সংযম, আল্লাহর ভয় ও পরকালের রসদ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত প্রশধ্বংসা আল্লাহর যিনি নেয়ামতকে প্রশধ্বংসার অনুবতী করেছেন এবং কৃতজ্ঞতাকে নেয়ামতের অনুবতী করেছেন। আমরা তার প্রশধ্বংসা করি, তার নেয়ামত ও পরীক্ষার জন্য। আমরা তার সাহায্য প্রার্থনা করি সেসব হৃদয়ের বিরুদ্ধে যারা তার আদেশ পালনে বিলম্ব করে এবং তিনি যা নিষিদ্ধ করেছেন তার দিকে দ্রুত এগিয়ে যায়। আমরা তার ক্ষমা ভিক্ষা করি তা থেকে যা তার জ্ঞান ঢেকে রাখে। অথচ তার দলিল জ্ঞান সংরক্ষণ করে যাতে কোন কিছু বাদ পড়ে না। আমরা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করি সেই ব্যক্তির বিশ্বাসের মতো যে অজানাকে দেখেছে ও প্রতিশ্রুত পুরস্কার অর্জন করেছে; যার বিশ্বাসের পবিত্রতা আল্লাহর অঅংশীদারিত্বের বিশ্বাস থেকে তাকে দূরে রেখেছে এবং যার দৃঢ় প্রত্যয় সকল সংশয় দূরীভূত করেছে।
আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি এক, তার কোন অঅংশীদার নেই এবং মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর বান্দা ও রাসুল। এ দুটো ঘোষণা মনুষের কথা ও আমলকে সমুচ্চ করে। যে মিজানে (পাল্লায়) এ দুটো ঘোষণা রাখা হবে তা কখনো হালকা হবে না, আবার যে মিজান থেকে এ দুটো সরিয়ে নেয়া হবে তা কখনো ভারী হবে না।
তাকওয়ার নির্দেশ
হে আল্লাহর বান্দাগণ, আমি তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি। আল্লাহকে ভয় করার জন্য যা তোমাদের পরকালের রসদ এবং এটা নিয়েই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। এ রসদ তোমাদেরকে গন্তব্যস্থানে পৌছে দেবে এবং তোমাদের প্রত্যাবর্তন সফল হবে। সে-ই সর্বোত্তম যে মানুষকে এর দিকে আহবান করে শোনাতে সক্ষম হয়েছে এবং সর্বোত্তম শ্রোতা এটা শুনেছে। সুতরাং আহ্বানকারী ঘোষণা করেছে এবং শ্রোতা শুনেছে ও সংরক্ষণ করেছে।
হে আল্লাহর বান্দাগণ, নিশ্চয়ই আল্লাহর ভয় আল্লাহর প্রেমিককে হারাম জিনিস থেকে রক্ষা করেছে। এবং তাঁর ভয় তাদের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যে কারণে তারা রাত্রি কাটায় বিনিদ্র অবস্থায় ও দিবস কাটায় তৃষ্ণায়। সুতরাং তারা বিপদের মাধ্যমেই আরাম ও তৃষ্ণার মাধ্যমেই সুমিষ্ট পানি লাভ করে। তারা মৃত্যুকে অতি নিকটে মনে করে এবং সে কারণে উত্তম আমলের দিকে দ্রুত এগিয়ে যায়। তারা
তাদের কামনা-বাসনাকে বাতিল করে দিয়েছে এবং সে জন্য মৃত্যুকে তাদের দৃষ্টিতে রাখে।
এ দুনিয়া ধ্বংসের, দুর্ভোগের, পরিবর্তনের ও শিক্ষার ক্ষেত্র। ধ্বংসের এজন্য যে, সময়ের ধনুক প্রস্তুত আছে, তার তীর কখনো লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না; তার ক্ষত শুকায় না; তা মৃত্যু দ্বারা জীবিতকে, পীড়া দ্বারা স্বাস্থ্যবানকে, দুর্দশা দ্বারা নিরাপদকে আক্রমণ করে। দুনিয়া এমন এক ভক্ষক যে কখনো তৃপ্ত হয় না এবং এমন পানকারী যার তৃষ্ণ: কখনো নিবারিত হয় না। দুর্ভোগের এজন্য যে, একজন মানুষ যতটুকু সংগ্ৰহ করে ততটুকু সে খায় না এবং যা নির্মাণ করে তাতে সে বসবাস না করেই আল্লাহর কাছে চলে যায় অথচ সে তার সম্পদ ও ইমারত সেখানে স্থানান্তর করতে পারে না। পরিবর্তনের এজন্য যে, এখানে একজন শোচনীয় অবস্থার লোকও ঈর্ষার পাত্র হয়ে যায়, আবার একজন