আল্লাহর প্রশধ্বংসা ও তাঁর বিস্ময়কর সৃষ্টি সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত প্রশধ্বংসা আল্লাহব। তিনি এমন যাকে ইন্দ্ৰিয় দ্বারা উপলব্ধি করা যায় না, স্থান ও কালে আবদ্ধ করা যায় না, চক্ষু দ্বারা দেখা যায় না এবং আবরণ দ্বারা আবৃত করা যায় না। সৃষ্টির অস্তিত্ব দ্বারাই তিনি তাঁর অনন্ত-অসীমতা প্রমাণ করেছেন এবং কোন প্রকার নমুনা ছাড়া সৃষ্টির সূচনা করেই তিনি তাঁর অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন। সৃষ্টির পারস্পরিক সাদৃশ্য দ্বারা তিনি প্রমাণ করেছেন যে, তার সদৃশ কোন কিছুই নেই। তিনি তার প্রতিশ্রুতিতে সদা-সত্য। তিনি এত সমুচ্চ যে তাঁর বান্দাদের প্রতি অবিচার করেন না। তিনি তাঁর ন্যায়পরায়ণতা দ্বারা সৃষ্টির মধ্যে বিরাজমান এবং তাঁর আদেশের মাধ্যমে তাদের মধ্যে ন্যায় বিধান করেন। বস্তুনিচয়ের সৃষ্টির মধ্যে তিনি তার চির সত্তার সাক্ষ্য প্রদান করেন, সৃষ্টির অক্ষমতার মাধ্যমে তাঁর ক্ষমতা প্রকাশ করেন এবং মৃত্যুর বিরুদ্ধে অসহায়ত্বের মাধ্যমে তিনি তাঁর চিরন্তনতার সাক্ষ্য প্ৰদান করেন।
তিনি এক কিন্তু গণনার দ্বারা নয়। কোন প্রকার সীমা ছাড়াই তিনি চিরস্থায়ী। কোন প্রকার সমর্থন ছাড়াই তিনি বিদ্যমান। কোন প্রকার ইন্দ্ৰিয়ানুভূতি ছাড়াই মন তাঁর স্বীকৃতি দেয়। দৃশ্যমান সকল বস্তুই কোন প্রকার বিরোধ ছাড়া তার সাক্ষ্য বহন করে। কল্পনাশক্তি তাকে ধারণ করতে পারে না। তিনি দয়া করে কাউকে যখন চিন্তাশক্তি দ্বারা সাহায্য করেন তখনই তার চিন্তা-চেতনায় তিনি নিজকে প্ৰকাশ করেন। কিন্তু কেউ যদি কল্পনা দ্বারা তাকে অনুভব করতে চায়। তবে তিনি তার কল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেন। এ বিষয়ে তিনি কল্পনাকে মধ্যস্থতাকারী করেছেন। তিনি এ অর্থে বিশাল নন যে, তার আকার বা দেহ বিশাল। তিনি এ অর্থে মহান নন যে, তার সীমা সর্বশেষ পর্যন্ত প্রসারিত এবং তার কাঠামো ব্যাপক। তিনি মর্যাদায় বড় এবং কর্তৃত্বে মহান।
রাসুল (সঃ) সম্পর্কে
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর বান্দা এবং তার মনোনীত রাসুল ও তার দায়িত্বশীল আমানত। আল্লাহ তাকে অকাট্য প্রমাণ, সুস্পষ্ট বিজয় ও খোলা পথসহ প্রেরণ করেছেন। সুতরাং তিনি সত্য ঘোষণা দ্বারা মানুষের কাছে তাঁর বাণী পৌছে দিয়েছেন। তিনি মানুষকে সত্য-সঠিক প্রশস্ত পথে পরিচালিত করেছেন, মানুষের জন্য হেদায়েতের নিদর্শন ও আলোর মিনার প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং
যদি মানুষ আল্লাহর ক্ষমতার বিশালত্ব নিয়ে চিন্তা করতো এবং তাঁর নেয়ামতের প্রাচুর্য সম্পর্কে ভেবে দেখতো। তবে তারা অবশ্যই সঠিক পথে ফিরে আসতো ও দোযখের শাস্তির ভয়ে আতঙ্কিত হতো। কিন্তু তাদের হৃদয় পীড়িত এবং চোখ অপবিত্র। তারা কি ক্ষুদ্র প্রাণীদের দেখে না কিভাবে তিনি তাদের জীবন পদ্ধতিতে শক্তি সঞ্চার করেছেন, কিভাবে তাদের শ্রবণশক্তি খুলে দিয়েছেন, কিভাবে তাদের দৃষ্টিশক্তি খুলে দিয়েছেন এবং কিভাবে তাদের হাড় ও চামড়া দিয়েছেন? পিপীলিকার দিকে লক্ষ্য কর— কত ক্ষুদ্র এদের দেহ। অথচ এদের দেহের গঠন কত সূক্ষ্ম। অনেক সময় এরা চোখেও ধরা পড়ে না। একবার কি চিন্তা করে দেখেছাে কী করে এরা পৃথিবীতে চলাফেরা করে এবং খাদ্য সংগ্রহ করে? এরা শস্যদানা বহন করে এদের গর্তে নিয়ে যায় এবং সেখানে তা জমিয়ে রাখে। এরা গ্রীষ্মকালে শীতকালের জন্য সঞ্চয় করে এবং শক্তি থাকাকালে দুর্বলতর সময়ের জন্য সঞ্চয় করে। আল্লাহ তাদের জীবিকা নিশ্চিত করে দিয়েছেন এবং তাদের উপযোগী খাদ্য প্ৰদান করেছেন। দয়াময় আল্লাহ তাদেরকে ভুলে যান না এবং পরমদাতা আল্লাহ তাদেরকে বঞ্চিত করেন না, হোক না কেন তা কঠিন পাথরে বা পাহাড়ের চূড়ায়।
