আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে
প্রতিষ্ঠিত প্রশধ্বংসা আল্লাহর যিনি মানুষের স্রষ্টা এবং যিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন। তিনি প্রস্রবণ সৃষ্টি করেছেন প্রবাহিত হওয়ার জন্য এবং লতা-গুল্ম-বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন উচ্চভূমিতে জন্মাবার জন্য। তাঁর আদিত্রে কোন প্রারম্ভ নেই এবং চিরন্তনতার কোন শেষ নেই। তিনিই প্রথম এবং সর্বকালীন । তিনিই চিরস্থায়ী যাতে কোন সীমা নেই। কপাল তার সামনে আনত হয় (সেজদা করে) এবং ঠোঁট তাঁর একত্ব ঘোষণা করে। তিনি বস্তুনিচয় সৃষ্টি করার সময়েই তার সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং নিজেকে তাদের সাদৃশ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন।
গতিবিধি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও বোধশক্তির গন্ডিতে কল্পনাশক্তি তাকে আন্দাজ করতে পারে না। তার সম্বন্ধে “কখন” বলা যায় না এবং “পর্যন্ত” বলে তাকে কোন সময়সীমার গন্ডিভুক্ত করা যায় না। তাকে স্পষ্টত প্রতীয়মান করা যায়, কিন্তু “কোথা হতে” বলা যায় না। তিনি সংগুপ্ত, কিন্তু “কিসের মধ্যে” বলা যায় না। তিনি শরীরী নন যে, মরে যাবেন এবং তিনি আবৃত নন যাতে আবদ্ধ করা যায়। তিনি স্পর্শ দ্বারা বস্তুর নিকটবতী নন এবং বিচ্ছেদ দ্বারা বস্তু থেকে দূরবতী নন।
মানুষের চোখের স্থিরদৃষ্টি, কথার প্রতিধ্বনি, পাহাড়ের মিটমিটে আলো, রাতের গভীর অন্ধকারের পদচারণা— কোন কিছুই তার কাছে গোপন নয়। চন্দ্ৰকিরণ যেখানে পড়ে, সূর্য রশ্মি যেখান থেকে উদ্ভাসিত হয়, সূর্য যেখানে অস্তমিত ও আবার উদিত হয়, দিবা-রাত্রির পরিবর্তন যেভাবে হয়, সময়ের পরিবর্তন যেভাবে হয়— এসবের কোন কিছুই তার কাছে গুপ্ত নয়।
তিনি সকল সীমা ও পরিসীমা এবং সকল গণনা ও সসংখ্যার অতীত। যারা তার প্রতি সীমিত গুণারোপ করে, তাদের ধারণার অনেক অনেক উর্ধের্ব তিনি। পরিমাপের গুণ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থাকা, ঘরে বসবাস করা, কোন স্থানে থাকা—এসব গুণ তাঁর জন্য প্রযোজ্য নয়; কারণ সীমা-পরিসীমা সৃষ্টির জন্যই নির্ধারিত এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য সব বস্তুতে আরোপ করা যায়।
আল্লাহ, নঞ হতে উদ্ভাবক
তিনি চিরন্তন বস্তু থেকে বা উপস্থিত কোন নমুনা থেকে বস্তুনিচয় সৃষ্টি করেন নি। তিনি সৃষ্টি করেছিলেন যা সৃষ্টি করতে চেয়েছেন এবং এরপর তার সীমা নির্ধারণ করেছেন। তিনি আকৃতি দিয়েছেন যেভাবে আকৃতি দিতে চেয়েছেন এবং তাতে সর্বোৎকৃষ্ট আকৃতি হয়েছে। কোন কিছুই তাঁর অবাধ্য হতে পারে না। কিন্তু কোন কিছু তার বাধ্য হলেও তার কোন উপকার হয় না। অতীতে যারা মরে গেছে তাদের সম্পর্কে তার জ্ঞান যেরূপ বর্তমানে যারা বেঁচে আছে তাদের সম্পর্কেও তার জ্ঞান একইরূপ । উৰ্ধৰ্বকাশে যা কিছু আছে তা সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান যেরূপ মাটির নিম্নদেশে যা কিছু আছে, উহা সম্পর্কেও তার জ্ঞান একইরূপ ।
মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে
হে আল্লাহর বান্দাগণ, তোমাদেরকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং মাতৃগর্ভের অন্ধকারে বহু পর্দার আবরণের মধ্যেও তোমাদেরকে লালন-পালন করা হয়েছে। তোমাদেরকে মৃত্তিকার উপাদান থেকে (কুরআন—২৩ ঃ ১২) স্থাপন করা হয়েছে সুরক্ষিত আধারে একটা নির্দিষ্টকালের জন্য (কুরআন— ৭৭ ঃ ২১-২২) । তোমরা মায়ের গর্ভে নড়াচড়া করতে পারতে, কিন্তু না পারতে কোন শব্দ শুনতে আর না পারতে কোন ডাকে সাড়া দিতে।
তারপর সেই স্থান থেকে তোমাদেরকে বের করে আনা হয়েছিল এবং এমন স্থানে আনা হয়েছিল যে স্থান তোমরা দেখ নি ও তোমরা এ স্থানের উপকার লাভের উপায়ের সঙ্গে পরিচিত ছিলে না। তোমরা তার সঙ্গে পরিচিত ছিলে না, যে মায়ের স্তন থেকে চুষে জীবিকা আহরণের পথ দেখিয়ে দিয়েছিল এবং যখন তোমাদের প্রয়োজন হতো তখন তোমাদের জীবিকার অবস্থান দেখিয়ে দিতো । আহা! যে ব্যক্তি সৃষ্টির এসব গুণাবলী বুঝতে অক্ষম সে স্রষ্টার গুণাবলী বুঝতে আরো অক্ষম। যে ব্যক্তি সৃষ্টির মাধ্যমে স্রষ্টাকে চিনতে পারে না সে স্রষ্টা থেকে অনেক দূরে।