১৭৬। উচ্চ কর্তৃত্ব লাভ করার উপায় হলো বুকের প্রশস্ততা (অর্থাৎ উদারতা)।
১৭৭। যারা ভালো কাজ করে তাদেরকে পুরস্কৃত করে কুকর্মকারীকে তিরস্কার করা।
১৭৮। নিজের হৃদয়ের মন্দকে তাড়িয়ে দিয়ে অন্যের হৃদয়ের মন্দ কেটে ফেল।
১৭৯। একগুয়োমী উপদেশ বিফল করে ।
১৮০। লোভ হলো স্থায়ী দাসত্ব।
১৮১। অবহেলা করার ফল হলো লজ্জা আর দূরদর্শীতার ফল হলো নিরাপত্তা।
১৮২। জ্ঞানের বিষয়ে নীরব থাকায় কোন সুফল নেই। যেমন নিবুদ্ধিতার বিষয়ে কথা বলে কোন কল্যাণ হয় না।
১৮৩। যদি দুটি বিপরীত ডাক আসে। তবে অবশ্যই একটি বিপদগামিতার।
১৮৪। ন্যায়ের ব্যাপারে আমি কখনো সন্দেহের বশীভূত হই নি কারণ আমাকে তা দেখিয়ে দেযা হতো।
১৮৫। আমি কখনো মিথ্যা বলি নি এবং আমাকেও মিথ্যা বলা হয় নি। আমি কখনো পথভ্রষ্ট হই নি এবং কাউকে পথভ্রষ্ট করি নি।
১৮৬। অত্যাচারে যে নেতৃত্ব দেয় পরে সে অনুশোচনায় নিজের হাত কামড়ায়।
১৮৭। মনে রেখো, এ পৃথিবী থেকে প্রস্থানের সময় অত্যাসন্ন।
১৮৮। ন্যায়ের পথ থেকে মুখ ফেরালে ধ্বংস অনিবার্য।
১৮৯। ধৈর্য যদি কাউকে নিবৃত্তি দিতে না পারে তবে অধৈর্য তাকে হত্যা করে।
১৯০। কী আশ্চর্য! খেলাফত কি রাসুলের (সঃ) সাহাবা ও জ্ঞাতিদের মাঝে না গিয়ে শুধু সাহাবাদরে মধ্যে যেতে পারে? এ বিষয়ে অন্য একটি বক্তব্যও রয়েছে, “যদি তোমরা দাবি কর যে পরামর্শের মাধ্যমে খেলাফতের কর্তৃত্ব লাভ করা যায় তা হলে কী করে এটা ঘটলো যে, যাদের সঙ্গে পরামর্শ করা
প্রয়োজন ছিল তারা সবাই অনুপস্থিত। আর যখন তোমরা রাসুলের (সঃ) জ্ঞাতিত্বের দোহাই দিয়ে বিরুদ্ধ পক্ষকে নিবৃত্ত করলে তখন তোমাদের চেয়ে রাসুলের নিকটতম আত্মীয়ের অধিকার কী ভাবে কেড়ে নিলে।”১। আইজুদ্দিন আবদাল হামিদ ইবনে হিবাতুল্লাহ্ (৫৮৬/১১৯০ – ৬৫৫/১২৫৭) এর উদ্ধৃতি দিয়ে ইবনে আবিল হাদীদ লেখেছেনঃ আমিরুল মোমেনিন। তাঁর এ বক্তব্যে আবু বকর ও উমরকে বুঝিয়েছেন । সকিফার দিনে আবু বকর উমরকে বললেন, “তোমার হাত বাড়াও আমি আনুগত্যের শপথ করি।” উমর উত্তর দিলেন “সর্ব অবস্থায় আপনি আল্লাহর রাসুলের সাহাবা-তাঁর আরাম-আয়েশে-তার দুঃখ দুদিনে । সুতরাং আপনার হাত বাড়ো ৷” উমরের এ উক্তির প্রেক্ষিতেই আলী বলেন ‘রাসুলের (সঃ) সাহাবা হবার যুক্তি দেখিয়ে যদি তুমি খেলাফতের জন্য আবু বকরকে উপযুক্ত মনে কর। তবে তা আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মনে কর নি কেন? অথচ আমি আবু বকরের চেয়ে অনেক বেশি রাসুলের সুখ-দুঃখে সাথি ছিলাম এবং আবু বকরের চেয়ে রাসুলের অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ আত্নীয় ।” আবু বকর সকিফার দিনে আনসারদেরকে বলেছিলেন, “আমরা কুরাইশরা আল্লাহর রাসুলের জ্ঞাতি এবং একই বংশোদ্ভুত । কাজেই আমরাই খেলাফতের জন্য প্রকৃত উত্তরাধিকারী । একটি ক্ষুদ্র দল কর্তৃক অনুগত্যের শপথের পর আবু বকর মুসলিমদের বলতেন যে, তার খেলাফতকে সকলেই খুশি মনে মেনে নিতে হবে । কারণ আহলুল হাল্লি ওয়াল অকদ’ (সে দল যারা কোন বিষয়ে বন্ধন দিতে ও বন্ধন খুলতে ক্ষমতাবান অর্থাৎ বৃহত্তর দল বা যারা সকিফায় উপস্থিত ছিল) দ্বারা এটা স্বীকৃত আবু বকরের এ দাবির প্রেক্ষিতে আলী বললেন, “তুমি বংশোদ্ভূত বলে খেলাফত দাবি করছে। অথচ রাসুলের নিকটতম আত্নীয়কে বঞ্চিত করছে এবং যেক্ষেত্রে সকিফায় অধিকাংশ সাহাবা অনুপস্থিত ছিলেন ও তোমার প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করে নি । সেক্ষেত্ৰে তুমি আহিলুল হাল্লি ওয়াল আকন্দ” কিভাবে দাবি করছো?” (হাদীদ ***, ১৮শ খণ্ড, পৃঃ ৫১৬) ।
