কিভাবে আশারা মোবাশশারা হলেন –
একখান খোলা প্রশ্ন ছিল —-
মহান আল্লাহ সকল ফেরেশতাগনকে আদেশ করলেন এইমর্মে যে , হযরত আদম (আঃ) কে সেজদা কর ।
আদেশমত সকল ফেরেশতা সেজদা করলেন কিন্ত জনাব আযাযীল ওরফে ঈবলীশ সেজদা করল না ।
আল্লাহর সুস্পষ্ট আদেশ লংঘন করার জন্য ঈবলীশকে বিতাড়িত করে দেওয়া হল আল্লাহর দরবার থেকে । শুধু বিতাড়িত করা হল না , ঈবলীশকে চিরজীবনের জন্য মহালানতি এবং চিরজাহান্নামী বলে ঘোষনা দেয়া হল । এবং বিতাড়িত হবার পরে ঈবলীশ আর কখনই মহান আল্লাহর দরবারে প্রবেশ করতে পারে নি ।
বিষয়টি খুবই পরিস্কার যে , আল্লাহ কতৃক যে বিতাড়িত হয় সে লানতি এবং জাহান্নামী বলে ঘোষিত হয় ।
উপরের বিষয়টি পবিত্র কোরআনে অনেক সুরাতেই বিস্তারিত বলা আছে ।
পাঠক ,
এবারে আসুন ইতিহাসের আরেক পর্বে ।
ঈবলীশ তো আল্লাহর দরবার থেকে গলা ধাক্কা খেল বা বিতাড়িত হল ।
ঐতিহাসিক এই ঘটনারই অনুরুপ আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল শেষ নবী ও রাসুল হযরত মুহাম্মাাদ (সাঃ) এর দরবার বা গৃহে ।
দ্বিতীয় এই ঘটনাটি ঘটেছিল খুব সম্ভবত ২৪ শে সফর ১১ হিজরী অর্থাৎ রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকালের চার দিন পূর্বে ।
ঘটনার সারসংক্ষেপ –
ইন্তেকালের চার দিন পূর্বে রাসুল (সাঃ) ওনার গৃহে শুয়ে আছেন । শরীর খুবই অসুস্থ । গৃহে অবস্থানরত সকলেই বুঝতে পারলেন যে , রাসুল (সাঃ) এর অন্তিম সময় খুবই সন্নিকটে । যে কোন মুহূর্তে রাসুল (সাঃ) আল্লাহর আহবানে সাড়া দিয়ে চলে যাবেন না ফেরার দেশে ।
ঘরভর্তি লোকজন বিশেষ করে রাসুল (সাঃ) এর বিখ্যাত কয়েকজন সাহাবা উপস্থিত আছেন ।
রাসুল (সাঃ) তখন পরিস্কার ভাবে আদেশ দিলেন যে –
ওসিয়তনামা লেখার জন্য আমাকে খাতা ও কলম দাও । তোমাদের জন্য আমি ওসিয়তনামা লিখে দিয়ে যেতে চাই যে , আমার পরে তোমরা কখনই গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হবে না ।
— রেখে গেলাম কোরআন ও আহলে বায়েত – এই দুইটি সর্বদা আঁকড়ে ধরে থাকবে , তাহলে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না ।
মূলত এই কথাগুলি লিখিত ওসিয়তনামা করার জন্য মহানবী (সাঃ) খাতা কলম চেয়েছিলেন ।
সংক্ষেপে এটাকেই হাদিসে কিরতাস বলে ।
প্রশ্ন –
ওসিয়তনামাটি লেখার জন্য মহানবী (সাঃ) কে খাতা কলম দেয়া হয়েছিল ?
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে –
নবীজী (সাঃ) এর সুষ্পষ্ট আদেশের পরেও খাতা কলম দেওয়া হয় নি ।
প্রশ্ন –
ওসিয়তনামাটি লেখার জন্য কেন কি কারনে খাতা কলম দেওয়া হয় নি ?
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে –
হযরত ওমরের প্রচন্ড বিরোধিতার জন্য খাতা কলম দেওয়া সম্ভব হয় নি । এমনকি মহানবী (সাঃ) এর মুখের সম্মুখে খাতা কলম ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন হযরত ওমর ।
প্রশ্ন –
খাতা কলম না দিয়ে হযরত ওমর তখন মহানবী (সাঃ) কে কি বলেছিলেন ?
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে –
হযরত ওমরের কুখ্যাত উক্তি — রাসুল (সাঃ) মৃত্যু যন্ত্রনায় পাগলের প্রলাপ বকছে এবং ” হাসবুনা কিতাবাল্লাহ ” বা আমাদের কাছে কোরআন আছে , কোরআনই আমাদের জন্য যথেষ্ট ।
প্রশ্ন –
হযরত ওমরের এহেন আচরনের জন্য মহানবী (সাঃ) কি করেছিলেন ?
