দুনিয়া ও এর মানুষ সম্পর্কে এ দুনিয়া সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করি কারণ এটা টলমলে আবাসস্থল। এটা জাবনার
জন্য ঘর নয়। দুনিয়া ছলনা দ্বারা নিজেকে সুসজ্জিত করেছে এবং এ সাজ-সজ্জা দ্বারাই এটা প্ৰবঞ্চনা করে। এটা এমন এক ঘর যা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত নিম্নমানের। সুতরাং তিনি এতে হালালের সাথে হারামের, ভালোর সাথে মন্দের, জীবনের সাথে মৃত্যুর এবং মধুরতার সাথে তিক্ততার সংমিশ্রণ করেছেন। আল্লাহ দুনিয়ার ভালোগুলো তার প্রেমিকদের জন্য অকাতরে দেন নি এবং তাঁর শত্রুদের জন্য তাতে কার্পণ্যও করেন নি। দুনিয়ার ভালোগুলো কষ্টে লভ্য। এর মন্দগুলো হাতের কাছে-সহজলভ্য। এর সঞ্চয় ক্রমশ কমে যাবে। এর কর্তৃত্ব কেড়ে নেয়া হবে। এর অধিবাসী নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বে। যে ঘর পতনোনুখ তাতে কি শুভ নিহিত থাকতে পারে? রসদ ফুরিয়ে গেলে যে বয়স নিঃশেষ হয় তাতে কি মঙ্গল নিহিত থাকতে পারে? অথবা যে সময় ভ্রমণের মতো অতিক্রান্ত হয়ে যায় তাতে কি কল্যাণ। থাকতে পারে? তোমাদের চাহিদার মধ্যে সেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে নাও যা আল্লাহ্ তোমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন। তিনি তোমাদেরকে যা করতে বলেছেন তা পরিপূর্ণ করার জন্য তার কাছেই প্রার্থনা কর। মৃত্যু দ্বারা আমন্ত্রিত হবার পূর্বেই মৃত্যুর ডাক শোনার জন্য তোমাদের কানকে প্রস্তুত কর। নিশ্চয়ই, এ দুনিয়াতে সংযমীগণের হৃদয় ক্ৰন্দনরত থাকে। যদিও (বাহ্যিকভাবে দেখা যায়) তারা হাসে এবং তারা শোকাভিভূত থাকে। যদিও তাদেরকে আনন্দিত মনে হয়। তাদের আত্ম-ঘূণা অত্যধিক যদিও যে জীবনোপকরণ তাদেরকে মঞ্জর করা হয়েছে তার জন্য তারা হিধ্বংসার পাত্র। যখন মিথ্যা আশা তোমাদের মনে জাগে তখন তোমাদের হৃদয় থেকে মৃত্যুর স্মরণ তিরোহিত হয়। সুতরাং পরকাল অপেক্ষা ইহকাল তোমাদের ওপর অধিক প্রভুত্ব করছে এবং আশু ফলাফল (লাভ) তোমাদেরকে দূরবতী লাভ (পরকাল) থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আল্লাহর দ্বিনে তোমরা ভ্রাতা। নোংরা স্বভাব ও মন্দ মানসিকতা তোমাদেরকে আলাদা করে রেখেছে। ফলত তোমরা একে অপরের বোঝা বহন কর না, একে অপরকে উপদেশ দাও না, একে অপরের জন্য ব্যয় কর না এবং একে অপরকে ভালোবাস না। তোমাদের এ কী অবস্থা? এ দুনিয়া থেকে যা কিছু সামান্য সংগ্রহ করেছে তাতেই তোমরা সন্তোষ অনুভব কর অথচ পরকালের অনেক কিছু থেকে তোমরা বঞ্চিত হয়েও শোকাতুর হও না। দুনিয়ার সামান্য কিছু হারালে তোমরা এত বেদনাতুর হও যা তোমাদের মুখেই প্রতিভাত হয় (মুখ মলিন হয়); এত অধৈর্য হয়ে পড় যে, মনে হয় দুনিয়া তোমাদের স্থায়ী আব্বাস এবং দুনিয়ার সম্পদ চিরদিন তোমাদের সঙ্গে থাকবে। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি নিজের ত্রুটি-বিচূতির জন্য ভীত সে তা তার সাথীর কাছে প্রকাশ করতে কোন কিছুই তাকে বাধা দেয় না। সে শুধুমাত্র ভয় করে যে, তার সাখীও অনুরূপ ত্রুটিবিচু্যতি প্রকাশ করবে। কিনা। পরকালকে ত্যাগ করে ইহকালকে ভালোবাসার জন্য তোমরা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছো । তোমাদের দ্বিন কেবলমাত্র জিহবার লেহনে পরিণত হয়েছে। এটা সে ব্যক্তির কাজের মতো যে কাজ সম্পন্ন করেছে এবং তার মনিবের সন্তুষ্টি অর্জন করেছে।