অকৃতজ্ঞ। এটা পাপপূৰ্ণ এবং (এর প্রেমিককে) বর্জন করে; আকৃষ্ট করে কিন্তু বিপদে ঠেলে দেয়। এর অবস্থা পরিবর্তনশীল, পদক্ষেপ কম্পবান, সম্মান অমর্যাদাকর; এর রাশভারীভাব হাস্যকর এবং এর উচ্চতা হীনতা বই কিছু নয়। এটা ডাকাতি ও লুটের স্থান এবং বিনষ্ট ও ধ্বংসের স্থান। এর মানুষগুলো তাড়া খাবার জন্য, অতিক্রম করে যাবার জন্য এবং প্রস্থান করার জন্য তাদের পায়ের ওপর দন্ডায়মান অবস্থায় প্রস্তুত হয়ে আছে। এর পথ বিভ্রান্তকর; বহিৰ্গমন ধাঁধাপূর্ণ এবং কর্মসূচী হতাশাপূর্ণ। ফলত যারা শক্ত করে হাল ধরে তারা এটাকে তাড়িয়ে দেয়, ঘর থেকে বাইরে নিক্ষেপ করে এবং সুচতুর ব্যক্তি একে ব্যর্থ করে দেয় । যারা দুনিয়ার খপ্পরে পড়েছে তাদের কতেক এখন খোড়া উটের মতো, কতেক কর্তিত মাংশের (বেদনায়), কতেক হাত কচলাচ্ছে (অনুতাপে), কতেক গালে হাত দিয়ে রেখেছে (উদ্বিগ্নতায়), কতেক নিজের অভিমতকে অভিশাপ দিচ্ছে এবং কতেক তাদের সংকল্প থেকে ফিরে আসছে। কিন্তু আমলের সময় চলে গেছে এবং দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা দিয়েছে-“এখন আর রক্ষা পাবার কোন সময় নেই।” (কুরআন-৩৮৪৩)। হায়! হায়! যা হারিয়ে গেছে তা চিরতরে চলে গেছে। দুনিয়া এর স্বাভাবিক নিয়মে চলছে।
সুতরাং আকাশ ও পৃথিবীর কেউ তাদের জন্য অশ্রুপাত করে নি এবং তাদের তাদের অবকাশও দেয়া হয়নি (কুরান-৪৪ঃ২)