১২৬। কৃপণদের দেখে আমার আশ্চর্য লাগে যারা দুর্দশার দিকে বেগে ধাবিত হচ্ছে; অথচ তারা দুর্দশা থেকে দৌড়ে পালাতে চায়। জীবনের আরাম-আয়েশ হারিয়ে ফেলছে; অথচ তারা ব্যাকুলভাবে তা কামনা করে । অহংকারী লোকদের দেখে আমার আশ্চর্য লাগে, যে কদিন আগেও বীর্যের ফোটা ছিল এবং আগামীকাল লাশে পরিণত হবে। যে লোক আল্লাহতে সন্দেহ করে তাকে দেখে আমার আশ্চর্য লাগে, কারণ সে তাকে আল্লাহর সৃষ্টি দেখেছে। মানুষকে মরতে দেখেও যেসব লোক মৃত্যুকে ভুলে থাকে তাদের কথা ভেবে আমার আশ্চর্য লাগে। সেসব লোকের কথা ভেবে আমার আশ্চর্য লাগে যারা দ্বিতীয় জীবনকে অস্বীকার করে, যদিও তারা প্রথম জীবন দেখেছে। তাদের কথা ভেবেও আশ্চর্য লাগে যারা চিরস্থায়ী আবাসকে ভুলে ক্ষণস্থায়ী আবাস নিয়ে ব্যস্ত।
১২৭। কর্মবিমুখ লোক দুঃখে নিপতিত হয়। যে আল্লাহর নামে তার সম্পদ থেকে কিছুই ব্যয় করে না। তার বিষয়ে আল্লাহর করণীয় কিছু নেই।
১২৮। শীতের প্রারম্ভে সাবধান থেকে এবং শীতের শেষ দিককে অভিনন্দন জানিয়ো কারণ এটা বৃক্ষকে যেরূপ প্রভাবিত করে শরীরকে তদ্রুপ প্রভাবিত করে। প্রারম্ভে এটা বৃক্ষকে পত্রবিহীন করে এবং শেষ দিকে নতুন পাতা গজায়।
১২৯। স্রষ্টার মহত্ত্বের প্রশংসা সৃষ্টিকে ক্ষুদ্র করে দেয়।
১৩০। আমিরুল মোমেনিন। সিফফিনের যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে কুফার বাইরে কতগুলো কবর দেখতে পেয়ে বললেনঃ হে জনবসতিশূন্য এলাকার একাকীত্বের ঘরের বাসিন্দাগণ; হে ধুলি কণার মানুষ সকল, হে অদ্ভূত অবস্থার শিকারগণ, হে একাকীত্বের মানুষ সকল, হে নিঃসঙ্গ মানুষ সকল! তোমরা আগে গিয়ে আমাদের অগ্রবর্তী হয়েছো । আমরা তোমাদের অনুসরণ করছি এবং তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ হবে তোমরা যে ঘর ছেড়ে গেছে। তাতে অন্যরা বসবাস করছে । তোমরা যেসব স্ত্রী রেখে গেছে। তাদেরকে অন্যরা বিয়ে করছে এবং যে সম্পদ রেখে গেছে তা ওয়ারিশগণ বন্টন করে নিয়েছে । আমাদের চারদিকে যারা আছে তাদের সংবাদ হলো এটাই এখন তোমাদের চারদিকে যারা আছে তাদের সংবাদ কী? তারপর আমিরুল মোমেনিন সাথিদের দিকে ফিরে বললেনঃযদি তাদের কথা বলার ক্ষমতা থাকতো তাহলে তারা বলতো, “নিশ্চয়ই, আল্লাহর ভয় উত্তম। রসদ” (কুরআন-২ ও ১৯৭)
