খালিদ ইবনে ওয়ালিদের আরও একটি জঘন্য অপরাধ ————-
এটাই একমাত্র অপরাধ ছিল না যা খালিদ ইবনে ওয়ালিদ তার বাহ্যিক ইসলামী জীবনে ঘটিয়েছিল ।
বরং ১ম খলীফা হযরত আবু বকরের খিলাফতকালে খালিদ সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ করেছিল ।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরন নিম্নরুপ –
মহানবী (সাঃ) এর ওফাতের পরে কতিপয় আরব গোত্র হযরত আবু বকরের খেলাফত অস্বীকার বা বায়াত গ্রহনে সম্মতি ছিল না ।
হযরত আবু বকর রাসুল (সাঃ) কতৃক নিয়োগকৃত খলীফা নন – এই যুক্তিতে ঐ গোত্রগন হযরত আবু বকরকে ন্যায়সঙ্গত খলীফা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল ।
ঠিক একই যুক্তিতে হযরত আলী (আঃ) নিজেও আবু বকরের বায়াত কখনই গ্রহন করেন নি ।
ঐ গোত্র প্রধানের অভিযোগ , হযরত আবু বকরের খেলাফত প্রাপ্তি রাসুল (সাঃ) কতৃক অনুমোদনকৃত নয় । ফলশ্রুতিতে ঐ গোত্র হযরত আবু বকরকে যাকাত দেয়া থেকে বিরত ছিল ।
এহেন অবস্থায় খলীফা আবু বকর এই জাতীয় বিদ্রোহীদেরকে মুরতাদ ঘোষনা করেন এবং সেনাবাহিনী দিয়ে দমন পীড়নের ব্যবস্থা করেন ।
যাইহোক , খলীফা আবু বকরের অনুমোদন নিয়ে সেনাপতি খালিদ ইবনে ওয়ালিদ তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে ঐ গোত্রের নিকট গমন করলেন ।
খলীফা কতৃক মুরতাদ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে মালিক ইবনে নুওয়াইরার গোত্রের উপর আক্রমন করে ।
তখন গোত্র প্রধান মালিকসহ সবাই বলেছিল , ” আমরা মুসলমান । ইসলামে যাকাতের হুকুম মানতে আমরা পুরোপুরিই প্রস্তুত আছি । কিন্ত এই খেলাফত রাসুলের (সাঃ) অনুমোদিত নয় বিধায় এর বৈধতার বিষয় আমরা একমত নই । তাই অবৈধ খলিফাকে আমরা যাকাত দিতে পারি না । এছাড়া যাকাত আদায় না করলে এই রকম অত্যাচার নবী (সাঃ) এর আমলের সুন্নাতেরও পরিপন্থী ” ।
তো এই সব বাক বিতন্ডার এক পর্যায় মালেকের স্ত্রী স্বামীর পিছনে এসে দাড়িয়েছিল ।
গোত্র প্রধান মালিকের স্ত্রী ছিলেন ঐ গোত্রের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা ।
বীর সেনাপতি খালিদ ইবনে ওয়ালিদের লোলুপ কুদৃষ্টি পড়লো ঐ বিবাহিত সুন্দরী পরস্ত্রীর প্রতি ।
সুচতুর খালিদ তাদেরকে ছলে বলে কৌশলে নিরস্ত্র করে ফেলে উক্ত গোত্র প্রধান তথা ঐ মহিলার স্বামী মালিককে হত্যা করে ফেলল ।
এভাবেই খালিদ উক্ত গোত্রের প্রধান মালিক ইবনে নুওয়াইরাকে হত্যা করে ফেলল , যিনি মহানবী (সাঃ) এর একজন সাহাবী ও মুসলমান ছিলেন ।
বীর সেনাপতি খালিদ মালিককে শুধু হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয় নি ।
এরপর সবচেয়ে জঘন্যতম ঘৃনিত ক্ষমার অযোগ্য ব্যাভিচার কর্মটি করল ।
বীর সেনাপতি খালিদ ইবনে ওয়ালীদ ঐ রাত্রেই মালিকের সদ্য বিধবা স্ত্রীকে সাথে জোরপূর্বক ধষন করে চুড়ান্ত সীমালংঘন করল ।
স্বভাবতই খলীফা আবু বকরের দরবারে এই জঘন্য অপরাধের নালিশ উঠল ।
হযরত ওমরও খালিদের এহেন জঘন্য ব্যাভিচারের জন্য সরকার বাহাদুর খলীফা আবু বকরের কাছে নবীর (সাঃ) সুন্নাত অনুযায়ী ফাসির আবেদন করলেন ।
কিন্ত অবাক ব্যাপার হল , সরকার বাহাদুর খলীফা মহদোয় খালিদ ইবনে ওয়ালিদকে সসম্মানে বেকসুর খালাস করে দিয়ে তাকে দাফতরিক কাজে আরও মনোযোগী হতে বললেন !
