২৫১ । সংকল্প ভঙ্গ করে, নিয়্যত পরিবর্তন করে এবং সাহস হারিয়ে আমি মহিমান্বিত আল্লাহকে জানতে পেরেছিলাম।
২৫২। এ দুনিয়ার তিক্ততাই পরকালের মিষ্টতা এবং দুনিয়ার মিষ্টতা পরকালের তিক্ততা।
২৫৩। আল্লাহ বহু-ঈশ্বরবাদ থেকে পবিত্র করার জন্য ইমান প্রতিষ্ঠিত করেছেন, আত্মাশ্লাঘা থেকে পবিত্র থাকার জন্য সালাত; জীবিকার উপায় হিসাবে যাকাত; মানুষের পরীক্ষা হিসাবে সিয়াম; দ্বিনের খুঁটি হিসাবে হজ; ইসলামের সম্মান হিসাবে জিহাদ, সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য আমরা বিল মা’রুফ; ফেতনা-ফ্যাসাদ নিয়ন্ত্রণের জন্য নাহি আনিল মুনকার; সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য জ্ঞাতিত্বের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ; রক্তপাত বন্ধ করার জন্য কিসাস; হারামের গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা; বুদ্ধিমত্তা রক্ষা করার জন্য মদ্যপান নিষিদ্ধ; সততা জাগিয়ে দেয়ার জন্য চৌর্য বৃত্তি বাতিল; মনোরম অবস্থা বজায় রাখার জন্য ব্যভিচার নিষিদ্ধ; বংশবৃদ্ধির জন্য সমকামিতা নিষিদ্ধ; কোন বিষয় প্রমাণ করার জন্য সাক্ষী; সত্যের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য মিথ্যা প্রতিহত; বিপজ্জনক অবস্থা থেকে রক্ষা করার জন্য শান্তি রক্ষা; উম্মাহর শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ইমামত এবং ইমামতের প্রতি সম্মান হিসাবে ইমামদের মান্য করা নির্ধারণ করেছেন।”
১ । শরিয়তের আদেশের কতিপয় উদ্দেশ্য ও কল্যাণকর বিষয়ে বর্ণনা করার আগে আমিরুল মোমেনিন ইমানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন। কারণ ইমান হলো দ্বিনের ভিত্তি এবং ইমান ব্যতীত দ্বিনের বিধান ও জুরিসপ্রত্নডেন্স এর কোন প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে না। ইমান হলো সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব এবং তাঁর ঐকল্যের স্বীকৃতি । যখন মানুষের মনে ইমান বদ্ধমুল হয় তখন সে অন্যকোন সত্তাব কাছে মাথা নোয়াবে না এবং তখন কোন শক্তি বা কর্তৃত্ব তাকে আর ভয় দেখিয়ে বাগে আনতে পারে না। বরং সকল বন্ধন থেকে মানসিকভাবে মুক্ত হয়ে সে আল্লাহর প্রতি অনুরক্ত হতে পারে এবং ঐকল্যের প্রতি এহেন আনুগত্য তাকে বহু-ঈশ্বরবাদের অপবিত্রতা থেকে রক্ষা করে । সকল ইবাদতের মধ্যে সালাত হলো সর্বোত্তম। দাঁড়ানো, বসা, বক্র হওয়া ও সেজদার সমন্বয়ে হলো সালাত। এটা অঙ্গগুলোর আত্মগর্ব, আত্মশ্লাঘা ও অহমবোধ বিনষ্ট করে নমতা ও বিনয়বনতা সৃষ্টি করে। কারণ উদ্ধত কর্মকান্ড গর্ব ও ঔদ্ধত্য সৃষ্টি করে এবং বিনয় মিশ্রিত কর্মকান্ড মনে নম্রতা ও বিনয়াবনতা সৃষ্টি করে। এসব অভ্যাস করে একজন লোক স্বাভাবিকভাবেই বিনম্র স্বভাবের হয়ে উঠে। এভাবে ঔদ্ধত আরব জাতি—যারা উটে চড়ার সময় ছড়ি পড়ে গেলে বক্র হয়ে তা তুলতো না—তারা তাদের মুখ ও কপাল মাটিতে ঠেকাতে বাধ্য হলো। জাকাত হলো— কোন সমর্থ লোক তার অর্থ-সম্পদ থেকে বার্ষিক একটা