১৩১। একজন লোক দুনিয়াকে গালিগালাজ করছিল। আমিরুল মোমেনিন তা শুনে বললেনঃ হে ব্যক্তি যে দুনিয়াকে গালিগালাজ করছে, হে ব্যক্তি যে দুনিয়ার ছলনায় পড়ে। প্রতারিত হয়েছে, তুমি কি দুনিয়াকে ব্যগ্রভাবে কামনা করে তারপর গালিগালাজ করছো? তুমি কি দুনিয়াকে দোষারোপ করছে, নাকি দুনিয়ার উচিত তোমাকে দোষারোপ করা? কখন দুনিয়া তোমাকে হতবিহ্বল বা প্রতারণা করেছিল? তোমার পূর্বপুরুষদের পতন ও ধ্বংসের পর? নাকি মাটির নিচে তোমাদের মায়েরা ঘুমিয়ে পড়ার পর? পীড়ার সময় তোমরা তাদেরকে কতই না দেখাশুনা করেছে এবং অসুস্থতার সময় তাদের কতই না সেবা যত্ন করেছো । তোমরা আশা করেছিলে তারা যেন আরোগ্য লাভ করে । তাদের জন্য চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করেছো | তোমাদের ঔষধ তাদের কোন কাজে আসে নি। তোমাদের দুঃখ প্রকাশ তাদের কোন উপকারে আসে নি । তোমাদের শোকের কান্না বৃথা হয়ে গেছে এবং তোমরা লক্ষ্য অর্জন করতে পার নি । তোমাদের সর্বশক্তি দিয়েও তাদের মৃত্যুকে দাবিয়ে রাখতে পার নি। বস্তৃত মৃত ব্যক্তির মাধ্যমে দুনিয়া একটা উদাহরণ দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, কিভাবে পতন ঘটে এবং একইভাবে তোমাদেরও পতন ঘটবে। নিশ্চয়ই এ পৃথিবী তার জন্য সত্যাগার যে সত্যের পূজারী, তার জন্য নিরাপদ স্থল যে বুঝতে পারে, তার জন্য ধনাগার যে (পরকালের জন্য) তা সংগ্রহ করতে পারে, তার জন্য শিক্ষালয় যে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে । আল্লাহ প্রেমিকদের জন্য এটা ইবাদতের স্থান, আল্লাহর ফেরেশতাদের জন্য এটা প্রার্থনার স্থান, এটা আল্লাহর প্রত্যাদেশ নাজেলের স্থান এবং যারা আল্লাহতে আসক্ত তাদের জন্য কেনাকাটার স্থান । এখানে তারা রহমত অর্জন করে এবং লাভ হিসাবে বেহেশত পায়। সুতরাং যেখানে দুনিয়া তার প্রস্থান ঘোষণা করছে এবং স্পষ্টভাবে জানান দিচ্ছে যে, সে সব কিছু ত্যাগ করবে। সেখানে তাকে গালিগালাজ করা অর্থহীন । দুনিয়া পূর্বাহ্নেই নিজের ধ্বংসের সংবাদ দিয়েছে এবং সকলকে মৃত্যুর সংবাদও দিয়েছে। নিজের দুর্দশা দ্বারা দুনিযা অন্যের দুর্দশার একটা উদাহরণ স্থাপন করেছে । এর আনন্দ দ্বারা আবার প্রাতে প্ররোচনা ও প্রতারণা করে শোকাহত করে। মানুষ তাওবা করে রোদন করার সময় একে গালমন্দ করে, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই এতে প্ৰলুব্ধ হয়ে এর প্রশংসা শুরু করে । দুনিয়া প্রতিনিয়ত যে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে তা স্মরণ রাখা, স্বীকার করা ও মেনে চলা উচিত ।
১৩২। আল্লাহর একজন ফেরেশতা আছে যে প্রতিদিন ডেকে বলছে “মৃত্যুর জন্য সন্তান-সন্ততি জন্ম দাও এবং ধন-সম্পদ ও দালান-কোঠা ধ্বংসের জন্য কর।”