যদি তোমরা পিপীলিকার পরিপাকনালী, পেটের খোলস এবং এর মাথায় চোখ ও ক্যানের দিকে লক্ষ্য কর। তবে তোমরা এর গঠন দেখে বিস্মিত হয়ে যাবে এবং এর বর্ণনা দেওয়া তোমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। তিনি মহিমান্বিত যিনি এদেরকে পায়ের ওপর দাঁড়াতে এবং (অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের) স্তম্ভের ওপর সােজা হতে দিয়েছেন। এদের সৃষ্টিকর্মে অন্য কোন উদ্ভাবক তাঁর সাথে অংশগ্রহণ করে নি বা অন্য কোন শক্তি তাকে সাহায্য করে নি। তোমরা যদি তোমাদের কল্পনা শক্তিকে ধাবিত করে একেবারে শেষ সীমা পর্যন্ত নিয়ে যাও তবুও দেখতে পাবে ক্ষুদ্র পিপীলিকা আর বৃহৎ খেজুর গাছের স্রষ্টা একজন। কারণ সকল সৃষ্টির মধ্যে
একই নৈপুণ্য ও পূর্ণতা রয়েছে এবং জীবকুলের মধ্যে অতি সামান্য ব্যবধান রয়েছে।
বিশ্বচরাচর সৃষ্টি প্রসঙ্গে
মহান আল্লাহর সৃষ্টিতে ক্ষুদ্র, বৃহৎ, হালকা, ভারী, কোমল, শক্ত, দুর্বল—সকল কিছুই সমান। আকাশ, বাতাস, পানি সব কিছুই একই রকম। সুতরাং সূর্য, চন্দ্র, বৃক্ষ-লতা-গুল্ম, পানি, পাথর, দিবারাত্রির ব্যবধান, ঝরনাধারা, পর্বতমালা, উচু শৃঙ্গ ও ভাষার বিভিন্নতার দিকে লক্ষ্য কর। তারপরও যে ব্যক্তি সৃষ্টিকর্তকে বিশ্বাস না করে এবং তাঁর শাসন অমান্য করে তার ওপর লানত। তারা মনে করে তারা ঘাসের মত, যা গজাতে কৃষকের প্রয়োজন হয় না এবং তাদের আকার-আকৃতির বিভিন্নতার জন্য কোন নির্মাতা নেই। তারা যা ধারণা করে তার বাইরে কোন যুক্তিই মানতে চায় না অথবা তারা যা শুনেছে তার ওপর কোন গবেষণা কাৰ্যও করে না। নির্মাতা ছাড়া কি কোন নির্মাণ হতে পারে? অথবা অপরাধী ছাড়া কি কোন অপরাধ হতে পারে?
পঙ্গপালের বিস্ময়কর সৃষ্টি প্রসঙ্গে তোমরা পঙ্গপালের প্রতিও দৃষ্টিপাত করে দেখা। আল্লাহ্ তাদেরকে দুটি লাল চোখ দিয়েছেন, ক্ষুদ্র কান দিয়েছেন, একটা যথোপযোগী মুখ দিয়েছেন, তীক্ষ্ম ইন্দ্ৰিয় দিয়েছেন, দুটি দাঁত দিয়েছেন যা দিয়ে কাটতে পারে এবং কাস্তের মতো দুটি পা দিয়েছেন যা দিয়ে জড়িয়ে ধরতে পারে। শস্যের জন্য কৃষকগণ এই ক্ষুদ্র পতঙ্গের ভয়ে আতঙ্কিত। কারণ তারা শতচেষ্টা করেও এদের তাড়িয়ে দিতে পারে না। পঙ্গপাল শস্যক্ষেত্র আক্রমণ করে তাদের ক্ষুধা মেটায় অথচ এদের দেহ কৃষকের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের সমানও নয়।
আল্লাহর মহত্ত্ব সম্পর্কে
আল্লাহ মহিমাময় যাকে আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছু ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সেজদা করে। কপাল ও মুখ ধুলায় লুষ্ঠিত করে বিনীতভাবে ও নিদ্বিধায় আনুগত্য স্বীকার করে এবং ভয়ে ও আশঙ্কায় সকল ক্ষমতা তার বলে মেনে নেয়।
পক্ষীকুল তার আজ্ঞাবহ। তাদের পলক ও শ্বাস-প্ৰশ্বাসের সসংখ্যা সম্বন্ধে তিনি অবগত আছেন। তিনি তাদের পা এমনভাবে তৈরি করেছেন যাতে তারা জলে ও স্থলে দাড়াতে পারে। তিনি তাদের জীবিকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি তাদের প্রজাতি সম্বন্ধে জ্ঞাত আছেন— এটা কাক, এটা ঈগল, এটা কবুতর এবং এটা উটপাখী। সৃষ্টিকালেই তিনি প্রতিটি প্রজাতির নাম দিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের প্রত্যেকের জন্য জীবিকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি ঘন মেঘ সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে বৃষ্টিপাত সৃষ্টি করে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। পৃথিবী শুকিয়ে গেলে তিনি বৃষ্টি দ্বারা ভিজিয়ে দেন এবং তৃণহীন হয়ে গেলে তাতে শ্যামল লতা-গুল জন্মান ।