ঈর্ষার পাত্ৰও শোচনীয় অবস্থায় পড়ে। এটা এ কারণে যে, তার সম্পদ চলে গেছে এবং তার দুর্ভাগ্য এসে পড়েছে। শিক্ষার এজন্য যে, একজন লোক তার কামনা-বাসনার দ্বারপ্রান্তে পৌছানোর সঙ্গে সঙ্গ মৃত্যু হাজির হয়ে দুনিয়া থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়; তখন তার কামনার বস্তুও অর্জিত হয় না এবং তাকেও ছেড়ে দেয়া হয় না। হায় আল্লাহ, দুনিয়ার আনন্দ কত ছলনাময়ী, এর পানীয় কত তৃষ্ণা উদ্দীপক এবং এর ছায়া কত রৌদ্রোজ্জ্বল। যে হাজির হয় (মৃত্যু) তাকে ফেরত দেয়া যায় না এবং যে চলে যায় সে ফিরে আসে না। হায় আল্লাহ, জীবিতগণ মৃতদের কতই না নিকটবতী, কারণ জীবিতরা অতি শীঘ্রই মৃতদের সাথে সাক্ষাত করবে এবং মৃতরা জীবিতদের থেকে কতই না দূরে কারণ তারা জীবিতদেরকে ছেড়ে চলে গেছে। নিশ্চয়ই, পাপের শাস্তি ব্যতীত পাপ অপেক্ষা কদৰ্য আর কিছু নেই এবং কল্যাণের পুরষ্কার ব্যতীত কল্যাণ অপেক্ষা উত্তম কিছু নেই। ইহকালে যা কিছু শ্রত হয় তা দৃষ্ট বস্তু অপেক্ষা ভালো এবং পরকালে যা কিছু দৃষ্ট হয় তা শ্রুত বস্তু অপেক্ষা ভালো। সুতরাং তোমরা দেখা অপেক্ষা শ্রুতি দ্বারা এবং অজানা বিষয়ের সংবাদ দ্বারা নিজেদেরকে তুষ্ট করতে পারে। জেনে রাখো, যে বস্তু দুনিয়াতে স্বল্প অথচ পরকালে অধিক তা সেই বস্তু অপেক্ষা উত্তম যা দুনিয়াতে অধিক অথচ পরকালে স্বল্প। এমন অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে স্বল্পতা লাভজনক এবং আধিক্য লোকসানকার ।
নিশ্চয়ই, তোমাদেরকে যে কাজ করতে আদেশ দেয়া হয়েছে তা নিষিদ্ধ কাজ থেকে প্রশস্ত এবং তোমাদের জন্য যা হালাল করা হয়েছে তা হারাম অপেক্ষা অধিক । কাজেই যা কম তা ত্যাগ কর এবং যা বেশি তা কর, যা সীমিত তা ত্যাগ কর এবং যা বিশাল তা কর। আল্লাহ তোমাদের জীবিকার নিশ্চয়তা দিয়েছেন এবং আমল করার জন্য আদেশ দিয়েছেন। সুতরাং যে বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে তা লাভের চেষ্টা কখনো সে বিষয়ের ওপর অগ্ৰাধিকার পেতে পারে না। যা সম্পাদন করতে আদেশ দেয়া হয়েছে।
কিন্তু আল্লাহর কসম, অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবস্থা এমন হয়েছে যে, সংশয় অভিভূত করে ফেলেছে ও নিশ্চয়তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হয়েছে এবং মনে হয়, যে বিষয়ে তোমাদেরকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে তা তোমাদের কাছে বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে আর যা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তা যেন তোমাদের কাছ থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। সুতরাং আমলে সালেহার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাও এবং মৃত্যুর আকস্মিকতাকে ভয় কর; কারণ জীবিকা ফিরে পাওয়া যেভাবে আশা করতে পার, বয়স ফিরে পাওয়াকে সেভাবে আশা করতে পার না। জীবিকা থেকে আজ যা হারিয়ে যায় আগামীকাল বর্ধিত আকারে তা পেতে পার কিন্তু গতকাল বয়স থেকে যা হারিয়েছ আজ আর তার প্রত্যাসন আশা করা যায় না। যা আসবে শুধু তার জন্যই আশা, যা চলে গেছে তার জন্য শুধু হতাশা। সুতরাং, “আল্লাহকে ভয় কর, যেভাবে ভয় করা কর্তব্য এবং মুসলিম না হওয়া পর্যন্ত তোমরা মরো না।” (কুরআন-৩ ঃ ১০২)