১৯১। এ পৃথিবীতে মানুষ মৃত্যু—তীরের লক্ষ্যস্থল এবং সম্পদ ধ্বংস হয়ে দুঃখ-দুর্দশার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এখানে প্রতি ঢোক পানীয় শ্বাসরুদ্ধকর এবং প্রতি গ্রাস খাদ্য গলায় আটকে পড়ার মত। এখানে একটা না হারালে কেউ আরেকটা পায় না এবং কারো একটা দিন জীবন থেকে খসে না পড়লে আরেকটা দিন এগিয়ে আসে না। আমরা মৃত্যুর সহায়তাকারী এবং আমরা মরণশীলতার লক্ষ্যবস্তু। তাহলে কী করে আমরা চিরস্থায়ী জীবন আশা করতে পারি। দিবা-রাত্র এতে যা নির্মিত হচ্ছে তা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং যা তারা জোড়া লাগাচ্ছে তা বিভক্ত হয়ে পড়ছে।
১৯২। হে আদম সন্তান, মৌলিক চাহিদার বেশি যা কিছু তোমরা অর্জন কর তাতে তোমরা শুধুমাত্র অন্যের জন্য সতর্ক প্রহরী।
১৯৩। হৃদয় কামনা-বাসনায় রঞ্জিত হয়ে থাকে এবং আগুপিছু করার ক্ষমতা রাখে। সুতরাং আবেগ প্রবণ অবস্থায় এবং এগুনোর মনোভাব হলেই তাকে আমলে প্রবৃত্ত কর, কারণ যদি কিছু করতে হৃদয়কে বাধ্য কর। তবে হৃদয়কে অন্ধ করা হবে।
১৯৪। যখন আমি আমার ক্ৰোধ প্রকাশ করবো। তখন আমাকে রাগান্বিত বলা যাবে। যখন আমি প্রতিশোধ নিতে অসমর্থ হবো। তখন একথা বলা যাবে “সহ্য করা অনেক ভালো” অথবা যখন আমার প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষমতা থাকবে তখন বলা যাবে “ক্ষমা করা অধিক ভালো ।”
১৯৫। একটা ময়লার ড্রামের পাশ দিয়ে যেতে যেতে আমিরুল মোমেনিন মন্তব্য করলেন, “এটা হচ্ছে তা যা কৃপণদের দানকুণ্ঠা।” অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে “এটা হচ্ছে তা যা নিয়ে তোমরা একে অপরের সাথে গতকাল পর্যন্ত বিরোধ করেছো।”
১৯৬। যে সম্পদ থেকে তুমি শিক্ষা লাভ কর তা কখনো নষ্ট হয় না।
১৯৭। শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়লে হৃদয় ক্লান্ত হয়ে যায়। সুতরাং হৃদয়ের জন্য মধুরবক্তব্যের সন্ধান করো এবং তা উপভোগ করে হৃদয়কে তাজা করে তুলো ।
১৯৮। খারিজিরা যখন শ্লোগান দিতে লাগলো, “আল্লাহ ছাড়া কারো কোন হুকমত নেই”, তখন আমিরুল মোমেনিন বললেন, “বাক্যটা খুবই সঠিক কিন্তু তারা এর ভুল ব্যাখ্যা করছে।”
১৯৯। জনতার জটলা দেখে তিনি বললেন, “এরা সেই লোক যারা একত্রিত হলে ঔৎসুক্য দেখায় কিন্তু চলে গেলে আর তাদের চেনা যায় না।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, “এরা সেসব লোক যারা একত্রিত হলে ক্ষতি সাধন করে কিন্তু তারা বিভক্ত হয়ে পড়লে উপকার হয়।” কেউ একজন বললো, “একত্রিত হলে তাদের দ্বারা ক্ষতির কথা আমাদের জানা আছে কিন্তু তারা ছড়িয়ে পড়লে তাদের কী উপকার হয়?” আমিরুল মোমেনিন বললেন, “শ্রমিকগণ তাদের কাজে ফিরে যায় তাতে মানুষের উপকার হয়- যেমন রাজমিস্ত্রি ইমারতের কাজে ফিরে গেলে, তাঁতী তার তাতে ফিরে গেলে এবং রুটি প্রস্তুতকারক তার কারখানায় ফিরে গেলে মানুষের উপকার হয়।”
২০০। একজন অপরাধীকে আমিরুল মোমেনিনের কাছে নিয়ে আসা হলে তার সাথে একদল লোক এসেছিল। তাতে আমিরুল মোমেনিন মন্তব্য করলেন “সেসব মুখে ল্যানত যাদেরকে এসব ভ্রান্ত সময়ে দেখা যায় ।”