নির্ধারিত অংশ দুস্থ ও দরিদ্রদের দেয়া যা ইসলাম বাধ্যতামূলক করেছে। এর উদ্দেশ্য হলো সমাজে যেন কোন লোক দারিদ্রের প্রভাবে নিরাপত্তাহীন না থাকে। এর আরো একটি উদ্দেশ্য হলো সম্পদ যেন ব্যক্তি বিশেষের হাতে কুক্ষিগত না থাকে। সিয়াম হলো এমন ইবাদত যাতে রিয়ার বিন্দু বিসর্গও নেই। পবিত্র নিয়্যত ছাড়া এতে অন্য কোন উদ্দেশ্যও নেই। ফলত, একাকী অবস্থায় কেউ দেখার না থাকলেও ক্ষুধা এবং তৃষ্ণায় কাতর হয়েও খাবার বা পান করার চেষ্টা কেউ করে না। শুধুমাত্র বিবেকের পবিত্রতা তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটাই সিয়ামের মহান আদর্শ যে, এটা ইচ্ছার পবিত্রতা কার্যে পরিণত করে। হজের উদ্দেশ্য হলো— পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে মুসলিমগণ একত্রিত হয়ে ইসলামের মহত্ত্ব প্রকাশ করা, ইবাদতের আগ্রহ আবেগ নবায়ন করা এবং উম্মাহর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন বৃদ্ধি করা। জিহাদের উদ্দেশ্য হলো—সর্বশক্তি দিয়ে ইসলাম বিরোধী শক্তির মোকাবেলা করা যাতে ইসলাম প্রগতি ও স্থিতিশীল অবস্থা লাভ করতে পারে। যদিও এ পথে জীবনের ঝুকি ও পদে পদে বিপদের সম্ভাবনা। তবুও অবিনশ্বর জীবন ও নৈসর্গিক শান্তির আশা এ বিপদকে বুক পেতে নেয়ার সাহস যোগায়। ’ ভাল কাজে প্রলুব্ধ করা আর মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দান করা হলো অন্যকে সঠিক পথ দেখানো ও ভ্রমাত্মক কাজ থেকে বিরত রাখার প্রকৃষ্ট উপায়। যদি কোন সমাজে এহেন লোকের অভাব দেখা দেয় তা হলে সে সমাজকে ধ্বংস থেকে কোন কিছুই রক্ষা করতে পারে না। সে সমাজ নৈতিক ও সামাজিকভাবে অন্ধকারে তলিয়ে যায়। সে জন্যই ইসলাম দেশনা দানের ওপর সব চাইতে বেশি জোর দিয়েছে এবং সমাজকে দেশনা দান না করলে তা আমাৰ্জনীয় পাপ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর কল্যাণ করা মানে তাদের প্রতি বৈধ আনুকূল্য প্রদর্শন করা। অন্ততপক্ষে তাদের সম্বোধন করা এবং তাদের সঙ্গে আলাপচারিতা করা যাতে হৃদয় পরিস্কার হয় ও পারিবারিক বন্ধন বৃদ্ধি পায়। এতে বিচ্ছিন্ন লোক একে অপরের শক্তিতে পরিণত হতে পারে। নিহত লোকের আত্মীয়-স্বজন হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার অধিকার আছে। তারা জীবনের পরিবর্তে জীবন দাবি করতে পারে। এর উদ্দেশ্য হলো মানুষ যেন শাস্তির ভয়ে কাউকে হত্যা না করে এবং জীবিতগণ যেন এক জনের পরিবর্তে বহুলোক হত্যার জেদ না করে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ক্ষমা ক্ষমার স্থলে সর্বোত্তম। তার মানে এ নয় যে, ক্ষমার নামে মানুষের অধিকার ক্ষুন্ন হবে—বিশ্ব শান্তি বিঘ্নিত হবে। বরং এ ক্ষেত্রে কিসাস-ই রক্তপাত বন্ধ করে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করতে পারে। আল্লাহ বলেনঃ “হে মানুষ যদি তোমরা বুঝ, তোমাদের জন্য রয়েছে কিসাস যাতে তোমরা নিজেদের রক্ষা করতে পার” (কুরআন— ২ ঃ ১৭৯)। এসব শাস্তির উদ্দেশ্য হলো অপরাধী যেন বুঝতে পারে আল্লাহর নিষেধ অমান্য করার পরিণতি কি এবং শাস্তির ভয়ে অপরাধ হতে বিরত থাকে। মদ চিন্তার তালগোল পাকায়, বোধগম্যতা দুর্বল করে ফেলে এবং জ্ঞানের বিচ্ছিন্নতা ঘটায়। ফলে একজন লোকের কাছ থেকে যা আশা করা যায় না মন্দাসক্ত অবস্থায় সে তা করে ফেলে। তাছাড়া এটা রোগাক্রান্ত করে ফেলে এবং স্বাস্থের অবনতি ঘটায়। সে কারণে শরিয়াত মদকে হারাম ঘোষণা করেছে।