এতো বড়ো জঘন্য অপরাধ ও ব্যাভিচার করার পরেও খালিদকে “সাইফুল্লাহ ” ( আল্লাহর তরবারী ) এবং ইসলামের মহান সেনাপতি বলা কি আমাদের জন্য যথাযথ ও শোভনীয় হবে ?
সূত্র – ইসলামের গ্রন্থসমুহে হযরত আবু বকরের শাসনের প্রথম বছরের ঘটনাবলী সংক্রান্ত অধ্যায় মালিক ইবনে নুওয়াইরার ঘটনা বিস্তারিত বণিত আছে । আমরা এ ঘটনার মূল সারমর্ম সংক্ষেপে এখানে বর্ননা করেছি । আর এ ঘটনার বিস্তারিত বিশ্লেষণাতক ইতিহাস সম্বন্ধে জানার জন্য দেখুন – আন নাস ওয়াল ইজতিহাদ , পৃষ্ঠা – ৬১- ৭৫ ।
সুপ্রিয় পাঠক ,
পবিত্র কোরআনে কোথাও কি এরকম কোন নির্দেশনা আছে কি , যাকাত না দিলে তাকে মুরতাদ ঘোষনা বা হত্যা বা তার স্ত্রীকে ধর্ষন করতে হবে ! (নাউযুবিল্লাহ )
সবচে দুঃখজনক হচ্ছে যে , মহানবী (সাঃ) এর ওফাতের পরে মহানবী (সাঃ) কতৃক অনুমোদিত গাদীর এ খুমের নির্দেশকে পরিত্যাগ করে অবৈধ ভাবে সৃষ্ট বনু সকীফা থেকে এই জাতীয় লুটেরা সন্ত্রাসীগন তরবারীর জোরে শুধুমাত্র লুটপাটের ক্ষমতার রাষ্ট্রীয় সীমানা বাড়িয়েছে ইসলামের নাম করে ।
এদের জন্যই বর্তমানে সারা বিশ্বে ইসলাম আজ একটা সন্ত্রাসী ধর্মরুপে পরিচিতি পেয়েছে ।
ইসলাম একটা শান্তির ধর্ম ।
মহানবী (সাঃ) তো এ জাতীয় কোন ঘটনার অনুমোদন দেন নি ।
তাহলে নবীজী (সাঃ) এর পরে এ কোন ” ইসলাম ” এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ?
কিইবা বলি , আপনি যথেষ্ট বুদ্বিমান ।
দয়া করে ভাবুন , এ কোন ইসলামকে আমরা ধারন করে আছি !
 
লেখাটি —-
চির ভাস্বর মহানবী (সাঃ) —
লেখক – আয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী
অনুবাদ – মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
খন্ড – ২য় , পৃষ্ঠা ২৯৪ ছায়া অবলম্বনে লিখিত ।
SKL