১৩৩। এ পৃথিবী থাকার জন্য নয়—যাত্রাপথের বিশ্রাম স্থল। এখানে দুধরনের মানুষ আছে। এক হলো, যারা কামনা-বাসনায় দাস হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে; আর হলো যারা কামান-বাসনাকে নিয়ন্ত্রণ করে মুক্তিপ্রাপ্ত হয়েছে।
১৩৪। যে ব্যক্তি বন্ধুদের তিন সময়ে রক্ষা করার চেষ্টা করে না সে বন্ধু নয়। এ সময়গুলি হলো – তার অভাবের সময়, তার অনুপস্থিতিতে এবং তার মৃত্যুকালে।
১৩৫। যাকে চারটি জিনিস দান করা হয় সে চারটি জিনিস হতে বঞ্চিত হয় না। যাকে প্রার্থনা করতে দেয়া হয় তাকে সাড়া থেকে বঞ্চিত করা হয় না। যাকে তওবা করার সুযোগ দেয়া হয় তাকে কবুল থেকে বঞ্চিত করা হয় না। যাকে ক্ষমা চাইতে দেয়া হয় তাকে ক্ষমা থেকে বঞ্চিত করা হয় না। যাকে শোকবিয়া আদায় করতে দেয়া হয় তাকে অধিক আনুকূল্য থেকে বঞ্চিত করা হয় না (এ চারটি বিষয় কুরতান সমর্থিত যথা- ৪ঃ ৬০, ৪ঃ ১১০, ১৪ঃ ৭ ও ৪ ঃ ১৭)।
১৩৬। খোদাভীরুদের জন্য সালাত হলো আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার একটা উপায়, দুর্বলদের জন্য হজ জিহাদ সমতুল্য। সব কিছুরই খাজনা আছে; দেহের খাজনা হলো সিয়াম। স্বামীকে আনন্দদায়ক সঙ্গ দেয়াই নারীর জিহাদ ।
১৩৭। ভিক্ষা দিয়ে জীবিকার আন্বেষণ করো।
১৩৮। যে উত্তম প্রতিদান পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত সে দানে উদার ।
১৩৯। প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা দেয়া হয়।
১৪০। যে মধ্যপন্থাবলম্বী সে কখনো দুর্দশাগ্রস্থ হয় না।
১৪১। ছোট পরিবার আরামদায়ক জীবন যাপনের অন্যতম উপায়।
১৪২। একের প্রতি অন্যের ভালোবাসা প্রজ্ঞার অর্ধাংশ।
১৪৩। শোক বৃদ্ধ বয়সের অর্ধেক।
১৪৪। যন্ত্রণা-উৎপীড়ন-দুঃখ-দুর্দশা থেকে ধৈর্যের উৎপত্তি। যে ব্যক্তি দুঃখ-দুর্দশায় নিজের উরু, চাপড়ায় সে আমল নষ্ট করে ফেলে।
১৪৫। এমন অনেক লোক সিয়াম পালন করে যাদের সিয়াম উপোস থাকা ও তৃষ্ণার্ত হওয়া বই কিছু নয় এবং এমন অনেক সালাতি আছে যাদের সালাত জাগরণ ও কষ্ট করা বই কিছু নয়। তাদের ইবাদত অপেক্ষা আল্লাহর তত্ত্বজ্ঞানীদের খাওয়া, পান করা ও ঘুম অনেক বেশি ভালো।
১৪৬। সাদকা দ্বারা ইমান রক্ষা কর, আল্লাহর অংশ (জাকাত) দান করে সম্পদ রক্ষা কর এবং সালাত দ্বারা দুর্যোগের ঘনঘটা দূরীভূত কর।