২৫৪ । যদি তুমি কোন অত্যাচারীকে শপথ গ্রহণ করাতে চাও তবে তাকে এভাবে শপথ করতে বলে, “আমি আল্লাহর শক্তি ও কুদরতের বহির্ভুত।” এরূপ মিথ্যা শপথের জন্য তাঁর শাস্তি দ্রুত নেমে আসবে। আর যদি সে আল্লাহর নামে শপথ করে যিনি ছাড়া আর কোন মান্বুদ নেই। তাহলে তার শাস্তি দ্রুত হবে না। কারণ সে মহিমন্বিত আল্লাহর একত্ব প্রকাশ করেছে।”
১। বর্ণিত আছে যে, আব্বাসিয় খলিফা আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ আল-মনসুরের কাছে ইমাম জাফর আস-সাদিকের বিরুদ্ধে কতিপয় অভিযোগ করেছিল। মনসুর ইমামকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন অমুক ব্যক্তি আপনার বিরুদ্ধে অমুক অমুক কথা বলেছে। ইমাম বললেন যে, এতে বিন্দু মাত্ৰও সত্যের লেশ নেই এবং লোকটিকে ডেকে আনার জন্য অনুরোধ করলেন। লোকটিকে সামনে আনলে সে বললো যে, সে যা বলেছে তার সবই সত্য। ইমাম তাকে বললেন, “যদি তুমি সত্য কথা বল তাহলে আমি যে শপথ করতে বলি সে শপথ কর।” তারপর ইমাম তাকে বলতে বললেন, “আমি আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতা বহির্ভূত; আমি নিজের শক্তি ও ক্ষমতায় নির্ভর করি।” যেইমাত্র এ শপথ করলো অমনি লোকটি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে চলতশক্তিহীন হয়ে গেল। ইমাম সসম্মানে সেখান থেকে চলে গেলেন (কুলায়নী**’, ৬ষ্ঠ খণ্ড, १8 886–88७; মজলিসী***, ৪৭ তম খণ্ড, १६ s७8-8७ं, »१२-»१ं ७ ২০৩ – ২০৪; আশরাফী’, পৃঃ ২২৫-২২৬; হায়তামী***, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৪)।
আল-মনসুরের দৌহিত্র হারুন অর-রশিদের রাজত্বকালে (১৪৯/৭৬৬—১৯৩/৮০৯) অনুরূপ একটা ঘটনা ঘটেছিল। আহলুল বাইতের সুচিহ্নিত শত্রু আবদুল্লাহইবেন জুবায়রের দৌহিত্র আবদুল্লাহ ইবনে মুসাব হারুন-অর-রশিদের কাছে বললো যে, ইয়াহিয়া ইবনে আবদিল্লাহ ইবনে হাসন ইবনে ইমাম) হাসান ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব তার (হারুন) বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। হারুন ইয়াহিয়াকে ডেকে পাঠালেন। ইয়াহিয়া আবদুল্লাহকে ওপরে বর্ণিতভাবে শপথ করে তার কথার সত্যতা প্রমাণের জন্য বললেন। আবদুল্লাহ এই শপথ করার সঙ্গে সঙ্গে তার গায়ে কুণ্ঠরোগ ফুটে উঠলো এবং তার সারা শরীর ফেটে গেল। তিন দিন পর সে মারা গেল। এ অবস্থা দেখে হারুন বললো, “আশ্চর্য, আল্লাহ কত দ্রুত ইয়াহিয়ার জন্য আবদুল্লাহর ওপর প্রতিশোধ নিলেন” (ইসফাহানী’, পৃঃ ৪৭২-৪৭৮; মাসুদী”, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৩৪০-৩৪২; বাগদাদী’, ১৪শ খণ্ড, পৃঃ ১১০-১১২৫ হাদীদ***, ১৯তম খণ্ড, পৃঃ ৯১-৯৪; কাহীর”, ১০ম খণ্ড, পৃঃ ১৬৭-১৬৮; সুয়ুতী***, পৃঃ ২৮৭)।
