— ঈয়াযীদ মোটেই দায়ী নন —-
পর্ব – ০২ ।
ইদানীং অনেকেই বলে থাকেন যে , কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার জন্য ঈয়াযীদ মোটেই দায়ী নন ।
বেশ ভাল কথা ।
কথা বলার স্বাধীনতা সকলের আছে , হোক সে কথাটা খাঁটি সত্য অথবা ডাঁহা মিথ্যা ।
প্রিয় পাঠক ,
সংগত কারনে এখানে শীয়াদের রেফারেন্স দেয়া যাচ্ছে না ।
আসুন দেখে নেই ,
সুন্নি ভাইদের বিখ্যাত ইতিহাসবিদগনের কিতাব কি বলে –
পর্ব – ০২ ,
ইমাম হোসেন (আঃ) এর উক্তি – ” আমাকে তারা হত্যা করবেই ” ।
তাবারী বর্ননা করছেন যে , ইমাম হোসেন (আঃ) মক্কাতে এক জনসমাবেশে লোকদের উদ্দেশ্যে বলছেন যে , ” তোমরা কি জান , ইবনে যুবাইর কি বলছে ? ”
লোকেরা বলল , ” না , আমরা জানি না । আল্লাহ আমাদের আপনার জন্য উৎসর্গিত করুন ” ।
ইমাম হোসেন (আঃ) বললেন , ” ইবনে যুবাইর আমাকে এ মসজিদে অবস্থানের কথা বলেছে এবং দাবি করেছে যে , আমার জন্য সৈন্য সংগ্রহ করবে । কিন্ত আমি আল্লাহর শপথ করে তোমাদের বলছি , আমার জন্য মক্কার অভ্যন্তরে নিহত হওয়ার চেয়ে মক্কার বাহিরে নিহত হওয়া অধিক শ্রেয় । আল্লাহর শপথ , যদি আমি আত্মগোপন করি এবং কোন পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় গ্রহন করি , তবু তারা আমাকে খুঁজে বের না করা পর্যন্ত বিশ্রাম গ্রহন করবে না এবং তারা আমার সাথে তাই করবে যা তারা সিদ্বান্ত নিয়েছে ” ।
এই বিষয়গুলো থেকে খুব পরিস্কার যে , বনি উমাইয়াদের তীব্র বিদ্বেষ ও তাঁকে হত্যা করার বিষয়টি সম্পর্কে ইমাম হোসেন (আঃ) নিজে সম্পূর্নরুপে অবহিত ছিলেন ।
ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া ইমাম হোসেন (আঃ) কে হত্যার পরিস্কার নির্দেশ দিয়েছিল –
ইয়াকুবী বর্ননা করেছেন , ইমাম হোসেন (আঃ) ইরাকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন – এই খবরটি জানতে পেরে কঠোর ও নির্মম স্বভাবের উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদকে কুফার গর্ভনর হিসাবে নিযুক্ত করে ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া এবং তাকে এই মর্মে বাদশাহী ফরমান জারী করে যে , ” আমার নিকট খবর আছে যে , কুফার লোকরা হোসেনকে ইরাকে আসার জন্য আমন্ত্রন জানিয়েছে । আমি নিশ্চিত যে , হোসেন ঐ আমন্ত্রন গ্রহন করে কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে । এখন তোমার প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে , হোসেনকে হত্যা করা । আর যদি তুমি তা না কর তবে আমি তোমাকে তোমার মৃত পূর্বপুরুষদের নিকট অতি দ্রুত পাঠিয়ে দেব । সুতরাং , সাবধান ! এ সুযোগকে হাতছাড়া কর না ।”
এ প্রসংগে ইবনে আসাম বর্ননা করেছেন যে , হুর ইবনে ইয়াযীদ রিয়াহি , উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদকে পত্র লিখে পাঠায় যে , সে ইমাম হোসেনকে কারবালাতে অবরুদ্ব করেছে । এখন তার করনীয় কর্তব্য কি ?
ইবনে যিয়াদ জবাবে লিখে যে , ” আমীরুল মুমিনীন ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া আমাকে এই আদেশ দিয়েছেন যে , হোসেনকে হত্যার নির্দেশ পালিত না হলে আমার সাথে খুব কঠোর আচরন করা হবে এমনকি আমাকে হত্যা করতেও কুন্ঠাবোধ করবেন না ” ।
এই ঐতিহাসিক বর্ননাগুলো থেকে এটা খুব পরিস্কার যে , ইমাম হোসেন (আঃ) কে হত্যার নির্দেশ স্বয়ং ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া তার নিয়োগকৃত গর্ভনর ইবনে যিয়াদকে প্রদান করেছিল । এমনকি হত্যার নির্দেশ বাস্তবায়িত না হলে ইবনে যিয়াদকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল ।
সূত্র – তারিখে তাবারী , ৪র্থ খন্ড , পৃ – ২৮৯ / ইবনে আসির , আল কামিল ফিত তারিখ , ৩য় খন্ড , পৃ – ২৭৬ / তারিখে ইয়াকুবী , ২য় খন্ড , পৃ – ২৪২ / মুখতাসারে তারিখে দামেশক , ২৮ তম খন্ড , পৃ – ১৯ / ইবনে আসাম , আল ফুতুহ , ৩য় খন্ড , ৫ম অধ্যায় , পৃ – ১৫০ / আল খারেযমী , মাকতালুল হুসাইন , ১ম খন্ড , পৃ – ১৪০ ।
ইনশা আল্লাহ , আসছে ,
পর্ব – ০৩ —
উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ ইমাম হোসেন (আঃ) এর বিষয় নিজে থেকে কখনই কোন সিদ্বান্ত নেয় নি ।
ইমাম হুসাইন (আঃ) এর হত্যায় ঈয়াযীদের ভূমিকা ,
সংকলনে – আবু যাহরা ,
প্রকাশনায় – আশেকানে আহলে বাইত , বাংলাদশ ,
পৃষ্ঠা – ৪ , ৫ থেকে সংকলিত ও সংগৃহীত ।
SKL