১৪৭। কুমায়েল ইবেন জিয়াদ আন-নাখাই” থেকে বর্ণিত আছে যে, আমিরুল মোমেনিন তার হাত ধরে তাকে কবরস্থানে নিয়ে গেলেন। যখন তিনি করবস্থানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন ? হে কুমায়েল, এ হৃদয়গুলো হলো ধারক । এদের মধ্যে সর্বোত্তম হলো যেটা ধারণ করে। রাখতে পারে। সুতরাং আমি যা বলি তা হৃদয়ে সংরক্ষণ করে রেখো। মানুষ তিন প্রকারের-এক প্রকার হলো যারা পণ্ডিত ব্যক্তি ও ঐশী জ্ঞান সম্পন্ন ; দ্বিতীয় প্রকার হলো যারা জ্ঞানের অন্বেষণ করে তারা মুক্তিপথের পথিক, সর্বশেষ হলো সাধারণ অপদার্থ লোক যারা প্ৰত্যেক আহবানকারীর পেছনে দৌড়ায় এবং বাতাসেব যে কোন দিকে বুকে পড়ে । তারা জ্ঞানের ঔজ্জ্বল্য থেকে কোন আলোগ্রহণ করতে পারে না। এবং কোন বিশ্বাস্ত আশ্ৰয়ে আত্মরক্ষা করে না | হে কুমায়েল, জ্ঞান পার্থিব সম্পদ থেকে অনেক ভালো জ্ঞান তোমাকে রক্ষা করবে: অথচ সম্পাদকে তোমার রক্ষা করতে হবে ব্যয় করলে সম্পদ কমে যায়। অথচ দান করলে জ্ঞান বহুগুণ বেড়ে যায় এবং সম্পদের পরিণাম মৃত্যু যেহেতু সম্পদ বিনষ্ট হয়। হে কুমায়েল, জ্ঞান হলো বিশ্বাস যা আমল করা হয় । এর দ্বারা মানুষ জীবদ্দশায় আনুগত্য অর্জন কবে এবং মৃত্যুর পরে সুখ্যাতি থেকে যায়। জ্ঞান হলো শাসক আর সম্পদ হলো শাসিত। হে কুমায়েল, যারা সম্পদ স্তুপীকৃত করে তারা মৃত যদিও তারা সর্বসমক্ষে জীবিত আবার যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে। যতদিন পৃথিবী থাকবে। ততদিন তারা থাকবে । তাদের দেহ পাওয়া যাবে না। কিন্তু তাদের আকৃতি হৃদয়ে স্থাপিত থাকবে । আমার বক্ষের দিকে তাকাও । এখানে জ্ঞান স্তুপীকৃত হয়ে আছে । আমি আশা করি আমার এ জ্ঞান বনহকারী কাউকে পেয়ে যাবো । হ্যা, আমি এ রকম একজনকে পেয়েছিলাম। কিন্তু সে এমন ব্যক্তি ছিল যাকে বিশ্বাস করা যায় না । সে দুনিয়ার লোভে দ্বিনকে ব্যবহার করবে এবং তার ওপর আল্লাহর আনুকূল্যের প্রভাবে সে মানুষের ওপর উদ্ধত শাসক হবে এবং আল্লাহর ওজর দেখিয়ে সে ভক্তদের ওপর প্রভু হয়ে বসবে অথবা সে এমন ব্যক্তি হবে যে সত্যের শ্রোতাদের অনুগত হবে কিন্তু তার বক্ষে কোন বুদ্ধিমত্তা নেই। প্রথম সংশয়েই সে তার হৃদয়ে আশঙ্কা স্থান দেবে সুতরাং এটা কী ওটা কোনটাই আশানুরূপ ভালো নয়। হয় মানুষ আনন্দের জন্য ব্যগ্র থাকবে, সহজেই কামনা-বাসনা দ্বারা পরিচালিত হবে, না হয় সম্পদ সংগ্রহ ও জমা করতে আকুলভাবে চেষ্টা করবে। তাদের কারো দ্বিনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই। এদের উদাহরণ হলো ছাড়া-পাওয়া গরুর পালের মতো এভাবেই জ্ঞান তার বাহকের সাথে মরে যায় হে আমার আল্লাহ! হ্যা, পৃথিবী যেন কখনো এমন লোক শূন্য হয়ে না যায় যারা আল্লাহর ওজর প্রকাশ্যে অথবা গোপনে রক্ষণাবেক্ষণ করে অথবা যারা সব সময় শঙ্কিত থাকে। এ জন্য যে, আল্লাহর গুপ্ত ওজর ও