২৫৫। হে আদম সন্তানগণ, তোমাদের সম্পদ বিষয়ে তোমরা নিজেরাই প্রতিনিধি হও এবং মৃত্যুর পর তোমার সম্পত্তি কী করবে তা জীবিত থাকতেই করে যেয়ো ।
২৫৬। ক্রোধ এক প্রকারের উন্মত্ততা কারণ ক্রোধান্বিত ব্যক্তি পরবর্তীতে অনুশোচনা করে। যদি সে অনুশোচনা না করে তবে তার উন্মত্ততা সুনিশ্চিত হয়ে দাঁড়ায়।
২৫৭। ঈর্ষা না থাকলে শারীরিক সুস্থতা অর্জিত হয়।
২৫৮। আমিরুল মোমেনিন কুমায়েল ইবনে জায়েদ আন-নাখাইকে বলেছিলেন, “হে কুমায়েল, তোমার লোকজনকে আদেশ করা যেন তারা মহৎ বৈশিষ্ট্য অর্জনের জন্য দিনে বের হয়ে যায় এবং অভাবের তাড়নায় যারা রাতে ঘুমাতে পারে না তাদের দেখার জন্য রাতে বের হয়। কারণ সর্বশ্রোতা আল্লাহর নামে আমি শপথ করে বলছি, যদি কখনো কেউ অন্যের হৃদয়কে খুশি করতে পারে তবে আল্লাহ তার জন্য এমন বিশেষ নেয়ামত নির্ধারণ করে রেখেছেন যা দুঃখের দিনে প্রবাহিত পানির মতো এসে বিতাড়িত বন্য উটের মতো দুঃখকে তাড়িয়ে দেবে।
২৫৯ । যখন তুমি বিপদ বা দুরবস্থায় পড়বে তখন দান-সদকার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে ব্যবসা করো।
২৬০। বেইমান লোকের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা মানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস হারানো আর বেইমানকে অবিশ্বাস করা মানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা।
২৬১। অনেক লোক আছে যাদেরকে ভালো ব্যবহার দ্বারা ক্রমান্বয়ে শাস্তির দিক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে; এবং অনেকে মোহাচ্ছন্ন হয়ে আছে। কারণ তাদের সম্পর্কে ভালো কথা বলা হচ্ছে। অথচ সময় দেয়ার চেয়ে কঠোর পরীক্ষা মহিমান্বিত আল্লাহ্ আর কিছুই করেন নি।
২৬২। আমিরুল মোমেনিনের বর্ণিত একটি হাদিস হলো—অবস্থা যখন এমন হয় তখন ধমীয় নেতা রুখে দাঁড়াবে এবং জনগণ শরৎকালের বৃষ্টিবিহীন মেঘের মতো তার চারপাশে ভিড় জমাবে।
এ হাদিসে “ইয়াসুব’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যার আভিধানিক অর্থ রাণী মৌমাছি এবং ‘কুযা’ শব্দের অর্থ হলো বৃষ্টিবিহীন মেঘ। আমিরুল মোমেনিনের বাণী হলো ‘ফাইজ কানা যালিকা দারাবা ইয়াসুবুদ্দিন বি যানাবিহি।” দারাবা অর্থ হলো আঘাত করা, মারা, ব্যথা দেওয়া; ইয়াসুবুদ্দীন অর্থ হলো দ্বিনি ও শরিয়তের প্রধান, যানাব অর্থ হলো লেজ, শেষ, যে মান্য করে, ফুল। এবাক্যে ইয়াসুবুদ্দিন হলো যুগের ইমাম। এ উপাধি রাসুল (সঃ) আমিরুল মোমেনিনকে দিয়েছিলেন যেমন(ক) হে আলী, তুমি মোমিনগণের ইয়াসুব” আর সম্পদ মোনাফেকদের ইয়াসুব (বার”, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১৭৪৪; আইট্র’, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ২৮৭; হাজর***, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১৭১; শাফী***, ২য় খণ্ড, পৃঃ ১৫৫; হাদীদ”**, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১২; ১৯ তম খণ্ড, পৃঃ ২২৪; শাকী’, ৯ম খণ্ড, পৃঃ ১০২)। (খ) তুমি দ্বিনের ইয়াসুবা” (শাফী***, ২য় খণ্ড, পৃঃ ১৭৭; জাবিন্দী’, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৮১; হাদীদ***’, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১২; ১৯তম খণ্ড, পৃঃ ২২৪)। (গ) তুমি মুসলিমগণের ইয়াসুব’ (কুন্দুজী“, পৃঃ ৬২)। (ঘ) তুমি কুরাইশদের “ইয়াসুব’ (সাখাবী***, পৃঃ ৯৪)। সুতরাং রাণী মক্ষিকা। যেমন মক্ষিকাকুলে পবিত্রতম এবং সে সকল দোষত্রুটি মুক্ত অবস্থায় ফুলের বক্ষ থেকে সুধা আহরণ করে তেমনি যুগের ইমামও মানবকুলে সত্য সঠিক পথের দিশারী ও পবিত্রতম।
২৬৩। সে হলো বহুমুখী প্রতিভাধারী বক্তা।”
১। আমিরুল মোমেনিন তার অন্যতম প্রধান সহচর ছা-ছা আহি ইবনে সুহান আল আবদী সম্পর্কে এ উক্তি করেছিলেন। হাদীদ লেখেছেন, “আলীর মতো ব্যক্তির প্রশংসাই ছা-ছা আহর মহত্ত্ব ও ব্যক্তিত্ব এবং তার জ্ঞানের বহুমুখীতা সম্পর্কে যথেষ্ট” (হাদীদ”**, ১৯তম খণ্ড, পৃঃ ১০৬)।
২৬৪। আমিরুল মোমেনিন থেকে একটি হাদিস বর্ণিত আছে যে, ঝগড়া-ফ্যাসাদ ধ্বংস বয়ে আনে।
২৬৫। মেয়েরা যখন বাস্তবতাকে বুঝার বয়সে উপনীত হয় তখন পিতৃপক্ষীয় আত্মীয়গণই তুলনামূলকভাবে মনোনয়নের যোগ্য।
২৬৬। ইমান হৃদয়ে লুমাজাহ’ সৃষ্টি করে। ইমান যত উন্নতি লাভ করে “লুমাজাহ” তত বৃদ্ধি পায় (লুমাজাহ অর্থ হলো এক প্রকার উজ্জ্বল সাদা দাগ)
২৬৭। যদি কোন লোকের কুঋণ (অদ দায়ানুজ জানুন অর্থাৎ যে ঋণ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে সন্দেহ আছে) থাকে। তবে তা আদায়ের পর অতীতের জাকাত প্রদান করা অবশ্যকর্তব্য।
২৬৮। জিহাদে সৈন্য পরিচালনাকালে আমিরুল মোমেনিন বলতেন, “যতদূর সম্ভব নারীর চিন্তা-ভাবনা থেকে বিরত থেকে এবং তাদের কথা মনে না করতে চেষ্টা করো।”
২৬৯। একজন কৃতকার্য তীরন্দাজের মতো হয়ো যে প্রথম নিক্ষেপেই কৃতকার্য হবার জন্য সম্মুখ পানে মনোনিবেশ কবে তাকিয়ে থাকে।
২৭০ । যখন যুদ্ধ চরমে পৌছলো তখন আমরা আল্লাহর রাসুলের মাধ্যমে আশ্রয় চাইলাম এবং আমাদের মধ্যে তিনিই ছিলেন শত্রুর সব চাইতে নিকটবর্তী।
২৭১ । মুয়াবিয়ার সৈন্য আল-আনবার আক্রমণ করেছে শোনামাত্র আমিরুল মোমেনিন উম্মক্ত তরবারি হাতে বেরিয়ে পড়লেন এবং নুখায়লাহর কাছে লোকেরা তাকে থামিয়ে ফেলে বললেন, “হে রুল মোমেনিন, তাদের শায়েস্তা করতে আমরাই যথেষ্ট।” আমিরুল মোমেনিন তখন বললেনঃ তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই তোমরা আমার জন্য যথেষ্ট নাও কাজেই কী করে। অন্যের বিরুদ্ধে তোমরা আমার জন্য যথেষ্ট হবে (২৭ নং খোৎবায় এ বাণীটি ভিন্ন প্রেক্ষিতে বর্ণিত)
২৭২। একদিন হারিছ ইবনে হাওত আমিরুল মোমেনিনের কাছে এসে বললো, “আপনি কি বিশ্বাস করেন। আমি এ কথা কল্পনা করতে পারি নি যে, জামালের লোকেরা ভ্ৰান্ত পথে ছিল।” আমিরুল মোমেনিন বললেন, “হে হারিছ, তুমি তোমার নিচে দেখেছে। তার উর্ধে কিছু দেখ নি কাজেই তুমি সব তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। নিশ্চয়ই, তুমি ন্যায়কে জানতে না, সেকারণেই তুমি ন্যায়পরায়ণকে স্বীকৃতি দিতে পার নি। তুমি ভ্রান্ত পথকে চিনতে না। ফলে ভ্রান্ত পথের অনুসারীগণকে তুমি চিনতে পার নি।” হারিছ বললে, “তা হলে আমি সাদ ইবনে মালিক ও আবদুল্লাহ্ ন্যায়ের পক্ষে আসে নি। অন্যায়কেও পরিত্যাগ করে নি।”