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে –
মহানবী (সাঃ) স্বয়ং নিজে হযরত ওমর সহ তার দলবলকে নবীগৃহ থেকে বের করে দিয়েছিলেন ।
প্রশ্ন –
এত বড় পাপ কর্মের প্রেক্ষিতে হযরত ওমর কি নবীজী (সাঃ) এর কাছে পরে এসে মাফ চেয়েছিলেন ?
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে –
এত বড় পাপ কর্ম করার পরে এবং মহানবী (সাঃ) এর মৃত্যু সংবাদ শোনার পরেও হযরত ওমর বনু সকীফাতে প্রায় চার দিন ব্যস্ত ছিলেন মহানবী (সাঃ) এর শূন্য আসনে কে ক্ষমতাসীন হবে – সেটা নির্ধারনে ।
খলীফা নির্বাচন শেষে যখন হযরত ওমর নবীগৃহে আসলেন ততদিনে মহানবী (সাঃ) না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিলেন ।
অতএব হযরত ওমরের পক্ষে মহানবী (সঃ) এর নিকট মাফ চাওয়ার কোন সুযোগ ঘটে নি ।
তথ্য সূত্র – সহীহ বুখারী , ইসলামিক ফাউন্ডেশন , ১ম খন্ড , পৃ – ১১৫ / ৫ম খন্ড , পৃ – ২৯ / ৭ম খন্ড , হাদিস – ৪০৭৬ / ৯ম খন্ড , হাদিস – ৫১৫৪ / সহীহ বুখারী , ৩য় খন্ড , হাদিস – ১২২৯ ( করাচী মুদ্রন ) / সহীহ বুখারীর ছয়টি স্থানে বর্নিত – কিতাবুস জিহাদ ওয়াস সায়ীর অধ্যায় / কিতাবুল খামিস অধ্যায় / মারাযুন নবী (সাঃ) ওয়া ওয়াফাতুহু / কিতাবুল মারযা অধ্যায় / কিতাবুল ইলম অধ্যায় / সহীহ মুসলিম শরীফ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন , ৫ম খন্ড , পৃ – ৫৩ , ৫৪ , হাদিস – ৪০৮৬ – ৪০৮৮ / মিনহাজুস সুন্নাহ , ৩য় খন্ড , পৃ – ১৩৫ – ইবনে তাইমিয়া / কিতাব আল – মিলাল ওয়ান্নিহাল , বর হাশিয়াহ কিতাবুল ফাসলুল ইমাম ইবনে হাযম , পৃ – ২৩ / তোহফায় ইশনে আশারিয়া , ১০ম অধ্যায় , পৃ – ৫৯২ / আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াহা , ৫ম খন্ড , পৃ – ২০৮ এবং ৭ম খন্ড , পৃ – ৩৪৬ / ইমাম হাম্বল মুসনাদ , ৪র্থ খন্ড , পৃ – ৩৭২ / জনাব আল্লামা বাহরানী (রহঃ) তার গায়াতুল হারাম নামক গ্রন্থে সুন্নী ৮৯ টি হাদিস / মুসনাদে আহমাদ বিন হাম্বাল , খন্ড – ৩ , পৃ – ৩৬৪ (মিশর , ১৩১৩ হিজরী ) / হাদিসে কিরতাস এবং হযরত ওমরের ভূমিকা , আব্দুল করীম মুশতাক ইত্যাদি ।
দয়া করে পবিত্র কোরআনের দুটি আয়াত মনযোগ দিয়ে পড়ুন এবং নীচে উল্লেখিত মূল প্রশ্নটি সম্পর্কে কিছুটা চিন্তা ভাবনা করুন ।
“ – একজন মুমিন পুরুষ এবং একজন মুমিন নারীর অধিকার নেই , যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোন একটি বিষয় সিদ্বান্ত নিয়েছেন , তাঁদের বিষয় অন্য কোন কিছু পছন্দ করার এবং যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অমান্য করে নিঃসন্দেহে [সে] পথভ্রষ্ট হয়েছে সুস্পষ্ট ভুলের ভিতরে — “ ।
সুরা – আহযাব / ৩৬ ।
“ — রাসূল তোমাদেরকে যা দেন , তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন , তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর । নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা — “ ।
সূরা – হাশর / ৭ ।
প্রিয় পাঠক ,
এখন মূল প্রশ্নটা হচ্ছে যে , মহান আল্লাহর দরবার থেকে আল্লাহ কতৃক বিতাড়িত হবার পরে ঈবলীশ চিরজাহান্নামী হয়ে গেল ।
তাহলে একই ঘটনার অনুরুপ ঘটনা – আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কতৃক বিতাড়িত ব্যক্তি কিভাবে আশারা মোবশশারা , রাঃআনহু মার্কা সনদ পায় ?
একই কর্মে দুই ধরনের প্রতিফল কিভাবে সম্ভব !
SKL