প্রমাণ যেন প্রতিহত না হয়ে পড়ে। এমন লোকের সংখ্যা আতি অল্প কিন্তু আল্লাহর কাছে তারা মহামর্যাদাশালী তাদের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর ওজর ও প্রমাণ রক্ষা করে থাকেন। তারা তাদের মতো কাউকে বিশ্বাস করে এবং তাদের মতো কারো হ্রদয়ে বীজ বপন করে থাকেন । জ্ঞান তাদেরকে প্রকৃত বোধগম্যতা এনে দেয় । সুতরাং তারা দৃঢ়-প্রত্যয় সম্পন্ন আত্মার সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে । অন্যরা যেটাকে কঠিন বলে মনে করে তা তারা সহজ বলে মনে করে । অজ্ঞদের কাছে যা অদ্ভুত মনে হয় তারা তা সোহাগ ভরে গ্রহণ করে । তাদের দেহটা শুধু পৃথিবীতে বিরাজ করে। কিন্তু তাদের আত্মা অনেক উর্ধে থাকে । আল্লাহর জমিনে তারা আল্লাহর প্রতিনিধি এবং তাঁর দ্বিনের প্রতি আহ্বানকারীঃ আহা! তাদের দেখার জন্য আমার কত আকুল আকাঙ্খা। হে কুমায়েল, এখন তুমি যেখানে ইচ্ছা চলে যেতে পার।
(১) কুমায়েল ইবনে জিয়াদ আন-নাখাই ইমামতের গুপ্তভেদ সম্পর্কে জানতেন এবং তিনি আমিরুল মোমেনিনের অন্যতম প্রধান অনুচর ছিলেন। জ্ঞানে ও সাফল্যে তার মর্যাদা ছিল সমুন্নত এবং মিতাচারিতা ও খোদাভীরুতায় তার স্থান ছিল প্রধান। তিনি কিছু দিনের জন্য হিতে আমিরুল মোমেনিনের গভর্নর ছিলেন। হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ আছ-ছাকাকী ৮৩ হিজরিতে ৯০ বৎসর বয়সে তাকে হত্যা করে। কুফার শহরতলীতে তাকে দাফন করা হয়েছিল।
১৪৮। মানুষ তার জিহবার নিচে গুপ্ত থাকে অর্থাৎ কথা দ্বারা মানুষ চেনা যায়।
১৪৯। যে নিজের মূল্য জানে না সে রসাতলে যায়।
১৫০। একজন লোক আমিরুল মোমেনিনকে ধর্মোপদেশ দেয়ার অনুরোধ করলে তিনি বললেনঃ কখনো সে লোকের মতো হয়ো না যে আমল ছাড়া পরীকালের পরম সুখের আশা করে, অন্যাশা-আকাঙ্খী দীর্ঘায়িত করে, তওবা করতে বিলম্ব করে এবং দরবেশের মতো কথা বলে কিন্তু দুনিয়া লোভীর মতো কাজ করে । সে অল্পতে তুষ্ট ও তৃপ্ত হয়। না, তাকে যা দেয়া হয়েছে। সেজন্য শুকারিয়া আদায় করে না । সে অন্যকে বঞ্চিত করে। দুনিয়ার সম্পদ বৃদ্ধি করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে । সে যা করে না অন্যদের তা করার জন্য আদেশ করে । সে ধামিকগণকে ভালোবাসে কিন্তু নিজে তাদের মতো হয়। না । সে পাপীদেরকে ঘৃণা করে অথচ নিজেই তাদের মধ্যে একজন। পাপধিক্য হেতু সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে, কিন্তু যে জন্য সে মৃত্যু ভয়ে ভীত সে বিষয়ে অমনোযোগী । সে পীড়িত হলো লজ্জাবোধ করে, সুস্থ থাকলে নিরাপদ অনুভব করে এবং আনন্দউৎসবে সবকিছু ভুলে থাকে । যখন সে পীড়া থেকে আরোগ্য লাভ করে তখন নিজের সম্পর্কে দাম্ভিক হয়ে পড়ে আবার যখন দুর্দশাগ্রস্থ হয় তখন নিরাশ হয়ে পড়ে। বিপদ আপতিত হলে সে হতভম্বর মতো প্রার্থনা করে, আবার বিপদ কেটে গেলে সে মুখ ফিরিয়ে নেয় । তার হৃদয় কাল্পনিক জিনিস দ্বারা পরাভূত হয় । কোন কিছুতেই তার হৃদয়ে দৃঢ় প্রত্যয় থাকে না । অন্যদের ছোটখাট পাপের জন্য সে দুশ্চিন্তা করে। কিন্তু নিজের বেলায় কৃতকর্মের চেয়ে অধিক পুরস্কার আশা করে। যদি সে সম্পদশালী হয়ে পড়ে। তবে সে আত্ম-কেন্দ্ৰিক হয়ে পড়ে এবং পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে । যদি সে দরিদ্র হয়ে পড়ে। তবে সে দুর্বল ও হতাশ হয়ে পড়ে। কল্যাণকর কাজে সে স্বল্প সময় ব্যয় করে। অথচ যাচনা করতে সে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে। কামনা-বাসনা যখন তাকে ঘিরে ধরে তখন সে তড়িঘড়ি করে পাপে লিপ্ত হয়। অথচ তওবা করতে বিলম্ব ঘটায় । তার ওপর দুর্দশা নিপতিত হলে সে ইসলামের উন্মার সকল নিয়ম-কানুন অমান্য করে । সে উপদেশ নেয়ার মতো ঘটনাবলী বর্ণনা করে। কিন্তু নিজে উপদেশ গ্রহণ করে না । সে অন্যদের উপদেশ দিয়ে বেড়ায় কিন্তু নিজে তা মান্য করে না । সে বাগাড়ম্বরে পটু কিন্তু আমলে খাট ; যা ধ্বংস হয়ে যাবে এমন জিনিসের জন্য সে আফগাঙ্খী। কিন্তু যা চিরস্থায়ী তাতে উদাসীন। সে লাভকে লোকসান আর লোকসানকে লাভ মনে করে সে মৃত্যুকে ভয় করে। কিন্তু মৃত্যুর বিরুদ্ধে তার করণীয় কিছু নেই । সে অন্যের প্রাপকে অনেক বড় করে দেখে। অথচ নিজের পাপকে অতিক্ষুদ্র করে দেখে । সে একটু খানিক আল্লাহর বাধ্যতা দেখালে মনে করে অনেক করেছে কিন্তু অন্য কেউ অনেক আনুগত্য প্রকাশ করলেও সে তা অতিক্ষুদ্র মনে করে। এভাবে সে অন্যকে ভৎসনা করে নিজের প্রতি তোষামুদে হয় । সে ধনশালীদের সঙ্গ পেতে ভালোবাসে সে দরিদ্রদের সাথে আল্লাহর জেকের করতেও পছন্দ করে না । সে নিজের স্বার্থে অন্যের বিরুদ্ধে রায় দেয়। কিন্তু অন্যের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিজের বিরুদ্ধে রায় দেয় না । সে অন্যকে হেদায়েত করে কিন্তু নিজকে গোমরাহিতে ডুবিয়ে রাখে । অন্যরা তাকে মান্য করে কিন্তু সে আল্লাহকে অমান্য করে । সে ব্যগ্র থাকে যাতে অন্যরা তার প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু অন্যদের প্রতি তার দায়িত্ব সে পালন করে না । সে লোক ভয়ে আমল করে। কিন্তু তার কাজ কর্মে সে প্রভুকে ভয় করে না ।