ওরা সেই পাঁচজন —
নাম – আবু হুযাইফা ,
পিতা – উতবাহ ,
মাতা – উম্মে সাফওয়ান ।
সে সময় হযরত হুযাইফার পিতা উতবাহ একজন প্রভাবশালী ও নেতৃস্থানীয় সম্মাানিত নেতা ছিলেন । উতবাহ ছিলেন ঘোরতর ইসলাম বিরোধী । কিন্ত তার ঔরসেই ইসলাম ধর্মের জন্য নিবেদিত প্রান প্রকৃত মুমিন সৈনিক হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) জন্মগ্রহন করেন ।
হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) ছিলেন উত্তম চরিত্রের অধিকারী । ইসলামী শরীয়তের সকল হুকুম আহকাম যথাযথভাবে পালন করতেন । বদর যুদ্বে অংশগ্রহনকারী বীর সাহসী এই সৈনিক ছিলেন রাসুল (সাঃ) এর সাহাবাগনের মধ্যে বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন বিশিষ্ট একজন সাহাবী ।
হযরত আবু বকরের খলাফতের সময় কালে মাত্র ৫৪ বছরে বয়সে তিনি এক রক্তক্ষয়ী যুদ্বে শাহাদাতবরন করেন ।
পাঠক ,
এবারে মূল প্রসংগে আসছি –
মক্কায় তখন সদ্য ইসলামের বিজয় ঘোষিত হয়েছে ।
মহানবী (সাঃ) তায়েফ নামক একটি স্থানে গমন করার জন্য হুনায়েন প্রান্তরে পৌঁছালে ইসলাম ধর্মের শত্রুরা নবী করিম (সাঃ) কে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমন করে বসে । এ সময় মহানবী (সাঃ) এর অনেক নামকরা বিখ্যাত সাহাবাগন নবীজী (সাঃ) কে যুদ্বক্ষেত্রে সম্পূর্ন একাকী ঘোরতর বিপদের মধ্যে ফেলে রেখে পলায়ন করেন । ওনারা যখন পালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মহানবী (সাঃ) তাদেরকে পেছন থেকে উচ্চঃস্বরে আহবান করা সত্বেও ওনারা নবীজী (সাঃ) কে একা ফেলে রেখেই পালিয়ে গেলেন ।
মহানবী (সাঃ) এর চরমতম বিপদের সময় হাতে গোনা দুএকজন সাহবাগনকে নিয়ে একমাত্র হযরত আলী (আঃ) তাঁর নিজের জীবন বিপন্ন করে প্রচন্ড সাহসিকতার সাথে দুশমনদের কবল থেকে মহানবী (সাঃ) কে উদ্বার করেন ।
খুব সংকটের মধ্যে যুদ্বজয় শেষে রাসুল (সাঃ) উটের পিঠে চড়ে তায়েফ শহরের দিকে রওয়ানা হলেন ।
ততক্ষনে সন্ধে ঘনিয়ে এসেছে । বিশ্বস্ত সংগী হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) উটের রশি ধরে টেনে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন ।
বড় একটি পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যাবার সময় আল্লাহর ফেরেশতা রাসুল (সাঃ) কে জানিয়ে দিলেন যে , কিছুটা সামনে পাহাড়ের উপর শত্রুরা আপনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বড় বড় পাথরখন্ড নিয়ে অপেক্ষা করছে ।
সন্ধে তখন আরেকটু ঘনিয়ে এসেছে । সন্ধার হালকা আলোয় কিছুটা অগ্রসর হলে রাসুল (সাঃ) ও হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) পাহাড়ের উপর দন্ডায়মান অবস্থায় কয়েকটি মনুষ্য মূর্তি দেখতে পেলেন ।
এমন সময় হঠাৎ করে আকাশে বিদ্যুৎ চমকিয়ে ওঠে । বিদ্যুৎের তীব্র ঝলকানীতে রাসুল (সাঃ) খুব পরিস্কার ভাবে পাঁচজনের ঐ দলটিকে চিনে ফেললেন ।
ঐ পাঁচজন বড় বড় পাথরখন্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই ভেবে যে , যখনই রাসুল (সাঃ) তাদের আয়েত্বের মধ্যে চলে আসবে তখনই তারা পাথরখন্ডগুলো গড়িয়ে ফেলে দেবে রাসুল (সাঃ) এর উপরে । বিশাল বড় বড় পাথরখন্ডের নীচে চাপা দিয়ে রাসুল (সাঃ) কে হত্যা করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য ।
বিদ্যুৎের সুতীব্র আলোর ঝলকানীতে হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) ঐ পাঁচজনের দলটিকে মুহূর্তেই চিনে ফেললেন এবং চীৎকার করে নবীজী (সাঃ) কে বললেন , হুজুর , অামি সবাইকে চিনে ফেলেছি , ওরা হচ্ছে অমুক , অমুক , অমুক !
রাসুল (সাঃ) হযরত হুযাইফা (রাঃ) কে থামিয়ে দিয়ে বললেন যে , তুমিও চিনেছ , আমিও চিনেছি । থাক আর বলতে হবে না ।
হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) এর উচ্চঃস্বরে চীৎকার চেঁচামেচীতে ঐ পাঁচজন খুব দ্রত স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায় ।
এ ঘটনার পরের দিন ঐ পাঁচ মুনাফিকদের একজন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) কে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করে যে , আমার নাম ঐ মুনাফিকদের তালিকায় আছে কি ?
জবাবে হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) বললেন , নবীজী (সাঃ) খুব কঠোর ভাষায় আমাকে ঐ নামগুলো বলতে নিষেধ করেছেন ।
বিফল হয় তিনি সেদিন চলে গেলেন । কয়েকদিন পরে পুনরায় তিনি একই প্রশ্ন করলেন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) এর নিকট যে , আমার নামটি ঐ মুনাফিকদের তালিকায় আছে কি ?
দ্বিতীয়বারও একই জবাব দিলেন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) যে , নবীজী (সাঃ) খুব কঠোর ভাষায় আমাকে ঐ নামগুলো বলতে নিষেধ করেছেন ।
কিন্ত নাছোরবান্দা হযরত ওমর আর ধৈর্য রাখতে পারলেন না ।
অধৈর্য হয়ে বেচারা হযরত ওমর বলেই ফেললেন যে , হে আবু হুযাইফা ! তুমি বল আর না বল , আমি বিলক্ষন জানি যে , ঐ তালিকায় আমার নামটি আছে ।
তৃতীয়বার হযরত ওমর নিজে চলে গেলেন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) এর বাড়ীতে । বাড়ীতে গিয়ে একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন ।
কিছুটা বিরক্ত হয়ে এবারে হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) হযরত ওমর বললেন , তুমি যখন নিজেই জান যে , ঐ তালিকায় তুমি আছ কি নেই ! তাহলে কেন অযথা আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করতে আস ?
যাইহোক , হযরত হুযাইফা (রাঃ) নবীজী (সাঃ) এর খুব কাছের একজন বিশ্বস্ত ও উঁচু পর্যায়ের মুমিন সাহাবা ছিলেন । তিনি বিলক্ষন জানতেন যে , প্রচুর পরিমানে মুনফিকবৃন্দ রাসুল (সাঃ) এর সাথে চলাফেরা করত ।
প্রিয় পাঠক ,
পবিত্র কোরআনের সুরা মুনাফেকুন এই কথার পক্ষে সুস্পষ্ট দলীল । আর যুদ্বক্ষেত্রে রাসুল (সাঃ) কে সম্পূর্ন একা বিপদের মুখে ফেলে রেখে নবীজী (সাঃ) এর সহকর্মীবৃন্দ পলায়ন করেছিলেন এবং পেছন থেকে রাসুল (সাঃ) এর উচ্চঃস্বরে আহবান শুনেও ওনারা পালিয়ে গেলেন – এ ঘটনাও পবিত্র কোরআনে বিদ্যমান আছে ।
বিনীত অনুরোধ শুধু একটি যে , সম্পূর্ন নিরপেক্ষ মন নিয়ে ইতিহাসের একজন ছাত্র হিসেবে তৎকালীন ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক ঘটনা সমূহ জানার চেষ্টা করুন , প্লীজ
– সত্য সন্ধানী সাহাবী ,
লেখক – ডঃ এস , এম , ইলিয়াছ ,
পৃষ্ঠা – ৫২ – ৫৪ থেকে সংকলিত ও সংগৃহীত ।
SKL