তালহা ও জুবায়রের প্রতি (ইমরান ইবনে হুসাইন খুজাই’এর মাধ্যমে) আবু জাফর ইসকাফি তার “কিতাব আল-মাকামত”–এ আমিরুল মোমেনিনের উত্তম গুণাবলী লেখতে গিয়ে এ পত্রের কথা উল্লেখ করেছেন
যদিও তোমরা এখন গোপন করে যাচ্ছে, তোমরা উভয়ে ভালোভাবে জান যে, আমি মানুষের কাছে অভিগমন (খেলাফতের জন্য) করি নি। বরং মানুষ আমার কাছে এসে চাপ প্রয়োগ করেছে এবং আমার আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করার জন্য আমি কাউকে বলি নি এবং তারা নিজেরাই আমার বায়াত গ্ৰহণ করেছে। তোমরা উভয়েই তাদের সঙ্গে ছিলে যারা আমাকে অনুরোধ করেছিল এবং বায়াত গ্ৰহণ করেছিল। নিশ্চয়ই, সাধারণ মানুষ কোন চাপের মুখে আমার বায়াত গ্রহণ করে নি বা আমার অর্থের লোভেও তা করে নি। যদি তোমরা বিশ্বস্ততার সাথে বায়াত গ্রহণ করে থাক তবে তা রক্ষা করে আল্লাহর কাছে তওবা কর। আর যদি তোমারা দুজন অনিচ্ছাকৃতভাবে বায়াত গ্রহণ করে থাক তবে নিশ্চয়ই, তোমাদের বায়াত গ্ৰহণ আমাকে দেখানো ও অবাধ্যতা গোপন রাখার জন্য এবং সেক্ষেত্রে তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্ৰহণ আবশ্যক। আমার জীবনের শপথ, কোন বিষয় গোপন করার ব্যাপারে তোমরা অন্য মুহাজিরদের চেয়ে অধিক হকদার ছিলে না। বায়াত গ্রহণ করার আগে তা অস্বীকার করা তোমাদের জন্য অনেকটা সহজতর ছিল।
তোমরা বলছো। আমি উসমানকে হত্যা করেছি। এ বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য মদিনার এমন কজন লোককে ঠিক কর যারা তোমাদের সমর্থক নয়। আমারও নয়। তারপর আমাদের মাঝে যে যতটুকু দায়ী আইন অনুযায়ী সে ততটুকু শাস্তি ভোগ করবে। তোমরা বর্তমানে যে পথ ধরেছে তা পরিহার কর। মনে রেখো, আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে; সে দিন লজ্জাবনত হয়ে পড়বে এবং দোযখের আগুনের জ্বালা পোহাতে হবে। এখানে শেষ করলাম।
১। ইমরান ইবনে আল-হুসাইন আল-খুজাই সাহাবাদের মধ্যে খুবই মর্যাদাশীল ও শিক্ষিত ছিলেন। তিনি অত্যন্ত সতর্ক হাদিস বিশারদ ছিলেন। খায়বার বিজয়ের বছর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি কুফায় কাজি হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন এবং ৫২ হিজরি সনে বসরায় ইনতিকাল করেন। আমিরুল মোমেনিন সম্পর্কে তার বর্ণনা করা একটা বিখ্যাত হাদিস হচ্ছে—
আল্লাহর রাসুল আলী ইবনে আবি তালিবের নেতৃত্বে একটি সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলেন। আলী তার প্রাপ্য খুমস এর (এক পঞ্চমাংশ) পরিবর্তে একটি ক্রীতদাসী নিলেন। তাঁর লোকদের মধ্যে কেউ কেউ এতে খুশি হলো না। তাদের মধ্যে চারজন রাসুলের (সঃ) কাছে নালিশ করবে বলে স্থির করলো। ফিরে আসার পর তারা রাসুলের (সঃ) কাছে গেলেন এবং তাদের মধ্যে একজন বললো, “হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি দেখেন নি যে, আলী অমুক অমুক কাজ করেছিল?” রাসুল (সঃ) তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তখন অপর একজন দাড়িয়ে একই নালিশ করলো এবং রাসুল (সঃ) তার থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এরপর অপর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে একই কথা বললো। রাসুলও একই ভাবে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এভাবে চতুর্থ ব্যক্তির বেলায়ও একই অবস্থা হলো। রাসুল (সঃ) তারপর রাগত স্বরে বললেন, “তোমরা আলীকে কি করতে বল? নিশ্চয়ই, আলী আমা হতে এবং আমি আলী হতে। আমার পরে সে-ই মোমিনগণের মাওলা”—একথা তিনবার পুনরাবৃত্তি করলেন (তিরমিজী*, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৬৩২; হাম্বল***, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ৪৩৭-৪৩৮; তায়ালিসী *, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১১১; নায়সাবুরী’, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১১০-১১১; ইসফাহানী’, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ২৯৪; জাহাবীত”, ২য় খণ্ড , পৃঃ ১৯৬; কাহীর’, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৩৪৫; আইট্র’, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ২৭; হাজর***, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৫০৯)।
২। এ কথা দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন যে, তোমরা ধনী লোক এবং সগোত্রীয়—দলের দিক থেকে বড় গোত্র। মনের কথা গোপন রেখে অনিচ্ছাকৃতভাবে আনুগত্যের শপথ করা তোমাদের কোন প্রয়োজন ছিল না। যদি কোন দুর্বল বা সহায় সম্বলহীন লোক এমন কথা বলতো। তবে তা গ্রহণযোগ্য হতো। যেহেতু এমন কথা কেউ বলে নি সেহেতু বাধ্য হয়ে বায়াত গ্রহণ করেছে, এটা তোমাদের মতো সমাজের ওপরের স্তরের লোকের মুখে শোভা পায় না বা তা কেউ বিশ্বাসও করবে না।