১ । সাদ ইবনে মালিক ছিল সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস অর্থাৎ সেই পাষণ্ড উমর ইবনে সাদের পিতা যে ইমাম হুসাইনকে হত্যা করেছিল। আবদুল্লাহ ইবনে উমর তাদের মধ্যে অন্যতম যারা আমিরুল মোমেনিনকে সাহায্য-সহায়তা ও সমর্থন করা থেকে বিরত ছিল।
উসমান নিহত হবার পর সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস বনে-জঙ্গলে ও নির্জনে আত্মগোপন করে জীবন কাটাচ্ছিল। তবুও সে আমিরুল মোমেনিনের বায়াত গ্রহন করে নি। কিন্তু আমিরুল মোমেনিনের মৃত্যুর পর সে প্রায়শই এই বলে অনুতাপ করতো, “আমি এমন এক অভিমত পোষণ করতাম যা ছিল সম্পূর্ণ ভ্রান্ত” (নায়সাবুরী**, পৃঃ ১১৬)। আমিরুল মোমেনিনের বিরুদ্ধে মুয়াবিয়ার পক্ষাবলম্বন করে যুদ্ধ না করার জন্য যখন মুয়াবিয়া তাকে দোষারোপ করতে লাগলো তখন সাদ বলতো, “বিদ্রোহী মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করার জন্য আমি দারুণভাবে অনুতপ্ত” (হানাফী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ২২৪-২২৫; হাম্বলী’, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৫৪২)।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করা সত্ত্বেও যুদ্ধে আমিরুল মোমেনিনকে সাহায্য করতে
অস্বীকার করেছিলেন। তিনি ওজর দেখিয়েছিলেন যে, “আমি নির্জনে ইবাদত বন্দেগি করা স্থির করেছি; কাজেই আমি যুদ্ধ-বিগ্রহে যেতে চাই না।” আবদুল্লাহ ইবনে উমর তার জীবনসায়াহ্ন পর্যন্ত এ বলে অনুতাপ করেছেন, “আমার জীবনে এ পৃথিবীতে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কোন কিছু নেই যে, আল্লাহ আমাকে যা আদেশ করেছিলেন তা অমান্য করে আলী ইবেন আবি তালিবের পক্ষাবলম্বন করে বিদ্রোহী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি নি” নায়সাবুরী**, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১১৫-১১৬; শাফী, ৮ম খণ্ড, পৃঃ ১৭২; সাদ’, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১৩৬-১৩৭; বার”, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৯৫৩; আইট্র’, ৩য় খন্ড, পৃঃ ২২৯; হাম্বলী’, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৫৪৩; শাফী’, ২৬তম খণ্ড , পৃঃ ১৫১)।
২৭৩। ক্ষমতার অধিকারীগণ যেন সিংহ সওয়ার— পদমর্যাদার জন্য যে ব্যক্তি ঈর্ষাকাতর তার অবস্থা শুধু তিনিই জানেন।
২৭৪। অন্যদের মধ্যে যারা শোকাহত। তাদের কল্যাণ করো তাহলে তোমরা শোকাহত হলে তারাও কল্যাণকর কাজ করবে।
২৭৫। জ্ঞানীদের কথা যদি যথার্থ হয় তবে তা সমাজের ব্যাধির ঔষধ স্বরূপ কিন্তু তাতে যদি ভ্ৰান্তি থাকে। তবে সমাজ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে।